somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[] স্বপ্ন []

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষুদ্র শরীরটার দিকে ধীর পায়ে
এগিয়ে এলো লোকটা। চোখমুখে
হিংস্র দৃষ্টি দেখে আতংকে কুঁচকে
গেল ক্ষুদ্র শরীরের অধিকারীনি। তার
দিকে তাকিয়ে হলদে দাঁত বের করে
নিশব্দে হাসল লোকটা। তারপর ধীরে
ধীরে যত্নসহকারে প্যান্টের বেল্ট
খুলায় মনোযোগ দিলো সে।
.
[1]
.
বিছানা কাঁপিয়ে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে
উঠল রিদিমা। চোখদুটোতে ভয়ের
চিহ্ন স্পষ্ট। একটু আগে দেখা
স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেল তার -
যে স্বপ্নে নিজের ছোট বোনকে
রেপ এবং মার্ডার হতে দেখেছিল সে।
কম্পমান অবস্থায়ই খাট থেকে নেেম
পড়ল মেয়েটা। দ্রুত হাঁটা দিল পাশের
বেড রুমের দিকে।
বেড রুমটার ভেতরে উঁকি দিয়ে যখন
ছোট বোনকে মায়ের সাথে
নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখল - তখন
অজান্তেই স্বস্তির নিশ্বাস বেরুল
তার ফুসফুস থেকে।।
.
ধীর পায়ে আবারো সে ফিরে এলো
নিজের রুমে। কিছুক্ষণের মধ্যেই
তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।
.
[2]
.
নির্জন রাস্তাটা দিয়ে প্রতিদিনই
স্কুলে যাওয়া-আসা করে রিমি। মূলত
এটা একটা শর্টকাট ওয়ে। স্কুলে
যাওয়ার সময় বড় রাস্তাটা ব্যবহার
করলে দূরত্ব বেড়ে যায় বিধায় এই
ছোট রাস্তাটা দিয়েই একা যাতায়াত
করে ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া রিমি। তাছাড়া
নির্জনতা তার ভালোই লাগে।
.
আজ স্কুল ছুটির পর প্রতিদিনকার
মতই নির্জন রাস্তাটাতে নির্দ্বিধায়
ঢুকে পড়ল রিমি। আনমনে কিছুদূর
আগাতেই চোখে পড়ল কালো
চামড়ার লোকটাকে।
ঠোঁঠে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে
এলো লোকটা। কিছুটা দূর থেকেই
বলল - "এই মেয়ে তোমার নাম কি?"
পাল্টা হাসি দিয়ে তার নাম জানাল
রিমি। কাছে এসে লোকটা আবারো
জিজ্ঞেস করল - "চকলেট খাবে?"
.
হেসে সম্মতি জানাল রিমি। তারপর
লোকটার পিছু পিছু হাঁটা দিল
পরিত্যক্ত গ্যারেজটার দিকে।।
.
[3]
.
প্রচন্ড দুশ্চিন্তা ভর করল মিসেস
জামালের মনে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল
হলো - এখনো কেন ফিরলো না রিমি
- সে চিন্তা আচ্ছন্ন করে ফেলল
তাকে। বড় মেয়ে রিদিমাকে ডাক
দিলেন তিনি। তারপর তাকে সাথে
নিয়েই বেরিয়ে পড়লেন রিমির
স্কুলের উদ্দেশ্যে।
.
স্কুলের কাছাকাছি এসেই মিসেস
জামালের বুঝতে বাকি রইল না - ঠিক
সময়েই ছুটির ঘন্টা পড়েছে স্কুলে।
দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেল তার।
.
একটা আশংকা রিদিমার মনে দানা
বাঁধতে শুরু করলো। "তবে কি
স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল? কি হয়েছে
রিমির?" - এমন হাজারো প্রশ্ন
ঘুরপাক খেল মনের ভিতর।
"মা, রিমি তো ওই ছোট রাস্তাটা
দিয়ে আসা-যাওয়া করত না?" -
কম্পিত কন্ঠে মায়ের উদ্দেশ্যে
প্রশ্নটা ছুড়ে দিল রিদিমা। তারপর
উত্তরের অপেক্ষা না করেই হাঁটা
দিল সে। উদ্দেশ্য - পূর্ব দিকের
ছোট রাস্তাটা।।
.
[4]
.
রাস্তার মুখে পৌঁছতেই গা শিউরে
উঠল। পুরো গলি তথা রাস্তাতেই
পিনপতন নিরবতা। যেন কোন
মৃত্যুপুরী।
দ্রুত পায়ে রাস্তাটা কয়েকবার
চক্কর দিয়েও রিমির টিকিটিও পাওয়া
গেল না কোথাও। অজানা ভয় চেপে
বসল মা-মেয়ের মনে।।
.
"গ্যারেজটাতে খোঁজে দেখব?" -
স্কুলের দারোয়ানের প্রশ্ন শুনে
সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল রিদিমা এবং
তার মা - দুজনেই।
তারপর, নিজেরাও হাঁটা দিল
লোকটার পিছু পিছু।।
.
ভেতরে চোখ পড়তেই যেন তীব্র
ভোল্টেজের শক খেল রিদিমা। ঠিক
যেন স্বপ্নে দেখা সেই গ্যারেজটাই
মর্ত্যে নেমে এসেছে। তবে, প্রথমেই
তার চোখ পড়ল মেঝেতে উল্টো
হয়ে শুয়ে থাকা রিমির উপর। যেমনটা
সে স্বপ্নে দেখেছিল।
আর কিছু দেখার সুযোগ হলো না -
তার আগেই জ্ঞান হারাল রিদিমা।।
.
[5]
.
জ্ঞান ফিরতেই সর্বপ্রথম সাদা
ছাতটা রিদিমার চোখে পড়ল। চোখ
নামিয়ে আশে-পাশে একটু তাকাতেই
বুঝতে পারল এটা একটা হাসপাতাল।
.
কিছুটা কসরত করে বিছানায় উঠে
বসল সে। উঠে বসতেই দূরের
সোফাটায় তার মাকে হেলান দেয়া
অবস্থায় চোখে পড়ল। নিচু স্বরে
ডাক দিল সে - "মা!"
.
আস্তে করে মাথাটা তুললেন মিসেস
জামাল। বড় মেয়েকে জ্ঞান ফেরা
অবস্থায় দেখেও কোন ভাবান্তর
হলো না তার মধ্যে। শুধু একবার
ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারো
হেলানো অবস্থায় ফিরে গেলেন
তিনি।।
.
মায়ের এমন আচরণ দেখে তীব্র
হিংসা হলো রিদিমার মনে। "একটা
মেয়ে মরেছে তোহ কি হয়েছে?
আরেকজন তোহ আছে। তবে,
আমাকে কেন অবহেলা করা হবে?" -
ভাবল সে। বিছানার পাশ থেকে
ইঞ্জেকশনটা তুলে নিতেই ছুটে
এলো নার্স। ইঞ্জেকশনটা কেড়ে
নিয়ে কড়া চোখে রিদিমার দিকে
তাকাল সে।
তারপর সেটা পুশ করে দিল মেয়েটার
হাতে। ধীরে ধীরে আবারো গভীর ঘুমে
তলিয়ে গেল রিদিমা।।
.
[6]
.
ভয়ঙ্কর স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভেঙে
গেল রিদিমার। তীব্র আতংক চেপে
বসল তার মনে। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে
একবার নিজের হাতের দিকে তাকাল
সে। তারপর তাকাল সোফায় ঘুমন্ত
মায়ের দিকে। সেদিকে তাকাতেই
ভয়ের জায়গায় তীব্র ক্রুধ জেগে
উঠল তার মনে।
.
ধীরে ধীরে খাট থেকে নেমে পড়ল
রিদিমা। ডেক্সের উপর রাখা ফল
কাঁটার ছুরিটা হাতে তুলে নিল। তারপর
এগিয়ে গেল তার মায়ের দিকে।
সোফায় বাঁকা হয়ে শুয়ে আছেন
মিসেস জামাল। যেমনটা রিদিমা একটু
আগেই স্বপ্নে দেখেছিল। তবে
স্বপ্নের কথা তার মনে পড়ল না।
বরং তীব্র ক্রোধে ছুরিটা বসিয়ে দিল
তার মায়ের তলপেটে। কেঁপে উঠলেন
মিসেস জামাল। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে
একবার তাকালেন রিদিমার দিকে।
তারপর ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে।
তখনো রিদিমা আউড়ে চলেছে - "মরা
মেয়ের জন্য আমাকে কেন অবহেলা
করা হবে? হুহ?".....
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×