somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাদুর বাড়ি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসে চলতে হয় বাদুরঝুলা হয়ে, ট্রেনে যেতে বাদুরঝুলা হয়ে। আবার লঞ্চে চড়েও বাদুরঝুলা। সব বাদুর ঝুলাই বিপদ ডেকে আনে। প্রতিদিনই বাদুর ঝুলার কারণে কত যে মানুষের জীবন অকালে শেষ হচ্ছে তার কোন ইয়াত্বা নেই। তবে কোন ভয় বা ঝুঁকি নেই বাদুরের বাদুর ঝুলায়। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামে রয়েছে একটি বাদুর বাড়ি। বারো মাস বাদুরের কিচির মিচির শব্দে এলাকার মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কিন্তু বাদুর বাড়ির মানুষের তা নিয়েই যেন পরিতৃপ্তি।
বিরল প্রজাতির পাখি বাদুর। বাসস্থান ও খাদ্য সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে বাদুর প্রজাতি। বর্তমানে চাহিদামত খাদ্য পাওয়াই দুস্কর হয়ে পড়েছে বাদুর প্রজাতির জন্য। তাইতো খাদ্য সংকটের কারণে বাদুররা ছুটে যায় দুর থেকে বহুদুর পর্যন্ত। যাদের এক সময় বাদুরদের আদিবাস ও জন্মস্থান ছিল নির্জন পাহাড়ে। সেই বাদুররা এখন মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বসবাস করছে গ্রামে।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামে বাদুরের খোঁজ নিতে গিয়ে এলাকাবাসীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এ অঞ্চলে বাদুরের একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে হাজী আব্দুল করিম’র বাড়িটি অতি প্রাচীন। কখন কিভাবে এখানে প্রথম বাদুর আসে এবং কেন এখানে আশ্রয় নিয়েছে তার সঠিক ইতিহাস কারো জানা নেই।
কামারগাঁও গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, একসময় সব ধরণের পাখি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির গাছে বাসা বেঁধে নির্বিঘেœ বসবাস করতো। কালের আবর্তে যেন হারিয়ে গেছে সবকিছু। গ্রামে এখন আর পাখির তেমন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এক সময় প্রতিদিন ভোরে গ্রামের গাছে গাছে পাখির কিচির মিছির শব্দ আর কলরবে ঘুম ভাঙ্গতো গ্রামবাসীর। আবার সন্ধ্যায় পাখির কল কাকলিতে আনন্দ উপভোগ করতেন তারা। পাখি কলতান কামারগাঁও গ্রাম থেকে হারিয়ে গেলেও বাদুরগুলো ওই বাড়িতে বসবাস করছে যুগের পর যুগ।
বাদুর বাড়ির মালিক হাজী আব্দুল করিম জানান, বাদুর অবলা প্রানী। এদের জীবনযাত্রা বড়ই উদ্ভট। নিজের খাদ্যের অভাব মেটানো ছাড়া কোন ক্ষতি করে না। সন্ধ্যার আধাঁর নেমে আসার সাথে সাথে ওরা দল বেঁধে ছুটে যায় বিভিন্ন দিকে। রাতে খাবার অন্বেষনে গেলেও ভোর বেলা সোজা চলে আসে বাদুরের আবাসস্থল তার বাড়িতে। এমনি ভাবে চলছে যুগের পর যুগ বাদুরদের জীবন। কবে কামারগাঁও গ্রামের এ বাড়িতে প্রথম বাদুরগুলো বসতি গড়ে তুলে সে ব্যাপারে তিনি জানান, বাদুরগুলো প্রথমে তার বাড়িতে আবাস গড়েনি। তারই পাশের সর্দার বাড়িতে বাদুরেরা প্রথম আবাস গড়ে তুলে। কিন্তু সর্দার বাড়ির মালিক সামছু মিয়া বাদুরের আবাসস্থল বাদুরের আবাসস্থল সেই গাছটি কেটে ফেলেন। অবশেষে বাদুরেরা তার বাড়ির পশ্চিম দিকের ২/৩টি উচু গাছ বেছে নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, বাদুর মানুষের মতো কথা বলতে পারেনা তবে তারা ঠিকই সামাজিকতা ভাল বুঝে। তাইতো সমাজবদ্ধভাবে বাদুররা দীর্ঘদিন যাবত তার বাড়ির গাছেই বসবাস করছে।
হাজী আব্দুল করিম বলেন, এ জগতে কোন কিছুই স্থায়ী নয়। সবাইকে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে এক সময় বিদেয় নিতে হয়। কিন্তু পৃথিবীর সব কিছুই থেকে যায়। কেউ কিছুই নিয়ে যেতে পারে না। যতদিন গাছগুলো বেঁেচ থাকবে ততদিন তিনি এ গাছগুলো কাটবেন না। তার ছেলে মেয়েরাও চায় না বাদুরগুলোকে বাস্থহারা করতে। তিনি বলেন, বাদুরগুলো নিরাপদে নিশ্চিন্তে তার বাড়িতে বসবাস করছে কারো কোন ক্ষতিতো করছে না।
প্রথম এ গ্রামের যে বাড়িতে বাদুরেরা আবাস গড়ে তুলে সে বাড়ির মালিক সামছু মিয়ার পুত্র শফিকুর রহমান বলেন, তিনি মুরব্বীদের কাছে শুনেছেন বৃটিশ আমলে বাদুররা তাদের বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করে। প্রথম দিকে তারা সংখ্যায় বেশী ছিল না। ক্রমান্বয়ে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে কয়েক হাজার বাদুরে পরিণত হয়। এ সময় বাদুরদের চিৎকারে বাড়ির লোকজন অতিষ্ট হয়ে উঠে। তবুও বাদুরকে তারা কোন ভাবেই এ বাড়ি থেকে তাড়াতে চায়নি। কিন্তু আজ থেকে ৭/৮ বছর পূর্বে সামছু মিয়া হঠাৎ একদিন বাদুরের বসবাসস্থল ৩টি বড় গাছ কেটে ফেলেন। তখন বাদুরগুলো একেবারে বাস্তহারা হয়ে পড়ে। এসময় আবাস হারানো বাদুরের কষ্ট দেখে গ্রামের মানুষজন অনুসুচনা করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে বাদুরগুলো নিজেরাই পছন্দ করে হাজী সাহেবের বাড়ির গাছে আবাস তৈরী করে।
কামারগাঁও গ্রামের ষাটোর্ধ অনু মিয়া জানান, বাদুর অবলা বন্য প্রাণী হলেও বাদুর কারো ক্ষতি করে না। তিনি বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি অসংখ্য বাদুর সর্দারের বাড়ির গাছে থাকে। শ্রীমঙ্গলের আর কোথাও বাদুরের বাড়ি নেই বলে তিনি জানান। সর্দারের বাড়ির গাছগুলো কেটে ফেলায় এখন বাদুর এর পাশেই হাজী আব্দুল করিমের বাড়ির গাছে বাস করছে। তার মতে আল্লাহর সৃষ্টি সকল জীবই সমাজবদ্ধ থাকে। তারই প্রমাণ বাদুরের জীবনযাত্রা। মজার ব্যাপার হলো, বাদুরের জন্য কোন বাসা তৈরী করতে হয় না। শুধু শাখাওয়ালা উচু গাছ হলে তারা সাচ্ছন্দে ঝুলে থাকে। ঝুলন্ত অবস্থায়ই তারা ঘুমিয়ে নেয়।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলাকা পরিচালক ও সচিব একরামুল কবীর জানান, এই গ্রামে বাদুর আগমনের পুরান ইতিহাস জানা নেই। তবে বৃটিশ আমল থেকেই বাদুরগুলো বাস করছে মানুষের সান্নিধ্যে। তিনি বলেন, আসলে বাদুর নিজের চাহিদামত বাসস্থান নির্বাচন করে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার মধ্যে আরও অনেক গ্রাম আছে, বাড়ি আছে। কিন্তু সেখানে ওরা যায় না। তার মতে বর্তমান প্রজন্মের বাদুরের কাছে জন্মস্থান কামারগাঁও। আর জন্মস্থান ছেড়ে কে অন্যস্থানে যেতে চাইবে। তাইতো বাদুরগুলো নিরাপদ জন্মস্থান হিসেবে যুগের পর যুগ এখানে আছে। ভবিষ্যতে যদি বাদুরগুলো তার বাড়ির গাছে বাসবাস করতে আসে তাহলে তিনি আনন্দই পাবেন এবং বাদুরের নিরাপত্তার জন্য যা করা দরকার, তা করতে কার্পন্য করবেন না।’

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৯:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×