somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাইলাতুল কাদরের সালাতের পরিমাণ ও পদ্ধতিবিষয়ক জাল কথা-----------

০২ রা জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন সহীহ হাদীসে লাইলাতুল কাদরে ‘কিয়াম’ বা ‘কিয়ামুল্লাইল’ করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কিয়ামুল্লাইল অর্থ রাত্রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করা। এর জন্য কোনো বিশেষ রাক‘আত সংখ্যা, সূরা, আয়াত, দোয়া বা পদ্ধতি নেই। রাসুলুল্লাহ (সালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে সুদীর্ঘ কিরাআতে এবং সুদীর্ঘ রুকু ও সাজদার মাধ্যমে কিয়ামুল্লাইল করতেন। এজন্য সম্ভব হলে দীর্ঘ কিরাআত ও দীর্ঘ রুকু-সাজদা সহকারে সালাত আদায় করা উত্তম। না পারলে ছোট কিরাআতে রাক‘আত সংখ্যা বাড়াবেন। মুমিন তার নিজের সাধ্য অনুসারে সূরা, তাসবীহ, দোয়া ইত্যাদি পাঠ করবেন। প্রত্যেকে তার কর্ম অনুসারে সাওয়াব পাবেন।
কাজেই ‘লাইলাতুল কাদরের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা, সূরার নাম, সালাতের পদ্ধতি, সালাতের মধ্যে বা পরে বিশেষ দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সবই মনগড়া এবং বাতিল কথা। অনেক প্রকারের মনগড়া কথা ‘বাজারে’ প্রচলিত। একটি মনগড়া পদ্ধতি ও তৎসংশ্লিষ্ট কিছু জাল হাদীস একটি প্রসিদ্ধ পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করছি।

“শবে-ক্বদরের নামাজ পড়িবার নিয়ম: এই রাত্রিতে পড়িবার জন্য নির্দিষ্ট ১২ রাকাত নফল নামায আছে। ঐ রাত্রিতে দুই রাকাত নফল নামায পড়িবে প্রথমে নিয়্যত করিবে, যথাঃ- “আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ক্বেবলারোখ দাঁড়াইয়া শবে-ক্বদরের দুই রাকাত নামায পড়িতেছি।” নিয়্যত ও তাকবীরে-তাহরীমা অন্তে-ছুবহানাকা, আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ ও ‘ছুরা ফাতেহার’ পর প্রত্যেক রাকাতে ‘ছুরা ক্বদর’ একবার, ‘ছুরা এখলাছ’ তিনবার পাঠ করিবে এবং এইরূপে নামায শেষ করিবে।

হাদীছে আছে, যাহারা এই নামায পড়িবে, আল্লাহ তাআলা তাহাদিগকে সমস্ত শবে-ক্বদরের ছওয়াব বখশিশ করিবেন এবং হযরত ইদ্রীস, হযরত শোয়াইব, হযরত আইয়ুব, হযরত ইউছুফ, হযরত দাউদ ও হযরত নূহ আলাইহিচ্ছালাম এর সমস্ত পুণ্যের ছওয়াব তাহাদের আমলনামায় লিখিয়া দিবেন ও তাহাদের দোওয়া মকবুল হইবে এবং তাহাদিগকে বেহেশতের মধ্যে এই পৃথিবীর সমতুল্য একটি শহর দান করিবেন।

অতঃপর দুই দুই রাকাত করিয়া চারি রাকাত নফল নামায পড়িবে। প্রথমতঃ নিয়্যত করিবে। নিয়্যত ও তাকবীরের তাহরীমা পাঠান্তে প্রত্যেক রাকাতে ‘ছুরা ফাতেহার’ পর ‘ছুরা ক্বদর’ একবার ও ‘ছুরা এখলাছ’ ২৭ বার পড়িবে। ইহাও খেয়াল রাখিবে যে, প্রথমতঃ নিয়্যত করিয়া প্রথম রাকাতে ‘ছুরা ফাতেহার’ পূর্বে ছুবহানাকা, আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ পড়িতে হয়। কিন্তু তৎপর যত রাকাতই হউক না কেন প্রত্যেক রাকাতে ছুরা ফাতেহার পূর্বে কেবল মাত্র বিছমিল্লাহ পড়িতে হইবে এবং উল্লিখিত নিয়মেই পড়িয়া নামায শেষ করিবে।
হাদীসে আছে, যাহারা এই নামায পড়িবে, আল্লাহ তাআলা তাহাদিগকে এইরূপ নিষ্পাপ করিয়া দিবেন, যেমন অদ্যই মাতৃগর্ভ হইতে ভুমিষ্ঠ হইয়াছে। আর বেহেশতে তাহাদের জন্য হাজার বালাখানা তৈয়ার হইবে। - (মেশকাত) তৎপর দুই দুই রাকাত করিয়া চারি রাকাত নামায পড়িবে। প্রথমতঃ নিয়্যত করিবে, নিয়্যত ও তাকবীরে-তাহরীমার পাঠান্তে ছোবহানাকা, আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ ও ছুরা ফাতেহার পরে প্রত্যেক রাকাতে, ছুরা ক্বদর তিনবার ও ছূরা এখলাছ ৫০ বার পড়িবে এবং এইরূপে নামায শেষ করিয়া ছেজদায় গিয়া ঐ দোওয়া একবার পড়িবে- যাহা সূর্যাস্ত যাইবার কালে পড়িবার জন্য লিখা হইয়াছে। হাদীছে আছে, যাহারা এই নামায পড়িবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাহাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন ও তাহাদের দোওয়া খোদা তাআলার দরবারে মকবুল হইবে।”

এগুলো সবই ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা। ‘মেশকাত’ তো দূরের কথা কোনো হাদীস-গ্রন্থেই এ সকল কথা পাওয়া যায় না।--------আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ১১৫।মাও. গোলাম রহমান, মকছুদোল মোমেনীন, পৃ ২৪৮। হাদিসের নামে জালিয়াতি-(৫৫৬-৫৫৮পৃ.)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×