somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পঃ শেঁকড়

১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজও কি তোমাদের গাঁযে পুঁথির আসর বসে? আলাওলের পদ্মাবতী পড়তে পড়তে আজও কি তোমাদের রাত পোহায়? যমুনায় কি আজও গয়না নৌকা চলে? একজন দাঁড় বায়- আরেকজন ধরে হাল। পুবালী বাতাসের তালে উড়তে থাকে বাদাম। ছৈ এর ভেতরে বসে মিটিমিটি হাসতে হাসতে নতুন বৌ কি নাইওর আসে?

বাকুর মাঝির বড়শিতে আজও কি ধরা পড়ে পাঁচ মণি বাঘার? দূর কি সব চিন্তা করছি-বাকুর মাঝি মরে গেছে সেই কবে গন্ডগোলের বছর? তারপর বাঘারদের সাথে আর কারও সখ্যতা গড়ে উঠে নাই। বাঘাররা যেন পণ করেছে বাকুর মাঝির বড়শি ছাড়া আর কারও বড়শিতে তারা ধরা দিবে না।

আচ্ছা আমাদের গাঁয়ের কলেজ পড়ুয়া দুটো ছেলে-মেয়ে যারা লুকিয়ে রোজ চিঠি আদার-প্রদান করত তারা কি পরে ঘর বাঁধতে পেরেছিলো? লাল পুঁতি -নীল পুঁতি জোড়া দিয়ে গেঁথেছিলো সুখের মালা? নাকি কোনও এক চৈত্রের সন্ধ্যায় মালা ছিঁড়ে পুঁতিগুলো হারিয়ে গেছে বিরাণ পাথারে? না না তা হবে কেন?

আরশাদ সাহেবের চিন্তায় হঠাৎ বাধা আসে। কে যেন তাঁর মাথায় হাত রেখে ইংরেজীতে কি সব জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তাঁর এখন উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। এখন তিনি ব্যস্ত তাঁর গাঁয়ের খবর নিতে। তাঁর অনেকদিনের পুরাতন বন্ধুর সাথে তাঁর দেখা হয়েছে। তাঁরা এখন মন খুলে কথা বলছেন। কিন্তু মেয়েটার প্রবল ডাকাডাকিতে তিনি একবার চোখ মেললেন। তাকিযে দেখেন ফুটফুটে চেহারার নার্স মেয়েটি। কি পবিত্র চেহারা মেয়েটার! এই মেয়ে গত কয়েকদিন ধরে তাঁর সেবা করে যাচ্ছে। নিজের মেয়েও এতটা করে না।

আরশাদ সাহেব কয়েক যুগ আগে যমুনার পাড় থেকে মিশিগানে এসেছেন। এখানে তাঁর ব্যবসা আছে, বাড়ী আছে, গাড়ী আছে, আমেরিকার পাসপোর্টও আছে। তিনি অবসর নেওয়ার পর তাঁর ছেলে-মেয়েরা মিলে তাঁকে ওল্ড হোমে রেখে আসে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ওল্ড হোমেই থাকেন। কয়েকদিন আগে তাঁর হঠাৎ ব্রেইন ষ্ট্রোক হয়। ওল্ড হোম থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় এই হাসপাতালে। এখন তিনি আছেন আইসিইউ-তে। আরশাদ সাহেবের খুব গরম লাগছে। তিনি ঘামছেন। নার্স মেয়েটা ডিউটি ডাক্তারকে ডেকে এনেছে। হঠাৎ কে যেন এয়ারকুলারের তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দিলো। আহ! কি ঠান্ডা। মনে হচ্ছে চৈত্রের সন্ধ্যায় যমুনা পাড়ের হঠাৎ দমকা বাতাস! তিনি আবারও ডুব দিলেন তাঁর স্বপ্নের ভেতরে।

ঐ যে দুষ্ট ছেলেটা যে কিনা রোজ রাতে তার মায়ের গলায় ঘুম পাড়ানি গান না শুনে ঘুমাতে চাইতো না সেই ছেলেটা এখন কতবড় হয়েছে? আমাদের গাঁয়ের সেই পাগলা কবিটা কি আজও দুঃখের কবিতা লেখে আর মানুষের মন খারাপ করে দেয়? গাঁয়ের হাট কি নিয়মিত বসে? চরের মানুষ কি আজও হাটে দুধ বেচতে আসে? কাওনের ধানের সাথে চরের দুধ মিশিযে মায়ের হাতের ক্ষীর-কতকাল, কত বছর খাওয়া হয় না!

দূরে, অনেক দূরে মন্দ্রসপ্তকে কে যেন গেযে যাচ্ছে মন খারাপ করা কোন গান। গানটা আরশাদ সাহবের কাছে খুবই পরিচিত লাগছে কিন্তু কথাগুলো বোঝা যাচ্ছে না। আরশাদ সাহেব বোঝার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ তাঁর মনে হলো এটা কোন গান না-এটা হচ্ছে পুঁথি। কিন্তু এটা কোন পুঁথি-পদ্মাবতী? গাজীকালু? সোনাভান? নাকি কালিদাসের কোন পুঁথি? দুর! যা হয় হোক! আরশাদ চৌধুরী আর বোঝার চেষ্টা করছেন না এটা কোন পুঁথি। বাংলার সব পুঁথিই এক। তিনি এখন পুঁথি শোনায় ব্যস্ত।

তপঃ জপঃ জানি নাহি ধ্যান জ্ঞান আর
কবে যে দিয়াছ দেখা দয়া সে তোমার।
যে দয়া করিলে মোর এ ভাগ্য উদয়
সেই দয়া হইতে মোরে দেহ পরিচয়।।
..........................................
..........................................
প্রণমিয়া পাটুনি কহিছে জোড় হাতে
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।
তথাস্থু! বলিয়া দেবী দিলা বর দান
দুধে-ভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান।।





সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৪৯
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×