ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলার রায়ে জয়লাভের পর নতুন করে আরো কিছু সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। তবে এর সুফল নির্ভর করছে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও স্বদিচ্ছার উপর।
যেমন ধরুন, বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানি এখন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী হবে। জ্বালানি বিভাগ এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতোদিন বিরোধপূর্ণ এসব এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ভারতের আপত্তি থাকায় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে রাজি হয়নি। এখন আর এ সমস্যা থাকছে না। ফলে সমুদ্রে তেল-গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
সম্প্রতি গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তিতে (পিএসসি) গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মায়ানমার ও ভারতের মতোই গ্যাসের দাম নির্ধারণ করায় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এ এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কানাডা, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ তাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে।
সম্প্রতি কনোকো ফিলিপস গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে দ্বি-মাত্রিক জরিপ চালিয়ে ৫ থেকে ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদের সন্ধান পেয়েছে। আর ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জয়ে আরো প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় আরো অনেক সম্পদ পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বিজয়ী সমুদ্রের নতুন এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিতে এ বছরই দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। এখন নতুন এলাকা সন্নিবেশিত হওয়ায় নতুন করে ব্লক পুনর্বিন্যাস করার কাজ শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এখন অগভীর সমুদ্রে দুটি (এসএস-০১ ও এসএস-০৫) এবং গভীর সমুদ্রে ছয়টি (ডিএস-০৯, ডিএস-১৪, ডিএস-১৫, ডিএস-১৯, ডিএস-২৪, ডিএস-২৫) ব্লকে ভারত আমাদের কোনো বাধা দিতে পারবে না।
প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ব্লক ইজারা দিতে পারবে। নিজেরা কিছু অংশে বিনিয়োগ করে এবং যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিজ্ঞ কোনো কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে পারবে। চলতি বছরের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে বলে গতকাল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানলাম। দরপত্রের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোম্পানি যেন আগ্রহী হয় এমনভাবে শর্ত আরোপ করার পরিকল্পণা করা হচ্ছে।
যদিও গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে বাপেক্সকে আরো বেশি দক্ষ করে তুলতে সরকারকে আরো মনোযোগী হতে হবে। দক্ষ জনবল সৃষ্টিতেও কাজ করতে হবে। তাহলে কম খরচে কাজ করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, বর্তমানে সাগরের শুধু ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে কাজ করছে কনোকো ফিলিপস। তবে এই দুই ব্লকে অনুসন্ধান চালাতেও চুক্তির অতিরিক্ত গ্যাসের দাম দাবি করছে কোম্পানিটি। সাত নম্বরের জন্য পিএসসি করার পরেও সরে যায় তারা। এভাবে অতিরিক্ত বিদেশ নির্ভরতার কারণে তারা বাংলাদেশকে অনেকক্ষেত্রে জিম্মি করছে। তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি দক্ষ করে তোলার ব্যাপারে তারাও একমত পোষণ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ পেয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার একটি রায়েও বাংলাদেশ জয়লাভ করে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের গভীর ও অগভীর অংশে খনিজসম্পদ অনুসন্ধানের জন্য ১২টি ব্লক ভাগ করা আছে। বর্তমানে বাংলাদেশে স্থলভাগে আবিষ্কৃত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে মোট মজুদ রয়েছে মাত্র ১৩ টিসিএফ গ্যাস।