আমাদের পা দুটি আমাদের কাজের ঘোড়া হিসেবে কাজ করে, কিন্তু সেইভাবে বিবেচনা করলে এই দুটিকে আমরা খুব এ কম সম্মান দিয়ে থাকি।
আমরা যতই একে অবমাননা করে থাকিনা কেন, প্রতিদিন গড়ে এই দুটিকে শত শত টন বল সহ্য করতে হয়। আশা করি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা কেন আমাদের শরীরের এই দুটি বিশেষ অঙ্গ বার বার আঘাত প্রাপ্ত হয় বা ব্যাথা হয়ে থাকে।
পায়ের যত্নের জন্য আপনাকে অনেক টাকা দিয়ে স্পা করতে হবেনা, নিয়মিত কয়েক মিনিট ব্যয় করলে, সঠিক ফুটওয়্যার ব্যবহার করলে আপনি পায়ের সমস্যা, থেকে অনেক দূরে থাকতে পারবেন।
এখানে ৮টি বিষয় তুলে ধরা হল যা আপনি প্রাত্তাহিক জীবনে মেনে চলতে পারেন।
১. দৈনিক কাজের শেষে পা দুটিকে ভাল করে ধুতে হবে। শরীর ধোয়ার কাপড় এবং সাবান দিয়ে পা এবং আঙ্গুলগুলোর মাঝেও ভাল মত ধুতে হবে। ধোয়ার পরে পা গুলো ভাল মত মুছে নিতে হবে। অনেকে পায়ের আঙ্গুল এর ভিতরে মুছতে ভুলে যায় বা প্রয়োজন মনে করে না। এটা অত্যন্ত জরুরী। যাদের অ্যাথলেট ফুট, পায়ে দুর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এর সমস্যা রয়েছে এই ধোয়া আর মোছাটা তাদের এই ধরনের সমস্যাগুলো কমিয়ে আনবে।
২. আপনি যদি পা ভিজিয়ে রাখতে চান, ইপ্সম লবণ এর কথা ভুলে যান। এটা চামড়া কে শুষ্ক করে ফেলে এবং মেডিকেলি কোন লাভ দেয় না। অন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে উষ্ণ গরম পানিতে (চামড়ায় সহ্য হয় এমন) সামান্য তরল সাবান মিশিয়ে নিন। এতে অন্য যে কোন কিছু থেকে অনেক বেশি কাজ দিবে।
৩. পা ধুয়ে মুছে ভাল মত আর্দ্র (ময়েসচারাইজ) করতে হবে। শীতের সময় হয়ত দিনের মধ্যে একাধিকবার করা লাগতে পারে। এ জন্য অনেক দামি কোন লোশান্ খুজতে হবেনা। যার ত্বকের জন্য যেটা ভাল সেটা ব্যবহার করলেই হবে।
৪. জুতা পরিবর্তন করে পরুন। একাধিক জুতা ব্যবহার করুন। কারন জুতার ভিতরের বাতাস বের হয়ে শুকাতে সময় লাগে যেটা পায়ের দুর্গন্ধের কারন হয়। জুতার মত মোজাও পরিবর্তন করে পরুন। আপনার পা থেকে বেশি দুর্গন্ধ বের হলে পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে পা দুটো ভিজিয়ে রাখুন।
৫. পায়ে যেন জুতার কারনে ব্যাথা না আসে সে বিষয়টা খেয়াল রাখুন। টাইট জুতা আপনার পায়ের জন্য বানিওন, আঙ্গুল বিকৃতি, জয়েন্টে ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
যদি হাই হিল পরেন খেয়াল করবেন হিল যেন চওড়া, দৃঢ় এবং ২ ইঞ্চি এর বেশি না হয়। জুতার টো বক্সটি যেন চওড়া হয়। ইখিলিস টেন্ডন এর ছোট হয়ে যাওয়া ঠেকাতে হিল এর উচ্চতা পরিবর্তন করে পরুন।
৬. পাতলা হাওয়াই রাবারের স্যান্ডাল (স্পঞ্জ স্যান্ডাল) এবং সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট জুতা পায়ের আর্চ সাপোর্ট দেয়না। খালি পায়ে হাঁটলেও যেটা পাওয়া যায়না। পায়ের অ্যানাটমি অনুযায়ী পায়ের আর্চ সাপোর্ট অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে মেয়েদের ফ্ল্যাট ফিট হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায় যা থেকে পায়ের অন্য সমস্যা হতে পারে। সুতরাং পা সুস্থ সবল রাখতে আর্চ সাপোর্ট নেই এমন জুতা কম ব্যবহার করতে হবে।
৭. গর্ভাবস্থা, ডায়াবেটিস, বার্ধক্য এই সব গুলো পায়ের ওপর প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের চওড়া হিল, আর্চ সাপোর্ট, শক অ্যাবজর্ব থাকে এমন জুতা ব্যবহার করা উচিৎ। গর্ভাবস্থায় ওজন যোগ হওয়ার কারনে পায়ের পরিবর্তন আসতে পারে। এতে জুতার সাইজে ও পরিবর্তন আসতে পারে, এই সময় পায়ের মাপ নিয়ে জুতা নির্বাচন করা উচিৎ।
বার্ধক্যের সময় অনেকেই পায়ের নিচের নরম অংশটা (ফ্যাট প্যাড) হারান। এই সময় ভাল সাপোর্ট যুক্ত নরম জুতা ব্যবহার করা উচিৎ যাতে শক অ্যাবজর্বশন থাকে।
ডায়াবেটিস এর ফলে পায়ের অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে, যা পরবর্তীতে অনেক জটিল হয়ে উঠতে পারে। পায়ের যে কোন সমস্যায় চিকিৎসক এর পাশাপাশি পেডর্থিস্ট এর সাথে আলোচনা করুন যারা আপনার পায়ের সমস্যা অনুযায়ী সঠিক জুতা নির্বাচন এ সহায়তা করবে।
৮. পেডিকিওর করার আগে সতর্কতা অবলম্বন করুন। আপনার পায়ের জন্য ব্যবহৃত টাব এবং যন্ত্রপাতি পরিষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে পেডিকিওর করার আগে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০২