somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প - " আলীর স্টূডেন্ট "

২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( part 1 )

২০০৭ এর ১ম দিকের মাস জানুয়ারী :) । বছরের ১ম মাসের ১ম দিনেই সবুজ একটি পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ছে আলী । উদ্দেশ্য একটা চাকরী ।

ঢাকা শহরে চাকরী পাওয়া মামার হাতে মোয়া নয় । আলীর পরিচিত বলতে কেউ নেই । একদম নেই যে তাও না । মেসের দারোয়ান , স্কুলের টিচারের ছেলে গফুর , আলমারি ঠিক করার মিস্ত্রি আব্দুল্লাহ , বালিকা হোস্টেলের মালিক " জরিনা ম্যাডাম" আর হালিম হাওলাদার ড্রাইভার । এরাই ঢাকায় তার সব থেকে পরিচিত ব্যাক্তি । :)

মাত্র ২ মাস হয়েছে ঢাকায় পা রাখা । এখন তো বাড়ি থেকে টাকা পয়সাও বন্ধ প্রায় । কিছু একটা করতে হবে । কিন্তু কেউ ইন্টার পাশ ছেলেদের চাকরী দিতে চায় না । তার উপর আলী একদম আনস্মার্ট । কখনো একটা বেগুনী ফতুয়া বা কখনো এই সবুজ পাঞ্জাবী পড়ে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে চায় । কি ভাবে চাকরী হবে আলীর ?

ডিসেম্বরের লাস্ট দিন আলী একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে জবের ইন্টারভিউ দিতে গেল । ইন্টারভিউর জন্যে ড্রাইভার হালিম হাওলাদারের কাছ থেকে একটা ভাল শার্ট ও পেন্ট নিয়ে গেল । শার্ট টা এতো ঠিলা ছিলো যে বার বার ইং খুলে যায় । প্যান্টো ডাবল সাইজ । একটু পর পর প্যান্ট টেনে ধরতে হয় । তার উপর চোখের মোটা গ্লাসের চশমা । পাওয়ার খুবই কম । কিন্তু এই চশমা না হলে আলীর মাথা ব্যাথা করে । ডাক্তার বলেছে এইটা পড়ে থাকতে হবেই । একদম জোকার মার্কা চিহারা নিয়ে অফিসে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকল আলী ।

"আসসালামু আলাইকুম " ।
"জী আপনের নাম বলুন " ।
"আলী"
"আগে পিছে কিছু নেই " ।
"না স্যার । শুধুই আলী "
ইন্টারভিউতে কেউ হাসে না । কিন্তু হঠাত একটা হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল । চিকন
গলার মেয়েলী হাসি । আলী ঘাড় ঘুড়াবে কি ঘুড়াবে না তা নিয়ে কনফিউজ । সবাই ঘাড় ঘুড়াল । আলী ভয়ে জড়োসরো হয়ে বসে রইল । একটা মেয়ের আগমন ঘটল । সুন্দরী কিনা সেদিকে তাকানোর সময় নেই আলীর । সে খুব চিন্তিত , কিছু কি ভুল বলে ফেললাম যে সবাই হাসছে । :/
মেয়েটা বলে উঠল , এই ছেলেকে আমি জব দিব । আমার বাসায় জব করতে হবে । এই ছেলে করবে ?
আলী কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । সে হতভম্ব । জগতে ১ম হয়তো কেউ কোন ইন্টারভিউতে বাসায় জব পেল ।

আলী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল ।

মেয়েটি রুম থেকে যাওয়ার সময় তার পুরুষ সেকেরেটারী কে কি যেন ফিস ফিস করে বল । এই বলার ধরন কে বলে " কানে মুখ কথা " :)

আলী প্রায় বিকাল পর্যন্ত অফিসের গেস্ট সোফায় বসা । কেউ জিজ্ঞেস করছে না "আপনি কি দুপুরের খাবার খেয়েছেন ? বা আপনি কি পানি খাবেন ? " ।

শহরের মানুষ গুলো যত বড় শিক্ষিত তব বড় মূর্খ । এরা শুধু ধনীদের সম্মান দিতে জানে । অন্য মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না ।

বিকাল গড়িয়ে আসল । একজন কালো কোর্ট পড়া সুপুরুষ এসে আলীর সামনে দাঁড়ালো । সোফায় বসে থাকার দরুন মাথা দেখতে অনেক টা উঁচুতে ঘাড় ঘুড়াতে হলো আলীর । লোকটা কালো কিন্তু খুব সুন্দর করে কোর্ট ও টাই পড়েছেন । গায়ে সুন্দর একটা পারফিউমের গন্ধ । মাথাটা " টাক্কু " । এমন টাক্কু মানুষ সে আগে দেখেনি । চক চকে টাক্কু যাকে বলে । একে বেলজিয়াম টাক বলে কি না কে জানে ? মাথায় যেন নিজের চিহারা দেখা যাবে । লোকটার চোখ দুইটা নীল । আজব মানুষ । আলী বইএ পড়েছে , সুদূর মিশরের মানুষের চোখ নীল হয় । এই লোক কি মিশরীয় কোন পিরামিড থেকে এখানে এসেছেন ?

"আপনি কি আলী ? "
আলী আচমকা এমন বাংলা কথা শুনে বলে ফেলল " আজী আ... আ আমি "
"আপনাকে ম্যাডাম তার কেবিনে যেতে বলেছেন । "
লোকটা কথাটা বলেই হাটা দিল । আলী তার পিছু পিছু প্যান্ট ও শার্ট ঠিক করতে করতে হাটা দিল । লোকটা প্রায় ৬ ফুট ৫ ইঞ্জি হবে । বিশাল দেহ । "ডাব্লিউ ডাব্লিউ ই " রেসলিং এ গেলে ভাল নাম কামাতে পারতেন । বাংলাদেশী কেউ এখনও রেসলিং খেলেননি মনে হয় । এই ছেলে দেশের গৌরব :)

কেবিনে ঢুকা মাত্রই মেডাম চেয়ার ছেড়ে উঠে আসলেন । এখন মেডাম কে সুন্দর দেখা যাচ্ছে । স্মার্ট ও ৩০ বছর বয়সের একজন নারী । আলীর থেকে মাত্র ১২ বছরের বড় হবেন । মেয়েদের ক্ষেত্রে যত বয়সই হোক না কেন তাকে মাত্র বলে শুরু করতে হয় । না হলে মেয়েরা অনেক রাগ করেন । মনে মনে বললেও মাত্র বলতে হবে । না হলে ওরা চোখ দেখেই বুঝে যায় ছেলে টেকনা ও লম্পট । খুব ভদ্র ছেলেও একবার কোন মেয়ের চোখে লম্পট মনে হলে সে আজীবন তার এই কলঙ্কের ভাড় মাথায় নিয়ে ঘুড়বে । বডী ল্যাঙ্গুয়েজ পড়াশুনায় মেয়ে জাতি খুব চালাক । ;)

"আলী ! তুমি কি জান তুমি কি চাকরী করতে যাচ্ছ ? "
"জী না ম্যাডাম "
"আমি যদি তোমাকে দিয়ে খারাপ কিছু করিয়ে নেই করবে ? "

আলী চুপ্প । এই মহিলা তো সাংঘাতিক । "মহিলা হোস্টেল মালিক জরিনা ম্যাডাম" থেকেও সাংঘাতিক । দেখে তো মনে হয় ১০-১২ বছরের বাচ্চাও আছে । এখন আমাকে দিয়ে কি সব খারাপ কাজ করাবে কে জানে ? মেয়ে মানুষের কোন ভরসা নেই । এদের চিন্তা শক্তির ও কোন মা-বাপ নেই । কি যে ভাবছে বুঝতে পারছে না আলী ।

"চিন্তা করো না । মেয়েলী কোন কাজে জড়াব না তোমাকে । তবে একটা মসিবতে ফেলাব । শুনবে না কি মছিবত ? "

আলীতো এসি রুমেও ঘামা শুরু করল । মেয়েলী প্রবলেম থেকেও বড় মছিবত আর কি হতে পারে ? এই নিয়ে চিন্তিত আলী ।

" শুন আলী । আমার বাবাকে পড়াতে হবে । উনি এক্স আর্মি অফিসার । খুব রাগি । বাবার বই পড়ার খুব শখ । কিন্তু চোখে ভাল দেখতে পারেন না । ওনাকে বই পড়ে শূনাতে হবে ও ওনার সব সময় খেয়াল রাখতে হবে । মাত্র ৩ মাস । তার পরে উনি বিদেশে যাবেন চিকিৎসার জন্যে । সব থেকে বড় মছিবত উনার একটা "সিগনেচার" লাগবে আমার । কিসের সিগনেচার তা তোমাকে পড়ে জানাব । এখন বলল রাজি কি না ? "

আলীর মাথা ঘুড়ছে । ৩ গ্লাস পানি ঢকাঢক গিলে ফেলল । রাজী না হয়ে উপায় নেই । মেসের ভাড়া বাকি । খাওয়ার খরচ ও বাকি । এখন একটা জব খুব দরকার ।

"চিন্তা করো না । হ্যা না যাই বল আমি তোমার কোন কথা শুন্তে রাজি না । কাজ টা তোমাকেই করতে হবে ব্যাস । সেলারীর চিন্তা করো না । তোমাকে ভাল সেলারী দেওয়া হবে ।
আর ৩ মাস পড়ে আমার এই কোম্পানীতে পারমানেন্ট জব :) । খুশী তো ?

আলীর "হ্যা" জবাব না দিয়ে উপায় ছিল না ...।।

বাকিটা আরেক অংশে শেষ করব :)

৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×