somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাম্পাস রাজনীতির কড়চা ও প্রেম

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সময়কাল- আশির দশক

লাউড স্পিকারে ভুপেন হাজারিকার গান বাজছে, “মোরা যাত্রী সহযাত্রী একই তরণীর।”

শহীদ মিনারের সামনের মাঠে প্যান্ডেল টাঙানো। বড় লাল ব্যানারে লেখা এক বাম সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। পান্ডেলভর্তি ছাত্ররা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। হেঁটে প্যান্ডেল পার হয়ে ক্লাসে যাচ্ছি। আরো পিছনে দেখলাম অন্য আরেকটি ডান সংগঠনের প্রচুর ছেলে, পিছন থেকে গালিগালাজ করছে - “লাল পতাকার তেজ দেখাস, এই তোদের কাস্তে তোদের পু-... এর ভিতর ঢুকাই দিব,”। আরেকজন বললো, "তোরা তো মস্কোতে বৃষ্টি হলে এখানে ছাতা ধরিস, তোর ছাতা পু-... এর ভিতর ঢুকাই দিব।” ক্যাম্পাসে এই ডান দলটি দাপটে রাজত্ব করে।

ভাষণে ক্লাসে লেকচার ঠিকমত শোনা যাচ্ছে না। স্যার ক্লাসের জানালার বাইরে যে পুকুর আছে সেই দিকে তাঁকিয়ে একমনে লেকচার দিয়ে যাচ্ছেন। আমি সেই পুকুরে কিছু হাঁসের জলকেলী দেখছি।

হঠাৎ পরপর ককটেল ফাঁটার বিকট আওয়াজ হলো। শোরগোল শোনা যাচ্ছে, এরপর আরও ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ। মাইকে নেতাদের ভাষণ বন্ধ, র্মুহুর্মুহু ককটেল আর গুলির আওয়াজে ক্লাস ভেঙে গেলো, চারিদিকে হৈচৈ, যে যেদিক পারছে জোরে হাঁটছে, দৌড়াচ্ছে। ক্লাস থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। অল্প কিছুক্ষন পরই দেখি আশপাশ সব ফাঁকা। কিছুক্ষণ আগেও এ এলাকা যে রণক্ষেত্র ছিল তা এখন নিরব শান্ত। রৌদ্দুর দুপুরে কেমন যেন মায়াময় লাগছে চারিদিক। কাছেই আর একটি রাস্তা আছে। আমার রাস্তাটি সে রাস্তায় মিলেছে। সেই রাস্তায় একটি মেয়ে হাঁটছে, খোলা চুল কোমর পর্যন্ত দুলছে। বাতাসে সেই চুল কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ পেরিয়ে চোখ ঢেকে দিচ্ছে, সে আলতো ভাবে চুল সরায়। আমি তাকিয়ে দেখি, চোখ ফিরাতে পারি না। কি মায়াময় চোখ, এমন কোমল শান্তিময় চেহারা অনুপম, আমি যতই দেখি ততই অবাক হই।

সন্ধ্যায় শুয়ে আছি, সেই মেয়েটির কোমল শান্তিময় ছবি ঘুরেফিরে মনে উঁকি দিচ্ছে, এমন সময় চপল রুমে ঢুকে বললো, খবর শুনেছিস?
- না , কি খবর?
- টোটন ভাইকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে, ডান পা থেঁতলে দিয়েছে, এখন হাসপাতালে। একবার হাসপাতালে যেতে হবে।

টোটন ভাই আমাদের হলে একই ফ্লোরে থাকেন, সেই বাম সংগঠনের অনুসারী, আনসারীর রুমে আমাদের সাথে ব্রিজ খেলতে আসেন, অত্যন্ত অমায়িক, সবার খোঁজ খবর নেন। আমার যাবার মন নেই, কিছুটা একান্তে থাকতে চাই। তবু যেতে হবে।

হাসপাতালে পৌঁছাতে সন্ধ্যার পার হয় গেলো। টোটন ভাইকে দেখে খুব মায়া হলো, কপাল, মুখে আহত চামড়ায় রক্ত জমে আছে। পায়ে ব্যাণ্ডেজ, স্প্লিন্টার লাগনো। তিনি বয়সে অনেক বড়, বিবাহিত,একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, মাস্টার্স অনেক আগেই শেষ করেছেন, পরিবার ফেলে মাসের পর মাস কি এক মায়ায় বিশ্ববিদ্যালয় আঁকড়ে পড়ে থাকেন! জিজ্ঞেস করলাম - টোটন ভাই, আপনার মেয়ে কেমন আছে? উনি জবাব দিলেন না, এত কষ্টের মাঝেও উনার মুখে একটা শান্তির রেশ দেখতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিথী কোন ক্লাসে পড়ছে?
একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ক্লাস থ্রিতে। এখনি সাঁতার পারে, এবারে পুকুরে তাঁর সাথে সাঁতার কাঁটলাম।
- একদিন আপনার বাড়ি যাবো টোটন ভাই, তিথীর সাথে আমিও সাঁতার কাঁটবো।
বের হয়ে যাচ্ছি সেসময় দেখি সেই মেয়েটি ওয়ার্ডে প্রবেশ করছে। আমি তাঁকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম, কি অসম্ভব মমতা আর মায়ায় জড়ানো চোখ। সেই চোখে যেন ব্যাবিলন উদ্যানের সমস্ত সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে। মেয়েটি এক ঝলক তাঁকিয়ে চলে গেলো। আমি চপলকে জিজ্ঞেস করলাম, “মেয়েটিকে চিনিস?”
-”না রে চিনি না, কেন বল তো ?”
- “না, এমনি।”
- “মনে ধরলে বল, আজ রাতেই তোর রুমে আনবো।”
চপল একটা সিগারেট ধরালো, হাঁটতে হাঁটতে বললো, “মেয়ে জাতীয় জিনিসের খোঁজ করবি না, মেয়ে গেলে মেয়ে পাবি কিন্ত পড়াশুনা গোল্লায় গেলে আর পাবি না, তুই ডিপার্টমেন্টের টিচার হবি, মন দিয়ে পড়।”

হাসপাতাল থেকে ফিরবার সময় চপল হাউজি খেলতে নিয়ে গেলো। আমাকে এক প্যাকেট চানাচুর দিয়ে বললো, “তোকে দেখে মনে হচ্ছে ছ‍্যাক খাওয়া বার্থপ্রেমিক। ঝাল চানাচুর খা, মন চাঙা হবে। আর দেখতে থাক আমি কি করে রাজা হই।”

স্টেজে হাউজির নম্বর কল শুরু হলো। ডাক এন্ড হেভেন টুয়েন্টি সেভেন, চিংড়ি ফিস নাম্বার সিক্স। লাইন,কর্নার সব শেষ, বাকি থাকলো হাউজ। তাঁর মধ্যে টানটান উত্তেজনা, আর একটি নাম্বার মিললেই আজ রাতের জন্য সে রাজা হয়ে যাবে। চলতে চলতে একটা নাম্বার কল করার সাথে সাথে চপল ইয়েস বলে চিৎকার করে উঠলো। স্টেজে নাম্বার মিলিয়ে দেখলো একটা নাম্বার মিলেনি, সবাই বগি বগি আওয়াজ দিলো। মন খারাপ করে স্টেজ থেকে ফিরে বললো, “চল ফিরে যাই, আজ আর খেলবো না. তুই বড়ো অপয়া, তোর কপালে প্রেম নাই।”

হলে ফিরে মেয়েটির কথা মনে হতে লাগলো, এক ধরণের অস্থিরতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। রুমে, হলের বারান্দায় পায়চারি দিতে দিতে ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে উদ্দেশ্যহীন হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে রেলস্টেশনে চলে এলাম। গভীর রাতে প্লাটফর্মে এক স্বামী-স্ত্রী ছোট বাচ্চা সহ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে, সেই ঘুমে গভীর মায়া। এক লোক ঘুমাচ্ছে, তাঁর পাশেই একটি কুকুরও ঘুমাচ্ছে। প্লাটফর্মে অপূর্ব মায়ার সব দৃশ্যর সাথে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো সেই মেয়েটিও আমার সাথে ছায়ার মত ঘুরছে।

রেলস্টেশন থেকে খুব সকালে হলে ফিরে আসছি, হলের কাছাকাছি চলে এসেছি, কানে আমার নাম ভেসে আসলো, তাঁকিয়ে দেখি ছোট খুপরি রেস্তুরাঁতে সেই ডান সংগঠনের একজন বড় ভাই আমাকে ডাকছেন, উনি একজন উঁচু স্তরের ক্যাডার, দেখলে সবাই সালাম দেয়, কিন্ত আমাকে কেন জানি সম্মান করেন! ইনারই গতকাল বাম সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পন্ড করেছেন। উনার চারিদিকে বসে আরো বেশ কিছু কর্মী সকালের নাস্তা করছে। আমি কাছে এগিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, “তোমারে তো পুরাই বিধস্ত লাগতেছে, কৈ গেছিলা?”
“কোথাও না, এমনি সকালে হাঁটতেছি”
“আসো, নাস্তা করো”
“আমার ক্ষুধা লাগেনি ভাই।”
“আরে আসো, নাস্তা কইরা যাও।“
আমি বসলাম, তিনি দোকানের কাজের ছেলেকে বললেন, “এই এরে ভালো কইরা নাস্তা দে।”
আমার বেশ ক্ষুধা পেয়েছিলো, আমি নাস্তা করা শুরু করলাম। সবাই বলাবলি করছে ভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে, সকাল দশটার মধ্যে হল ছাড়তে হবে। আমি তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে আসলাম, হল বন্ধ করে দিবে, কিছু কাজ গোছাতে হবে।

বাসস্ট্যান্ডে যাবার আগে সেই রেস্তুরাঁতে আবার গেলাম, আমি জানি ইনারা এখানে কেউ নাস্তা খেয়ে ঠিকমত বিল দেবেন না, আমারটাও নিশ্চয় দেন নাই। আমি দোকানির কাছে সকালের নাস্তার কথা উল্লেখ করে কিছু টাকা দিয়ে বললাম, “ভাই আমি পেটের ভিতরের খাবার হারাম করতে চাই না, টাকাটা রাখেন প্লিজ।”

আমি বাড়ি ফিরে আসলাম। মন পড়ে থাকলো ক্যাম্পাসে, শরীরে একরাশ ক্লান্তি অথচ অস্থির মন সারারাত ঘুমাতে দিলো না।

সকালে মা এসে বললো, “কিরে আর কতক্ষণ ঘুমাবি, উঠে পড়। জুঁই এসেছে, ওর মা তোর জন্য চালের পিঠা পাঠিয়েছেন।”
জুঁই আমার চেয়ে তিন বছরের ছোট, নিকটতম প্রতিবেশী, সেই ছোটবেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি। মা জুঁইকে খুব পছন্দ করেন, আমাদের বাড়িতে এলেই মাকে রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করেন। আমি বললাম, শরীর ক্লান্ত লাগছে মা, পিঠা ঘরে পাঠিয়ে দাও। জুঁই উঠোনে ছোট বোনের সাথে কথা বলছে, ছোট বোন রানু তাঁর ভীষণ ভক্ত। সবাইকে খুব বিরক্ত লাগছিল, বের হয়ে বললাম, রানু তোর স্কুল দেরি হয়ে যাবে, স্কুলে যা। জুঁইয়ের এর তাঁকিয়ে বললাম, “কি রে তোর আজকে কলেজ নাই?”
“আছে দাদা।”
“যা বাসায় যেয়ে কলেজের জন্য তৈরী হ।”
রানু, জুঁই দুজনেই ভীষণ অবাক হলো আমার ব্যাবহারে, মুখ কালো করে চলে গেলো।

একাশি দিন পর ভার্সিটি খুললো। আমি সেই মেয়েটিকে খোঁজা শুরু করলাম, এখানে শত শত মেয়ে পড়াশুনা করে, প্রতিটা ফ্যাকাল্টি, ডিপার্টমেন্টের ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁজতে লাগলাম।

একদিন খুঁজতে খুঁজতে তাঁকে লাইব্রেরিতে পেয়ে গেলাম। মাথা নিচু করে নোট লিখছে, তাঁর চুলগুলো কপাল, ঘাড়ের পাশ দিয়ে নেমে একটি বইয়ের উপরে ছড়িয়ে আছে, এ দৃশ্য আমার মধ্যে অস্থির আন্দোলন শুরু করলো, ভেতরে এক ধরণের নিরবিচ্ছিন্ন কাঁপুনি হচ্ছিলো, আমি লাইব্রেরী থেকে বেড়িয়ে পড়ি।

মনের মধ্যে এক তোলপাড় চলছে, বাইরে এসেও মন টিকলো না। আমি আবার লাইব্রেরিতে ফিরে আসলাম, তাঁর থেকে কিছুটা দূরেই বসলাম যাতে সে অনুমান করতে না পারে আমি তাঁর জন্যই বসেছি। অল্প কিছুক্ষন পরে দেখলাম লাইব্রেরির শেল্ফে একটা বই রাখলো এবং ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেলো। আমার খুব ইচ্ছা হলো দেখি সে কি বই পড়ে, যেয়ে দেখলাম বইয়ের কভারে লেখা ‘ক্যাপিটল, প্রথম খন্ড’, অনুবাদ পীযুষ দাসগুপ্ত। এই বইতে তার নরম হাতের ছোঁয়া রয়েছে, বইটা মুখের কাছে কিছুক্ষণ গন্ধ নিলাম, ভালোবাসার রোমাঞ্চ অনুভব করলাম।

নিউমার্কেট থেকে ফিরে ক্যাম্পাসে ঢুকছি। একটা রজনীগন্ধার মালা কিনেছি, রাস্তায় ছোট্ট এক মেয়ে এমন করে অনুনয় করছিলো যে না কিনে পারিনি। বেশ দূর থেকে দেখলাম সে মেয়েটি রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছে। হটাত বুকে অসীম সাহস হলো, মালাটা তাঁর হাতে দিয়ে আলাপের সূচনা করবো। রিক্সওয়ালাকে তাঁর কাছে থামতে বললাম। তাঁর কাছে পৌঁছানোর আগেই সে রিক্সা পেয়ে উঠে পড়লো। মাথায় অন্য একটি চিন্তা এলো, আমি সোজা লাইব্রেরি চলে এলাম।‘ক্যাপিটল’ বইটি সেল্ফ থেকে নিলাম, ভাবলাম এরকম একটি জটিল অর্থনীতি আর দর্শনের বই তাঁকে নিশ্চয় আরো কিছুদিন স্টাডি করতে হবে। মালা থেকে কয়েকটি ফুল ছিঁড়ে ‘ক্যাপিটল’ বইয়ের ভিতরে রেখে দিলাম, সাথে ভালোবাসার এক ছোট্ট চিরকুট,
“ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো - - তোমার মনের মন্দিরে।”

পরের দিন ক্লাস পার করে লাইব্রেরি আসতে আসতে দুপুর পার হয়ে গেলো। আমি সেল্ফের কাছে যেয়ে সেই বইটি নামালাম এবং খুলে দেখলাম ফুলের পাপড়িগুলো নেই, সাথে সেই চিরকুটও নেই। কিছুটা মন খারাপ হলো, বইটি রাখতে যাবো অমনি দেখি পৃষ্ঠাগুলোর মাঝে কিছুটা ফাঁক, কিছু একটি আছে মনে হয়, বই খুলে সেই অংশে দেখি চিরকুটটা রয়ে গেছে। চিরকুট হাতে নিয়ে দেখলাম এটা আমারি লেখা, কিন্ত অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আমার আঁকা হার্টের মাঝামাঝি আরেকটি হার্ট আঁকানো, একটি তীর দুই হার্টের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। আমার হাত কাঁপুনি শুরু হলো, নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। রজনীগন্ধা ফুলের পাঁপড়িগুলি সে কি যত্ন করে রেখেছে? সেই পাঁপড়িতে সে কি আমাকে খুঁজে?

আমি ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলেই লাইব্রেরিতে আসি, মেয়েটিকে খুঁজে বেড়াই, কিন্তু তাঁর দেখা পাই না। সেল্ফ থেকে বইটি নিয়ে আসি, ভাঁজ করা চিরকুটটা খুলে দেখি। দিনের পর দিন বিভিন্ন সময়ে লাইব্রেরিতে যেয়ে তাঁর দেখা পাই না, কিন্ত খেয়াল করে দেখলাম চিরকুটটা বুকমার্ক হিসাবে পৃষ্ঠার সাথে, বইয়ের খন্ডের সাথে একটু একটু করে এগোচ্ছে। একদিন দেখলাম আমার চিরকুট বুকমার্ক ষষ্ঠ খন্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে। এটি সংকলনের শেষ খন্ড, আমার কেন জানি মনে হলো এটি পড়া শেষ হলে সে আর লাইব্রেরি আসবে না, আমার সাথে আর দেখা হবে না।

তাঁর সাথে আর দেখা নাও হতে পারে - এই চিন্তা আমায় অস্থির করে তুললো। অস্থির লাগলে রেলস্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে যাই, অনেক মানুষের আসা যাওয়া দেখতে বড় ভালো লাগে, অন্যরকম মায়ার পরিবেশ। কোথাও যেতে মন চাইলো না, আমি দিনভর লাইব্রেরিতে রয়ে গেলাম। সন্ধ্যা হওয়ার পর সমস্ত লাইট জ্বলে উঠলো, লাইব্রেরি অনেকটাই ফাঁকা এখন। এলোমেলো হাঁটছি, বসছি আর সেই সেল্ফের দিকে তাঁকাই, মনে হয়, হয়ত এখনি সে বইটি নিবে। হঠাৎ সেল্ফের উল্টো দিক থেকে মনে হলো একটি মেয়ে সেল্ফ থেকে ওই বইটি নিচ্ছে। আমি দ্রুত হেঁটে সেল্ফের দিকে রওয়ানা দিলাম। আমি সেল্ফের কাছে পৌঁছার আগেই সে বইটি রেখে জোরে হেঁটে লাইব্রেরি থেকে বের হওয়ার পথ ধরলো। আমিও পিছন পিছন হাঁটছি, তাঁর খোলা চুল হাঁটার সাথে সাথে দোল খাচ্ছে। আমি কিছুটা দ্রুত হেঁটে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমি অবাক বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এটি সেই মেয়ে নয়, এ আমারি ক্লাসের, নাম তাঁর অঞ্জনা। ক্লাসে তাঁকে কোনদিন দেখে বুঝিনি, এই মুহূর্তে তাঁর চোখ মুখে অব্যাক্ত ভালোবাসা ঠিকরে পড়ছে, ঠোঁট থিরথির করে কাঁপছে, কোমল ভীরুতায় তাঁর হাত থেকে ব্যাগ পরে গেলো। ব্যাগ থেকে বই, খাতা এবং একটি লিপস্টিক বেরিয়ে পড়লো। লজ্জায় সে দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। আমি বড় মায়ায় পড়ে গেলাম, হাঁটু গেড়ে বসে তাঁর ব্যাগে জিনিসগুলো রেখে দিতে লাগলাম। এই মায়াটাই আমার সবচেয়ে বড় ক্যাপিটাল, আজও এই মায়ার ক্যাপিটাল নিয়ে পথ চলি।







৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×