somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের সেই আসমানী

১৮ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর পল্লীকবি জসীমউদদীনের ‘আসমানী’ কবিতার সেই আসমানী শনিবার ভোর তিনটার দিকে ফরিদপুরের নিজ বাড়িতে মারা গেছেন- তার বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর।



‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও’ পল্লীকবি জসীমউদদীনের ‘সুচয়নী’ কাব্যগ্রন্থের ‘আসমানী’ কবিতাটিতে এভাবেই আসমানীর বর্ণনা দিয়েছিলেন কবি।

আসমানী কবিতাটি রচনার কারণ সম্পর্কে জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ১৯১৩ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈষাণ গোপালপুর ইউনিয়নের ভানুরজঙ্গা গ্রামে আসমানীর জন্ম। আরমান মল্লিকের মেয়ে আসমানীর মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয় পাশের রসুলপুর গ্রামের মমিন মণ্ডলের ছেলে হাসাম মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের জননী।

আসমানীর শ্বশুর মানিকগঞ্জের পীর রহিম উদ্দিনের ভক্ত ছিলেন। রহিম উদ্দিন বেশির ভাগ সময় আসমানীর শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করতেন। সেখানে জীর্ণ কুটিরে তিনি প্রায়ই মুর্শিদী গানের আসর বসাতেন। আর এই গানের টানে কবি জসীমউদ্দিন আসমানীদের বাড়িতে ছুটে যেতেন। সেখানেই আসমানীর সঙ্গে কবির পরিচয় হয়। সে সময় ওই বাড়ির পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে তিনি কবিতাটি রচনা করেন। কবির রচিত কবিতার পংক্তিগুলো আসমানীকে বাংলাসাহিত্যে অমর করে রেখেছে। আসমানীকে নিয়ে লেখা কবিতা আমাদের আবেগকে স্পর্শ করে বৈকি কিন্তু আমাদের বিবেককে কতটুকু নাড়া দেয় সে প্রশ্ন মীমাংসিত নয়। আমাদের জিডিপি বাড়ছে, অট্টালিকা বাড়ছে আকাশ ছোঁয়ার নেশায়। কিন্তু আসমানীদের ‌ঘর ছাওয়ার জন্য ভেন্নাগাছও আমরা রাখছি না।
কবির সেই পংক্তি-
‍‍'পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।'


৯৯ বছরের বয়সের বার্ধক্যজনিত কষ্ট, অনেকদিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আসমানী অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। আসমানী ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম অসুস্থ হয়ে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে হন। এ সময় তার আমৃত্যু চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় ফরিদপুর জেলা প্রশাসন। হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে শহরের টেপাখোলা এলাকায় সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শান্তিনিবাসে আসমানীর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

পল্লীকবির সেই কবিতাখানি-
আসমানী
জসীমউদদীন

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।
মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।
ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।
আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।
পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।
১৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×