somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদঃ The Death Of A Government Clerk(কেরানির মৃত্যু)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তন শেখভ।খ্যাতনামা এই রুশ সাহিত্যিক এর একটি ছোটগল্প অনুবাদ করার ইচ্ছা জাগল।গল্পের নাম The Death Of A Government Clerk(কেরানির মৃত্যু)। শেখভের এই গল্পটি হয়ত অনেকেরই পড়া আছে।
লেখকের প্রতি রইল শ্রদ্ধা।
=======================
এক চমৎকার সন্ধ্যা। সরকারি কেরানী ইভান দিমিত্রিচ শেরভাখভ স্টলের সেকেন্ড রো তে বসে আছে। চোখে অপেরা গ্লাস দিয়ে অপেরা উপভোগ করছিল। দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে পড়ল। কিন্তু হঠাৎ... গল্পে প্রায়ই ‘কিন্তু হঠাৎ’ শব্দটির সাথে পরিচিত পাঠকেরা। লেখকেরা ঠিকই বলে থাকেন,জীবন সারপ্রাইজ মানে ঘটন-অঘটনে পরিপূর্ণ।
হঠাৎ তার সারা মুখ কেঁপে উঠল। চোখ বুজে ফেলল। নিঃশ্বাস থমকে গেল। অপেরা গ্লাস চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নিচু হল আর... “হ্যাঁচ্চো”। ঠিকই ধরেছেন ; হাঁচি দিল সে।
যত্রতত্র হাঁচি দিয়ে ফেলাটা কোন অন্যায় নয়। সবাই হাঁচি দেয়,পুলিশ কর্মকর্তা রা দেয়,প্রাইভি কাউন্সিলার এর লোকেরাও দেয়।সব লোকেই কমবেশি দেয়। শেরভাখভ তার ব্যতিক্রম নয়। রুমাল বের করে সারামুখ মুছে ফেলল সে। তারপর নিতান্ত ভদ্রলোকের মত এদিকসেদিক দেখতে লাগল- তার হাঁচির কারণে কারো বিরক্তি ঘটেছে কিনা। হঠাৎ চোখ গেল ফ্রন্ট রো তে। প্রবীণ ভদ্রলোক তার গ্লাভস দিয়ে সন্তপর্ণে নিজের টেকো মাথা আর ঘাড় সাফ করছেন,সেইসাথে বিড়বিড় করছেন নিজে নিজে। চিনতে পারল ওঁকে – ব্রিজালহভ, ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের একজন সিভিলিয়ান জেনারেল উনি।
‘ওঁর গায়ে থুতু ছিটালাম আমি’- ভাবল শেরভাখভ। -‘যদিও উনি আমার ডিপার্টমেন্ট এর হেড নন,তবে ব্যাপারটা মোটেই ভদ্রোচিত হল না।আমার ওঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত’
শেরভাখভ কেশে নিল।তারপর,পুরো শরীর খানা ঝুঁকিয়ে দিল সামনে।জেনারেল-এর কানে
-‘মাফ করবেন। স্যার,আমি অনিচ্ছাকৃত ভাবেই...’
‘আরে।অসুবিধা নেই,অসুবিধা নেই’
‘প্লিজ,আমাকে মাফ করবেন।আমি আসলে বুঝতে পারি নি স্যার’
‘আহা।প্লিজ,এখন বস। আমাকে অপেরা শুনতে দাও’

শেরভাখভ ভীষণ লজ্জা পেল। বোকার মত হেসে ফেলল, তারপর স্টেজের দিকে চেয়ে রইল। তাকিয়েই ছিল কেবল, কিন্তু দেখছিল না কিছুই। তার মন থেকে আনন্দ চলে গিয়েছিল। একটা অস্বস্তিবোধ হতে লাগল মনে।ইন্টারভ্যালের ফাঁকে ব্রিজালহভের কাছে গেল।তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেলল আবার-
‘আমি স্যার না জেনেশুনেই কাজটা করে ফেলেছি। দেখেন স্যার,আমি আসলে...’
‘ওহ! যথেষ্ট হয়েছে । আমি ভুলে গেছি সব। তুমি বাদ দাও এখন’ – অধৈর্য্য ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন জেনারেল।
‘উনি ভুলে গেছেন।তবে,আমি তাঁর চোখে রাগ দেখতে পেলাম’ – আড়চোখে জেনারেলের দিকে চেয়ে কথাগুলো ভাবছিল শেরভাখভ। ‘উনি এখন আমার সাথে কথাও বলতে চাইছেন না। আমার ব্যাপারটা ওনাকে এক্সপ্লেইন করা দরকার...যে,আমি ইচ্ছা করে কাজটা করি নি ...এটাই স্বাভাবিক সৌজন্য,নাহলে উনি আমাকে ভুল বুঝতে পারেন ।যদিও এখন উনি কিছু বলছেন না,কিন্তু পরে ঠিকই বাজে ভাববেন আমাকে’
বাড়ি গিয়ে ঘটনা খুলে বলল বউকে শেরভাখভ। ঘটনাটি বউ যেন হালকা ভাবে নিল,একটু ক্ষুন্ন হলে শেরভাখভ।বউ যখন জানতে পারলো লোকটি অন্য ডিপার্টমেন্টের তখন একটু নিশ্চিতবোধ করল।
-‘তুমি বরং আরেকবার ওনার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিও’-বউটি বলল-“নাহলে উনি তোমাকে অভদ্র ভাবতে পারেন’
‘সেটাই! কিন্তু আমি একবার ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। কিন্তু,উনি ব্যাপারটাকে ভালোভাবে নেননি মনে হল ।আমাকে তেমন কিছু বলেনও নি। আসলে বলবার মত সময়ও ছিল না তখন’
পরের দিনই শেরভাখভ নতুন ইউনিফর্ম পরল। চুলটুল কেটে বেশ পরিপাটি হয়ে গেল ব্রিজালভের কাছে। সোজা জেনারেলের রিসেপশান রুমে চলে গেল । বেশ কয়েকজন পিটিশনার বসে আছে,তাদের মধ্যে জেনারেল নিজেও আছেন। তাদের সাথে কথা বলছেন। বেশ কিছুক্ষণ পর জেনারেল তাকালেন,দেখতে পেলেন শেরভাখভ কে।
‘আর্কাদিয়ায় গতকাল। আপনি যদি মনে করতে পারেন,স্যার’- শেরভাখভ শুরু করল –‘আমি হাঁচি দিয়েছিলাম, স্যা...’
‘হোয়াট নন্সেন্স।এসব কি?’ –জেনারেল বললেন,তারপর পরবর্তী পিটিশনারের দিকে তাকিয়ে- ‘আপনার জন্য আমি কি করতে পারি এখন?’
‘উনি কথাই বলবেন না’ ভাবল শেরভাখব।পাংশুটে হয়ে গেল মুখখানা ‘তার মানে উনি খেপেছেন ,না এভাবে হবে না।আমার ওনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে’
আলোচনাপর্ব শেষ করে জেনারেল ভিতরের দিকে চলে যেতে উদ্যত হলেন।
শেরভাখভ লম্বা পা ফেলে তার দিকে গেল।
‘স্যার। আপনাকে বারবার বিরক্ত করছি। আসলে আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে কারণ আমি ইচ্ছা করে ওইটা করিনি।বিশ্বাস করুন স্যার’
প্রচন্ড বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে আসল জেনারেল,হাত নাড়লেন।
‘কেন আমাকে নিয়ে তামাশা করছেন আপনি?বলুন তো স্যার’ –শেরভাখভের মুখের উপর দরজা টা লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন উনি।
‘তামাশা?’-মনে মনে ভাবল শেরভাখভ। ‘তামাশা কোথায়? উনি একজন জেনারেল।বুঝছেন না কিছুই। এরকমই যখন করলেন উনি,ক্ষমা চাইতে যেয়ে আর কাজ নেই আমার।চিঠিই লিখব বরং একটা।যাবো না আর আমি।যাবো না’
বাড়ি ফিরতে ফিরতে এসব ভাবছিল শেরভাখভ। চিঠি সে লিখল না অবশ্য। ভাবল আর ভাবল ,কিন্তু লিখতে পারল না। নিজে সরাসরি গিয়েই সব বলবে আগামিকাল।
‘স্যার,আপনাকে গতকাল বিরক্ত করেছি আমি’ –বলল শেরভাখভ, কৌতূহলের দৃষ্টিতে জেনারেল যখন তাকে দেখছিলেন,শেরভাখভ বলল- ‘আপনি বললেন আমি নাকি তামাশা করছি,ব্যাপারটা স্যার মোটেই তা নয়।আপনার উপর হাঁচি দেয়ার কারণে আমি লজ্জিত...কিন্তু তামাশা স্যার?সেটা আমি ভাবতেও পারি না।আপনার সাথে কোন সাহসে তামাশা করতে যাবো স্যার?তামাশা করা ভালো কাজ নয়...’
‘দূর হও’- জেনারেল চিৎকার করে উঠলেন।
‘কি?’ ভয় আর আতঙ্ক জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল শেরভাখভ।
‘দূর হও’-আবারো বললেন জেনারেল।
পেটে যেন কিসে মোচড় দিয়ে উঠল শেরভাখভের। চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে,কিছুই যেন আর বোধগম্য হচ্ছে না শেরভাখভের। ধীরে ধীরে দরজা ঠেলে রাস্তায় নেমে আসল। যন্ত্রের মত হেঁটে পৌঁছল বাড়ি। ইউনিফর্ম না খুলেই শুয়ে পড়ল সোফায়... মারা গেল শেরভাখভ।
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×