হঠাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে। যখন বছর শেষে নানা বাড়িতে বেড়াতে যেতাম, তখনকার কথা। যখন শামুকের পথ চলা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যেতাম। জোঁকের কামড় খেয়ে চিৎকার দিতাম। আবার লবণ দিয়ে জোঁক মেরে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতাম। চুলার কালিতে টিন কালো হয়ে গেলে সেই কালি কারো ধোয়া শার্টে লাগিয়ে দিতাম দৌড়। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গরু পেটানোর লাঠি বানিয়ে নানাকে উপহার দিতাম। তালের রস পাততে যে রশি লাগে, তা পাকাতে মামাকে সাহায্য করতাম। তারপিন দিয়ে খেলতাম আর নৌকা রং করা দেখতাম। বিচিত্র গন্ধযুক্ত পাতা আর পাতার রস আর কস দিয়ে হাড়িপাতিল খেলতাম। অনেক গাছ গাছড়া ছিল বাড়ির আঙিনায়। উচ্চতায় বেশি ছিল নারিকেল আর তাল গাছ। সেসব গাছ প্রতি বছর কতটুকু বড় হবে তা মানস্পটে এঁকে রাখতাম। যখন নদী শুকিয়ে যেতো তখন কাদায় ছেয়ে যেতো বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই কাদায় নামলে মাছ পাওয়া যেতো। পাতিল ভরে অনেকে মাছ ধরতো। হেলেঞ্চা শাক আর বাইম মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে নানার লুকানো বৈঠা খুঁজে বের করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌকা নিয়ে ছুটে বেড়াতাম। সাপের কামড় থেকে বাঁচতে হাতে লাঠি নিয়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতাম। ঝড় এলে রাতের বেলা টর্চ লাইট নিয়ে বড়ই টোকাতে যেতাম। ঘোড়া মার্কার নতুন ঢেউটিনের চালে ওঠে পেয়ারা পেড়ে খাওয়া ও নানীর বকুনি খাওয়া। বিয়ের দাওয়াত খেয়ে বয়স্ক মানুষের মত পান চিবানো। মুরগির খোপ ভোর সকালে নিজ দায়িত্বে খোলা। দূর্বা ঘাস দিয়ে নিজের ও অন্যের রক্ত পড়া থামানো। ঝড়ের মধ্যে ঘুড়ি আর বেলুন ওড়ানো খেলা। চুলে চুকচুক তেল মেখে দুপুরে ঘুমানো। তালের পাখা সেলাই করা শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা। আপেল গাছে ফল না এসে ফুল ধরায় মন খারাপ করা। কয়লা দিয়ে শীতের রাতে আগুন পোহানো। রোদে করল্লার বীজ শুকিয়ে বৌয়মে রাখা আরো কত স্মৃতি।
এখন আর গ্রামে যাওয়া হয় না। সেসব দিন আজো মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই দুরন্ত শৈশব। সেসব দিন আজ কত দূরে, আহা কত দূরে! এখনতো ঠিকমতো কই মাছের ঝোল খাওয়া হয় না। এখনকার কই মাছগুলোতে সেই স্বাদ আর কই? এখনতো ডাংগুলি, লাটিম খেলা, দাড়িয়াবান্ধা, কানামাছি কেউ খেলে না। সময় বদলে যায়। আর আমরা বিস্ময়কর সময়ের বদলে যাওয়া দেখি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১:৩৭