somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশোক

২৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু অপরিচিত মানুষের সাথে বসে আছি। মূলত চেনা মানুষ অচেনা হলেই লজ্জাবতী গাছ ছোঁয়া পায় দ্বিধার। কথা আটকে যায়। চোখে চোখ রাখা যায় না আগের মতো।

প্রায় বিশ বছর আগে, স্কুল ছেড়ে গেছি। ছেড়ে যাওয়া উৎযাপন করতেই ফিরে আসা এতদিন পর। রিইউনিয়ন। প্রোগ্রামটা স্কুলেই হওয়ার কথা ছিলো। শহরের বাইরে হচ্ছে। স্কুলের মাঠটা তুলনায় অনেক ছোট। এই জায়গা বেশ বড়, সুনশান। ভালোই। এইযে এখন যেমন সবার থেকে একটু দূরে থাকা যাচ্ছে, একা।

প্রায় সবাই এসেছে। জনসভার মতো। সানি আসে নি। ওই এই আয়োজন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছে। এখন ইতালিতে থাকে শুনলাম। ওর মেয়েটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেছে। 'না হলে সানি অবশ্যই আসতো' আবির বারবার বলছিলো। আয়োজনের পুরো দায়িত্ব ছিলো আবিরের কাঁধে। স্কুলেও যে কোনো আয়োজনের দায়িত্ব ওরই থাকতো। সেই শুরুতে সবার সাথে যোগাযোগ করা থেকে আজকে রাতে কে কি খাবে সবটা সামলাচ্ছে ও।

এত দিন পরের দেখায় আবির কে একদম চেনা যাচ্ছে না। এত লম্বা কিভাবে হলো? আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট বাচ্চা ছেলেটা ছিলো ও। নটিবয়টু। নাম্বার ওয়ান কে ছিলো, সানি? নটিবয়থ্রি ছিলো মৌমি। উফ মৌমি! আমার স্কুল জীবনের প্রেম। প্রথম প্রেম! বইয়ের ভাজে রেখে দেয়া বাসি বেলীর মতো গন্ধ এইসব স্মৃতির।

বাবার সরকারি চারকিরে সুবাদে, আবিরই আমার দীর্ঘমেয়াদে বন্ধু৷ ক্লাস সিক্স থেকে টেন। শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে, যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড। একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।

ক্লাস সেভেনের জন্মদিনে আবির একটা সাইকেল উপহার পেলো। লাল রঙের সাইকেল। অই সাইকেলে চড়ে পুরো শহর চষে বেড়াতাম। কত দিন এমন গেছে মিতালি সিনেমা হলের সামনে যে কাকুর কাছে ভাড়ায় সাইকেল পাওয়া যেতো৷ তিন ঘন্টার জন্য লাল সাইকেলটা ওখানেই ভাড়া রেখে সিনেমা দেখতে যেতাম, সপ্তাহে অন্তত দুদিন।

একদিন হলো কি, আবিরদের বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকতো, কি জানি নাম ছেলেটার! সাইকেল শিখবে বলে ভাড়ায় নিয়ে গেলো আবিরের অই লাল সাইকেল। আবিরের মায়ের চোখেও পরলো। কড়া অনুসন্ধানের পর স্কুল হয়ে সাইকেল কাকুর দোকান। আমাদের ধরা হলো সিনেমা হলের একদম লাস্ট বেঞ্চিতে। বিড়ি খাচ্ছিলাম। ইশ! যদিও তখনো আমরা বিড়ি সিগারেট খাওয়া শুরু করিনি। সানি বলেছিলো, দুঃখের সিনেমা দেখলে বিড়ি খেতে হয়। নাইলে ব্যাপারটা ঠিক জমে না।

আবির বলতো, বড় হলে জাদুকর হবে। সিনেমা বানাবে না জীবন টা বদলে দিবে সিনেমায়। কত বড় হলে? জানিনা।

কাউকে তেমন চিনতে পারছি না। যাদের চিনতে পারছি তাদের সাথে কথা বলতে পারছি না৷ এই এক দোষ আমার।

মাত্রই মৌমি এসেছে। এত সুন্দর করে সেজেছে মৌমি। বিয়ে বাড়িতে কনের ছোট বোনের মতো লাগছে। অবশ্য সবার সাজসজ্জায় বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি অবস্থা।

বিশ বছর অনেক সময়। এই দীর্ঘ বিশ বছরে রোদ্দুর হতে চাওয়া অমলকান্তিরা ছাপা খানায়, নিখিলেশরা প্যারিসে, সুজাতাদের লাখ পতি স্বামী, অংক হয়েছে কেউ কেউ। জীবন কোনো না কোনো আকারে এসে পৌঁছেছে সবার। বড় হওয়ার দুঃখ ভুলে এতদিন পর একটা উৎসবে সেই সমস্ত বাচ্চাপাখিরা সুখ দেখাতে নিজেদের সবচেয়ে ভালো ঘড়ি, দামী ফোন, সুন্দর জুতো, মানিব্যাগে বড় নোট, উজ্জ্বল হার, মিষ্টি পারফিউম দেখাচ্ছে। খুঁজছে খরচের অজুহাত৷ বলছে শৈশবের গল্প।

রাতের খাওয়া শেষ। কে জানি গাইছে। ঘরে ফেরার গান।

'আমি চাই ফিরে যেতে সেই গাঁয়
বাঁধানো বটের ছায়
সেই নদীটি............'

-'এই আবির কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার পর কেমন ঘুম পাচ্ছে। গানটা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শব্দ সরে যাচ্ছে দূরে। গলাটা খুব মিষ্টি।'
-' প্রিয়ন্ত গাইছে শালা!'
-'আমি তোকে ছাড়া কাউকে মনে করতে পারি না। প্রিয়ন্তকেও মনে করতে পারি না। সরি।'

আবির মৌমিকে বিয়ে করছে জানার পর থেকে বুকের পাশে কষ্ট হচ্ছে। কাউকে বলা যাচ্ছে না। আমার কোনো বন্ধু নেই। রিক্তাকে বলা যেতে পারে। বিয়ের পর থেকে ওই একমাত্র বন্ধু। লন্ডনে একটা ফোন দিবো? না থাক। রিক্তাকে প্রাক্তনের বিয়ের কষ্টের কথা জানালে ও সম্ভবত মন খারাপ করবে, ওর মন খারাপ সামলাতে কষ্টটা নষ্ট হবে। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে মনে হচ্ছে, এই কষ্টের কথা শুধু মাত্র আবির কে বলা যায়। একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড আমার।

ঘুম ভেঙে দেখলাম কাউকে আর অপরিচিত লাগছে না। আপন লাগছে খুব। বিপদ জাদুর মতো দূরত্ব তাড়ায়। কাছাকাছি আনে। করে বন্ধু।

শুধু আমার ফোনটা বাজছে। বেজেই যাচ্ছে। আর যার যা কিছু ছিলো, কিছু নেই। নেই আবির, মৌমি ও।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:৫১
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×