somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নকন্যা

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বপ্নকন্যা
................

লেখক : একটি নিরব ছেলে। (মো.হাসান তারেক)


কবিতার লাইনগুলো কেমন যেন অচেনা লাগছে। মনে আসতেই চাইছে না। হঠাৎ কবিতার লাইনগুলোর এমন পরিবর্তন সত্যিই অবাক করার মত। খুব কষ্ট হচ্ছে তারেকের। হঠাৎ দুটো লাইন মনে পড়তেই আবার ভুলে যাচ্ছে। সবই কেমন যেন ঘন কুয়াশার মত ঝাপসা লাগছে তার। অনিচ্ছা সত্বেও খাতা কলম নিয়ে বসল তারেক। আগে ডাইরিততে লিখত সে। কিন্তু ডাইরিটা একটু আগে আগুনে ফেলে দিল সে। আগুন ডাইরিটাকে তার ইচ্ছামত পুড়তে লাগল। সাথে স্বপ্নকন্যার স্মৃতি গুলো পুড়ছে। স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে সব স্মৃতিপট এই ডাইরির প্রতিটি পাতা জুড়া বিরাজমান।

রাত টিক ১২টা বাজে। তারেকের চোখে ঘুম বলতে নেই। চোখ দুটো যেন ঘুম নামের কাউকে চিনেই না। নিরব নিস্তব্ধ নগরীতে এক নিশ্চুপ বালক জানালার পাশা কলম আর খাতা নিয়ে বসে আছে কিছু লিখবে বলে। কিন্তু যাকে নিয়ে লিখবে তার অস্তিত্বহীন এই পৃথিবী। চশমাটা খুলে চোখ দুটো মুচে নিল তারেক। সত্যিই পৃথিবীটা খুব নিষ্টুর। কাছের মানুষগুলো কাছে আসাটা পৃথিবী সহ্য করতে পারেনা। তাই পৃথিবী তাদের দূরে টেলে দেয়। তার থেকেও দূরে।
টিক এক বছর আগের কথা। সে মাসে নতুন বাসায় উঠল তারেকের পরিবার। সদ্য অনার্স ২য় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র তারেক। ক্লাশ, ফেসবুক আর গিটারে টুংটাং করা ছাড়া আর কিছু ভাল্লাগেনা। হঠাৎ একদিন ক্লাশ যাবার সময় তারেক দেখল নিচ তলার বাসা থেকে কে যেন বের হচ্ছে। দেকেই আটকে গেল তারেকের চোখ। চাদের মত বাকা হাসি, বৃষ্টিজলে হাবুডুবু খাওয়া চোখ, লতাপাতার মত চুলগুলো পেচিয়ে কোমর আবদি টেকল। এক দেখাতে ভাল লেগে যায় তার। মনে মনে মেয়েটির নাম টিক করল স্বপ্নকন্যা। তখন থেকে রাত দিন শুধু স্বপ্নকন্যা কে নিয়ে কল্পনার জগৎ বিচরন করা ছাড়া যেন আর কোনো কাজ নেই। ভেবে ভেবে কাটতে লাগল তারেকের নতুন কল্পনার জীবন। একদিন সে ভাবল স্বপ্নকন্যা কে মনের কথা প্রকাশ করবে। রীতিমত গেইটের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল তারেক। একটু পরেই স্বপ্নকন্যা কলেজে যাবে। ভাবতে না ভাবতেই স্বপ্নকন্যার আগমন। আবার তার কল্পনার পাখি মনের আকাশে উড়তে লাগল। হঠাৎ রিক্সার বেলের শব্দে আবার পৃথিবীতে ফিরে এল সে। দেখল স্বপ্নকন্যা তার থেকে একটু দূরে চলে গেল। দৌড়ে গিয়ে স্বপ্নকন্যার সামনে দাড়াল। এবং তার মনের কথা বলে দিল। সাথে সাথে তারেকে মনের আকাশে মেঘ নেমে এল। স্বপ্নকন্যা তার দিকে একটু চেয়ে তার কথার জবাব না দিয়ে চলে গাল। তারপর থেকে তারেক স্বপ্নকন্যাকে এক পলক দেখার জন্য দাড়িয়ে থাকত। এভাবে কিছুদিন যাবার পর হঠাৎ একদিন স্বপ্নকন্যা এল না। পর পর সাতদিন কেটে গেল। তারেক স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে কল্পনার জগৎতে নিমিষে অন্ধকার নেমে এল। দেখতে দেখতে একমাস কাটল। তবু স্বপ্নকন্যা এল না। একদিন তারেক শুনল স্বপ্নকন্যা নাকি হাসপাতালে। দৌড়ে গেল সে। দেখতে পেল মনের আকাশ শূন্য করা স্বপ্নকন্যা হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর ঘুনছে। তার দুটো কিড়নিই অকেজো। জীবনের সব থেকে কঠিন অধ্যায় হল চোখের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখা। কেউ এটা সহ্য করতে পারে না। তারেকের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। মাথায় এক আকাশ পরিমান কষ্ট নিয়ে তারেক বেরিয়ে এল। ভাবতে লাগল সেই বৃষ্টিজলে হাবুডুবু খাওয়া চোখ, অপরুপ চেহেরা, লতাপল্লবীরর মত কোমর বেয়ে আসা চুল। ভাসবে না আর মনের আকাশে। থাকবে না আর কল্পনার জুড়ে। স্বপ্নকন্যা কি তাহলে এভাবে আমার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে????
পৃথিবীটা কেমন ঘুমট হয়ে আছে। মেঘ এসে ভিড়েছে আকাশে। হয়ত বৃষ্টি হবে। তারেক আনমনে স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে কল্পনার দেশে হারিয়ে। বারবার কল্পনাতে স্বপ্নকন্যার সাথে কথা হচ্ছে তার। সে বলছে তুমি কিচ্ছু ভেব না। সব টিক হয়ে যাবে। তুমি ভাল হয়ে যাবে।
হঠাৎ নিচতলা থেকে কয়েকজনের আওয়াজ শুনতে পেল। দৌড়ে নিচে গেল সে। দেখল তার স্বপ্নকন্যা মাটিতে শুয়ে আছে। চোখ দুটি বন্ধ। সাদা কাপড় পরিহিত। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। কোনো কথাই বলছেনা। তার আশেপাশে সবাই কান্না করতে লাগল। তার মানেে সেই চিরচেনা বৃষ্টিজলে আদৃষ্ট চোখ, অপরুপ হাসি, আর লতার মত বেয়ে চলা চুল
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×