আদর করে তোর নাম দিয়েছিলাম ঘাসফুল, শরতের স্নিগ্ধভোরে শিশিরভেজা দুর্বাঘাসে মুক্তোর মত ঝলঝল করে ফুটতে থাকা ঘাসফুল, আমার প্রা---ণের ঘাসফুল!
তোকে ঘিরে কল্পনায় একেছিলাম লাল, নীল, হলুদ কত রঙ্গের হাজার রকম স্বপন! ঘুমভাঙ্গা চোখে তোর নির্মল হাসি-হাসি মুখটা একনজর দেখেই ভেতরটা আনন্দে নেচে উঠবে! ভীষন কর্মব্যস্ত ঘামঝরা মধ্যদুপুরে তোর মলিন মুখটা দেখেই মোচর দিয়ে উঠবে আমার ভেতরটা! তোর ওই দুস্টুমিভরা মলিন মুখে পুনরায় হাসি ফোটানোর জন্য শুরু হয়ে যাবে আমার অস্থির বিচরন!
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শহুরে বিকেলে তোকে নিয়ে রিকসায় ঘরে ফেরার তৃপ্ত বোধ! একটা শিশুর মনে যতটুকু নির্মল সরলতা থাকে তার চাইতেও সরল বোধ নিয়ে কতহাজার স্বপ্নকল্পইতো একেছিলাম এই মনে!
সবাই জানে কর্মশ্রান্ত এই জীবনে, আমি তুই ব্যাস্ত ভীষন,তুই একলা বনে একলাপাখি, হাজারকাজের দায় কাধে তুই মস্ত কাজী! ছোট্ট এই জীবনে শতকাজের ভীরের ফাকে ধুলোজমা তোর ওই মস্তকুলো কানেরকাছে ফিসফিসিয়ে বলতে চেয়েছিলাম 'সিমন্তি' তোরে আমি ভীষনরকম ভালবাসি!
আচ্ছা ঘাসফুল, বলতো শুনি! অন্ধ-পরিশ্রান্ত-যন্ত্রমানবদের জীবনে অর্থহীন এসব ভালবাসাবাসির হাস্যকর দাবী কতটা নাড়া দিতে পারে?
আসলে কি জানিস? সেই শৈশব থেকেই পরিবার পরিজনের জাগতিক দাবী পুরন আর নিজের গোলাকার বাক্সেবন্দী পেচিয়ে থাকা তরলীভূত কলকব্জাগুলোকে স্ব-র অ স্বর-আ পাঠদানকর্মকাজে ভীষণরকম পরিশ্রান্ত হয়ে উঠেছিলাম!
বাইরের এই জগতটাকে ছাপিয়ে প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরেই থাকে একেবারেই ভীন্ন, একেবারেই আলাদা সজ্জায় সজ্জিত আরেকটা জগত! সেখানে প্রবেশাধিকার পায় একান্ত আপন কেউ! যাকে অন্ধের মত ভালবাসা যায়! জাগতিক কিংবা সাময়িক লোকদেখানো মোহাগ্রস্থতায় নয় অনুভবের গভীরতা দিয়ে যার আত্মার বিশালতা টের পাওয়া যায় কেবল তাকেই ঠাই / এক্সেস দেয়া যায় ভীন্ন সেই জগতে!
তোকে দিয়েছিলাম পূর্ণ এক্সেস , বুঝতে চেয়েছিলাম তোর পদচারনার ছন্দ, বাক্সবন্দী করতে চেয়েছিলাম তোরভেতরে আশৈশব জমেথাকা অভিমানি কস্টগুলো! ভেবেছিলাম বাক্সবন্দীকস্টগুলো পাথরজমাট পেটরাভর্তি করে ডুবিয়ে দেব আত্মিক ভালবাসার সুখাচ্ছন্ন সাগরতলায়!
তোকে এত্ত বেশী ভালবাসিবলেই তোর সামান্য বিচ্ছেদ, ইচ্ছেকৃত লুকিয়ে থাকা, বিশেষ দিনে বিশেষ মুহুর্তগুলোতে তোকে খুজে না পাওয়া, তোর ডুব মেরে থাকা নীলনীল কস্ট হয়ে ভেঙ্গেচুরমার করে দেয় এই অবুঝ হৃদয়টারে!
একটা মুহুর্তও যেখানে তোরে চোখের আড়াল দেখতে চাইনি, রাখতে চাইনি ছুয়ে দেয়ার দুরত্বে, সেখানে তোর এই ইচ্ছেকৃত দুরে দুরে থাকা, চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে ঘুরে চলে যাওয়া, সকাল পেরিয়ে সন্ধা হয়ে রাত~ তারপর দিন, শনি থেকে সোম, সোম থেকে বুধ এমনি করে সপ্তাহ!! নারে ঘাসফুল! তুই আসলেই পুড়ে যাওয়া কয়লা!
কর্মক্লান্তিতে মাতাল হয়ে যাওয়া এই আমি'র এতটুকুন ভালবাসা এই মুহূর্তে আমার বড্ড প্রয়োজন ছিল! আমি কাঙ্গালের মতো ভালবাসা চেয়েছিলাম তোরই কাছে!
আমার এই ঝুরিভরা উগড়ে দেয়া এসব ঠুনকো আবেগের কোনই দাহ্যক্ষমতা নাই তোর ব্যাস্তভীষন কর্মক্ষনে! কড়িগুনে পেরিয়ে যাওয়া এই ছোট্টজীবনে তোর ভীষন ব্যাস্ততা! আমি জানি! তোর অনেক কাজ! তোর জন্য কাদবে আমার মন! ভীষনরকম~ ভীষ---নরকম! তাতো কি? তোর নির্লিপ্ত অবহেলায় আমি আমার সমস্ত উচ্ছাসটুকু জবাই দিলাম! আমার এই অবোধ প্রত্যাশাগুলো হিমালয়ের বরফ হয়ে জমে থাক! পচে যাক! ধুয়ো হয়ে উড়ে যাক মেঘের দেশে! কিই বা যায় আসে তোর তাতে?
আমার দৃঢ় বিশ্বাস! এমন একটা সময় আসবে তুই আমাকে খুঁজবি তোর চারিপাশে! রোদ পোড়া বারান্দায়, ছাদে, পথের ধারে, তোর শোয়ার ঘরে, নীল জানালায়! প্রতিটা মুহুর্তে তুই আমাকে খুঁজবি শুধু, পাবি না। থাকব তখন নাম না জানা অন্য কোথাও অন্য কোন দেশে! তখন যদি অবসর পাস দুমিনিট কিবা তারও চেয়ে কিছু কম সময়ের জন্য, আমাকে মনে করে স্মৃতি হাতরে বেড়িও..
আমি শুনতাম!! দুটু গান
১.
দু'পা আমি এগিয়েছি
দুপা তুমি পিছিয়েছ
আমি জানি এ ভালবাসার
কোন মানে হয় না!!!!!!! [আরেফিন রুমি]
২.রইলাম তোর পিরিতের আশায়
শমী ফিচারিং৩৬৫