somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমুর ভবিষ্যৎ

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শ্রদ্ধেয় হূমায়ুন আহমেদ স্যার প্রয়াত হওয়ার পর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ "হিমু" নিয়ে সাহিত্য বিশারদেরা চিন্তায় পরে গেলেন। তবে কি "হিমু" সিরিজ এভাবেই হারিয়ে যাবে? তবে আমার মত স্বনামধন্য লেখকের পক্ষে বিষয়টা লজ্জাজনক বটে! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দায়িত্বটা আমার কাঁধেই তুলে নেব। সেই সুবাদে লিখতে শুরু করে দিলাম।


হিমু নিয়ে আমার প্রথম সিরিজটা শেষের দিকে। রিভাইস দিচ্ছি বসে বসে। নামটা এখনো ঠিক করে উঠতে পারছি না। রাতটাও শেষ হতে চলেছে। ঘুম ঘুম চোখে শেষ লাইনটা লিখতে শুরু করি।
-লোকটি ঘুমিয়ে পড়লো.........।"
এমন সময় দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ।
-চা হবে? ঘুমানো দরকার!
-হবে। আপনি?
-আমি হিমু। যার সম্পর্কে এতদিন ধরে ছাইপাস লিখলেন তাকেই চিনতে পারছেন না?
বলেই লোকটি আমাকে ঠেলেই রুমে ডুকে পড়ে।
-এটা কি হলো?
-চা আনুন। বলছি!
-দাড়ান আনছি!
-দাড়ানোটা কি জরুরী?
-না। আপনি চুপ করে বসে থাকুন।


-তো আপনি হিমু?
লোকটি কোন উত্তর দেয় না।
-উত্তর দিন।
-আপনার হাতটা পকেট থেকে বের করতে পারেন। আমি ডাকাত নই।
আমি পয়েন্ট টুটু ক্যালিবার টা ছেড়ে হাত বের করলাম।
-তো হিমু সাহেব। হঠাৎ স্ব-শরীরে আগমণ?
-ভুল শুধরে দিতে এলাম!
-কিসের ভুল?
-হলুদ রঙ আমার পছন্দ নয়।
-বুঝলাম না!
-হুমায়ুন আহমেদ আমাকে বুঝে নি। আমাকে সারাদিন তপ্ত রাস্তায় হলুদ পাঞ্জাবি পড়িয়ে হাঁটিয়েছেন। একবারও জানতে চাননি আমার বাস্তবই কি হাঁটাহাটি ভালো লাগে কিনা? হলুদ রঙ আমার পছন্দ কিনা?
যাইহোক অন্তত আপনার কাছে এটা আশা করিনি!
-হলুদ রঙ অপছন্দ কেন?
-ধুর মশাই। হলুদ কোন রঙ হলো? হলুদ তো মানব বিষ্ঠাও হয়? ছাই রঙ হলেও আপত্তি ছিল না। যদিও ছাইয়ের ব্যবহার কদাচিৎ। তাও মাঝে মাঝে হকারের কন্ঠে শোনা যায়,
-এই ছাই লাগবে ছাই?
একবার চিন্তা করেন আপনার কানে একটা শব্দ এলো,
-এই গু লাগবে গু? আপনার তখন অনুভুতি কি হবে?
এই পর্যন্ত বলে হিমু নামধারী লোকটা আমার দিকে তাঁকায়।
আমি কিছু বলার আগেই সে বলে উঠে।
-আরেক কাপ চা হবে?

লোকটি ২য় বারের মত চা খাচ্ছে। বিড়াল যেমন দুধ খায় তেমনি করে। চুক চুক শব্দ হচ্ছে।
-বুঝলেন লেখক সাহেব? চা পান করাটা হচ্ছে একটা শিল্প। যেটা সবাই পারেনা।
-বুঝলাম। তা আপনি কি বিদায় হবেন নাকি ফ্লাক্স সহ নিয়ে আসবো?
-না আমি দিনে দুইকাপের বেশি খাই না। পাতলা কাঁথা হবে? কাঁথা ছাড়া ঘুমটা ঠিক জমে না।
-কোথায় ঘুমুবেন?
-কেন খাঁটে! কোন সমস্যা?
-না সমস্যা নাই। তবে খাঁটটা তো সিঙ্গেল বেডের।
-ও আমার হয়ে যাবে।
-আমি?
-আপনি লেখাটা শেষ করুন। সকাল হয়ে এলো বলে।
-দেখুন আপনি যথেষ্ট সময় নষ্ট করেছেন আমার। আমি জানি আপনি হিমু টিমু কিছুই নন। সেটা আপনিও ভালই জানেন। কি উদ্দেশ্যে এসেছেন সেটা বলে বিদায় হলে খুশি হবো।
-ঘুমাতে এসেছি। বিছানার চাদরটাতো বেশ! আপনি লেখক না হয়ে কবি হলেই পারতেন! লিখতেন, যখন চাদর কাঁথা হয়ে যায়...।

চাদর মুড়ি দিয়ে লোকটি ঘুমিয়ে পড়লো। আমার কি করা উচিত সেই মুহুর্তে ভেবে পেলাম না। একবার ইচ্ছে হলো লোকজন ডাকি। আরেকবার ভাবলাম, চাদরসহ পেচিয়ে মালটাকে ফুটপাতে ঝেড়ে আসি। পর মূহুর্তে ভাবলাম লোকটির দ্বারা কোন ক্ষতির সম্ভাবনা অন্তত নেই। হিমুরা আর যাই করুক কখনো কারো ক্ষতি করতে পারেনা।

-কি শেষ করতে পারলেন?
লোকটি কখন উঠে পড়েছে বুঝতে পারিনি। খেয়াল হলো সকাল হয়ে গেছে। লিখতে লিখতে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-হ্যা শেষ। শুধু নামটা বাকি।
-এক কাজ করুন। আপনি ফ্রেস হয়ে বাজার করে আসুন। আমি ততক্ষণে লেখাটা পড়ে যুতসই একটা নামকরণ করে ফেলি।
-আপনি তো ঘুমাতে এসেছিলেন? ঘুম হয়েছে? এইবার বিদায়!
-বাজার করে আসুন। নাস্তা করে চিন্তা ভাবনা করে দেখবো বিদায় নেওয়া যায় কিনা। এক জোড়া ইলিশ আনবেন। আজকে বেশ বড় ইলিশ পাবেন বাজারে।
-আপনি কি করে জানেন?
-রাতে শেষ রাতে আসার সময়ে এক মাছ ব্যাপারীর সাথে দেখা হয়েছিল। ওর ঝাঁকায় বড় ইলিশ দেখলাম। দিতে চাইলো নেই নি। আপনি গিয়ে নিয়ে আসুন ছোড়াটা কিছু টাকাও পাবে আবার ওর ইচ্ছেটাও পূরণ হবে। ওর অনেকদিনের ইচ্ছে আমাকে ইলিশ খাওয়াবে। আমার কাছে একসাথে এতটাকা হয়ে ওঠে না। যান আর কথা বাড়াবেন না।

এক জোড়া ইলিশ নিয়ে বাজার থেকে ফিরছি। অনেকদিন ইলিশ খাওয়া হয় না। উদ্ভট এক লোকের বদৌলতে অন্তত অনেকদিন পর ইলিশ খাওয়া হবে। ভাবতেই মন থেকে সব চিন্তা ভাবনা দূর হয়ে গেল। আর সাথে সাথেই মনে হলো লেখাটার নামটা পেয়ে গেছি।
"হিমুর ভবিষ্যৎ"। নামটা বেশ খাসা হয়েছে। ভাবতেই মনটা আন্দোলিত হয়ে উঠল। গুন গুন করতে করতে হাঁটার গতিটা একটু বাড়িয়ে দিলাম।

লেখার টেবিলে বসে আছি। হিমু নামধারী লোকটা চলে গেছে। পান্ডুলিপিগুলো বার বার উল্টেপাল্টে দেখছি। প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা কেমন চকচকে সাদা। এ ও কি সম্ভব? লেখাগুলো বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। মাথার চুল টানতে ইচ্ছে হলো। দুর্ভাগ্য সেটাও নেই। টাক মাথায় একবার হাত বুলিয়ে নিলাম। কিন্তু তাতে কোন ফল হলো না। মেজাজ টা বিগড়োতেই থাকলো। হঠাৎ চোখ পড়লো টেবিলের পাশে ছোট্ট একটা চিরকুটে।

-হিমুর কোন ভবিষ্যৎ থাকতে পারে না!
নিচে ছোট্ট করে একটা স্বাক্ষর।
-হু আ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×