somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাল হওয়ার নেশায় :) - ( রমযান মাস উপলক্ষ্যে ছোট ও শিক্ষণীয় গল্প ) )

২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"রিফাত " ছেলেটা ক্লাস ৯ এ পড়ে । লিখাপড়ায় খুব ভাল তাই বাবা-মা তাকে কোন কাজেই বাধা দেয় না । বড়লোক বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান । ঢাকায় ৪ টা ফ্ল্যাট আছে তাদের ।
সে যা চায় তাই পায় । তাই বন্ধু মহলে তার অনেক সুনাম আছে । সব ছেলেরা তাকে খুব মেনে চলে । কারন ছেলেগুলা রিফাত থেকে হাত খরচ পেয়ে থাকে :) ...।

গান ও খেলাধুলায় সে প্রথম হয় । মেয়েরাও তার অনেক ভক্ত । অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে তার । সবাই তার টাকা ও মেধার পিছে ছুটে কিন্তু মন থেকে কেউ তাকে ভালবাসে না । এই কথাটা "রিফাত" জানতে পারে তার খুব কাছের এক ভাল ছেলে বন্ধু থেকে ...।।

ধীরে ধীরে ভাল বন্ধুগুলো সরে যায় আর খারাপ বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে থাকে ।রিফাতের সিগারেট ও বিয়ারের পার্টীতে যাতায়াত শুরু হয় । ছেলের এই অবস্থা তার বাবা-মাকে চিন্তায় ফেলে দেয় । বাবা-মা জেমসকে একটু বুঝানোর চেস্টা করে । তাকে ডেকে বাসায় একটি ফ্যামিলি মিটিং করে ।
মিটিং এ বাবা-মা বলেন " -
দেখ বাবা জেমস । তুমি আজ পর্যন্ত যা চেয়েছ তাই আমরা দিয়েছি । সামনে রমজানের মাস । আমরা চাই তুমি বন্ধুদের থেকে দূরে থাকবে আর বাসায় এক আলেম হুজুরের কাছে "নামায ও কুরআন " সহীসও শুদ্ধভাবে পড়া শিখবে । বাসার ভিতরে থেকে যা ইচ্ছে করতে পার । রোজার ছুটি। তাই বাইরে স্কুলের ঝামেলাও নেই । প্রাইভেট স্যারের বাসাও নেই। হাউজ টিচার বাসায় এসেই পড়াবেন । আশা করি বা্বা-মায়ের কথা মেনে চলবে । তমার সব কথা শুনেছি । আমাদের একটা কথা রাখ । মাত্র ১ টা মাসই তো " :)

রিফাত বাবা-মায়ের কথা ফেলতে পারে না । মাত্র একটা মাস দেখতে দেখতেই চলে যাবে । সে রোজার ১ম দিন থেকে হুজুরের কাছে "কুরআন ও হাদীশ " পড়ার নিয়ত করে ...।

যথা সময়ে রোজার ১ম দিনে হুজুর বাসায় চলে আসেন । হুজুরের লম্বা লম্বা দাড়ি ও বড় জুব্বা থাকার কথা । কিন্তু রিফাত যেমন টা ভেবেছিল, হুজুর তেমন টি নন । :)
একদম সাদা সিদে মানুষ । বয়স মাত্র ২৪-২৫ হবে । একটা শর্ট পাঞ্জাবী পড়েছেন । আর মুখে কোন দাড়ি নেই । জিজ্ঞেস করে জানাগেল , উনি ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ে "দর্শন" এর উপর পড়াশূনা করছেন । ফাইনাল ইয়ারে আছেন ...। :)
রিফাত তো অবাক !!! হুজুর মানুষ এতো সুন্দর ও স্মার্ট হয় তা ওর জানাছিল না ..।। :)

হুজুরের নাম "মোহাম্মদ আলী " ।
হুজুর বলেন " আমাকে তুমি আলী ভাই বলে ডাকতে পার " :)
১ম ২ দিন "আলী ভাই" শুধু ওয়াজ নসিহত ও রোজার ফজিলত বুঝিয়েছেন । কেন জানি ইসলাম ও তার এই মহা মুল্যবান মাসের বরকতময় বানী রিফাতের মন কে ছুয়ে দেয় ...।

আলি ভাই খুব ভাল বক্তা । মুখ দিয়ে যেন মধু ঝরে । আগে এমন মানুষ সে দেখে নি কখনো ।
রিফাতের ব্যাবহারে অনেক চেঞ্জ আসে । রিফাত কুরআন ও হাদীস শরীফ পড়াশুরু করে । আলী ভাই মাঝে মাঝে রিফাতকে নিয়ে ইফতার করতে মসজিদে যায় । সব গরীব ও অসহায় মানূষের সাথে ইফতার করে রিফাতের ভাল লাগতে শুরু করে । সেও "তারাবি নামায" শুরু করে । এভাবেই চলে যায় ৯ টি রোযা :)
রিফাতের এই উন্নতি দেখে রিফাতের বাবা খুশী হন ।তিনি "আলি ভাই" কে তাদের বাসায় " হাউস টিউটর " হিসেবে থাকতে বলেন । রিফাত অনেক অনুরোধ করে আলী ভাইকে রাজি করান :)
রিফাতের রুটিন টা এমন হয়ে ওঠে -- ;)
-- রাত ১১ টার মধ্যেই ঘুমুতে যাওয়া ।
--রাত ৩ টায় সেহেরী খেতে ওঠা ।
--সেহেরীর পড়ে আলী ভাইয়ের সাথে পাশের জামে মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া :)
-- নামায পড়ে মসজিদের হুজুরের তালিম শুনা । :)
-- তার পরে "আলী ভাইয়ের কাছে কুরআন শরীফ পড়া :)
--৯ টা ৩০ মিনিট থেকে ১২ টা পর্যন্ত একটু ঘুম দেওয়া ।
-- ১২ টা থেকে গোসল ও ১ টার দিকে আলি ভাইয়ের সাথে নামাযে যাওয়া ।
--মসজিদে আবার একটু তালিম শুনা । তারপরে বাসায় এসে পড়তে বসা । আসরের আজান পর্যন্ত পাঠ্য বই পড়া ।
-- তারপর আবার আলী ভাইয়ের সাথে আছরের নামায পড়া ।
-- আছরের নামাযের পড়ে বাইরে হাটতে যাওয়া । আলী ভাই রিফাতকে দুনিয়া আল্লাহর কি সৃষ্টি তা নিয়ে গল্প করেন । অনেক সাইন্টেফিক গল্প করেন যা রিফাতের ভাল লাগে ।
তাই সময় কোন দিক দিকে চলে যায় তা রিফাত বুঝতেই পারে না । :)

-- মাগরিবের আজানের আগেই মসজিদে যাওয়া । ইফতারীর থালা সাজাতে আলি ভাইকে সাহায্য করা ।
রিফাতের বাবা প্রতি মাসে এই মসজিদে হাজার হাজার টাকা অনুদান দিয়ে থাকেন । এই রমজানের সব ইফতার তিনিই করাবেন বলে জানিয়েছেন । রিফাতকে পাশে পেয়ে মসজিদের হুজুর ও খাদেম অনেক খুশি :)
-- মাগরিবের নামায শেষে বাসায় এসে পড়তে বসা ।
এই সময় কিছুক্ষন অংক করে মাথার জটিলতাকে দূর করার একটা প্রচেষ্টা মাত্র ।
-- রাত ৮ টা বেজে গেলে আলী ভাইয়ের সাথে এশার সালাত ও তারাবীহ পড়তে যাওয়া :)
তারাবীহ পড়ে বাসায় এসে একটু খেয়ে নেওয়া । এভাবে রুটিন করায় রিফাতের স্বাস্থ্য দিন দিন ভাল হতে থাকে । চিহারায় একটা সুন্দর ভাব চলে আসে :) । আলী ভাই বলেছেন " নামায পড়লে চিহারা সুন্দর হয় । হয় তো তাই আল্লাহর রহমতে সুন্দর হচ্ছে রিফাত " :)

মাত্র ১৫ টা রোযা যেতে না যেতেই রিফাত অনেক চেঞ্জ হয়ে যায় । ১ম রোজার দিন সিগারেট খেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল । এখন আর হয় না । মেয়েদের ফোন আসলে রিসিভ করে না । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে মন চায় না । সে শুধু আলী ভাইয়ের সাথে ইসলামিক আলোচনা করতে চায় । সাহাবীদের ইতিহাস শুন্তে চায় :)

২০ রোযা চলে । আজকে সেহেরীর পড়ে আলী ভাইকে আর দেখা গেল না । রিফাত তার রেগুলার কর্মকাণ্ড চালু রাখল । আলী ভাই নেই তাই রিফাতের কেমন জানি লাগল । আলি ভাইয়ের ফোন ও সুইচ অফ । :(
রিফাতের আর ভাল লাগছে না । আলী ভাইয়ের উপর রিফাতের একটা মায়া পড়ে গেছে । এই মায়া ভালোবাসার মায়া । প্রতিটা মুমিনদের একে অপরের প্রতি এমন ভালবাসা থাকা উচিত...।। :)

দুপুরের শেষ দিকে আলী ভাই রুমে আসে ।
রিফাত আলী ভাইকে অনেক প্রশ্ন করে । কোথায় ছিলেন , কি প্রবলেম আরো অনেক প্রশ্ন । কিন্তু আলী ভাই কোন জবাব দেয় না । শুধু রিফাত কে নিয়ে বাইরে চলে যায় । একটা পার্কের গাছতলায় এসে বলে --
" রিফাত , তুমি অনেক বড় ছেলে । এই যে বড় বট গাছ দেখছ ? এই গাছের নিচে ছোট ছোট বট গাছ হচ্ছে । এই বড় গাছ মারা গেলে ছোট টা বড় হয়ে উঠবে । বড় টা মারা না গেলে ছোট টা বড় হতে পারে না । এই টাই আল্লাহর সৃষ্টি । আজকে তুমি সারা দিন রেগুলার রুটিন ফলো করেছ তাই না ? কাল থেকেও করবে কেমন ? আমি থাকব না কাল থেকে ? "
রিফাতের বুকের মাঝে একটা চিন চিন ব্যাথা করে । কেন জানি চোখের কোনে পানি জমে যায় । এই ভালবাসার কষ্টে মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারে না । শুধু বলে " কেন ভাইয়া ? " :/
আলী ভাই বলেন " বাড়িতে মা অসুস্থ । দেখতে যাব । ঈদ বাড়িতেই করব । অনেক দিন বাড়ি যাই না । ঈদ হচ্ছে আনন্দের মাস । আত্তীয় স্বজনদের সাথেই করতে হয় । তোমাদের আত্তিয় স্বজন নেই ?" :)
রিফাত বলে " আছে , দেশের বাড়িতে । আমাদের দেশের বাড়ি রাজশাহী । অনেক আগে গিয়ে ছিলাম । ছোট বেলায় । আমাদের আত্তিয়দের সাথে তেমন সম্পর্ক নেই " ...।।

আলী ভাই বলেন " তোমার বাবা হাজার হাজার টাকা গরীবদের দেন । অনেক ভাল কথা । কিন্তু ছেলে হিসেবে একটা কাজ তোমার করা উচিত । তোমার আব্বুকে বল , এমন কোন আত্তীয়কে তিনি চিনেন কি না যিনি মাসিক মাত্র ৩ হাজার টাকা বা তার নিচে ইনকাম করেন । তাকে ঈদের জণ্যে কিন্তু জামা কাপড় দেও । প্রত্যেক বড় লোক মানূষের কোন না কোন গরীব আত্তীয় থাকে । সবাই নিজ নিজ আত্তিয়কে দান করলে আল্লাহর ইবাদত ও আত্তিয় সম্পর্ক ২ টাই হয়ে যেত :) । "
রিফাত আলী ভাইকে জড়িয়ে ধরে । আর বলতে থাকে " ভাইয়া আপনি অনেক ভাল । আমি আপানার কথা মত চলব । আপনি আবার আসবেন । আমি আব্বুকে বুঝিয়ে বলব এই বিষয়ে । ফোনে কথা হবে । আমি এখন বড় হয়েছি। আর পাপ করব না । ভাল হয়ে সুন্দর ও পবিত্র রাস্তায় চলব :)

আলী ভাইয়ের চোখের কোনে একটু অশ্রু এসে গেল । তিনি মুখ দিয়ে বলে ফেলেলন - সুবহানাল্লাহ :) । আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো এই দিনের । এই সুন্দর মুহূর্তের ।

আসুন আমরা ও রমজানের এই মাস কে সুন্দর ও পবিত্রতার কাজে ব্যাবহার করি । আত্তীয় ও পরিবারের সাথে সুন্দর ভাবে ঈদ পালন করি । রমজান মাসের সংযম, শুদ্ধতা, পরিচ্ছন্নতা ও সহমর্মিতায় আমরা সবাই যেন নিবিষ্ট থাকি । সেই দোয়াই করি । আমীন ...। :)

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×