somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থহীন অভিমান (মহারাণী’র কেচ্ছা - ০৪)

১১ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সপ্তাহ দুয়েক ডুব দিয়ে ফিরে এলাম ঢাকা শহরে, এই দশ পনের দিনেই সবকিছু কেমন বদলে গেছে... আশ্চর্য! আমি চোখ কচলাতে কচলাতে চারিদিক দেখছি আর কেমন অবাক হচ্ছি। আচ্ছা এইটুকুন সময়ে মহারাণীও কি বদলে গেছে? যদি মহারাণীর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি মহারাণীর সব চুল পেকে গিয়েছে, চামড়া কুঁচকানো থুত্থুড়ে বুড়ি হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছে আমার স্বপ্নের রানী, মহারাণী। ধুর, কি সব আবল-তাবল যে আমি চিন্তা করছি। এই পনের দিনে কি আমার মাথাটা নষ্ট হয়ে গেল? মানুষ হাওয়া পরিবর্তন করতে বেড়াতে যায়, তাতে শরীর স্বাস্থ্য ভালো হয় জানতাম। আমার দেখি উল্টোটা হয়েছে!

সপ্তাহ দুয়েক আগে, কি বার ছিল? মনে পড়ছে না... আমি কিছু পুরাতন বইয়ের খোঁজে গিয়েছিলাম সদরঘাটে। দুপুরের বেলা, ক্ষুধা লেগেছিল খুব। তাই বইয়ের দোকানে ঘোরাঘুরি করে চলে গিয়েছিলাম লঞ্চ টার্মিনালে, সেখানে কিছু ভাত খাবার অস্থায়ী দোকান আছে, অল্প টাকায় ভালো খাবার পাওয়া যায়। তো কি মনে করে আমি সেখানে না খেয়ে লঞ্চে উঠে লঞ্চের কেবিনের মাছ ভাজা আর ঘন ডাল দিয়ে ভাত খাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেই ভাবনা সেই কাজ, পটুয়াখালীগামী এমভি কুয়াকাটা ১ লেখা একটি লঞ্চ চোখে পড়তেই উঠে পড়লাম।

আয়েশ করে যখন লাঞ্চ করছি ভাঁজা মাছ আর ঘন ডাল দিয়ে, তখন দেখি আমার বিপরীত দিকের বেঞ্চে বসে আছে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু তারেক। আমায় চিনতে পেরেই হইহই করে উঠলো, অনেক কথা হল, আর এই কথার জালে আটকে গিয়ে আমি এক কাপড়ে তারেকের সাথে পটুয়াখালী চলে গেলাম। আমার টিউশনি, ভার্সিটির ক্লাস, এক্সাম সব পড়ে রইল, রইল পড়ে মহারাণী। মহারাণীর কথা মনে করেই জেদ করে চলে গিয়েছিলাম, আগের দিন মহারাণীর ব্যবহারে খুব কষ্ট পেয়েছি। সে কি আমার ভালোবাসাকে কোন মূল্য দেয় না? নাহলে কেন আমার প্রতি এমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে?

এই অভিমান থেকেই আমার সপ্তাহ দুয়েকের জন্য ঢাকা শহর হতে উধাও হয়ে যাওয়া। আজ সকালে ঢাকা ফিরেছি, এখন রিক্সা নিয়ে ভার্সিটির দিকে যাচ্ছি, কিন্তু যতই দেখছি কেমন অচেনা লাগছে সব কিছু, ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছি। রিকশাওয়ালা মামাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “মামা, ঢাকা শহরের কি খবর?”। রিকশাওয়ালা ঘাড় ঘুরিয়ে আমায় দেখে বলল, “ও আপনে বুঝি ঢাকায় থাকেন না? ঢাকায় তো এখন মহা আনন্দে সময়, দুইদিন পর নির্বাচন”। এবার ধরতে পারলাম, শহরে নির্বাচন, মেয়র নির্বাচন, তাই চারিদিকে এতো সাজসাজ রব। আর একারনেই আমি এতক্ষণ ধরে সবকিছুতে কোন একটা পরিবর্তন বুঝতে পারছিলাম, কিন্তু কিসে তা বুঝতে পারছিলাম না। এবার আবার ভালো করে খেয়াল করলাম, হুমম... চারিদিকে সাজসজ্জা বলে দিচ্ছে শহরে নির্বাচন। ধুর, আগে জানলে আরও দিন চারেক পরে ফিরতাম।

হাকিম চত্বরের কাছে যেতেই মহারাণীর সাথে দেখা হয়ে গেল। আমি প্রমোদ গুনলাম, মহারাণী এখন যে একখানা ঝাড়া ঝাড়বে! আগে থেকেই তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। তারেকের সাথে পটুয়াখালী গিয়ে আমি মোবাইল সুইচ অফ করে রেখেছিলাম। সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে গ্রামের প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া, ডুব দেয়া। মাঝে মনে হল মহারাণী যদি খোঁজ করে? তাই একদিন মোবাইল অন করতে গিয়ে দেখি, ব্যাটা হাতুড়ী সেটটা অন হচ্ছে না! অনেক চেষ্টা করেও কোনভাবেই তাকে অন করা গেল না। তাই হাল ছেড়ে দিয়ে ব্যাটাকে রেখে দিলাম।

মহারাণী আজ মেরুন রঙের একটা থ্রিপিস পড়েছে, তাকে লাগছে একটা জীবন্ত প্রজাপতির মত। আমি খুর ধীর পায়ে তার কাছে এগিয়ে গেলাম। মনে মনে একটা খসড়া কথোপকথন তৈরি করে নিলাম। মহারাণীকে কিভাবে সব বুঝিয়ে বলব।

‘কেমন আছ?’ আমি মহারাণীর সামনে গিয়ে খুব নরম কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম।

‘ও তুমি, একটু ধরবে এটা...’ বলে মহারাণী একটা কাগজের ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলতে লাগল। আমি চুপচাপ ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে রইলাম। কথা শেষ করে সে আমার কাছে এসে ব্যাগটা চেয়ে নিল।

‘কি? বাবুমশাই? তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ?’ মহারাণী মিষ্টি হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল।

‘আমি? তোমার উপর রাগ করব? কেন?’ আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কার রাগ করার কথা, কে জিজ্ঞাসা করে...

‘না আসলে হয়েছে কি জান, আমার মোবাইল ফোনটা না ঠিক করতে দিয়েছি সপ্তাহ দুয়েক আগে। আর আনার সময় পেলাম না। এতো ব্যস্ত ছিলাম এই দুই সপ্তাহ...’ মহারাণী বলে যাচ্ছে এক নাগাড়ে আর আমি বোকার মত শুনে যাচ্ছি।

‘আমার মেজ ফুফা’র কথা বলেছি না তোমাকে? আরে ঐ যে শুধু রাজনীতির প্যাচাল পারে সবসময়... সেই ফুফা এবার কাউন্সিলর ইলেকশন করছে। আমরা সবাই, মানে আত্মীয়রা তার হয়ে এই দুই সপ্তাহ ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারনার কাজ করেছি, খুব মজা হয়েছে...’

‘ও...’ আমি নিজের মনে ঢোক গিললাম। কোথায় ভেবেছিলাম, আমার বিরহে মহারাণী হবে কাতর, এ দেখি আমায় ছাড়া মহা আনন্দেই ছিল।

‘বুঝলে খুব মজা হয়েছে এই কদিন। একবার মনে হয়েছিল তোমায়ও ফোন করে ডেকে নেই, তুমি একটু দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দিতে পারবে’ বলে মহারাণী অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।

‘আচ্ছা... তো ডাকলেই পারতে...’ আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম।

‘নাহ... তোমায় দিয়ে এসব কাজ হবে না। তুমি আসলে এই টাইপের না, তুমি পার শুধু খাওয়া আর মেসের ঘরে পড়ে পড়ে ঘুমাতে...’

‘তাই নাকি? আচ্ছা আমি তাহলে যাই, আমার সত্যি ঘুম পাচ্ছে। মেসে গিয়ে ঘুমাতে হবে...’

‘ওমা! সোনা বাবু দেখি আবার রাগ করে...’ মহারাণী আমার হাত টেনে ধরল।

‘না, রাগ করছি না... আমার সত্যি ঘুমাতে হবে... আমি যাই।’ হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

‘ওওও... ওকে, যাও... আজকের পর আর আমার চোখের সামনে আসবে না। মনে থাকে যেন।’ মহারাণী গম্ভীর হয়ে কথাগুলো বলল। উজ্জ্বল সুন্দর মুখ জুড়ে যেন কালো মেঘের ঘনঘটা এসে জমল।

‘মানে কি?’ আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।

‘কোন মানে নাই, যা বললাম মনে থাকে যেন।’ বলে মহারাণী উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল।

আমিও মহা বিরক্ত হয়ে আর তাকে ডাকলাম না, ভালো লাগে না এই রোজকার যন্ত্রণা। কোথায় আমি ডুব দিয়েছিলাম ভেবে সকাল সকাল আবেগী হৃদয় নিয়ে দেখা করতে এলাম মহারাণীর সঙ্গে। ওমা! উনি এই দুই সপ্তাহ আমার কোন খোঁজই করেন নাই, উনি ব্যস্ত ছিলেন ফুফা’র কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে। থাক তুমি তোমার ফুফা আর তার নির্বাচন নিয়ে, মহারাণী... তোমার কেউ নইকো আমি।

মহারাণী'র কেচ্ছা সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
আহা রঙ, আহারে জীবন (মহারাণী’র কেচ্ছা - ০৩)
ক্যানে পিরীতি বাড়াইলিরে... (মহারাণী’র কেচ্ছা০২)
মহারাণীর কেচ্ছা - ১ (ছোট গল্প)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×