আজকাল প্রয়াত বন্ধুদের কথা
বেশ মনে পড়ে।
বয়স হয়েছে, সেটা একটা কারন,
আরেকটা কারন, বয়স এমনও বেশি হয়নি,
যে বয়সে মানুষ সব ভুলে যায়।
কিছু বন্ধু অবশ্য অল্প বয়সেই
ভুলে যাবার রোগে আক্রান্ত হয়েছিল,
যেমন এক বন্ধুর কথা মনে পড়ে,
যাকে কোন রূপবতী রমণী নাম জিজ্ঞেস করলে
সে বেমালুম ভুলে যেত নিজের নাম,
তবু রূপবতীদের নিরাশ করতে নেই, কিছু ত বলতে হয়,
সে নামের বদলে ফোন নম্বর বলে দিত,
ভাগ্য ভালো ওটুকু তার মনে ছিল।
কোথায় হারিয়ে গেল সেই বন্ধু- তাকে আর দেখতে পাই না।
আরেক বন্ধু ছিলেন, যিনি খুব ভোরে
ঘুম থেকে উঠতেন, রুমমেটদের বিবস্ত্র দশায়
আবিষ্কার করবেন বলে,
নিউটন-আইনস্টাইন সব আবিষ্কার সেরে
মারা গেছেন, তাই তিনি এই নতুন আবিষ্কারের নেশায়
জেগে উঠতেন। প্রয়াত হবার পর জানলাম,
তিনি নিজেকে অন্যের আবিষ্কারের বস্তু হওয়া থেকে
বাঁচাতে জাগতেন রোজ ভোরে।
কোথায় হারিয়ে গেল সেই বন্ধু- তাকে আর দেখতে পাই না।
আরেকজন ছিলেন এককাঠি সরেস-
চেনা কেউ দাওয়াত করলে লোকে
আসবাব কেনে, কেউ কেনে হাঁড়িকুঁড়ি,
কেউ নগদ পয়সা খামে পুরে দেয়,
তিনি ড্রয়ার খুলে কিছু বের করতেন, সেটা টাকাপয়সা নয়,
তারপর সযত্নে খামে পুরে উৎসবের কেন্দ্রে বসে থাকা
পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে দার্শনিকের মতো
কাব্যিক গলায় বলতেন, যুদ্ধের ময়দানে মাথা উঁচু করে
বাঁচতে হবে, কেবল শক্তি নয় সবুর করতে হবে,
কেউ কোনদিন জানতে চায়নি কীসের যুদ্ধ কার মাথা
আর কেমন সবুর- তবে এক খতনার দাওয়াতে
তিনি ভুলক্রমে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন-
"আংকেল বে_ন আনছে..." বলে চিৎকার করা
নিতান্ত নির্বোধ ও হবু পুরুষকে তিনি বলেছিলেন,
"বড় হ হা_মজাদা"- অবশ্য আরও অনেক
ভাষা ও শব্দে তার দখল ছিল,
যেগুলো স্কুল-কলেজ-আর সামাজিক প্রতিষ্ঠানে
কোনদিন কেউ শেখাতে পারেনি, পারবেনা।
কোথায় হারিয়ে গেল সেই বন্ধু- তাকে আর দেখতে পাই না।
আজকাল তাদের আর দেখতে পাই না।
বিবাহিত এবং নিতান্ত সভ্য সুধীজনের ছবিতে
তাদের মতো কাউকে কাউকে দেখি বটে,
কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল সেই বন্ধুরা-
তাদের যে আর দেখতে পাই না!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৬