somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের মধ্যবিত্তের স্বপ্ন,গড়তে লাগে অনেক দিন আর লুন্ঠিত হতে মাত্র কিছু সেকেন্ড

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ সমাজে আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধি।হয়তো এ ব্লগ পাড়ার অনেকই এ দলটার সদস্য।আমরা এমন একটা পর্যায়ে আছি,না পারি কারু কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে আবার না পারি কাউকে কোন কিছু দান করতে।আমাদের সব থেকে বড় অহংকার আমাদের আত্মসম্মান।নিজের সব কিছু দিয়ে হলে ও এটাকে রক্ষা করা চাই।
আমার পরিবারের বাকিরা যখন বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে তখন আমার বাবা সরকারি চাকুরিতে ব্যাস্ত।তখন বেতন এতোটা ছিল না।বাসা ভাড়া আর আমাদের তিন ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ দিতেই বাবা হিমশিম খেত।তাই নিজেদের বিশেষ করে আমার আর আমার বোনের স্বপ্নগুলো অনেকটা স্বপ্নই থেকে যেত।তারপর ও আমরা এগিয়ে যাই।আর সবার মতো।আমাদের জমির পাশে একে একে বড় বড় দালান তৈরি হতে দেখি।আমার মা সেসব দেখে কেবল একটা কথাই বলতেন আমাদের কবে বাড়ি হবে?সেসময় মনে করতাম হয়তো আমাদের কোন দিন ও বাড়ি বানানো হবে না।আমার চাচারা,আমার চাচাতো ভাই-বোনেরা অনেক অনেক এগিয়ে।আমরা কেবল দেখতাম তাদের স্বপ্নগুলো।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাবার প্রোমোশন হলো।দিন দিন আমরা বড় হলাম।সরকার বেতন বাড়ালো।কিন্তু আমাদের স্বপ্নের পরিধি বাড়তে পারেনি।বাসা ভাড়া ১৫০০ থেকে শুরু করে ১২০০০ হলো।আমি যখন কলেজে পড়ি তখন মা মাঝে মাঝে বলতো জানিস বাবু এতো দিনে যতটাকা বাসা ভাড়া দিয়েছি সেই টাকা দিয়ে একটা বাড়ি বানানো যেত।মায়ের কেবল একটাই চিন্তা একমাত্র বোনটাকে কি ভাড়া বাসা থেকেই বিয়ে দিতে হবে।কলেজে যখন পড়ি আমার বন্ধুরা যখন পালসার দৌড়ায় তখন বাবা একটা সাইকেল কিনে দিলেন।হিরো রেন্জার ম্যাক্স।যে স্বপ্নটা হাই স্কুলে থাকতে দেখতাম।সেটা পূরন হলো যখন স্বপ্নের পরিধী বেড়ে গিয়েছে অনেক।তারপর ও মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সাইকেলের তালা কেটে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়।কলেজে পড়ি তারপর ও সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম।স্বপ্ন চুরির কান্না।
বাবা অনেকটা সাহস করে ব্যাংক থেকে হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে শুরু করলেন আমাদের প্রথম স্বপ্ন পূরনের যাত্রা।পড়ার পর্ব শেষ করে অনেক ব্যাংকে পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়ে একসময় হতাশ আমি চাকুরি পেলাম ডিবিবিএল ব্যাংকে।এবার স্বপ্ন পূরনের পালা।বাপ-বেটা চাকুরি করি আর আটকায় কে?কিন্তু দেখা গেল নিজের রুম ভাড়া,খাওয়ার খরচ দিয়ে সামান্য কিছু টাকা হাতে থাকতো।বুঝতে পারলাম আমাকে দিয়ে হবে না।এক বছর জব করার পর পাড়ি জমালাম সোনার দেশে।আমরা সিলেটিরা বিদেশকে সোনার দেশ বলেই জানি।এখন আমাদের সেই খালি জমিটাতে বিশাল একটা অট্টালিকা।আমার মায়ের সেই চির চেনা চিন্তাটা পালিয়ে গিয়েছে।
আমার ছোট ভাই,তার এমন কোন আবদার নেই যা আমি মেটাইনি।বাবা-মা আমার সাথে সবসময় ঝগড়া করে।আমি নাকি তাকে নষ্ট করে ফেলবো।নিজের সখ বা ইচ্ছে যেগুলো পূরন হয়নি সেগুলো ছোট্ট ভাইটা পূরন করুক।বাবা-মাকে নিজের স্বপ্নের কথা বললেই চুপ করে যান।একপ্রকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল।ছোট্ট ভাইটি এখন ঢাকায় একটা নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদালয়ে পড়ে।ছোট বেলা নাটক বা ছবিতে দেখতাম বড়লোকেরা গুলশান বা ধানমন্ডি থাকে।নিজের এখন ও সেসব জায়গায় থাকার সুযোগ হয়নি।ছোট্ট ভাইটা এখন তার দুই বন্ধুর সাথে গুলশানে একটি ফ্লাট নিয়ে থাকে।নিজের কাছে কি রকম লাগে তা বুঝানোর মতো ভাষা আমার জানা নেই।
বোনের কাছে শুনলাম আজকাল নাকি ডিএসএলআরের ক্যামেরা না হলে চলে না।বুঝতে পারলাম ছোট্ট ভাইয়ের একটা ক্যামেরা দরকার।বোন লিস্ট দিলো।অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে ছোট্ট ভাইকে একটি আইফোন,একটি ক্যাননের ক্যামেরা আর একটি ম্যাকবুক পাঠালাম।সাত মাস অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে জিনিসগুলো কেনা।দেশে যখন সেগুলো ছোট্ট ভাইয়ের হাতে জিনিসগুলো পৌছালো তখন কল্পনায় বারবার ছোট্ট ভাইয়ের মুখটা দেখছিলাম।তার স্বপ্ন পূরনের হাসি মাখা মুখ।নিজের ভেতর এক প্রকার শান্তি পেলাম।মনে হচ্ছিল এ যেন নিজের স্বপ্ন।
দুদিন আগে বাড়ি(সিলেট) যাবার পথে আজিমপুর নামক জায়গায় আমার ছোট্ট ভাইয়ের স্বপ্নগুলো ছিনতাই হয়ে যায়।তিল তিল করে সাত মাসের জমানো টাকাগুলো ২ মিনিটে ছিনতাই হয়ে গেল!!ভাইটা পাগল প্রায়।নিজের কাছেই অনেক কষ্ট লাগলো শোনার পর।তাকে সান্তনা দিলাম তোর কোন ক্ষতি হয়নি এটাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।বললাম চিন্তা করিস না।তোর জন্মদিনের আগে সব কিছু আবার পৌছে যাবে।দেশে হরতালের সময় গাড়ি পূরানো হয়,নষ্ট করা হয়।কিন্তু যারা করে তারা জানে না কতোটা কষ্ট আর কতোটা স্বপ্ন মিশে থাকে এসব জিনিসগুলোর সাথে।মনে পড়ে একবার হরতালে এক মহিলার কার ভেঙ্গে যাবার পর টিভি সাংবাদিকের কাছে তার কি কান্না।সে জানালো কতোটা কষ্ট করে সে এটা কিনেছিল।সেই মহিলার কান্না মাখা মুখটা বেশ মনে পড়ছে।সাথে নিজের ভাইয়ের।
লেখাটা এতো গুরুত্বপূর্ন নয়।কেবল নিজের দুঃখটা সবার সাথে শেয়ার করা।জানি দেশটার কোন পরিবর্তন হবে না।আমাদের মতো মানুষগুলোর তিলে তিলে জমানো স্বপ্নগুলো নিমিষেই ছিনতাই হয়ে যাবে ছিনতাইকারি দ্বারা,পুড়ে ছাই হয়ে যাবে কোন দলের নেতা-কর্মী দ্বারা।আবার আহত হতে পারে কোন পিকেটারের ছুঁড়ে মারা ইটের আঘাতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪২
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×