স্বপ্নকন্যা
................
লেখক : একটি নিরব ছেলে। (মো.হাসান তারেক)
।
কবিতার লাইনগুলো কেমন যেন অচেনা লাগছে। মনে আসতেই চাইছে না। হঠাৎ কবিতার লাইনগুলোর এমন পরিবর্তন সত্যিই অবাক করার মত। খুব কষ্ট হচ্ছে তারেকের। হঠাৎ দুটো লাইন মনে পড়তেই আবার ভুলে যাচ্ছে। সবই কেমন যেন ঘন কুয়াশার মত ঝাপসা লাগছে তার। অনিচ্ছা সত্বেও খাতা কলম নিয়ে বসল তারেক। আগে ডাইরিততে লিখত সে। কিন্তু ডাইরিটা একটু আগে আগুনে ফেলে দিল সে। আগুন ডাইরিটাকে তার ইচ্ছামত পুড়তে লাগল। সাথে স্বপ্নকন্যার স্মৃতি গুলো পুড়ছে। স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে সব স্মৃতিপট এই ডাইরির প্রতিটি পাতা জুড়া বিরাজমান।
রাত টিক ১২টা বাজে। তারেকের চোখে ঘুম বলতে নেই। চোখ দুটো যেন ঘুম নামের কাউকে চিনেই না। নিরব নিস্তব্ধ নগরীতে এক নিশ্চুপ বালক জানালার পাশা কলম আর খাতা নিয়ে বসে আছে কিছু লিখবে বলে। কিন্তু যাকে নিয়ে লিখবে তার অস্তিত্বহীন এই পৃথিবী। চশমাটা খুলে চোখ দুটো মুচে নিল তারেক। সত্যিই পৃথিবীটা খুব নিষ্টুর। কাছের মানুষগুলো কাছে আসাটা পৃথিবী সহ্য করতে পারেনা। তাই পৃথিবী তাদের দূরে টেলে দেয়। তার থেকেও দূরে।
টিক এক বছর আগের কথা। সে মাসে নতুন বাসায় উঠল তারেকের পরিবার। সদ্য অনার্স ২য় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র তারেক। ক্লাশ, ফেসবুক আর গিটারে টুংটাং করা ছাড়া আর কিছু ভাল্লাগেনা। হঠাৎ একদিন ক্লাশ যাবার সময় তারেক দেখল নিচ তলার বাসা থেকে কে যেন বের হচ্ছে। দেকেই আটকে গেল তারেকের চোখ। চাদের মত বাকা হাসি, বৃষ্টিজলে হাবুডুবু খাওয়া চোখ, লতাপাতার মত চুলগুলো পেচিয়ে কোমর আবদি টেকল। এক দেখাতে ভাল লেগে যায় তার। মনে মনে মেয়েটির নাম টিক করল স্বপ্নকন্যা। তখন থেকে রাত দিন শুধু স্বপ্নকন্যা কে নিয়ে কল্পনার জগৎ বিচরন করা ছাড়া যেন আর কোনো কাজ নেই। ভেবে ভেবে কাটতে লাগল তারেকের নতুন কল্পনার জীবন। একদিন সে ভাবল স্বপ্নকন্যা কে মনের কথা প্রকাশ করবে। রীতিমত গেইটের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল তারেক। একটু পরেই স্বপ্নকন্যা কলেজে যাবে। ভাবতে না ভাবতেই স্বপ্নকন্যার আগমন। আবার তার কল্পনার পাখি মনের আকাশে উড়তে লাগল। হঠাৎ রিক্সার বেলের শব্দে আবার পৃথিবীতে ফিরে এল সে। দেখল স্বপ্নকন্যা তার থেকে একটু দূরে চলে গেল। দৌড়ে গিয়ে স্বপ্নকন্যার সামনে দাড়াল। এবং তার মনের কথা বলে দিল। সাথে সাথে তারেকে মনের আকাশে মেঘ নেমে এল। স্বপ্নকন্যা তার দিকে একটু চেয়ে তার কথার জবাব না দিয়ে চলে গাল। তারপর থেকে তারেক স্বপ্নকন্যাকে এক পলক দেখার জন্য দাড়িয়ে থাকত। এভাবে কিছুদিন যাবার পর হঠাৎ একদিন স্বপ্নকন্যা এল না। পর পর সাতদিন কেটে গেল। তারেক স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে কল্পনার জগৎতে নিমিষে অন্ধকার নেমে এল। দেখতে দেখতে একমাস কাটল। তবু স্বপ্নকন্যা এল না। একদিন তারেক শুনল স্বপ্নকন্যা নাকি হাসপাতালে। দৌড়ে গেল সে। দেখতে পেল মনের আকাশ শূন্য করা স্বপ্নকন্যা হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর ঘুনছে। তার দুটো কিড়নিই অকেজো। জীবনের সব থেকে কঠিন অধ্যায় হল চোখের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখা। কেউ এটা সহ্য করতে পারে না। তারেকের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। মাথায় এক আকাশ পরিমান কষ্ট নিয়ে তারেক বেরিয়ে এল। ভাবতে লাগল সেই বৃষ্টিজলে হাবুডুবু খাওয়া চোখ, অপরুপ চেহেরা, লতাপল্লবীরর মত কোমর বেয়ে আসা চুল। ভাসবে না আর মনের আকাশে। থাকবে না আর কল্পনার জুড়ে। স্বপ্নকন্যা কি তাহলে এভাবে আমার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে????
পৃথিবীটা কেমন ঘুমট হয়ে আছে। মেঘ এসে ভিড়েছে আকাশে। হয়ত বৃষ্টি হবে। তারেক আনমনে স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে কল্পনার দেশে হারিয়ে। বারবার কল্পনাতে স্বপ্নকন্যার সাথে কথা হচ্ছে তার। সে বলছে তুমি কিচ্ছু ভেব না। সব টিক হয়ে যাবে। তুমি ভাল হয়ে যাবে।
হঠাৎ নিচতলা থেকে কয়েকজনের আওয়াজ শুনতে পেল। দৌড়ে নিচে গেল সে। দেখল তার স্বপ্নকন্যা মাটিতে শুয়ে আছে। চোখ দুটি বন্ধ। সাদা কাপড় পরিহিত। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। কোনো কথাই বলছেনা। তার আশেপাশে সবাই কান্না করতে লাগল। তার মানেে সেই চিরচেনা বৃষ্টিজলে আদৃষ্ট চোখ, অপরুপ হাসি, আর লতার মত বেয়ে চলা চুল