somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিমলা - কুফরি-ফাগু ((সিমলা-মানালি-রোহটাং পাস ভ্রমণ ২০১৫)

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :









আগের পর্বঃ সিমলা - ফ্রম শ্রীনগর ভায়া দিল্লী (সিমলা-মানালি-রোহটাং পাস ভ্রমণ ২০১৫)

ভোরবেলা ঘুম ভাঙতে টের পেলাম রাতের সেই প্রচণ্ড শীত এখন তেমন নেই। আমাদের পুরো ট্যুর শিডিউল এর ন্যায় এদিনও আমরা দ্রুত তৈরি হয়ে যে যার যার রুম থেকে রিসিপশনে এসে জড়ো হলাম। রিসিপশনে বছর বিশের একটা মেয়ে বসে ছিল, হাস্যমুখে স্বাগত জানাল। নাস্তা তৈরি ছিল, ডাইনিং এ বসতেই পরিবেশন করা হল। শীতের দিনে গরম গরম ফুলো ফুলো রুটি, সবজি, ডিম অমলেট, ব্রেড-বাটার-জেলি দিয়ে নাস্তা সেরে চা পান করছি, তখন বিপিন সাহেবের ফোন পেলাম। আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড বিপিন জানাল, আমরা যেন সেই পার্কিং এলাকায় এসে তাকে ফোন দেই। কাশ্মীরে থাকা কালেই এজেন্ট আমাদের বিপিনের মোবাইল নাম্বার মেইল করে দিয়েছিল। নাম্বার সবার মোবাইলে সেভ করে রেখেছিলাম, যে কোন প্রয়োজনে যেন যোগাযোগ করা যায়। নাস্তা শেষ করে হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় রিসিপশনের মেয়ের কাছ থেকে কমপ্লেইন খাতা নিয়ে আগের রাতের ঘটনার জন্য আমার অভিযোগ লিখে দিলাম। হোটেল মালিকের খোঁজ করলাম, উনি অফিস টাইমে থাকেন হোটেলে, এই সাত সকালে নেই। কি আর করা, সকালের আলোয় সিমলা শহরে দেখতে দেখতে আমরা পার্কিং এলাকার দিকে এগিয়ে গেলাম।













আমি, আমার ট্যুর প্ল্যান করার সময় বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে স্টাডি করে নেই। আশেপাশে টুরিস্ট ডেসটিনেশন কি কি আছে, ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। কেননা, মধ্যবিত্তের তো বারবার একই জায়গায় ভ্রমণ হয় না, তাই না। এজেন্ট প্রথমে যে প্যাকেজ অফার করেছিল, তা ছিল চার রাত পাঁচ দিন এর। কিন্তু সেখানে সিমলা’র “কুফরি-ফাগু” আর “মানালিতে” মানিকারান দর্শন বাদ ছিল। ট্রিপ এডভাইজার সহ বেশ কিছু সাইটে রিভিউ পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই জায়গা দুটো বাদ দেয়া যাবে না। তাই, আজকে আমাদের গন্তব্য “কুফরি-ফাগু”। পার্কিং এরিয়ার পৌঁছে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করতেই বিপিন তার গাড়ী নিয়ে হাজির। দ্রুত গাড়ীতে উঠে পড়লাম, সেখানে গাড়ী দাঁড়াতেই দেয় না। পাহাড়ি সরু রাস্তা, অল্পতেই জ্যাম লেগে যায়, তাই কোন গাড়ী সেখানে দাঁড়াতে পারে না। আমরা উঠে বসতেই বিপিন গাড়ী স্টার্ট দিল কুফরি’র উদ্দেশ্যে।





সিমলা উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী। উত্তরে মান্ডি এবং কুল্লু জেলা, পূর্বে কিন্নুর, দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তরখান্ড এবং সোলান-সিমুর জেলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ইংরেজ শাসনামলে সিমলাকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সময়টা ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দ। ১৮৭১ সাল থেকে সিমলা পাঞ্জাবের রাজধানী ছিল, পরে ১৯৭১ সালে হিমাচলের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়। মাত্র দুই লক্ষ লোকের আবাস এই সিমলায়, যা ভারতের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার প্রাদেশিক রাজধানীও বটে। রাজনৈতিক পটভূমিতে সিমলার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।। ১৮১৭ সালে সিমলা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। এখানকার আবহাওয়া এবং প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশরা এখানে হিমালয় রেঞ্জের বনভূমির নিকটে শহরের পত্তন করে। সিমলা’র অনেকগুলো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনার মধ্যে আছেঃ “Simla Accord of 1914”, “the Simla Conference of 1945” এবং “Simla Agreement of 1972”।

২০১১ এর পরিসংখ্যান মতে সিমলা মোট ১৯টি পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত, অঞ্চলগুলো হলঃ Baghal, Baghat, Balsan,Bashahr, Bhajji, Bija, Darkoti, Dhami, Jubbal, Keonthal, Kumharsain,Kunihar, Kuthar, Mahlog, Mangal, Nalagarh (Hindur), Sangri and Tharoch। সিমলার বেশীরভাগ অঞ্চল ঘন বনভূমি ছিল এবং একমাত্র জাখো মন্দির এবং তদসংলগ্ন কয়েকটি ঘরবাড়ি ছিল উনিশ শতকের শুরুর দিকে। ১৮০৬ সালে নেপালের ভিসমেন থাপা আজকের সিমলার দখল নেন। পরে ১৮১৪-১৮১৬ সালের দুই দফায় যুদ্ধের পর এর দখল চলে যায় ইংরেজদের হাতে। ১৮১৯ সালে লেঃ রোজ এখানে একটি কাঠের কটেজ নির্মাণ করেন। তিন বছর পর প্রথম পাকা দালান গড়ে ওঠে ১৮২২ সালে। ১৮২৫-১৮৩০ সালের দিকে বিভিন্ন ব্রিটিশ প্রশাসক এবং কর্মচারীরা ছুটি কাটাতে সিমলা আসেন এবং এর আবহাওয়া-প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট করেন যার প্রেক্ষিতে ১৮৩০ সালে এখানে বসত গড়ার উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ রাজ। ১৮৩২ সালে গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেণ্টিক এবং তৎকালীন মহারাজা রণজিৎ সিং এর মধ্যে একটি রাজনৈতিক সভা হয় এই প্রেক্ষিতে। ১৮৪৪ সালে সিমলার বিখ্যাত চার্চটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সিমলা পূর্বে দুটি খণ্ডে বিভক্ত ছিল, ছোট সিমলা এবং মূল সিমলা। ১৮৫০ সালে দুই সিমলার মাঝে সেতু নির্মিত হয়ে সংযোগ স্থাপিত হয়্য। ১৮৮১ সালের তথ্য মতে সিমলায় প্রায় দুই হাজার বসত বাড়ী ছিল। ১৯০৫ সালে বিখ্যাত অকল্যান্ড টানেল এবং তার পরের বছর কলকা-সিমলা'র টয়ট্রেন খ্যাত রেল লাইন নির্মিত হয়; যা ২০০৮ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভৌগলিক দিক দিয়ে সিমলার উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফিট এবং দৈর্ঘে পূর্ব-পশ্চিমে নয় কিলোমিটার বিস্তৃত। সিমলার সবচেয়ে উঁচু স্থান জাখু হিল যেখানে জাখু মন্দির অবস্থিত, উচ্চতা আট হাজার ফিটের একটু বেশী।













=============================================================================
নীচের এই তথ্যবহুল লেখাটি পাঠকের জন্য তুলে দেয়া হল এই লিংক থেকেঃ
সিমলা - হিমাচল প্রদেশ (http://www.bengali.allownders.com)

সিমলা
ভারতের উত্তরীয় রাজ্য, হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত সিমলা হল একটি খুবই জনপ্রিয় শৈল শহর। ঊনিশ শতকের পূর্ব থেকেই এটি শৈল শহর হিসাবে খ্যাত। সুস্থির পরিবেশ, তুষারাবৃত শৃঙ্গ ও ঐশ্বর্য্যশালী দৃশ্যের সঙ্গে মনোরম জলবায়ু সমন্বিত এই স্থান 1864 সালে ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসাবে গড়ে উঠেছিল। ব্রিটিশরা তাদের নিজস্ব অপরিমোচনীয় ছাপ এই শৈল শহরটির উপর ছেড়ে গেছে এবং প্রচুর আকর্ষণের মধ্যে এই ইংরেজীয়ানা পর্যটকদের আকর্ষিত করে।

সিমলার আকর্ষণ

জাখু পাহাড় ও জাখু মন্দির: জাখু পাহাড় হল সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য নিদারুণ দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় স্থিত জাখু মন্দির প্রভু হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্থানীয় কিংবদন্তিদের অনুমান অনুযায়ী, সঞ্জীবনী ঔষধি বিদ্যমান এই পাহাড়টিকে তুলে নিয়ে আসার সময় প্রভু হনুমান এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, এই স্থানটি একইভাবে ভক্ত এবং ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ভ্যাইসরিগেল লজ: অবসারভেটারী পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভ্যাইসরিগেল লজ 1898 সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এই স্থানটি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আ্যডভান্স স্টাডিজ। লজটি শুধুমাত্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মধ্যে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে না, বরঞ্চ সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়।

সামার হিল: বাণিজ্যিক সিমলার শশব্যস্ততা থেকে দূরে কোনও স্থান অন্বেষণকারী পর্যটকদের মধ্যে সামার হিল হল খুবই জনপ্রিয়। এর পথের চারপাশে ওক, সেডার, রডোডেনড্রন এবং আরোও অনেক গাছপালা বেড়ে উঠেছে। এখানে অবস্থিত ম্যানরভিল্যে ম্যানশন হল এই এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত ভবন, কারণ এটিই সেই জায়গা যেখানে মহাত্মা গান্ধী সিমলা ভ্রমণের সময় ছিলেন।

দ্য রিজ্: এটি একটি উন্মুক্ত স্থান, যেটি সিমলার সবচেয়ে বেশি কার্যকলাপ কেন্দ্র রূপে পরিচিত। দ্য রিজ্ বা শৈলশ্রেণীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক আছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম আয়োজনের পাশাপাশি এখান থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতগুলির এক সুন্দর দৃশ্য পরির্শনেরও প্রস্তাব দেয়। শহরের এই অংশটি সিমলার জনজীবনের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির নীচের জলাশয় শহরের একটি প্রধান অংশে জল সরবরাহের দায়ভারে রয়েছে।


মল্ রোড: সিমলার বিপূল সংখ্যক ল্যান্ডমার্ক এখানে অবস্থিত হওয়ায়, মল রোড পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু রেস্তোঁরা, ক্লাব, বার ও দোকান অবস্থিত হওয়ায় এটি সিমলার বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসাবেও বিবেচিত হয়। যেকোনও ক্রেতাদের জন্য মল রোড স্বর্গোদ্যানের ন্যায়।

ক্রাইস্ট চার্চ: এটি 1844 সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম গির্জা। ক্রাইস্ট চার্চটি রিজ্-এ অবস্থিত এবং এটি তার এলিজাবেথীয় স্থাপত্য ও তার নকশায়িত কাঁচের জানলার জন্য পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও গির্জাটিতে একটি পাইপ অর্গান রয়েছে, যেটি দেশের সবচেয়ে এক অন্যতম বৃহৎ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি তাদের জন্যই আদর্শ যারা আধ্যাত্মিকতার সাথে সাথে ইতিহাসের এক নিদর্শনকে খুঁজে চলেছে।

সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল: সেন্ট মাইকেল চার্চ 1850 সালে নির্মিত হয়েছিল। এটা সিমলার প্রথম ক্যাথলিক গির্জা। এটিতে পাঁচটি মার্বেলের বেদী আছে যেগুলি 1855 সালে ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়াও গির্জাটিতে সুন্দর নকশায়িত কাঁচের জানলা রয়েছে, যেগুলি চোখদুটিকে উচ্ছাসিত করে তোলে।

গেইটি থিয়েটার: এই থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চটি, সিমলায় ব্রিটিশ বাসিন্দাদের বিনোদনের সুযোগ প্রদানের জন্য 1887 সালে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটির নব্য-গোথিক স্থাপত্য লালিত নেত্রের জন্য এক সুন্দর দৃশ্য। এখানে একটি প্রদর্শনী সভা, একটি আ্যম্ফিথিয়েটার ও অন্যান্য বহু সুযোগ-সুবিধা সহ একটি শৈল্পিক গ্যালারি রয়েছে। যেকোনও সূক্ষ শিল্পপ্রেমীদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।

কালকা-সিমলা রেলওয়ে: টয় ট্রেন যা ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে সিমলাকে, কালকা শহরটির সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছে এবং শহরটিতে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে অন্যতম জনপ্রিয় রাস্তা তবে এটি খুবই ধীর। তবে, পারিপার্শ্বিক দৃশ্য পরিদর্শনের জন্য যে কারোও কাছে এই 96 কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকটি খুবই সুন্দর। রাস্তা বরাবর, ভ্রমণার্থীরা চারপাশের অঞ্চলের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শন করতে পায়। রেলটি 103-টি সুড়ঙ্গপথ ও 806-টি সেতুর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে।

তত্তপানি: সিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তত্তপানি-তে অবস্থিত সালফিউরাস উষ্ণ প্রসবণ অনেকের মতে ভেষজ উপকারিতা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং সেই কারণেই চিকিৎসক পর্যটকদের জন্য তত্তপানি একটি খুবই জনপ্রিয় স্থান। উষ্ণ প্রসবণের পাশাপাশি, শতদ্রু নদীর ঠান্ডা জল রিভার র‍্যাফটিং-এর সুযোগ প্রদান করে।

কোটগড়: কোটগড়, সিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, প্রাচীন হিন্দুস্তান-তিব্বত সড়কের উপর অবস্থিত এবং এটি আপেল বাগানের জন্যও প্রসিদ্ধ। এটি এমন একটি স্থান যেখানে 1914 সালে হিমাচল প্রদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ফলের বাগান স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, কোটগড় প্রকৃতপক্ষে হিমাচল প্রদেশের এক অন্যতম প্রধান আপেল রপ্তানীকারক স্থান হয়ে ওঠে।

সিমলা জল-অববাহিকা অভয়ারণ্য: 10.25 বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যটি সরলবর্গীয় অরণ্য, খাড়াই ভূখণ্ড এবং ক্ষু্দ্র প্রবাহের গৃহস্থল। সিমলার 12 কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই স্থানটি হল বাদামী ভালুক, কৃষ্ণকায় হরিণ, ভারতীয় লাল শেয়াল ও ডোরা-কাটা হায়নার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।


=============================================================================

কুফরি হিমাচল প্রদেশের সিমলা জেলার একটি ছোট্ট হিল ষ্টেশন। সিমলা শহর থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ২২ এর দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই শহরটি। ‘কুফরি’ শব্দটি স্থানীয় শব্দ ‘কুফ্র’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘লেক’। এখানে রয়েছে ‘হিমালায়ান ওয়াইল্ড লাইফ জু’। মজার ব্যাপার ১৮১৯ সালের আগে এই এলাকা মানুষের অজানা ছিল, মাত্র দুইশত বছর আগেও!!! একদল ইংরেজ পর্যটক বনের ভেতর দিয়ে ট্র্যাভেল করতে গিয়ে আবিস্কার করেন এই অপার সৌন্দর্যের জায়গাটি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হিমাচল ট্যুরিজম এর উদ্যোগে এখানে উইন্টার স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয় যেখানে দেশ বিদেশ হতে হাজারো পর্যটক ভিড় করে। ফাগু কুফরি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রায় ২৫০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ফাগু শীতে স্কিয়িং আর উইন্টার স্পোর্টস এর জন্য দেশ-বিদেশ এর পর্যটকদের কাছে এবং গ্রীষ্মে স্থানীয়দের জন্য পিকনিক স্পট হিসেবে খুব জনপ্রিয়। এখানকার চুড়ো থেকে ‘গিরি উপত্যকা’র অসাম ভিউ দেখতে পাওয়া যায়।

কুফরিতে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ফিট উপরে অবস্থিত দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম সেরা একটি এমিউজমেণ্ট পার্ক। আমাদের শিডিউলে এটা লেখা ছিল না, যাত্রা পথের পাশে পড়ে বলে বিপিন সাহেব উদারতা দেখিয়ে আমাদের নিয়ে এলেন। চমৎকার এই পার্কের বাহিরে আমরা চা পান করলাম, ভেতরে ঢুকলাম না, কারণ পার্কে বেড়ানোর কোন প্ল্যান ছিল না। আর পার্ক বেড়ানোর তেমন ইচ্ছেও কারো ছিল না। তবে না বেড়িয়ে খুব মিস করেছি।









Adventure Resorts New Kufri হল হিমাচল প্রদেশের প্রথম এমিউজমেণ্ট পার্ক যা বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এবং এশিয়ার প্রসিদ্ধ একটি। সম্মুখের মাদকতাময় পাহাড়ের সৌন্দর্য আর তার সাথে হাইকিং, স্কিয়িং এবং আরও সব এডভেঞ্চার রাইড নিয়ে এই পার্কটি সাজানো হয়েছে। রাইডগুলোর মধ্যে অন্যতম “স্কাই সুইংগার”; ৩২ মিটার উঁচু এই স্কাই জাম্পিং রাইড ভারতে প্রথম যা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ৯০০০ ফুট উচ্চতার এডভেঞ্চার রাইড। এছাড়া রয়েছে বাঞ্জি ট্রেম্পলাইন (৪০ ফিট), জীপ লাইন (২০০ মিটার), ফ্রিশবি রাইড, সুইং ইট, গো কার্টিং, বাঞ্জি ইজেকশন ফর কিড, ক্যাঙ্গারু জাম্প, ওয়েভ ট্রেন, স্ম্যাশ কার, হরর হাউস। এছাড়া এডভেঞ্চার স্পোর্টস এর মধ্যে রয়েছেঃ ভ্যালী ক্রসিং, রোপ ব্যালান্সিং ব্রিজ, ব্যাম্বু ব্রিজ, ইউ রোপ ব্রিজ, বার্মা ব্রিজ এবং কমান্ডোজ নেট ক্লাইম্বিং। রয়েছে ফ্যামিলী রাইড, ফাইভ ডি মুভি, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট সহ নানান সুবিধা।







Adventure Resorts New Kufri এর ছবিগুলো সব নেট থেকে সংগৃহীত

কুফরি-ফাগু মূলত সিমলার মূল টুরিস্ট ডেসটিনেশন, অতি অবশ্যই শীতকালে। যদিও আমরা গিয়েছিলাম শীতের একটু আগে, বরফ তখনো পড়ে নাই। স্কিয়িং এর জন্য হাজারো পর্যটক কিন্তু কুফরি ভ্রমণে আসেন প্রতি বছর। কুফরি হয়ে আমরা ফাগু এলাম, এটা কুফরি’র একটি পর্যটন কেন্দ্র। ডিসেম্বর থেকে কুফরি’তে বরফ পড়া শুরু হয়। কিন্তু এই নন-সিজনেও দেখলাম পর্যটকের ভিড়। দেখা মিলল বাঙালী পর্যটকের, এমন কি বাংলাদেশী এক পৌঢ় দম্পতির সাথে সাক্ষাত হল। সেখানে গিয়ে আপনাকে ঘোড়ায় রাইড করতে হবে, আসলে না করলেও আপনি আধঘণ্টার কম সময়ে পায়ে হেঁটেই চলে যেতে পারবেন টপ ভিউ পয়েন্টে। সেখানে সময়টা খারাপ কাটবে না, দূরে 'মাহেসু পিক' দেখা যায়। এডভেঞ্চার প্রিয় ট্রেকার’রা কুফরি থেকে ট্রেকিং করে মাহেসু শিখরে আরোহণ করে থাকে।









বেশ কিছুটা চমৎকার সময় সেখানে কাঁটিয়ে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম দুপুরের প্রায় শেষ সময়ে। এবার পথে কোন রেস্টুরেন্ট লাঞ্চ করে সরাসরি চলে যাব সিমলা ম্যালে। ঘোড়ায় চড়ে ফের নীচে নেমে এসে গাড়ীতে করে রওনা হলাম সিমলা’র পথে।





















নীচের এই ছবিটা আমার খুব পছন্দের। এখানে পরে নিজেও একটা ছবি তুলছি, কিন্তু যে তুলে দিছে, সে আমি যেমন চাইছিলাম তেমন তুলতে পারে নাই। দুঃখ আর দুঃখ :P

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১১
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×