সকাল ৬.০০ টা। এক মনে কনডম ঘষাঘষি করে চলেছে ছাদ্দাম, আর কিছুক্ষন এর মাঝেই সরগরম হয়ে উঠবে বদি মিয়ার ক্যারামবোর্ড। সেই সাথে ভোর থেকেই চাঙা রয়েছে ক্যারামবোর্ডের দোকান লাগোয়া স্বপনের চা দোকান। নামে “স্বপন টি স্টল’ হলেও চাল ডাল সবই পাওয়া যায় স্বপনের দোকানে। ছোটো একটা দোকান ছিলো স্বপনের, তা থেকে আজ প্রায় ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, আর এসব ই হয়েছে বদি মিয়ার ক্যারামবোর্ডের কল্যাণে। বাজি ছাড়া খেলা হয়না বললেই চলে, যাও দু একদল বাজি ছাড়া খেলে তারা একটু পর পর চা সিগেরেট খেতেই থাকে। আর চা ঠান্ডা বাজি তো চলছেই। বেচা বিক্রী ভালোই হয় স্বপনের। এসবে মাথা ঘামায়না স্বপন, তার আসল কাষ্টমার আসে সন্ধ্যার পর। সোজা ক্যারামবোর্ডে যায়া ঢুকে, একটু পর পর বদি মিয়ার কর্মচারী সাদ্দাম আসে অমুক ভাই চা চাইসে, লগে সিগেরেট আর বিস্কুট। প্রথমেই ভালো একতা বিস্কিটের প্যাকেট দেয় স্বপন, সেই সাথে ঠান্ডা পানি। ইচ্ছা করে হাফ লিটার পানির বোতল দেয় সে, এতে লাভ বেশি। ঐসব নিয়ে যায় সাদ্দাম, এর মাঝেই চা বানায় স্বপন, সেই চায়ে দুই টাকা দামের দুই প্যাকেট বিস্কিট গুড়া দেয়, তারপর ডিব্বায় ভরে হিট দেয়। সাদ্দাম আসে নিয়ে যায় চা আর সাথে কিছু সিগেরেট। রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত এরকম বেশ কয়েকটা গ্রুপ আসে। কি খায় না খায় তার হিসাব কেবল স্বপন ই রাখে। খেলা শেষ হলে দোকানে আসে, কিরে স্বপন বিল কত হইসে? ভাই ২৬৩ টাকা। ২৬০ টাকা দেন জবাব দেয় স্বপন। প্রকৃত পক্ষে বিল হয় ১২০-১৫০ টাকা। না তুই আরেকতা সিগেরেট দে, ২৬৩+৮ =২৭১ নে তুই ২৭০ রাখ, তিন টাকা না এক টাকা কম রাখ। আর এরকম ৫-৬ টা গ্রুপের কারণে স্বপনের বাড়তি ইনকাম ৫-৬০০ টাকা। স্বপন সবসময় ঢাকাতি করেনা, মাসের ১০-২০ তারিখ বিল বলে ডাবল। ২০-৩০ তারিখ মোট বিলের উপর ৫০ টাকা বাড়ায়, আর ১-১০ তারিখ বাড়ায় ৩০ টাকা। এতে সন্দেহের অবকাশ পায়না খদ্দের। একদিন জানতে চেয়েছিলো বিপ্লব কিরে স্বপন ইদানিং বিল কম আহে ক্যা? “ভাই মাসের শেষ আপনেগো টানাটানি, আমারো টানাটানি, সিগেরেট আছিলো না দোকানে, কম দিছি। এল্লিগা বিল কম আইসে” চটপট জবাব দেয় স্বপন। সন্তুষ্ট হয় বিপ্লব, পোলা ভালো। নোয়াখাইল্লাদের দেখতে পারেনা বিপ্লব, কিন্তু আশেপাশে আর দোকান না থাকায়, তাছাড়া খেলার সময়ে দূর থেকে সদাই আনা ও যন্ত্রণা। কিন্তু আস্তে আস্তে নোয়াখাইল্লাদের পছন্দ করতে শুরু করেছে বিপ্লব। স্বপন প্রথমে এমন ছিলোনা, এলাকার কিছু ছেলেপের অবসান এ ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। স্বপন ব্যাস্ততার ফাকে হিসাব সবসময় রাখতে পারতোনা, তখন নতুন দোকানদার ছিলো, সবাইকে সাধু মনে বিশ্বাস করতো সে, যে যা খিয়াসে বলতো সে তাই মেনে নিত, আর ওরা একটু পর পর একটা করে সিগেরেট নিতো। যার জন্য স্বপন চাইলেও পারফেক্ট হিসাব রাখতে পারতোনা। আবার ‘আগে টাকা পরে সদাই’ এই সিষ্টেম চালু করার উপায় ও নাই। পোলাপান গুন্ডা টাইপের। মাস খানেক পরে স্বপন টের পেলো চালান থেকে টাকা বের না করলেও তা থেকে চালান কমে যাচ্ছে।
নিবিষ্ট মনে খেলা দেখছে সুহাস সরকার। খেলছে এলাকার দুই প্রভাবশালী ব্যাক্তি। টাকার প্রভাব নাই তবে অস্ত্রের আছে। উনারা ৬ গুটি খেলছে। যার যার সাইডের পকেট হলো পয়েন্ট পকেট। প্রতি বার নির্দিষ্ট গুটি পকেটে ঢুকাইলে ৬ পয়েন্ট। খেলা দেখার পাশাপাশি হিসাব ও রাখছে সুহাস। ৫ টা সাদা আর ৫ টা কালো গুটি রেখেছে সামনে। সাদা গুটি রাখছে নীল ভায়ের হিসাব আর কালো গুটি রাখছে সাকিব ভায়ের হিসাব। নীল ভায়ের পয়েন্ট হলে সাদা গুটি আলাদা করে রাখছে একটা আর সাকিব ভায়ের হলে কালোটা। এইভাবে দুজনের ই ২৪ হয়েছে। রঙ পকেটে গুটিউ যাচ্ছে, আবার নতুন বোর্ড শুরু হচ্ছে। ক্যারাম খেলায় সাধারণত পাশে যারা থাকে তারা অনেকেই সাজেশন দেয়ার চেষ্টা করে, বা যে কোনো একপক্ষের সাইড নিয়ে সদা হাস্যত্মক ভাবে প্রতিপক্ষে কে ব্যাঙ্গ করার চেষ্টা করে। ইচ্ছে থাকা সত্বেও তা পারছেনা সুহাস। যারা খেলছে তারা একে অপরে ঘনিষ্ট বন্ধু, তা ছাড়া দুজনেই সোহাগ রে ভালো জানে। যদিও এই মুহুর্তে সোহাগের ইচ্ছে হচ্ছে যে কোনো একজনের পক্ষ নেবার, কিন্তু সে কাউকেই পছন্দ করেনা বলে নিতে পারছেনা। আবার সহজাত প্রবৃত্তির কাছে হার ও স্বীকার করতে পারছেনা, আবার এলাকার একই ব্যাচের দুই বড় ভাই বলে নেওয়া যাবেনা, হিসাব রেখে উঠে যেয়ে সিগেরেট ও খাও্যা যাচ্ছেনা, এদের সামনেও খাও্যা যাবেনা মহা যণত্রণার বিষয়। এটা হচ্ছে ফসলা খেলা। সকাল ৮ টায় তাদের খেলা শুরু হয়েছে, এখন বেলা ১১ টা। এতক্ষন তারা যে খেলছে তাতে সমান সমান, মোট ২৯ টা গেম । যার ২৮ টা শেষ উভয়েই ১৪ করে জিতছে, এটা তে যে হারবে তাকে দিতে হবে ৫০০০ টাকা, আর যে জিতবে সে ইচ্ছা হলে ২৯ গেমের ২৯০ টাকা গেমভারা দিতেও পারে, আবার নাও দিতে পারে। তবে দিয়া দেয় তারা। আবার এই টাকা দিয়া দুই বন্ধু একসাথে মদ খাবে। স্বপনের দোকানে বিল দেবার সময় সুহাস রে জিজ্ঞাইবো খাবি কিছু? খাইলে খা। সোহাগ না উত্তর দিবে। দুজনের একজন বলবে চা খা, অই স্বপন আমাগো তিন ভাই রে চা দে। সুহাস হাসিখুশি বদনে চা খাবে আর ওগো ১৪ গোষ্টিরে গালাগাল দেবে, তারপর তারা চলে গেলে একটা জন প্লেয়ার মুখে নিয়ে আড়ামে ফুকবে। তবে এই গেমের যে অবস্থা তাতে আরো ২ ঘন্টায় গেম উঠবে কিনা ভেবে পাচ্ছেনা সুহাস। কপাল ভালো থাকলে দুই মিনিট, না থাকলে তো হইলোই। একটা ফোন আসায় বের হয়ে আসে সুহাস, স্বপনের দোকান থেকে একটা জন প্লেয়ার নিয়ে টানতে টানতে রউনা দেয় পশ্চিম অভিমুখে। সেখানে পর্যাপ্ত কাজ রয়েছে সুহাসের।
চলবে