১।
এক ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারপাশে,
মৃত্যু ক্ষুদা আর রক্তের তৃষ্ণা সবার ভেতর,
যমদূতের অবসর,যমদূত এখন ছুটিতে।
প্রতিটি অপমৃত্যু কফির মগ হাতে তুলে দিচ্ছে বুদ্ধিজীবীদের,
কফির মগ হাতে নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা মানবতার পার্সেন্টিজ মাপছেন,
মুরীদরা কুর্ণিশ করে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজদের।
আমার জন্মের পর থেকে ঘটে যাওয়া সকল খুন ও ধর্ষণের দায় আমি মাথা পেতে নিচ্ছি,
খুন ও ধর্ষণের দায়ে শিঘ্রই আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন।
মৃত্যু দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি অনেক।
২।
আমার শৈশবের বিকেল গুলো অন্যরকম ছিলো। এক চৈত্রের বিকেলে এক প্যাকেট চিপস হাতে, গ্রামের পথ ধরে হাটতে হাটতে আমি হারিয়ে যাই। এমন এক অচেনা জায়গায় আমি চলে আসি যেখানে কাউকেই আমি চিনি না। আমি দাড়িয়ে পড়ি,কারণ তখন আমি তিনটি রাস্তার সংযোগ স্থলে। রাস্তাগুলো এর আগে কখনো আমি দেখি নি। চারপাশ দেখতে দেখতে আমি ভুলে যাই ঠিক কোন দিক থেকে আমি এসেছিলাম। চিপস খাওয়া তখনো শেষ হয় নি। পাশেই একটি গাছের শেকড়ে বসে আমি প্যাকেটের তলানিতে থাকা চিপসগুলি শেষ করি। দীর্ঘক্ষণ বসে বসে ভাবতে থাকি আমি ফিরবো কি করে! আমার সামনে যে রাস্তাটা ছিলো,সেই রাস্তার ধারেই ক্ষেত,ক্ষেত পেরুলে সুপারি বাগান। সুপারি বাগানের ওপাশে সূর্যটা নেমে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ঘনিয়ে আসছে আমার বাড়ি ফেরা না ফেরার সম্ভাবনা।
আজ এতদিন পর এসেও, আমার এরকমই হাটতে হাটতে এক অচেনা পথে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।শৈশবের সেই হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যায় ,পথে দেখা হওয়া ঐ কুঁজো বুড়িকে বলতে ইচ্ছে করছে, সেদিনের পেয়ারা গুলো খুব মিষ্টি ছিল।
৩।
সফলরা নয়,জগতের সকল ব্যর্থরাই আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
৪।
কবুতরের পায়ে বেঁধে চিঠি এসেছে বিকেলে,
বকুল ফুলের মালাটি কি শুকিয়ে গেছে?
লিখলে না।
শুধু লিখলে,তোমার পাশে যে শিশুটি শুয়ে আছে, তার নাম সন্ধ্যা।
এভাবে,
এক সন্ধ্যায় দেয়া বকুল ফুলের মালাটি তার সুভাস হারায়।শুধু থেকে যায় একটি সন্ধ্যা,সন্ধ্যা একটি শিশু।
৫।
৫.১।
নিঃসঙ্গতার ধ্যান ভেঙে যায়, মগ্নতার সমুদ্র থেকে উঠে এসে আবিষ্কার করি এক নষ্ট পৃথিবী। অবাক হয়ে দেখি, কুকুরের পাশে শুয়ে থাকে মানুষ। অভুক্ত মানুষ অনাদরে পড়ে থাকে ডাস্টবিনের কিনারায়।
৫.২।
একদিন নগরীর দেয়ালে দেয়ালে সাঁটা থাকবে আমার জীবনের এপিটাফ। শূন্য একটা পাতা জুড়ে আমার সমস্ত জীবন বৃত্তান্ত
লিখা থাকবে, একটি বাক্যে, ‘জগতের সকল ব্যর্থতা গায়ে মেখে এই মানুষটা সুখি ছিলো।’
৬।
প্রেমে ব্যর্থ হওয়া প্রথম মানুষটার গল্প কোন গ্রন্থেই নেই জানি। কি এক শূন্যতার সূচনা করে গিয়েছে সে। কি এক ব্যথা সে ছড়িয়ে দিয়েছে কয়েক সহস্র বছর ধরে। যে ব্যথা নিবারণের কোন ঔষদ আবিষ্কার হয় নি। হৃদয়ের কোন ডাইক্লোফেনাক নেই।
৭।
নক্ষত্রের আলোতে তোমার কোলে শুয়ে যারা মদ খাচ্ছে, তোমাকে তারা ভালোবাসে।
একদিন হাহাকার মিটাতে ভালোবাসা হাতে আমি অভিলাষ হয়ে আসবো, প্রিয় সমেশ্বরি।
এ কি নিদারুণ হাহাকার তুমি সেঁটে দিলে হৃদয়ে।
৮।
চোখ বুজলেই পাতা কুড়ানো একটি বিকেলের ছবি ভেসে উঠে। সূর্য ডোবার দোহাই দিয়ে কিছু পিঁপড়ের কঙ্কাল জুতার তলায় লেগেছিল সেদিন সন্ধ্যায়। পলেস্তর খসে পড়ে বুড়িয়ে যাওয়া একটা বাঁধানো নিঃসঙ্গ পুকুর ঘাঁটে, পা ভেজাতে ভেজাতে পৃথিবীর আদিম আয়নায় চোখ পড়ে। বুঝতে পারি কিছু মানুষের আকাশ নিচে থাকে; কিছু কিছু দেহে হৃদয় থাকে না। কিছু কিছু হৃদয় অনর্থক ভীড় করে আছে পৃথিবীতে।