somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবাইকে ওয়ার্ল্ড ফিসারীজ ডের মৎস্যয়ীয় শুভেচ্ছা

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২১ নভেম্বর "ওয়াল্ড ফিসারীজ ডে” হিসাবে সারা বিশ্বে পালন করা হয়। ইতিহাসে এই দিনে আহামরি কোন ঘটনা ঘটে নি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সভ্য মানুষের অসভ্য ক্রিয়া-কালাপে আমরা ফিসারীজ এক্সপার্টরা যেসব চিন্তা করি সেগুলো সবার জানানো বা বোঝানোর জন্য হলেও এই দিনটা দরকার। আগামী ২০৪৮ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব সমুদ্র থেকে মাছ উধাও হয়ে যাবে বলে অনুমান করছেন ইকোলজিস্ট ও ইকোনোমিস্টদের একটি আন্তর্জাতিক দল। হ্যালিফক্সের ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী বরিস ওয়ার্মের নেতৃত্বে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও পানামার বহু গবেষক একটি গবেষণার পর এ তথ্য জানিয়েছে পৃথিবীবাসীকে [১]। এর কারনটা কি?

১৯১৪ অর্থাৎ ১ম বিশ্বযুদ্ধের আগে একটা ছোট খাটো ফিসিং ট্রলারকে (কাঠ ও মান্দাত্বার আমলের যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত) মাছ ধরে আবার হার্বারে ফিরে আসতে সময় লাগত গড়ে ২-৩ দিন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের ৬ টা বছর সমুদ্রে বানিজ্যিক ভাবে কোন মাছ ধরা হয় নি। আমি আবারও বলছি, ২য় বিশ্বযুদ্ধের ৬ টা বছর সমুদ্রে বানিজ্যিক ভাবে কোন মাছ ধরা হয় নি। তো যুদ্ধের শেষের বছর জেলেদের জালে মাছের বন্যা বইতো। কারন, বিগত ৬ টা বছর পৃথিবীর মানুষ জ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে বা চাপে বা জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ের ঠ্যালায় সমুদ্র থেকে মাছ ধরতে পারে নাই। সাব কনশিয়াস কনজারভেশন। আর তাতেই এই মিরাকেল [২]।

আমাদের জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ছোট বড় বাছ বিচার করে না। আরে ভাই আমাগো জালে বাঁধছে, ফালায়া দেয়নে লাভ কি? জাটকা কি মা মাছ? জেলেরা সব ধরে আনে। কথাটা হলো অতি-আহরণ। ফিসারীজের ভাষায় আমরা বলি "ওভার ফিসিং "

গত দুই বছর বাংলাদেশের মৎস্য বিভাগের (আমরা ভালোবেসে ডাকি “ডফ”) চাপাচাপিতে উপকূল ও সমুদ্রের জেলেরা অভিযানের (গত দুই বছরের অভিযান ছিলো কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত রুগির মত টাইট) ভয়ে “হিলসা ফিশিং সাসপেন্ড পিরিয়ড” চলার সময় মাছ ধরতে নদীতে নামে নাই [৩]। ফলাফল টা কি?

তিস্তা নদীটা কোথায় জানেন তো [৪]? অংপুর (সরি, রংপুর), দিনাজপুর এলাকায় অর্থাৎ দেশের সর্ব উত্তরে। ইলিশ তার বিশাল পরিমাণ ডিম চেপে নিয়ে নাচতে নাচতে তিস্তা নদীতে চলে গেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ডফের সংরক্ষণ নীতির কারনে।

আর একটা ব্যাপার, বিশ্বে একুয়াকালচারের প্রচার প্রসারে নাচা-গানা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। আমরা যদি হুদাহুদি সংরক্ষনের নামে মাছ ধরা বন্ধ করে দিই তাতে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে। ইকোসিস্টেম ক্লপস ( প্লেগে আক্রান্ত ইউরোপের কবরস্থানের মত) খেয়ে যেতে পারে। আমি একটা নীতিতে বিশ্বাস করি। সেটা-

“পরিমিত সংরক্ষণ ও চাষ-
সমুদ্রে থাকবে মাছ, জেলের হাসি বারোমাস”।

কোহো স্যামন বলে একটা মাছ আছে, প্যাসিফিকে (প্রশান্ত মহাসাগর) পাওয়া যায়। এই মাছটার সংরক্ষণ যুদ্ধে নেমেছে কানাডার (যদিও দেশটার নাম হওয়া উচিত ছিল “ভালাডা”) সরকার। এর সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটা একদম দেখার মত এবং আমার খুব ভালো লেগেছে। পাহাড়ের উপরে যেখানে এই মাছটা হাজার কিলোমিটার সাঁতরে এসে ডিম দিতে আসে সেখানে বসানো হয়েছে হ্যাচারী। আর এক একটা হ্যাচারী থেকে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন পোনা আবার সমুদ্রে ছেড়ে দেয়া হয়। আর্টিফিসিয়াল কনজারভেশন আর কি। তবে কিছু একটা তো হচ্ছে [৫,৬]। (কোহো স্যামন প্রিজারভেশন নিয়ে ইউটিউবে একটা ডকুমেন্ট্রি “No Place for Salmon : Documentary on the Migration of Salmon and Conservation” আছে । চাইলে [৮] নং লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন। মেগাবাইট গুলা বৃথা যাবে না কথা দিলাম)

আমাদের ইলিশ নিয়ে এই রকম কিছু একটা করা যেতে পারে যদি না হয় (ইলিশ পুকুরে চাষ সম্ভব না) তবে অন্যান্য বিলুপ্ত প্রায় সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু না হবার চেয়ে কিছু একটা হচ্ছে এটাই হয়ত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নতুন নতুন সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে ভাবাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্তত বলতে যে, “ বাবা যে কয়টা মাছ দেখেছে এবং খেয়েছে আমিও সেগুলো দেখেছি ও খেয়েছি”।

শেষ করি ইহুদি মায়েদের গর্ভকালীন সন্তান পরিচর্যার গল্প দিয়ে। আমরা জানি পৃথিবীর সব জটিল জটিল বিদ্যার (রকেট সায়েন্স, আধুনিক ব্যবসা বিদ্যা, সংগীত) জনক হলো ইহুদিরা। আইনস্টাইন নিজেও জন্মেছিলেন ইহুদি পরিবারে (যদিও পরবর্তীতে নাস্তিক)। তো এই ইহুদি মায়েরা অন্য সময় মাংস খেলেও গর্ভকালীন সময়টাতে সামুদ্রিক মাছ ছাড়া আর কোন প্রোটিন নেন না। কারন মাছে বিভিন্ন মিনারেলসের পাশাপাশি, ভিটামিন থাকে যা বাচ্চার মেধা ও বুদ্ধি বিকাশে মারাত্বক সাহায্য করে। সর্বোপরি মাছ হলো সেফ প্রোটিন (নির্ভেজাল আমিষ) [৭]।

আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। আসুন মাছ খাই, চাষ করি ও সংরক্ষণ করি।

সবাইকে ওয়ার্ল্ড ফিসারীজ ডের মৎস্যয়ীয় শুভেচ্ছা।

২০৪৮ এর ভিতরে মহাসাগর মাছশুন্য২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মাছ ধরা বন্ধবাংলাদেশের নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধতিস্তা নদীকোহো স্যামন সংরক্ষণকোহো স্যামন সংরক্ষণ -২ইহুদি বাচ্চা মেধাবী হবার কারনস্যামন সংরক্ষনের ডকুমেন্ট্রি
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×