নিঝুম আর তানিয়া
কলেজ শেষে বাসায়
ফিরছে।শমরিতা
হাসপাতালের সামনে
আসতেই তানিয়া বলে
উঠে…….
.
.
>কিরে তোর হিরো
কই???(তানিয়া)
>একটু পরেই দেখবি
ফুল নিয়া বের হইব
কোন থেকে জানি।
(নিঝুম)
>তুই সিউর যে ও
আসবই???
>অবশ্যই।গত
দুইমাসের শুক্রবার
আর কলেজ বন্ধ ছাড়া
এমন কোনদিন নাই যে
ফুল আনে নাই।
>ছেলেটাকে আর কত
ঘুরাইবি????(অনু
রোধের সুরে)
>আহারে আমার
বান্ধবীগো। উনার
জন্য আপনের বুক
ফেটে যায় মনে হয়???
এত ফাটলে নিজেই
মারনা লাইন।
>আমার পিছনে ঘুরলে
এতদিনে একমাসের
রিলেশন হইয়াও
যাইত।
>তোর কি মনে হয়
ছেলেটা আসলেই
ভাল???
>ভাল মানে সেইরাম
ভাল।হ্যা বইলা দে।
প্লিজ
>আচ্ছা। আজ ওর
পরীক্ষা নিমু দেখি কি
হয়।
>কেমন পরীক্ষা? ??
>দেখতে থাক।
.
.
হটাৎ টেক্সটাইল
মাঠের ভিতর থেকে
শুভ্র বের হয় হাতে
ফুল নিয়ে।সোজা
নিঝুমের সামনে চলে
আসে।
.
.
>এই নাও।(শুভ্র)
>নিবোনা।(নিঝুম)
>কেন??
>আমার ইচ্ছা।
>ওই মধুর মা।প্লিজ
উনারে বলোনা ফুলটা
নিতে।(তানিয়াকে
শুভ্র মধুর মা বলে
ডাকে)
>নিয়া নে নিঝুম।
(তানিয়া)
.
.
নিঝুম ফুলটা শুভ্রর
কাছ থেকে নিয়া ফেলে
দেয়।
.
.
>এই জায়গা থেকে
সরলে খবর আছে।
আমার পিছু পিছু
আসবানা।(নিঝুম)
>কি বলো এইসব???
(শুভ্র)
>ঠিক বলছি।বাই বাই।
টাটা গুড বাই
>……..
.
.
নিঝুম আর তানিয়া
চলে যায়।শুভ্র
ফুলটাকে উঠিয়ে হাতে
নেয়।তারপর সেখানেই
বসে থাকে।পরেরদিন
সকালে নিঝুম কলেজে
যাবার সময় শুভ্রকে
ঠিক ওই জায়গাতেই
বসে থাকতে দেখে।মাথা
নিচু করে।
শুভ্রর কাছে যায়
নিঝুম।
.
.
>ওই মাথা উঠাও ।আজ
এত তাড়াতাড়ি???
(নিঝুম)
>………
>ওই কি হইল কথা
বলোনা কেন????
.
.
নিঝুম শুভ্রর শরীরে
হাত দিতেই শুভ্র
নড়েচড়ে উঠে।
নিঝুম দেখল যে শুভ্রর
চোখ লাল।বুজতে বাকি
রইলোনা যে রাতে
ঘুমায়নাই।
.
.
>রাতে কই ছিলা????
(নিঝুম)
>এইখানে।(নিচু স্বরে)
>মানে???গতকাল
বিকালে কইছিলা????
>এইখানে।
>মানে কি????
>গতকাল তুমি
বলছিলা না যে এখান
থেকে সড়তে মানা???
তাই সড়িনাই।শুধু
ঝালমুড়ি খাইছিলাম
দুইবার।
>পাগল নাকি?????
তোমাকেত পাবনার
মেন্টাল হসপিটালে
এডমিট করা লাগবে।
আমি বলছিলাম আমি
না যাওয়া অব্দি
সড়তেনা।তাই বলে……
অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে
পড় অথচ মাথায় বুদ্ধি
বলতে কিছু নাই।
>এই শুনোনা।আমার
বাড়ি সিরাজগঞ্জ।
সেখান থেকে পাবনা
মেন্টাল হসপিটাল
অনেক কাছেই তুমি
চাইলে
আমি চাচাকে ফোন
দিয়া আমার জন্য সিট
বুক করতে বলতে
পারব।(উজ্জল একটা
হাসি দিয়ে)
.
নিঝুম শুভ্রর গালে
ঠাস করে একটা
থাপ্পড় দেয়।
.
>বাসায় যাও।(নিঝুম)
>বাবা বাসায় যেতে
নিষেধ করছে।(মাথা
নিচু করে)
>সকালে কি
খাইছো????
>কিচ্ছুনা।গতকাল
একটা অসহায়
ভিক্ষুককে সব টাকা
দিয়ে দিছি আর দোয়া
করতে বলছি যে
আমার নিঝুমের যেন
আমার উপর থেকে রাগ
উঠে যায়।
>তোমাকে যে কি করব
বুঝতেই পারছিনা।
>ওই কি বলো এইসব
আমাদের বিয়ে হইনিত
এখনো।
>বিয়ে ???তাও তোমার
মত গাধার সাথে???
ইম্পসিবল
>(মাথা নিচু করে মন
খারাপের আভাস)
.
.
নিঝুম ব্যাপারটা
খেয়াল করল।সবশেষে
শুভ্রর হাতের ভিতর
হাত ঢুকিয়ে বলল….
.
.
>চলো।(নিঝুম)
>কোথায়???(শুভ্র)
>জাহান্নামের
সাতরাস্তায়।যাইব
া????
>তুমি চাইলে চোখ বুঝে
চলে যাবো।
.
.
নিঝুম শুভ্রকে নিয়ে
কাছের একটা হোটেলে
গেল।৬টা পরাটা ওর্ডার
দিল।
.
.
>এই আমাদের
ছেলেমেয়ে নাইতো।এত
পরাটা কে খাবে????
(শুভ্র)
>চুপ।সব গুলা খাইবা
নাহলে আমারে ছাড়বা।
(নিঝুম)
>লাগলে বিষ খাব তবুও
তোমায় ছাড়ার নাম
মুখে আনতে পারবনা।
>হইছে হইছে এখন
খাও।
>হুম।নিজেরিত খেতে
হবে কেওত আর এই
বেচারাকে খাওয়াইয়া
দিবেনা।
>আমি দিতাছি ওয়েট।
.
.
পুরো হোটেলের লোক
ওদের দিকে তাকাইয়া
থাকে।নিঝুম শুভ্রকে
খাওয়াইয়া দেয়।হটাৎ
শুভ্রর মনে পড়ে যায়
নিঝুমের কলেজের
কথা।
.
.
>ওই তোমার কলেজ? ??
>আজ বাদ।
>কেন??
>আজ ওই সময়টা
আমি তোমার সাথে
থাকব।
>কি বলো এটা খারাপ
দেখায়।
>ওই বেশি কথা বললে
আই লাভ ইউ টু কমুনা
কিন্তু (শরম নিয়া)
>কইয়াইত দিলা।(ভাব
নিয়া)
>তো?
>নাথিং
>সামথিং সামথিং???
>নাথিং নাথিং।
>কি কইলা???
>সামথিং সামথিং।
>এখন ঠিক আছে।
বাসায় কখন যাইবা???
>এখনি
>আনকেল মারবেনা???
>তোমার আনকেল
মারবে কিনা জানিনা
কিন্তু তোমার শ্বশুর
আব্বা মারব তা
সিউর।
>বেশি পেকেঁ গেছো???
চলো বাসায় যাই।আমি
আম্মুকে বলব ভাল
লাগেনা তাই ছুটি নিয়া
আসছি
>আচ্ছা।
.
.
শুভ্র আর নিঝুম একে
অপরকে ভালবাসে
অনেক।তবুও নিঝুম
চাইছিল আরোও পরে
রিলেশনে জড়াবে।
মাত্র ইন্টার ফার্স্ট
ইয়ারে।কিন্তু পাগল
ছেলের পাগলামি দেখে
আর না করতে
পারলোনা।দুজনেই
প্রতিবেশি।
প্রায় দুমাসের বেশি
সময় ধরে শুভ্র
নিঝুমের পিছু পিছু
ঘুরছে।কিন্তু নিঝুম
কানেই নেয়না।কিন্তু
আজ শুভ্রর রাস্তায়
রাত জাগাড় কান্ড
দেখে পাত্তা না দিয়ে
পারলোনা।প্রতিদিন
নিঝুমকে ফুল দেয়া
শুভ্রর দৈনন্দিন
রুটিনের এক অংশ।
রিলেশন হওয়ার
পরেরদিন শুভ্র বেশ
কয়েকটা টুকটুকে
গোলাপ নিলো নিঝুমের
জন্য।নিঝুম আর
তানিয়া আসছে এমন
সময় শুভ্র সামনে গেল।
.
.
>ওই মধুর মা।আমার
ভোলাবালা বউটারে
উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দেও
নাকি???দিলে খবর
আছে।(শুভ্র)
>কি বলেন এইসব
দুলাভাই???আমি
আপনের এত্ত বড়
ফ্যান।আপনের
রিলেশনের জন্য
কত্ত কি করলাম আর
আপনি কিনা আমারে
এই কথা কইলেন? ??
(তানিয়া)
>দেইখা রাখ।আমারেত
কত কইলি।পোলা ভালা
আর এখন ওই পোলাই
তোরে কি কয়?
(নিঝুম,,রেগে)
>মধুর মা তুমি আমার
লাইগা এত কিছু
করছো???খুশিতে
আমার তোমার সাথে
প্রেম করতে ইচ্ছে
হচ্ছে।
>কি কইলা???(নিঝুম)
>কিছুনাহ।
>আজ এত ফুল কেন??
>কালকেরটা
এডভান্স।
>এডভান্স মানে? ?
কোথাও যাচ্ছো
নাকি???
>নাহ।মরেওত যেতে
পারি।
>চুপ।আজেবাজে কথা
বাদ।কাল বাবা কিছু
বলছিল???
>শরমের কথা কি আর
কমু???১০টা থাপ্পড়
উইথ এক লাত্থিতে
খাটে শোয়াইয়া
ফেলসে।আর বলছে
ঘুমাইতে।
>বলো কি?????
>হুম।(মন খারাপ করে)
>আচ্ছা।বাই ।কাল
কথা হবে।
>আচ্ছা।
.
.
নিঝুম কিছু দুর যেয়ে
আবার শুভ্রকে ডাক
দেয়।
.
.
>কি হইলো????(শুভ্র)
>আচ্ছা কিস ডে
আছে????
>সরি শুনিনাই।আবার
বলো।
>কিস ডে কবে????
>ধুরর কানে শুনিনা
কেন???
>আচ্ছা বাই।
.
.
শুভ্র কথাটা শুনেছিল
কিন্তু বিশ্বাস
হচ্ছিলনা ওর।বাসায়
যাইয়াই দোকানের
বাকি খাতা নিয়া
দোকানের উদ্দেশ্যে
রওনা হয়।একে একে
প্রায় পাঁচটা ফেস ওয়াশ
আর ক্রিম কিনে।বাপে
জানলে ওর খবর আছে
তাই দোকানদারকে
বলে ওই জায়গায়
চালের হিসাব লিখে
রাখতে।পরেরদিন
আবার কয়েকটা ফুল
নিয়ে রাস্তার অইপাশে
দাড়ায়।তার মাথায়
আজ তানিয়ার
গতকালের কথা
ঘুরপাক খাচ্ছে।হটাৎ
রাস্তার এই পাশে
যাওয়ার সময় একটা
প্রাইভেট কার এসে
শুভ্রকে ধাক্কা দেয়।
শুভ্রকে হাসপাতালে
নিয়ে যায় মানুষ।
এদিকে নিঝুমের
কলেজ ছুটি হয় ।আজ
শুভ্র তার জন্য ফুল
নিয়ে আসেনাই।
ভাবতেও তার অবাক
লাগছে।কিছুদুর যেয়ে
দেখল অনেক মানুষের
শোরগোল।সামনে
এগুতেই দেখল শুভ্রর
ফ্যামিলির সবাই
শমরিতা হাসপাতালের
সামনে।কিছুদুর যেতেই
শুভ্রর মা নিঝুমকে
ডাক দিল।নিঝুম
কিছুটা চমকে সামনে
গেল।
.
.
>আসসালামু
আলাইকুম। (নিঝুম)
>ওলাইকুম আসসালাম।
তুমি নিঝুম না???
(শুভ্রর মা)
>হ্যা। কিন্তু আপনি
আমাকে কিভাবে
চিনলেন?
>শুভ্র আমাকে তোমার
ছবি দেখাইছিল। আর
তোমাকে নিয়া অনেক
কথা বলছে।ওর
এক্সসিডেন্ট হইছে
জানো???(কাদোঁ কাদোঁ
হয়ে।)
>কি বলেন? ??কখন???
ও কোথায়??কিভাবে
হল???
>ভিতরে আমি কিছুই
জানিনা মা।(কেদেঁ
ফেলে।)
.
নিঝুমের মাথায় যেন
আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।সে
দ্রুত শুভ্রর কেবিনের
সামনে যায়।দেখল যে
শুভ্রর মুখে
অক্সিজেন লাগানো।
হটাৎ শুভ্র নিঝুমকে
দেখে অক্সিজেন খুলে
ফেলে। ডক্টর কিছু
বলতেই নিঝুমকে
ইশারা দিয়ে দেখিয়ে
দেয়।ডাক্তার বাহিরে
বের হয়ে নিঝুমকে
ভিতরে ঢুকতে বলে।
নিঝুম ভিতরে ঢুকে।
চোখ লাল হয়ে গেছে।
আজ রাগে লাল হয়নি।
চোখের পানিতে
হয়েছে।
.
.
>ওই কাদোঁ কেন?
(শুভ্র)
>না কই???কিভাবে
হলো???(নিঝুম)
>আর বইলনা।
ক্যালেন্ডারে কিস ডে
খুইজাঁ পাইনাই।রাস্তা
দিয়া ভাবছিলাম
ওইটার কথা আর হটাৎ
করে একটা প্রাইভেট
কার এসে ধাক্কা দিতে
গেলেই আমি লাফ দিয়ে
উপর থেকে নিচে
গড়িয়ে পরি।জানতামনা
ব্যাট বলের মত এত
ভাল টাইমিং পাব লাফ
দিতে।
>ওই তুমিনা গতকাল
আমার কথা
শুনোনাই???(ভিজা চোখ
মুছে)
>শুনেছিলাম।
>পা ভাঙ্গলে কি
হত????
>তোমার পা দিয়ে
হাটতাম।
>হাত ভাঙ্গলে?
>তোমার হাত আছেত।
>চোখে ময়লা ঢুকলে??
>তোমার চোখ দিয়ে
দেখতাম।
>শখ কত?
>অনেক।
>আমি গেলাম।
.
.
শুভ্রর শুধু মাথাটাই
ফেটেছে।আর পায়ে
একটু ব্যাথা পেয়েছে।
অজ্ঞান ছিল
এক্সসিডেন্ট এর পর।
নিঝুম যাওয়ার সময় পা
উঠাতেই ব্যাথায়
চিৎকার দেয়।নিঝুম
দৌড়ে ছুটে আসে
আবার।
.
.
>কি হইছে??(নিঝুম)
>পা ব্যাথা।(শুভ্র)
>ওহ।নড়াচড়া কইরোনা
তাহলে আরো বেশি
ব্যাথা পাইবা।আর তুমি
আন্টিকে কি বলছো
আমার সম্পর্কে?
>বলছি তুমি উনার হবু
বউ
>উনি কিছু বলেনাই??
>আমি বাসার সবাইকে
আগে থেকেই সব
জানাই।তাই সবাই
আমাকে বিশ্বাস করে।
>ওহ আচ্ছা।বাসায়
গেলাম। নাহলে আম্মু
টেনশন করব।
>আচ্ছা।বাই
>ওই একটা কাজ
করবা??
>কি
>একটু নিচে ওইদিকে
দেখোত কি আছে?
.
.
শুভ্র অন্যদিকে
তাকাইতেই নিঝুম ওর
গালে একটা কিস দিয়ে
দৌড়ে চলে যায়।শুভ্র
খুশিতে নাচতে যেয়েও
পা ব্যাথায় তা আর
সম্ভব হয়ে উঠেনাই।
পরেরদিন কলেজ থেকে
ফেরার সময় নিঝুম
দেখল শুভ্র পায়ে
বেন্ডিজ অবস্থায়
তার বন্ধু অয়নের
সাথে ফুল নিয়ে দাড়িয়ে
আছে।
.
.
>ওই বাসা থেকে বের
হইছো কেন??(নিঝুম)
>তোরে ফুল না দিলে
উনার পা ব্যাথা ভাল
হবে কিভাবে?
(তানিয়া)
>মধুর মা তোমার মাথায়
এত বুদ্ধি?কাল
তোমাকে অবশ্যই
একখানা চকলেট দিব
এত বুদ্ধির জন্য।
(শুভ্র)
>বাইরে বের হইতে
বলছে কে??(নিঝুম
রেগে)
>ফুলটা নেও।চলে
যাচ্ছি
>এই অবস্থায় দেয়া
লাগবে কেন? ?
>জানিনা।গতকাল
রাতে ঘুম হয়নি তাই
সকালে ভাবলাম ওত
সুন্দর একটা
চিকিৎসার জন্য আজ
ফুল না দিলে খারাপ
দেখায়।
>তোমাকে পিটাতে
হবে।অনেক পেকেঁ
গেছো।
>আচ্ছা।শমরিতা
হাসপাতালে ফোন দিয়ে
বলতাছি যে গতকালের
বেডটা আবার বুক
করতে আমার জন্য।
>ওই চুপ।
.
.
নিঝুম তানিয়া আর
অয়নের সামনেই
শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।
তাদের ভালবাসার
দিনগুলি এভাবেই পার
হচ্ছে।ভালবাসার
অনুভূতিগুলো তাদের
প্রতিটা মুহুর্তকেই
স্বরনীয় করে রাখে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২১