( part 1 )
২০০৭ এর ১ম দিকের মাস জানুয়ারী । বছরের ১ম মাসের ১ম দিনেই সবুজ একটি পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ছে আলী । উদ্দেশ্য একটা চাকরী ।
ঢাকা শহরে চাকরী পাওয়া মামার হাতে মোয়া নয় । আলীর পরিচিত বলতে কেউ নেই । একদম নেই যে তাও না । মেসের দারোয়ান , স্কুলের টিচারের ছেলে গফুর , আলমারি ঠিক করার মিস্ত্রি আব্দুল্লাহ , বালিকা হোস্টেলের মালিক " জরিনা ম্যাডাম" আর হালিম হাওলাদার ড্রাইভার । এরাই ঢাকায় তার সব থেকে পরিচিত ব্যাক্তি ।
মাত্র ২ মাস হয়েছে ঢাকায় পা রাখা । এখন তো বাড়ি থেকে টাকা পয়সাও বন্ধ প্রায় । কিছু একটা করতে হবে । কিন্তু কেউ ইন্টার পাশ ছেলেদের চাকরী দিতে চায় না । তার উপর আলী একদম আনস্মার্ট । কখনো একটা বেগুনী ফতুয়া বা কখনো এই সবুজ পাঞ্জাবী পড়ে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে চায় । কি ভাবে চাকরী হবে আলীর ?
ডিসেম্বরের লাস্ট দিন আলী একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে জবের ইন্টারভিউ দিতে গেল । ইন্টারভিউর জন্যে ড্রাইভার হালিম হাওলাদারের কাছ থেকে একটা ভাল শার্ট ও পেন্ট নিয়ে গেল । শার্ট টা এতো ঠিলা ছিলো যে বার বার ইং খুলে যায় । প্যান্টো ডাবল সাইজ । একটু পর পর প্যান্ট টেনে ধরতে হয় । তার উপর চোখের মোটা গ্লাসের চশমা । পাওয়ার খুবই কম । কিন্তু এই চশমা না হলে আলীর মাথা ব্যাথা করে । ডাক্তার বলেছে এইটা পড়ে থাকতে হবেই । একদম জোকার মার্কা চিহারা নিয়ে অফিসে ইন্টারভিউ দিতে ঢুকল আলী ।
"আসসালামু আলাইকুম " ।
"জী আপনের নাম বলুন " ।
"আলী"
"আগে পিছে কিছু নেই " ।
"না স্যার । শুধুই আলী "
ইন্টারভিউতে কেউ হাসে না । কিন্তু হঠাত একটা হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল । চিকন
গলার মেয়েলী হাসি । আলী ঘাড় ঘুড়াবে কি ঘুড়াবে না তা নিয়ে কনফিউজ । সবাই ঘাড় ঘুড়াল । আলী ভয়ে জড়োসরো হয়ে বসে রইল । একটা মেয়ের আগমন ঘটল । সুন্দরী কিনা সেদিকে তাকানোর সময় নেই আলীর । সে খুব চিন্তিত , কিছু কি ভুল বলে ফেললাম যে সবাই হাসছে । :/
মেয়েটা বলে উঠল , এই ছেলেকে আমি জব দিব । আমার বাসায় জব করতে হবে । এই ছেলে করবে ?
আলী কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । সে হতভম্ব । জগতে ১ম হয়তো কেউ কোন ইন্টারভিউতে বাসায় জব পেল ।
আলী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল ।
মেয়েটি রুম থেকে যাওয়ার সময় তার পুরুষ সেকেরেটারী কে কি যেন ফিস ফিস করে বল । এই বলার ধরন কে বলে " কানে মুখ কথা "
আলী প্রায় বিকাল পর্যন্ত অফিসের গেস্ট সোফায় বসা । কেউ জিজ্ঞেস করছে না "আপনি কি দুপুরের খাবার খেয়েছেন ? বা আপনি কি পানি খাবেন ? " ।
শহরের মানুষ গুলো যত বড় শিক্ষিত তব বড় মূর্খ । এরা শুধু ধনীদের সম্মান দিতে জানে । অন্য মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না ।
বিকাল গড়িয়ে আসল । একজন কালো কোর্ট পড়া সুপুরুষ এসে আলীর সামনে দাঁড়ালো । সোফায় বসে থাকার দরুন মাথা দেখতে অনেক টা উঁচুতে ঘাড় ঘুড়াতে হলো আলীর । লোকটা কালো কিন্তু খুব সুন্দর করে কোর্ট ও টাই পড়েছেন । গায়ে সুন্দর একটা পারফিউমের গন্ধ । মাথাটা " টাক্কু " । এমন টাক্কু মানুষ সে আগে দেখেনি । চক চকে টাক্কু যাকে বলে । একে বেলজিয়াম টাক বলে কি না কে জানে ? মাথায় যেন নিজের চিহারা দেখা যাবে । লোকটার চোখ দুইটা নীল । আজব মানুষ । আলী বইএ পড়েছে , সুদূর মিশরের মানুষের চোখ নীল হয় । এই লোক কি মিশরীয় কোন পিরামিড থেকে এখানে এসেছেন ?
"আপনি কি আলী ? "
আলী আচমকা এমন বাংলা কথা শুনে বলে ফেলল " আজী আ... আ আমি "
"আপনাকে ম্যাডাম তার কেবিনে যেতে বলেছেন । "
লোকটা কথাটা বলেই হাটা দিল । আলী তার পিছু পিছু প্যান্ট ও শার্ট ঠিক করতে করতে হাটা দিল । লোকটা প্রায় ৬ ফুট ৫ ইঞ্জি হবে । বিশাল দেহ । "ডাব্লিউ ডাব্লিউ ই " রেসলিং এ গেলে ভাল নাম কামাতে পারতেন । বাংলাদেশী কেউ এখনও রেসলিং খেলেননি মনে হয় । এই ছেলে দেশের গৌরব ।
কেবিনে ঢুকা মাত্রই মেডাম চেয়ার ছেড়ে উঠে আসলেন । এখন মেডাম কে সুন্দর দেখা যাচ্ছে । স্মার্ট ও ৩০ বছর বয়সের একজন নারী । আলীর থেকে মাত্র ১২ বছরের বড় হবেন । মেয়েদের ক্ষেত্রে যত বয়সই হোক না কেন তাকে মাত্র বলে শুরু করতে হয় । না হলে মেয়েরা অনেক রাগ করেন । মনে মনে বললেও মাত্র বলতে হবে । না হলে ওরা চোখ দেখেই বুঝে যায় ছেলে টেকনা ও লম্পট । খুব ভদ্র ছেলেও একবার কোন মেয়ের চোখে লম্পট মনে হলে সে আজীবন তার এই কলঙ্কের ভাড় মাথায় নিয়ে ঘুড়বে । বডী ল্যাঙ্গুয়েজ পড়াশুনায় মেয়ে জাতি খুব চালাক ।
"আলী ! তুমি কি জান তুমি কি চাকরী করতে যাচ্ছ ? "
"জী না ম্যাডাম "
"আমি যদি তোমাকে দিয়ে খারাপ কিছু করিয়ে নেই করবে ? "
আলী চুপ্প । এই মহিলা তো সাংঘাতিক । "মহিলা হোস্টেল মালিক জরিনা ম্যাডাম" থেকেও সাংঘাতিক । দেখে তো মনে হয় ১০-১২ বছরের বাচ্চাও আছে । এখন আমাকে দিয়ে কি সব খারাপ কাজ করাবে কে জানে ? মেয়ে মানুষের কোন ভরসা নেই । এদের চিন্তা শক্তির ও কোন মা-বাপ নেই । কি যে ভাবছে বুঝতে পারছে না আলী ।
"চিন্তা করো না । মেয়েলী কোন কাজে জড়াব না তোমাকে । তবে একটা মসিবতে ফেলাব । শুনবে না কি মছিবত ? "
আলীতো এসি রুমেও ঘামা শুরু করল । মেয়েলী প্রবলেম থেকেও বড় মছিবত আর কি হতে পারে ? এই নিয়ে চিন্তিত আলী ।
" শুন আলী । আমার বাবাকে পড়াতে হবে । উনি এক্স আর্মি অফিসার । খুব রাগি । বাবার বই পড়ার খুব শখ । কিন্তু চোখে ভাল দেখতে পারেন না । ওনাকে বই পড়ে শূনাতে হবে ও ওনার সব সময় খেয়াল রাখতে হবে । মাত্র ৩ মাস । তার পরে উনি বিদেশে যাবেন চিকিৎসার জন্যে । সব থেকে বড় মছিবত উনার একটা "সিগনেচার" লাগবে আমার । কিসের সিগনেচার তা তোমাকে পড়ে জানাব । এখন বলল রাজি কি না ? "
আলীর মাথা ঘুড়ছে । ৩ গ্লাস পানি ঢকাঢক গিলে ফেলল । রাজী না হয়ে উপায় নেই । মেসের ভাড়া বাকি । খাওয়ার খরচ ও বাকি । এখন একটা জব খুব দরকার ।
"চিন্তা করো না । হ্যা না যাই বল আমি তোমার কোন কথা শুন্তে রাজি না । কাজ টা তোমাকেই করতে হবে ব্যাস । সেলারীর চিন্তা করো না । তোমাকে ভাল সেলারী দেওয়া হবে ।
আর ৩ মাস পড়ে আমার এই কোম্পানীতে পারমানেন্ট জব । খুশী তো ?
আলীর "হ্যা" জবাব না দিয়ে উপায় ছিল না ...।।
বাকিটা আরেক অংশে শেষ করব