বিভিন্ন সহীহ হাদীসে লাইলাতুল কাদরে ‘কিয়াম’ বা ‘কিয়ামুল্লাইল’ করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কিয়ামুল্লাইল অর্থ রাত্রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করা। এর জন্য কোনো বিশেষ রাক‘আত সংখ্যা, সূরা, আয়াত, দোয়া বা পদ্ধতি নেই। রাসুলুল্লাহ (সালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে সুদীর্ঘ কিরাআতে এবং সুদীর্ঘ রুকু ও সাজদার মাধ্যমে কিয়ামুল্লাইল করতেন। এজন্য সম্ভব হলে দীর্ঘ কিরাআত ও দীর্ঘ রুকু-সাজদা সহকারে সালাত আদায় করা উত্তম। না পারলে ছোট কিরাআতে রাক‘আত সংখ্যা বাড়াবেন। মুমিন তার নিজের সাধ্য অনুসারে সূরা, তাসবীহ, দোয়া ইত্যাদি পাঠ করবেন। প্রত্যেকে তার কর্ম অনুসারে সাওয়াব পাবেন।
কাজেই ‘লাইলাতুল কাদরের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা, সূরার নাম, সালাতের পদ্ধতি, সালাতের মধ্যে বা পরে বিশেষ দোয়া ইত্যাদি সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সবই মনগড়া এবং বাতিল কথা। অনেক প্রকারের মনগড়া কথা ‘বাজারে’ প্রচলিত। একটি মনগড়া পদ্ধতি ও তৎসংশ্লিষ্ট কিছু জাল হাদীস একটি প্রসিদ্ধ পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করছি।
“শবে-ক্বদরের নামাজ পড়িবার নিয়ম: এই রাত্রিতে পড়িবার জন্য নির্দিষ্ট ১২ রাকাত নফল নামায আছে। ঐ রাত্রিতে দুই রাকাত নফল নামায পড়িবে প্রথমে নিয়্যত করিবে, যথাঃ- “আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ক্বেবলারোখ দাঁড়াইয়া শবে-ক্বদরের দুই রাকাত নামায পড়িতেছি।” নিয়্যত ও তাকবীরে-তাহরীমা অন্তে-ছুবহানাকা, আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ ও ‘ছুরা ফাতেহার’ পর প্রত্যেক রাকাতে ‘ছুরা ক্বদর’ একবার, ‘ছুরা এখলাছ’ তিনবার পাঠ করিবে এবং এইরূপে নামায শেষ করিবে।
হাদীছে আছে, যাহারা এই নামায পড়িবে, আল্লাহ তাআলা তাহাদিগকে সমস্ত শবে-ক্বদরের ছওয়াব বখশিশ করিবেন এবং হযরত ইদ্রীস, হযরত শোয়াইব, হযরত আইয়ুব, হযরত ইউছুফ, হযরত দাউদ ও হযরত নূহ আলাইহিচ্ছালাম এর সমস্ত পুণ্যের ছওয়াব তাহাদের আমলনামায় লিখিয়া দিবেন ও তাহাদের দোওয়া মকবুল হইবে এবং তাহাদিগকে বেহেশতের মধ্যে এই পৃথিবীর সমতুল্য একটি শহর দান করিবেন।
অতঃপর দুই দুই রাকাত করিয়া চারি রাকাত নফল নামায পড়িবে। প্রথমতঃ নিয়্যত করিবে। নিয়্যত ও তাকবীরের তাহরীমা পাঠান্তে প্রত্যেক রাকাতে ‘ছুরা ফাতেহার’ পর ‘ছুরা ক্বদর’ একবার ও ‘ছুরা এখলাছ’ ২৭ বার পড়িবে। ইহাও খেয়াল রাখিবে যে, প্রথমতঃ নিয়্যত করিয়া প্রথম রাকাতে ‘ছুরা ফাতেহার’ পূর্বে ছুবহানাকা, আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ পড়িতে হয়। কিন্তু তৎপর যত রাকাতই হউক না কেন প্রত্যেক রাকাতে ছুরা ফাতেহার পূর্বে কেবল মাত্র বিছমিল্লাহ পড়িতে হইবে এবং উল্লিখিত নিয়মেই পড়িয়া নামায শেষ করিবে।
হাদীসে আছে, যাহারা এই নামায পড়িবে, আল্লাহ তাআলা তাহাদিগকে এইরূপ নিষ্পাপ করিয়া দিবেন, যেমন অদ্যই মাতৃগর্ভ হইতে ভুমিষ্ঠ হইয়াছে। আর বেহেশতে তাহাদের জন্য হাজার বালাখানা তৈয়ার হইবে। - (মেশকাত) তৎপর দুই দুই রাকাত করিয়া চারি রাকাত নামায পড়িবে। প্রথমতঃ নিয়্যত করিবে, নিয়্যত ও তাকবীরে-তাহরীমার পাঠান্তে ছোবহানাকা, আউজুবিল্লাহ, বিছমিল্লাহ ও ছুরা ফাতেহার পরে প্রত্যেক রাকাতে, ছুরা ক্বদর তিনবার ও ছূরা এখলাছ ৫০ বার পড়িবে এবং এইরূপে নামায শেষ করিয়া ছেজদায় গিয়া ঐ দোওয়া একবার পড়িবে- যাহা সূর্যাস্ত যাইবার কালে পড়িবার জন্য লিখা হইয়াছে। হাদীছে আছে, যাহারা এই নামায পড়িবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাহাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন ও তাহাদের দোওয়া খোদা তাআলার দরবারে মকবুল হইবে।”
এগুলো সবই ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা। ‘মেশকাত’ তো দূরের কথা কোনো হাদীস-গ্রন্থেই এ সকল কথা পাওয়া যায় না।--------আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ১১৫।মাও. গোলাম রহমান, মকছুদোল মোমেনীন, পৃ ২৪৮। হাদিসের নামে জালিয়াতি-(৫৫৬-৫৫৮পৃ.)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭