somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[] আয়াতূল কুরসী পাঠ এবং এর ফজিলত []

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাদীস শরীফ এ বর্ণিত আছে, যে লোক সকালে ও শয়নের পূর্বে আয়াতূল কুরছী পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তার তত্ত্বাবধানকারী। কাজেই সারাদিনের মধ্যে শয়তান তার নিকট ঘেঁষতে পারে না। কেননা, আয়াতুল কুরছী পাঠকারীর নিকট শয়তান আগমন করবে না বলে ওয়াদাবদ্ধ রয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক বস্তুর একটি শীর্ষস্থান থাকে। পবিত্র কোরআনের শীর্ষস্থান হলো সুরা বাকারা। আর এ সুরায় এমন একটি আয়াত বিদ্যমান যা পবিত্র কোরআনের সমস্ত আয়াতের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। তা হল আয়াতুল কুরছী। (তিরমযী শরীফ)

প্রত্যেক নামাযের পর চৌদ্দবার আয়াতুল কুরছী পাঠ করলে যাবতীয় বালা-মুসীবত ও বিপদাপদের থেকে মুক্তি লাভ হয়।

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

আল্লাহু লা (আ)ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিছ ছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্।মান জাল্লাজী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু(উ) ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খাল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল্ মিহি(হি) ইল্লা বিমা সা (আ) ওয়াসিয়া কুরসি ইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিউল আজীম।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরছির মাহাত্ম্য

আল কোরআন পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এই আল কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াতগুলো নিয়েই আয়াতুল কুরছি। মহান আল্লাহর একাত্মবাদ, প্রভুত্ব, স্থায়িত্ব, কুদরত, ইচ্ছা, অধিকার, জ্ঞান, ক্ষমতা ইত্যাদি গুণাবলীর বর্ণনা ও আলোচনার সুস্পষ্ট নিদর্শন আয়াতুল কুরছি। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহর আরও নানা বৈচিত্র্যমণ্ডিত গুণাবলীর কথা প্রকাশ থাকলেও একত্রে মৌলিক গুণাবলীর সমাহার এবং বর্ণনা আয়াতুল কুরছির মতো কোথাও প্রকাশ হয়নি। এ জন্যই আয়াতুল কুরছির মর্যাদা অতুলনীয়, অনস্বীকার্য।

আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত, হজরত উয়াইলা ইবনে আসক্কা (রা•) প্রকাশ, একদা নবী করিম (স•) মোহাজেরদের জমাতে আগমন করলে এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করল- ‘হে আমাদের রাসূল! পবিত্র কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত কোনটি?’ উত্তরে মহানবী (স•) বলেছিলেন- ‘আয়াতুল কুরছি।’

আগেই বলা হয়েছে, আয়াতুল কুরছির শ্রেষ্ঠত্বের কারণ মূলত মহান আল্লাহতালার ‘ইসমে জাত’ ও ‘ইসমে সিফাতের’ অভূতপূর্ণ সম্মেলন। আয়াতুল কুরছি এভাবেও যথেষ্ট মর্যাদাবান যে, এটি পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের সূরা বাকারাহ’র অংশ। তিরমিজি শরিফে হজরত আবু হোরায়রা (রা•) থেকে বর্ণিত, ‘প্রতিটি বস্তুর একটি শীর্ষ চূড়া রয়েছে। পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফের শীর্ষ সূরা হল সূরায়ে বাকারাহ এবং সর্দার আয়াত হল আয়াতুল কুরছি।’

আয়াতুল কুরছিতে মহান আল্লাহপাকের দশটি বিশেষ মৌলিক ও শ্রেষ্ঠতম গুণের কথা বিস্তৃত হয়েছে। এ জন্যই বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গ আয়াতুল কুরছিকে ‘দশ রত্নের সমাহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। আয়াতুল কুরছি মহান আল্লাহর যে দশটি সুস্পষ্ট বিশেষ গুণের বর্ণনা করে সেগুলো হলঃ

১• ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনই উপাস্য নেই’ এই বাক্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একাত্ববাদ ও অদ্বিতীয়ত্বের ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য সবকিছুর অংশীদারিত্ব ও প্রভুত্বের মূলোৎপাটন করা হয়েছে।
২• ‘যিনি চির জীবন্ত ও সদা বিরাজমান’ বাক্য দ্বারা যারা (কাফের ও মুশরেক) আল্লাহ সচেতন ও অন্ধ বলে ধারণা পোষণ করত তাদের অবুঝ ও ভ্রান্ত ধারণার জবাব প্রকাশ করা হয়েছে।
৩• ‘তন্দ্রা এবং নিন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।’ বাক্য দ্বারা মহান আল্লাহ প্রমাণ করেছেন, তার সৃষ্ট অন্যান্য জীবের গুণ ও স্বভাব ধর্ম, দোষ দুর্বলতা প্রভৃতি থেকে স্বয়ং আল্লাহপাক মুক্ত ও পবিত্র।
৪• নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব তাঁহারই’। এখানে, আল্লাহ অধিপতি বলে ঘোষণা করেছেন। এই মহাজগতে আমরা যা দর্শন করি এবং যা করি না সব কিছুর মালিক যে একমাত্র আল্লাহতায়ালা তারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
৫• ‘তাঁহার অনুমতি ব্যতীত কেউই তাঁহার নিকট অপরের মুক্তির জন্য সুপারিশ করতে পারবে না’ বাক্যটি দ্বারা প্রকাশ, আল্লাহ ছাড়া মুক্তিদাতা, সাহায্য প্রদানে সক্ষম আর কেউই নেই, কিছুই নেই।
৬• ‘অগ্র-পশ্চাৎ সম্পর্কে তিনি সুপরিজ্ঞাত’ বাক্যটি দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ পাক অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত। তাঁর অজান্তে, অলক্ষ্যে কোন কিছুই ঘটে না। প্রতিটি কার্যক্রম তিনি অবলোকন করেন।
৭• ‘তাঁহার ইচ্ছা ব্যতীত তাঁহার অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ ধারণা করতে পারে না।’ বাক্যটিতে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বিস্তৃত হয়েছে। সব জ্ঞানের আধার স্বয়ং আল্লাহপাক, মানুষ তাঁর সৃষ্টি এবং মানুষের জ্ঞান অসীম স্রষ্টার অসীম জ্ঞানের কাছে অতি সামান্য, নগণ্য।
৮• ‘তাঁহার আসন ও সাম্রাজ্য নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে’ এই বাক্যটি দ্বারা আর কোন সন্দেহ ছাড়াই প্রকাশ হয়। জীব ও জড় জগতের মধ্যে তার জ্ঞান, শক্তি, প্রতিপত্তি ও সাম্রাজ্য পরিবেষ্টিত। তাঁর শক্তি ও শাসন অতিক্রমে সক্ষমে কিছুই নেই, কারও অধিকার নেই তার এই শাসনের বাইরে চলে যায়। তিনিই সব কিছুর একমাত্র অধিপতি, অসীম ক্ষমতাবান, মহাশক্তিধর।
৯• ‘এতদুভয়ের সংরক্ষণের তাঁহাকে বিব্রতবোধ করতে হয় না’ বাক্যটিতে প্রমাণিত হয় যে, তার এই বিশাল সাম্রাজ্য পরচালনায় কোন প্রকার বিঘ্ন সৃষ্ট হয় না, তিনি মোটেও বিব্রতবোধ করেন না। আল্লাহর অসীম শক্তি, অনন্ত মহিমার বলে এই মহাবিশ্বের জীব ও জড় জগতের প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ তার কাছে অতি সহজ।
১০• ‘আর তিনি সমুন্নত ও মহীয়ান’। বাক্যের মাধ্যমে ঘোষিত, একমাত্র আল্লাহতায়ালাই অন- ঐশী শক্তির অধিকারী। আল্লাহর ন্যায় গৌরব ও সম্মানের অধিকারী অন্য আর কিছুই নেই, এর সমকক্ষও নেই, এর অংশীদারও নেই। স্বয়ং আল্লাহপাকই সব গৌরব, সম্মান ও মর্যাদার একমাত্র অধিকারী। আল্লাহপাকের অন-, অসীম সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব ও অন্যান্য অবিস্মরণীয় গুণাবলীর প্রকাশই আয়াতুল কুরছির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বলেই আয়াতুল কুরছির মর্যাদা এত বেশি। তিরমিজি ও বোখারি শরিফে প্রকাশ, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও শয়নকালে আয়াতুল কুরছি পাঠ করে, আল্লাহতায়ালা তার রক্ষক। সুতরাং দিবস রজনীর মধ্যে শয়তান তার নিকটতর হতে পারে না।’

আল কোরআন, আল্লাহপাকের বিস্ময়কর ও অনন্য সৃষ্টি। সমগ্র মুসলিম জাতির মুক্তির ধারক, পথপ্রদর্শক এই কোরআন। আয়াতুল কুরছি সেই কোরআনেরই অন্যতম আয়াতের সমাবেশ। আমাদের সবাইকেই আয়াতুল কুরছির মাহাত্ম্য, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব মেনে, বুঝে জীবন পরিচালনা করা উচিত। তবেই মিলবে মুক্তির পথ।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×