কার্ল মার্কস “বিপ্লব” সম্পর্কে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “হয়তো সম্ভব তবে তার আগে চাই বিপ্লব”। "হয়তো" শব্দটি দ্বারা আমরা সব সময়ই নিগেটিভ অর্থ বুঝে নেই। লক্ষ্য করুণ, তিনি বলেছেন, “হয়তো এবং বিপ্লব” কথা। কিন্তু এর আগের অনেক কথাই তিনি উহ্য রেখেছেন। কারণ, বিপ্লব করতে হলে প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়, বিষয়ের উপর জনমত এবং জনমত এর জন্য চাই জনগণ। কারণ, জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। আধুনিক গণতন্ত্রের ইহা সংজ্ঞা। আর এই জনমত তৈরী সবাই করতে পারেন না। তার জন্য চাই যোগ্য, প্রজ্ঞ, বলিষ্ঠ এবং চরিত্রবান নেতা।
১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর বলিষ্ঠ আহবান “এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” এই আহবানে তৈরী হয়েছিলো লাখো কোটি জনতার ঐক্য এবং তাঁরই জনমতের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিলো বাঙলার সন্তাননেরা। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। তিনি প্রমাণ করেছিলেন “যুগে যুগে বিপ্লবীরা, বিপ্লবীরাই জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান”। কার্ল মার্কসের সুরের সাথে মিলেছিল, “হয়তো সম্ভব তবে তার আগে চাই বিপ্লব”।
স্বাধীনতার ৪০ বৎসরও আমাদের এই বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। এই দেশ এই মাটি প্রতিদিনই, প্রতিক্ষণেই দেশি-বিদেশী শত্রুর দ্ধারা কুলশীত হয়েছে/হচ্ছে। একজন কলামিষ্ট লিখেছেন তার লেখায়, “পৃথিবীতে দু’শ্রেণী মানুষের জন্য কিছুই হয়না, এক মূর্খ অপরটি জ্ঞানপাপী”। আমাদের দেশে দু’শ্রেণী মানুষই সবচেয়ে বেশী। তারপরও আছে অসংখ্য দলের মানুষ। এদেশিয়দের যে কত চাই পাওয়ার আছে তা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কমপিউটারটিও বলতে পারবেনা। ঘুম থেকে উঠার পর হতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের চাওয়ার শেষ নেই। চাই চাই এবং চাই। আমরা আসলে কী চাই???
আমরা আমাদের মৌলিক ৫টি অধিকার চাই। এর আগে আমাদের দেখতে হবে আমাদের মূল সমস্যা কোনটি? আমাদের মুল সমস্যার উৎসটি খুঁেজ তার জন্যে লড়তে হবে। আমাদের মূল সমস্যা হলো, নৈতিক চরিত্র, বিবেকের অবক্ষয়। আজ যদি পুরাতন শব্দটিকে নতুন করে চেয়ে আমরা আমাদের চরিত্রকে ভালো করতে পারি, তাহলে সব ’চাই’ চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। আর এই চাওয়ার জন্য আমাদের কোন টাকা/পয়সা লাগেনা।
অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জী বলেন, “সর্ব উচ্চ নৈতিক নিয়ম তা যাই হোক না কেন, আত্মার আদেশ নিরপেক্ষভাবেই আমাদের উপর আদেশ চাপাইয়া দেয় এবং তা কোন প্রশ্নকেই প্রশ্রয় দেয় না। যা আমাদের করা উচিৎ তাহাই আমাদের করা উচিৎ। এমন কোন নৈতিক নিয়ম নেই যা শর্তহীন আদেশকে নাকচ করিয়া দিতে পারে”। তাই শর্তহীন আদেশই আমাদের পালন করা উচিৎ। কারণ, এই আদেশ (বিবেকের) পালন করবার শক্তি আমাদের আছে।
মীর জাফর এর বেঈমানীর ফলে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ উদ্দৌলার পতনের পর থেকে শুরু হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার শিক্ষা। বাঙ্গালীর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব স্বকীয়তার জন্যে শুরু হলো আমাদের “বিপ্লব”। ১৮৭৫ সালে সিপাহী “বিপ্লব”, ১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গ, ১৯১১ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ, ১৯১৪-১৯১৬ খ্রীঃ বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ, ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষার জন্য আন্দোলন-ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফন্ট, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সংসদের ব্যর্থতার সংবিধান বিনষ্ট (ফলে আইয়ুব খানের অভ্যুদয়-৫৮সালে), ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচীর মাধ্যমে ৬৯ সালে গণঅভ্যুদয়, ১৯৭০ সালে নির্বাচন, ১৯৭১ সালে ০৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ-সোনার বাংলা, ১৯৭৪ সালে দূর্ভিক্ষ, ১৯৭৫ সালে বাকশালের পতন, ১৯৮২-১৯৯০ পর্যন্ত স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামল, ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থান, সর্বশেষ গত তত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা দখলের পর আজকের এই মাননীয় শেখ হাসিনার ২ বৎসরের শাসনামল।
২০১১-১৭৫৭=২৫৪? আর স্বাধীনতা ও ৪০ বৎসর। একটি জাতির ইতিহাসে ৪০ বছর স্বাধীনতার স্বাদ যদি শাসক গৌষ্টির হাতে বন্ধী থাকে তবে কী আমরা ইতিহাস থেকে কিছু শিক্ষা নিতে পেরেছি? পারিনি। কিন্তুু কেন? কারণ, মুখে এক বলি আর কর্মে তার বিপরীত। কিন্তুু তারপরও একটি পর থাকে। সেই পর হলো কেন?? বলবেন, আমাদের শিক্ষার অভাব। কিন্তুু আমরা কার নিকট থেকে শিখবো?
রাজনীতিবীদ?
বুদ্ধিজীবি?
সাহিত্যিক?
ব্যবসায়ী?
ইতিহাস?
রাজনীতিবীদ? যারা স্বার্থের কারণে ঘন ঘন দল বদলায়, রাজনীতির নামে কাদা ছিটাছিটি করেন অনবরত, তাদের নিকট থেকে?
বুদ্ধিজীবি? বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধির ফলে স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমরা আজো অন্যদেশের নিকট বেহায়ার মতো ভিক্ষার হাত বাড়াই, তাদের নিকট থেকে?
সাহিত্যিক/ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে? যে বাজারে তরুণ তরুণীদের হাতে আর উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে, জৈব্য প্রবৃত্তির নামে সুড়সুড়ি জাতিয় লেখা, মোবাইল ফোনসেট/নগ্ন ছবি ইত্যাদি। যে তরুণ/তরুণীরা আমাদের ভবিষ্যতের ধারক ও বাহক।
বলবেন ইতিহাস থেকে? বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসকে অসংখ্যবার ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে জ্ঞানপাপীদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে। ইতিহাস আজ ওদের হাতে গড়া।
শুরুতে বলেছিলাম, অধ্যাপক ম্যাকেঞ্জীর কথা। বলেছিলাম বিবেকের কথা। এই বিবেক (আদেশ) পালন করবার কথা এবং যা পালন করার শক্তি আমাদের আছে। আর এই শক্তি আমরা পেতে পারি মহান আল্লাহতালার পবিত্র গ্রহ্ন কোরআন আর রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহর শান্তির পথ থেকে।
তাই চলুন, আমরা সবাই শান্তির পথে কোনআন আর রাসুলের সুন্নাহ থেকে শিক্ষা লাভ করে আমাদের বিবেককে সঠিক পথে চালিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে রেখে যাই একটি সততার রাজ্য। যা থেকে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা তৈরী করে আমরাও হয়ে যাই সোনার ছেলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ”তোমরা তোমাদের সম্পদ গুলোকে নির্বোধ লোকদের হাতে তুলে দিও না, এটা তোমাদের জীবনের প্রতিষ্ঠা লাভের উপকরণ।”
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:২৩