বলরামের কাছে আমার অনেক ঋণ। কর্মসূত্রে ভারতের কিছু স্থানে ঘোরবার সুবাদে তার মতো বড় মানুষের সাথে দেখা হয়েছিল। টাকার মাপে সে দরিদ্র, মাদকের মাপে সে মাতাল, সমাজের মাপে সে নিতান্ত বেখাপ্পা। তবে ভারতের বুকে দুটো জিনিস "মুশকিল হি নেহি না-মুমকিন হ্যায়", এক- "ডন"কে ধরতে পারা, "দুই" সস্তায় মাসকাবারি ড্রাইভার পাওয়া। বলরাম দ্বিতীয় গোত্রের লোক- এ আমার সৌভাগ্য, নইলে তার গল্প বুকে নিয়ে মার্কিন মুল্লুকে বসে এই স্ট্যাটাস দিতাম কীভাবে? সস্তা মদে কলের জল মিশিয়ে বোতলের ঠোঁটে যে আবেগঘন চুমু সে দিত, তাতে "সিঙ্গেল মল্ট অন দ্য রক্স" খাওয়া বিলিতি সাহেবেরাও তারিফ করত- সে এক মানুষ বটে! পাহাড়ের ভেতর কোথায় সস্তায় বুনোপাখির রোস্ট মিলবে, ভোরের আগে শহরের কোথায় গিয়ে বসলে শহরকে দেখতে "দুলহান"-এর মতো লাগবে- এইসব বর্ণনা স্ট্যাটাসে লিখলে পাঠক তেড়ে আসতে পারেন। বলরামের বিশদ বর্ণনা আরেকদিন দেয়া যাবে। তারচেয়ে দু'লাইনের একটা ঘটনা বলা যাক।
আমার অনুরোধে গাড়িতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে বাজাতে অনেক গানের সুর সে মুখস্ত করে ফেলেছিল। একদিন শুনি সে বৃষ্টির একটা গানের সুর গুণগুণ করছে। ঘটনাক্রমে আকাশে সেদিন মেঘের ঘনঘটা। বিচিত্র এই ব্যাপার দেখে আমি বলরামকে জিজ্ঞেস করলাম,
- বাংলা শিখে ফেলেছ নাকি বলরাম?
: নেহি ডকসাব (ভারতের বড় অংশের মানুষ ডাক্তারকে সংক্ষেপে এই নামে ডাকে)
- তাহলে বাইরের মেঘ দেখে মেঘের গান গাইছ যে?
প্রশ্ন শুনে বলরামকে সামান্য চিন্তিত মনে হল। সে হিন্দিতে যা বললে তার ভাবার্থ-
: মনে এই গান এলো তাই সুর মেলাচ্ছিলাম। যে এই গান লিখেছে সে তো বিরাট ওস্তাদ! পরিবেশের সাথে মনের সুতো বেঁধে ফেলেছে একেবারে!
- সেইটা অবশ্য মন্দ বল নাই। উনি এই কাজ আরও অনেক ক্ষেত্রেই করেছেন।
: উনার নাম কী?
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
একটু থেমে বলরাম যেন স্বগতোক্তি করে উঠল-
- ওয়াহ, এই নামে দেখি রব আর ইন্দ্র- সবই আছে!
বলরামের সাথে দেখা হবার আগে বাঙালি হয়েও এই ব্যাপার কখনো আমার মাথায় আসেনি।
(বলরামের গল্প- ১)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৪:৪৭