*** ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল । ***
হ্যালো ইমান আলী ? হ্যালো ? ? শুন্তে পাচ্ছেন ? আমি কমান্ডার ছাত্তার ? হ্যালো ?
ইমান আলী হল মাদ্রাসার একজন শেষ বর্ষের ছাত্র । এই মাদ্রাসা ঢাকা নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে অবস্থিত । বয়স ২৫ কিন্তু বিয়ে করে নি । এখন ও পড়াশুনা করে যাচ্ছেন । ইচ্ছে ছিল হুজুর হবেন । ছাত্রদের শিক্ষা দিবেন । কিছু টাকা আসবে যা দিয়ে মা এর কবরের পাশে একটু ইট দিয়ে শক্ত করবেন । নরম মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যায় । মায়ের এই কবর ছাড়া আর কিছু নাই তার জীবনে । এটাই তার আত্তীয় ও পরম আরামের জায়গা । সেদিন ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাতে অনেক মানুষের সাথে তাকে ও ধরে আনে শীতলক্ষ্যার পাশের হাইস্কুলে । এই হাইস্কুলে পাকিস্থানীরা ক্যাম্প করছে । সকাল জ্ঞ্যান ফিরলো ইমান আলীর । ঠিক করলো পালাবে । দামাল ছেলে আলী । সুঠাম দেহে একটু সাহস ফিরে পেল । কিন্তু কিভাবে পালাবে । হঠাত মাথায় বুদ্ধি এল । সে হাতের দড়ি খুলে আসতে করে টয়লেটে ঢুকে পড়লো । স্কুলের টয়লেট খুব বিশ্রি । অনেক মানুষের লাশ ফেলানো টয়লেটে । সেখানে সে আশ্রয় নিলো । এদিকে ক্যাম্পে চিল্লা চিল্লি শুরু ।
পাকিরা বলা বলি করছে "একজন বাঙ্গালী পালিয়েছে ।এলারট .এলারট ।।"
২ জন এলো বাথ্রুমে । ইমান আলী ছাদের একটা কাঠ ধরে উপরে ঝুলে ছিল । এভাবে ১০ মিনিট থাকার পর আর পারলো না । সে ঝাপিয়ে পড়লো ২ জন পাকির উপর । আজব হলে ও সত্য , সেদিন নিরীহ এই বাংলাদেশির হাতে হাতির শক্তি এসে পড়ল । ২ জন কেই গলা টিপে মেরে ফেলল । এবার সাহস করে তাদের ড্রেস পড়লো ও গুলাগুলো নিলো । একটা বোমা নিয়ে গোডাউনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো । উদ্দেশ্য , বারুদের গোডাউন উড়িয়ে দেওয়া । যেই চিন্তা সেই কাজ । পরবর্তী ২০ মিনিটে ঐ এলাকা শশান পুরি । সবাই মারা গেছিল । তার পরে আর কোন খেয়াল নেই আলীর । যখন জ্ঞ্যান ফিরে তখন সে একটা আর্মি ক্যাম্পে । এখানে সবাই বাঙ্গালী । একজন কমান্ডার তার কাছে এসে বলল " সাবাস বাঘের বাচ্চা । নেও আমাদের চিফের সাথে কথা বল ? আজ থেকে তুমি আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে । আমরা মুক্তি বাহিনী । "
আলীর কানে ফোন টা দেওয়া হল । ওদিক থেকে কমান্ডার সাত্তার কথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু আলীর কানে গোলাগুলির আওয়াজ আর গগন বিদারক বিস্ফোরণ । সে এখন ও বেরিয়ে আসতে পারে নি ঐ ঘটনা থেকে । তার চোখে ভাসছে ১ম নিজেকে হিংস্র রুপে দেখার দৃশ্য ।
মানুষ মাঝে মাঝে "এংরি হাল্ক " হয়ে যায় । সবই নিয়তির খেলা । এর পর ইমান আলী আর ভয় পায় নি । যুদ্ধে জিতেছে । কিন্তু ফিরে এসে মায়ের কবর পায় নি । পেয়েছে একটা " গন কবর " ।
আজো ঈমান আলীর নাতি "আলী" ( যে কিনা আমার সব লিখার নায়ক ) সেই শীতলক্ষার তীরে গন কবরে প্রতি স্বাধীনতা দিবসে মিলাদ পড়াতে যায় ।
আর বিজয় দিবসে সেখানে একটা মেলা হয় । সেই মেলা ও মিস করে না "আলি"