somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পরীর শরীর এবং একজন অমানুষ

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

















নেয়ামত উদাস মুখে ঘরের দর জার সামনে দাড়িয়ে আছে তার মন আজকে ব্যাকুল হয়েছে, ব্যাকুলতার কারন সে ধরতে পারছেনা। রেডিও বাজছে আজকাল রেডিও আর কেউ শোনেনা সে শুনছে প্রচন্ড আবেগ নিয়ে শুনছে, রেডিওতে লালন ফকিরের গান চলছে গানের কথা "মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের ও সনে," সে মনযোগ দিয়ে মিলন নিয়ে ভাবছে, এখানে ফকির কার সাথে মিলনের কথা বলছে? তা নিয়ে নেয়ামতের তেমন মাথা ব্যাথা নাই, সে চিন্তায় আছে তার স্ত্রী কে নিয়ে, এই মহিলা কখন কৈ যায় বোঝা মুশকিল অভাবের সংসার ঘরে নাই টেকা পয়সা, বৌ নানান বাড়ী বান্দী গিরী করে, নেয়ামতের ভাবনা হয় বৌয়ের জন্য, রুপবতী বৌ, নয় কেলাস পরছে, ভরন্ত যৌবনা। এইরকম বউ এদিক সেদিক যায় এইটা ঠিকনা মানুষের মন আজ উজানে তো কাইল ভাটিতে, রেডিওতে এখন বাজতেছে দিলরুবার গান, "ভোমোর কৈও গিয়া," আজিব মানুষের ভাবনা ভোমর কেমনে কৈব? ভোমর তো গিয়া কানে দিবো কামর, ডাক দিয়ে ফুইল্যা উঠলে বুঝবো ভোমর ক্যামনে কয়, নেয়ামতের মেজাজ খারাপ হচ্ছে এই লক্ষন খুব একটা ভালোনা, সে রেডিওর দিকে তাকায় গরমে তার গায়ে ঘাম দিছে, বৌটা কাছে থাকলে বাতাস করতো, তালের একটা পাখা আছিলো বৌ বানাইছে কৈ যে রাখছে, নেয়ামতের মেজাজ পুরা খারাপ হৈয়া গেলো, সে ব্যাড়ায় গোজা দাও টা হাতে নেয়, মেজাজ হিছে বেজায় খারপ, ইচ্ছা করতাছে কোপ দিয়া দুনিয়া দুই ভাগ কইরা ফালায়। সে ঘর থেইকা বাইর হইছে, বাইরে যে রোদ উঠছে তাতে এই রোদ, কাক ডাকা রোদ না ঠাডা পড়া রোদ, ফাকা মেঠ রাস্তায় নেয়ামত একা হাটছে, ক্ষুধা আস্তে আস্তে মাথা চাড়া দিচ্ছে সাথে পাল্লা দিয়ে মেজাজ খারাপের পরিমান ও বাড়ছে, সে একটা কলা গাছের উপরে কোপ দিলো, এক কোপে কলাগাছ কাত হইয়ে পড়লো, তার মেজাজ একটু কমেছে, মেজাজ ঠান্ডা হওয়ায় নেয়ামতের এই ঝিন ধরা দুপুরে একা রাস্তায় একটু গা ছম ছম করে, খালের পাড়ের


তাল গাছ টার দিকে তাকিয়ে সে বাড়ীর দিকে ভো দৌড় দেয়, সবাই বলে ঐ তাল গাছে শয়তান আছে, ইবলিস শয়তান। সেই শয়তান পুরা বিটলা টাইপ, কথা নাই বার্তা নাই ঘাড় ভাইংগা তালগাছের নিচে ফালায়া রাখে। নোয়ামত ঘরের মধ্যে ঢোকে, রেডিওতে গান বাজচ্ছে "নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলি গ্রাম, বন্ধুর কাছে মনে খবর ক্যামনে পৌছাইতাম," নেয়ামতের মেজাজ আবার খারপ হইছে, সে দা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে, মনে মনে বলে আসুক আজকে বাড়ী মনের খবর কেমনে পৌছান লাগে সেইডা হ্যারে শিখামু।



জুলেখা আচলের আড়ালে প্লেট টা নিয়ে হেটে যাচ্ছে শত ছিন্ন পরার কাপরে শরীর ঢেকে রাখা মুশকিল, ঘরে লোকটা না খেয়ে বসে আছে, মাথা পাগল মানুষ কখন কি করে ঠিক নাই, চৈত্র মাসের গরমে মাথা আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়, মাষ্টরের বৌ ভাত আর বাসি তরকারী না দিলে লোকটারে খাওয়ানোর কিছু থাকতনা। মাথা গরম অবস্হায় খিদা লাগলে আরো বিপদ, একবারের কথা মনে আছে, সে ভাত আইন্যা রাখছে ঘরের দওয়ায়, নেয়ামতরে বলল হাতমুখ ধুইয়া আইস্যা ভাত খান, নেয়ামত গেলো বাড়ীর পাশের খালে হাত মুখ ধুইতে, আইসা দেখে কুকুরে ভাত খাইয়া ফালাইছে, তার উঠল বেজায় রাগ, হাতের কাছের দাও নিয়া দিলো এক কোপ কুত্তার গলা দুই টুকরা, হের পর লোকটা বেহুশ হইয়া গেলো, জুলেখা সেই কুকুর ফেলে আসে ছিলো খালে। আসে দেখে মানুষটার হুশ হইছে, তারে জিগাইলো, বৌ আমি এই খানে পইড়া আছি ক্যান? লোকটা সব কিছু ভুইলা গেলো, আহারে কি ভোলা মানুষ। রাগ হইলে কি করেনা করে কিচ্ছু মনে থাকেনা, জুলেখা প্রায় বাড়ীর কাছে এসে গেছে, সে তাল গাছ টার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল, আহারে এই গাছটাই লোকটার মাথা খারাপ বানাইছে, লোকটা ছিলো ছোটবেলা থেইক্যাই চান পাগল, হের বাপও আছিলো হ্যার মতনই, চন্দ্রগ্রস্হ মানুষ সে আবার ছিলো বিশাল ওঝা, আত পাগলটাইপ, দশ গ্রামে হেরে ফু বাবা নামে চিনতো, হ্যের এক ফুতে জিন পরী এক ঘাটে পানি খাইতো, জুলেখা তার শাশ্বুরীর কাছে শুনছে নেয়ামতর বাবর ছিলো এক বস মানা পরী, সেই পরী নাকি তেনারে মিষ্টি খাওয়াইতো কেহকঅহ নগর নিয়া যাইতো, সারা দিন খালি বির বির করতো পরীর লগে, কথায় কথায় কইতো কি কইলা পরী বানু, হ ঠিক ই কইছো। তার আবার ছিলো এক সাগরেদ নাম মতি। সে থাকতো সব সময় ওঝার বাম পাশে ডাইনে হাটা মানা। ডাইনে থাকতো পরী বানু। তেনার এক বইনের বিয়া হইছিলো ভাটির দেশে। সেইখানে একবার লাগলো কলেরার মরক, গ্রামের পর গ্রাম মইরা উজাড়। তার মধ্যে একদিন খবর আইলো সেই বইনের অবস্হা ভালা না, কেউ যাই তে সাহস পায়না ভাটিতে, গেলে আর ফিরন নাই। ওদিকে বইনের লাশ চিল শকুনে খাইবো এইটা তো হইতে দেওয়ন যায়না, তেনার সেই সাগরেদ মতি পর্যন্ত কইলো ওস্তাদ জীবন ডা ভিক্ষা দেন, আমি নাগেলে অয়না। হেয় কইলো যা তোরে মুক্তি দিলাম, পরী বানু লগে থাক লে কোন চিন্তা নাই। আল্লা রসুলের নাম নিয়া হে একলাই রওনা হইলো নাও নিয়া ভাটির দ্যাশে। গিয়া দেহে বৈন তার নাই, মইরা পইরা আছে একলা ঘরে। সেই মরা বৈনেরে কোলে কইরা আইনা উঠাইলো নৌকায় চৈত্র মাসের দুপুর- ঠাঠা করতাছে রৌদ, গরমে নদীর পানি মনে হইতাছে ফুট তাছে, শরীরে ফোসকা পরার অবস্হা।


লাশ টারে কাপর দিয়া ঢাইকা নৌকা বাইলো বাড়ীর দিকে। কিছু দুর আসার পর দেখে নদীর ধারে এক বুড়া বইসা আছে, হাত উঠাইয়া কইলো ও মাঝি দিবানি আমারে একটু পর কইরা? সে ছিলো আত পাগলা মানুষ ধরলো তারে মায়ায়। আহারে বুড়া মানুষ পার হইতে পারতেছেনা, নৌকা ভিড়াইলো পারে। বুড়া লাফ দিয়ে উঠলো নৌকায়, উঠনের সময় হেয় দেহে আরে এই লোকের তো পা উল্টা, ওঝায় তো ঘাবরানের লোক না, হেয় তো যা বোঝার বুঝছে, কলেরার মরা লগে নিয়া রওনা হইছে, বুড়াতো শয়তান, শয়তানের পাও থাকে উল্টা দুনিয়ার মানুষ যাই তে চায় ভালোর দিকে আর শয়তানে তাগোরে নিয়া যায় উল্টা দিকে । হেয় বুড়ারে কইলো তুমি নৌকার দার টানো বুড়ায় হইলো রাজী ওঝায় মনে মনে মন্ত্র তন্ত্র পইড়া বুড়ারে বান মারতে লাগলো নৌকার গলুইয়ের লগে। কিছু খন পর বুড়া জিগায় এইডা কি তোমার বৈনের লাশ? তোমার শ্বশুরে কইলো- হ, কলেরায় মরছে। বুড়ায় কয় আমি একটু কাপরটা উঠাইয়া দেখি। শ্বশুড়ে মনে মনে কয় এই তো আইছো তালে, তুমি হ্যর লইগাই তো উঠছো নৌকায়, প্রর্থম খাইবা লাশের চোক মুখ তার পর আমারে, তা তো আর হইবনা বাপ ধন। তোমারে তো আমি বান দিছি। শ্বশুরে কইলো দেহেন, বুড়ায় তো আর উঠতে পাড়েনা, এই টা হইলো কি? এইবার সুরু হইলো শয়তান বাবাজির কান্ধন, কান্ধে নৌকা বায়, আর কয় আমারে ছাইড়া দেন গো ভাই, আমি ভুল জাগায় আইছি গো ভাই, হেয় কি আর ছাড়ে । মতি লোকজন নিয়া খাড়াইয়া ছিলো ঘাটে এই তাল গাছের তলায়, মতি জিগাইলো কান্দে কে কান্দনের শব্দ পাই, শ্বশুরে কইলো ধর ছি একটা রে, আইছিলো আমার বৈনের লাশ খাইতে, শালারে বাইন্ধা রাখছি নৌকার লগে, আর কেউ দেখলোনা শয়তান রে খালি ওস্তাদ সাগরেদে মিল্যাই সুনতাছিলো শয়তানের কথা। সেই দিন কবর দিলো তার বইনেরে দিনের আলো থাকতে থাকতে, আর শয়তান টারে বাইন্ধা রখালো এই তালগাছে, এই জায়গা এক সময় ছিলো দুইটা গাছ, একটায় কয়েক দিন আগে বাজ পইরা মইরা গেছে।


জুলেখার শ্বাশুরী এই ঘটনা বলতো আর কাদতো, আহারে লোকটা কি জুয়ান আছিলো, লোকটারে একদিন সেই শয়তানের হাতেই মরতে অইলো, শয়তান রে গাছের লগে বাইন্দা একটা সিমান দিছিলো, আর নিজের চাইর পাশে বান মাইরা রাখছিলো যাতে শায়তান হ্যার কোন ক্ষতি করতে নাপারে, মানুষ কি আর পারে শয়তানের বুদ্ধির লগে?! চাইর পাশে বান মারলেও মাথার উপরে তো মারেনাই এক দিন ভর সন্ধ্যা বেলা লোকটা গেছিলো গান্জের মেলায়, ফিরতাছিলো বাড়ী, তহন কার সময় এই এলাকয় লোক জন তেমন আছিলো না, সন্ধ্যা অইলেই মনে হইতো গভীর রাইত, তার উপরে হেয় বানছে শয়তান কে আইবো ঘার ভাংতে। তহন ঐ তাল গাছের বাগান ছিলো রাস্তার চার পাশে, দুই পাশে দুই তাল গাছ মধ্যখান দিয়া রাস্তা, হেই তাল গাছ দুইটায় শয়তান দুই ঠেং দিয়া রইলো মাথার উপরে ঝুইল্লা, যেই লোকটা সেই গাছের মধ্য দিয়া যাইতে নিলো আর শয়তান ধরলো গলায় কেচঁকি দিয়া, লড়াই চলল অনেক খন, শয়তানের লেগে কি আর মানুষ পারে, সারা রাইত পইরা রইলো লোকটার শরীর তাল গাছ তলায়। সকালে মতি আইসা খবর দিলো লোকটা বাইচ্যা নাই। দৌড় দিয়া গিয়া দেহি লাশের পাশে পইরা আছে এক মরা কাউয়া, মতি কইলো ওস্তাদে শয়তানের লগে যু্দ্ধ কইরা শহীদ হইছে। শয়তানরেও ছাড়েনাই, শয়তান মইরা কাউয়্যার রুপ নিছে, লোকটার চেহরা কালা হইয়া গেছিলো। আহারে লোকটারে শয়তানে গলা টিপ্যা মাইরা সেইদিন কাউয়ারে পোড়া হইলো আগুনে আর লোকটারে দিল মাটি, মতি কয় শয়তানে মারা মানুষ উপরে রাখতে নাই, পুলিশ আইছিলো, লাশ নিতে। গ্রামের লোকজনে দেয় নাই।

কয়দিন পর মতির উপরে ভর করলো পরী বানু, লোকাটার সাধের পরী মতির লগে ঝুইক্যা গেলো, জুলেখার এখনো খারাপ লাগে, পরী গো কি কোন বুক পিঠ নাই? সেই থেইক্যা মতি হইলো বড় ওঝা, বাড়ির নাম হইলো ওঝা বাড়ী। লোকটা এহনও বাইচ্যা আছে, এহন হে এই গ্রামে চেয়ার ম্যান। চাইর খান বিয়া করছে, আর বিয়া ছাড়া যে কয়জনের লেগে কি করছে কে জানে? আর পরী বানু তো আছেই। জুলেখার দিকে আড় চোখে তাকায় মাঝে মাঝে। রাস্তায় দেখা হইলে কয়," আউলা স্বামি নিয়া বাউলা বেশ নিয়া এই সোনার অংগ কেনো মাটি করতাছোস, তোর শ্বশুরে একজন ভালা মানুষ আছিলো, ওস্তাদরে কইছিলাম ওস্তাদ এই শয়তান রে এই জায়গার রাইখেন না হেয় আপনারে ছাড়বোনা, ছাড়েনাই।" বইলা টাকা পয়শা হাদে, কয় এই টা রাখো আরো লাগলে সন্ধায় আমার বাড়ী আইসো, জুলেখা যায় না টাকার জন্য, পরী ধরা মানুষের স্বভাব ভালো হয়না, কি না কি করে? পরীর লগে ছি কি লজ্জা।


নেয়ামত হাতে দা নিয়া বসে আছে, রেডিও তে বাজছে মিলন হবে কত দিনে? আমার মনের মানুষের ও সনে। জুলেখা গিয়া বসে স্বামীর পাশে, নেয়ামত কোন কথা বলেনা, জুলেখা জানতে চায় কি রাগ করছেন? নেয়ামত মাথা নাড়ে, জুলেখা কাছে গিয়া জিগ্যেস করে বেশি রাগ করছেন? নেয়ামত বলে- হ। কি করলে রাগ ভাংবো? নেয়ামত বলে খিদা লাগছে, জুলেখা নেয়ামতের মুখটা মুছে দেয় ছেড়া কাপড়ের আচল দিয়ে, নেয়ামত আরাম নিয়া খায়, বাসি খাবার। সে তার বৌয়ের দিকে তাকিয়ে হাসে। তার কিছু খন আগের রাগ সে ভুলে গেছে, কি কারনে যে রাগ করেছিলো সেটাও তার মনে নাই। তার ভাত খাওয়া শেষ। বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলে- বৌ পান খামু। জুলেখা নেয়ামতের জন্য একটা পান ও এনেছে, বড় বিবির কাছ থেকে। জুলেখা স্বামীর হাত ধোয়ায়, পান টা মুখে দিয়া নেয়ামত চোখ বন্ধ করে। রেডিওতে বাজতেছে, "কৃষ্ন আইলো রাধার কুন্জে বাসর হইলো উজলা, নেয়ামত ভাবে- কৃষ্ন তার মামির ঘরে আইসা বাসর উজলা কেমনে করলো?" সে তার বৌয়ের দিকে তাকায়, ছেড়া কাপড় পরা এই মেয়েটা তার জন্য বাড়ী বাড়ী কাম করে। তারে খাওয়ায় নিজে খায়না। এই মেয়ে তারে এত ভালো বাসে ক্যা? কি সুন্দের ছিলো তার বৌ এর মুখ খান,


প্রথম যেদিন লাল শাড়ি পইরা ভাত রানতে বসছিলো, আহারে ধোঁয়ায় কি কষ্ট হইতাছিলো তবুও, মুখে তার হাসি। তার এই ভাংগা ঘরে এত ভালো বাসা সে রাখবে কৈ? কি কারনে জানি এই আত পাগলা মানুষ টা জুলেখারে বুকের মধ্যে টাইন্যা নেয়। জুলেখা বুঝতে পারেনা। এই মানুষ কহন যে কি করে? বুঝা মুশকিল।


চৈত্রের শেষ দিক বাড়ীর পাশের খাল টাও শুকিয়ে গেছে, মাঠ ফেটে গেছে। খা খা করছে চার পাশ। পানি পানি করছে প্রকৃতি। নেয়ামত দাড়িয়ে আছে বাড়ির সামনের রাস্তায়, তার মাথা আউলা হচ্ছে। সে চোখের সামনে কারবালার ময়দান দেখছে, বাড়ীর সামনের রাস্তার পাশে-ই দেখতেছে কারবালার প্রন্তর। সেই মাঠে ঘোড়া দৌরাইতাছে, ঘোড়ার রং সাদা, কপালে তাজ। ইয়াজিদের সৈন্যরা ফোরাত নদী দখল করছে, ইমাম হোসেন তার বাচ্চা নিয়া পানি পানি কইয়া কানতাছে, এমন সময় একটা তীর আইসা মাইরা ফালাইলো কোলের বাচ্চা টারে, নেয়ামতের তার বাচ্চাটার কথা মনে পড়ে কি সুন্দর আছিলো বাপধনের মুখ। জুলেখা আর তার প্রথম সন্তান, গেলো বর্ষায় পোলাডার জ্বর আইলো, বৌ কইলো পোলারে ডাক্তার দেখইতে হইবো। বাচ্চা নিয়া যাইতে চাইলো গন্জে। মতি ওঝা আইসা হাজির কয়- "রোগী নিয়া ডাক্তারে কাছে যাওন পরীবানুর মানা আছে, তাইলে আমার হাতের জশ কইমা যাইবো। ওরে বদ জীনে ধরছে ঝার ফু দিলে জিন দুর হইবো, একদিন বৃষ্টতে ভিজাইলেই জ্বর গায়েব হইয়া যাইবো," মতি নিজে পোলাডারে ভিজাইলো বৃষ্টিতে, পোলাডা মারা গেলো সন্ধ্যার পর। আহারে আহরে বলে নেয়ামত কেঁদে ওঠ, সে কাঁদে আর বলে নবী আপনে কৈ? এই জালীমের বিচার করেন। তার মাথা পুরা আউলা হয়ে গেলো, চোখের সামনে খালি ইয়াজিদ রে দেখছে, ইমাম হোসেনের কল্লা কাটা ইয়াজিদ, নেয়ামত রাগে কাপতে থাকে ইয়াজিদ তোরে আমি ছাড়ুমনা।


নেয়ামত মাথায় হাত দিয়া বসে রইলো বাড়ীর পাশের খালের পারে, দিন চলে যায় তার কিছু মনে থাকেনা, কেবল সে টের পায় একটা কাক সেই তাল গাছ টার উপর বসে সারা দিন কাকা করতে থাকে কাক টা


এক বার উড়তে উড়তে তার ঘরের উপর এসে বসে, সকাল থেকে সে তার দা খুজে পায়নাই, শালার বৌ বুঝতে পারছে তার মাথা আউলা হইয়া গেছে সেই কারনে দাও রাখছে গুইজা, সন্ধ্যা হইছে কাক ডাকা বন্ধ, নেয়ামতের মাথার মধ্যে এখন কাক ডাকছে, তৃষ্নায় তার বুকের ছাতি সুকিয়ে গেছে, সন্ধ্যা হইয়া গেলো বৌ তারে খুঁজতে আইলো নাই, ভেবে তার মন উদাস হইছে। সে শুকিয়ে যাওয়া খালের দিকে তাকিয়ে আনমনে বির বির করতে থাকে। তার মনে আছে তার বাপ তারে কোলে কইরা নিয়া এই খালে গোসল দিতো। পুর্নিমার রাইতে, ঝক ঝক করতো চান্দের আলো খালের পানিতে। আউলা হাওয়া দিতো চার পাশে, নেয়ামতরে নিয়া ওর বাপ আইতো খালের পারে, নানান কথা কইতো বাপ পুতে। বাবা জিগাইতো কিরে বাজান নামবি নাকি সিন্নান করতে? নেয়ামত কইতো না বাজান আমার ডর লাগে, বাজান কয় ধুর ব্যাটা পুরুষ মানুষের আবার ডর কিরে? ডর ভয় মহিলা গো জিনিষ, নেয়ামত কয় বাজান শয়তানে চাইপ্যা মারবো। বাজান কইতো বাপধন ভুত-প্রেত বইলা কিছুনাই, শয়তান মানুষ মারতে পারেনা, মানুষের ভিতরে শয়তানের বাস মানুষই মারে মানুষরে। সেই বাপরে একদিন মতি ওঝায় মাইরা ফালাইলো, গলায় রশি লাগাইয়া। পাট খ্যাতের আড়ালে দাড়িয়ে নেয়ামত দেখেছিলো বাবার মৃত্যু, নেয়ামতের তখন সাত বছর বয়স ওর বাবা গিয়েছিলো ম্যালায়, ম্যালা দিয়ে খ্যালনা আনার কথা বলেছিলো তার বাবা, বাবার অপেক্ষায় ছিলো সে পাট ক্ষেতে আড়ালে দাড়িয়ে, তখন দেখেছিল মতি কিভাবে মেরেছিলো তার বাবাকে, বাবার মৃত্যু সামনা সামনি দেখই নেয়মতে এই বিকারগ্রস্হতা। নেয়ামতের মাথা আবার আউলা হইতাছে, শালার বুইড়া তুই আমার বাপরে খাইছোস পোলারে খাইছোস তরে খামু আমি, বলে নেয়ামত উঠে দ্বাড়ায়। তার শরীর কাপছে রাগে, সে বাড়ীর দিকে রওনা দেয়, যাওয়ার সময় তাল গাছাটার দিকে তাকায় ওর তেমন একটা ভয় লাগেনা। সে তো পাগল না তাকে তো পাগল বানিয়ে রেখেছে ওই ওঝা।


নেয়ামত বাড়ির ভিতর ঢুকলো ঘরের দরজার সমনে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর দিয়ে বন্ধ, আর বৌ তার চিল্লাইতাছে, "আপনার আল্লার দোহাই লাগে এই কামডা আপনে কইরেন না, আমারে ছাইরা দেন। প্রতি উত্তরে নেয়ামত যে কন্ঠটা শোনে, শোনার সাথা সাথে নেয়ামতের মাথা পুরাই আউলা হইয়া যায়, ভিতরে মতি তার বৌয়ের লগে খারাপ কাম করতে চাইতেছে, লাথি দিয়ে দরজা ভাইংগা নেয়ামত ঘরের ভিতর ঢোকে, আর বলে সালার বুইড়া মতি, শালা এজিদ তোর আজকে শেষ দিন, তোরে আমি খাইছি। বৌ আমার দাও ডা দে। নেয়ামত দা হাতে নেয়ার আগেই মতি দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়, নেয়ামত ছোটে মতির পিছু পিছু, জুলেখাও যায়। মতি বেশি দুর যেতে পারেনা, সেই তাল গাছের নিচে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে যায়। নেয়ামত ঝাপিয়ে পড়ে মতির উপার, এলো পাথারী লাথি ঘুষি মারে। এক সময় জুলেখা বুঝতে পারে নিচে পড়ে থাকা বৃদ্ধ নড়ছেনা, কোন শব্দ ও করছেনা। সে গিয়ে নেয়ামত কে ধরে উঠায় বলে- সরেন দেহি। সে মতির বুকের উপর কান দেয়, না কোন শব্দ নাই। নিথর দেহটার দিকে নেয়ামত তাকিয়ে থাকে, ওর ঘৃনা হয় এই মৃত মানুষ টার প্রতি,


তখন আকাশে একটা চাঁদ উঠেছে, পুর্নিমার ধবল চাঁদ। তাল গাছের আড়ালে চাঁদটা উকি দিচ্ছে। জুলেখা নেয়ামতের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বড়ির দিকে। আপনে কি করছেন জানেন? নেয়ামত বলে হ বৌ জানি, আমি খুন করছি। আমি এহন আর কোন কিছু ভুলুম না, আইজ থেইক্যা সব মনে থাকবো আমার। আমারে ঐ মইত্যাই পাগল বানাইয়া রাখছে। জুলেখা বলে আপনে কিছু করেন নাই, আপনে খুন করেন নাই, কিছু করেন নাই আপনে, বাড়ি চলেন।

পরদিন সকালে গ্রামের লোক জন দেখতে পায় মতি মরে পড়ে আছে তাল গাছ টার নিচে, পাশে মরে পরে আছে একটি কাক, জুলেখাও গেছে সেখানে, গ্রামের লোকজন বলছিলো কি যে হইলো গ্রাম ডার শয়তান আর পিছা ছাড়তাছেনা, জুলেখা বলে ঠিকই কইছেন আপনেরা। হ্যার ওস্তাদ ফু বাবার মতন হ্যয়ও একটা হেবি ফাইট দিছে শয়তানের লগে, সে কাক টাকে দেখিয়ে গ্রাম বাসিকে বলে দেখেন শয়তান ডা ও কেমনে মইরা পইরা রইছে পাশে।

একজন বলল এহন এই শয়তানের হাত থেইকা বাচনের উপায় কি? আমরা ডরে আইতে পারিনা এই এলাকায়, এই শয়তান রে গ্রাম ছাড়া করনই লাগে, একের পর এক ঘেডি ভাইংগা মানুষ মারবো শয়তানে, আর আমরা চাইয়া চাইয়া দেহুম। এইডা তো ঐবনা।
সমবেত জনতা একসাথে বলে - হ এইডা হক কথা।
জুলেখা তার চেহারায় ঘৃনার এক তিব্র অনুভুতি নিয়ে বললো পোড়ায়া দেন লাশ সহ শয়তান ডারে, তাইলেই এই পাপ আত্যার দুর হইব।
সমবেত জনতা আবার বলে- হ এই ডাই ঠিক হিইবো, এই লাশ আমরা পুলিশ রে দিমুনা, এই খানেই পোড়ানো হইবো লাশ সহ শয়তান।


এক জন ছুটলো কেরোসিন আনতে আজকে তারা শয়তান কে গ্রাম ছাড়া করবেই।

এর কয়েক মাস পর এক বৃষ্টির দুপুরে নেয়ামত বসে ছিলো তাল গাছ টার গোড়ায়, তার পাগলামি ভালো হয়ে গেছে, মনের ভেতরে চলছে দহন- সে হত্যা কারী, সে ই কি তাইলে ইয়াজিদ? এমন সময় তাল গাছ টার উপর বাজ পড়ে, নেয়ামত বেচে যায় তবে বজ্র পাতের ফলে তার স্মৃতী লোপ ঘটেছে, তার মাথা আবার আউলা হয়েগেছে। জুলেখা এখন খুশি তার এই আত পাগল স্বামীটারে নিয়া। সেও সেই দিন শুনে ছিলো একটা কাক কাতরসরে কাকা করছে পানির জন্য। সেই কাকটাই পানি না পয়ে মরে পরে ছিলো মতির লাশের পাশে। সে সেই কথা টা বলে নি কাউকে, বলবেওনা। জান বাচানোর জন্য মিথ্যা বলা যায়, নেয়ামতের জানের জন্য নাহয় তার একটু দোষ হইলোই তাতে কি? জুলখা আবার ও পোয়াতি, তার ইচ্ছা সে তার এই সন্তানকে ডাক্তার বানাবে।

উৎসর্গঃ গল্পটা এবছর যাদের ডাক্তার হবার স্বপ্ন ভেংয়ে চৌচীর হয়েযাচ্ছে তাদের কে উৎসর্গ করলাম।

মুখ বন্ধঃ এই গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক, আদতে এদের কোন অস্তিত্য নেই।

ছোট বেলায় আমাদের বাড়ী থেকে দুরে একটা তাল গাছ ছিলো, মুরব্বিরা বলতো ঐ গাছে একটা শয়তান বান্ধা আছে, আমরা দিনের বেলা গাছটার আশে পাশে গেলেও রাতে তো ইমপসিবল, নানান ঘটনাও ঘটত গাছ টাকে ঘিরে। এক রাতে আমার এক চাচা কে পাওয়া যাচ্ছিলো না, একটু আগে ঘুমানো ছিলো, লোকটা গেলো কৈ? খুঁজতে খুঁজতে দেখা গেলো সে গিয়া সেই তাল গাছে উঠে বসে আছে, তারে জিগ্যেস করা হইলো কিরে তুই ওখানে কিভাবে গেলি? তার জবাব কইতে পারিনা। ঘুমাইয়া ছিলাম জাইগা দেখি তাল গাছে। আর একটা ঘটনা আছে, আমরা কেউ গাছটাকে ঢিল মেরে সই করতে পারতামনা। ঢিল টা হয় বেকে যেতো অথবা সামনে গিয়ে পড়ে যেতো। কেমন একটু হস্যকর শোনাচ্ছে তাইতো, আমি ও জানি হাস্যকার। অনেক দিন আগে তাল গাছটা বজ্রপাতে পুরে গেছে, পরে সেটিকে কেটে ফলা হয়েছে। শেষ একটা কথা বলি, আমার চাচার ঘুমের মধ্যে হাটার রোগ আছে, সেটা আমরা পরে বুঝতে পেরেছিলাম। তবে কেনো যে তিনি হাটতে হাটতে সেই তালগাছে উঠে গিয়েছিলেন কে জানে?

ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link

আমার রিসেন্ট আর একটি লেখাঃ
বিহাইন্ড দ্যা সিন (আঠেরোর উপরের লোকদের জন্য)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ ভোর ৬:০৬
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×