somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোটভাই......

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছোট ভাই, আতিক, অনেক ক্ষেত্রেই আমার চেয়ে বেশী দক্ষ। সে আমার চেয়ে ভালো গেম খেলে, আমার চেয়ে জোরে দৌড়ায়। ছোটবেলায় অন্যদের সাথে মারামারি করতে গেলে সে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আমার চেয়ে ভালো ফুটবল খেলে ( বাস্তবে এবং কম্পিউটারে)। কিন্তু এসবের চেয়েও বড় পরিচয়- সে আমার চেয়ে ভালো মানুষ। একটা উদাহরন দেই।

গরীবের ঘোড়া রোগের মতই আমার একদা একটি PDA কেনার শখ চাপল। পেপারে খুব সস্তা চাইনিজ পিডিএ এর বিজ্ঞাপন দেখে হাজার সাতেক টাকা নিয়ে গেলাম কিনতে একটা। দোকানে সামান্য সময় নাড়াচাড়া করেই বুঝলাম এইটা আসল “মাল” না। এতে হবে না।
কিছুদিন ঘুরলাম সেকেন্ড হ্যান্ড কিছু পাওয়া যায় কিনা তার আশায়। আতিক বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে গিয়ে পিডিএ এর খোজ নিয়ে আসল। HTC ব্র্যান্ড এর। দাম বাইশ হাজারের মত। দাম শুনেই বুঝলাম- এই জিনিস কেনা আমাদের সাধ্যের বাইরে।
পরের কিছুদিন নেটে সেকেন্ডহ্যান্ড কিছু সেট খুজছি। হাজার দশেকে ভিতর সেকেন্ডহ্যান্ড পাওয়া যেতে পারে এমন সব সেটের প্রোফাইল সেভ করে রাখছি। আতিক একদিন পিসিতে দেখলো সেইসব ফাইল। পরদিন বিকালে আমি চুল কাটিয়ে বাসায় এসে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছে HTC এর একটা টাচ স্ক্রীন পিডিএ।
-টাকা পাইলি কই?
-টাকা ছিল না, কিস্তিতে কিনে আনলাম তোর জন্য। ছয় মাসের ভিতর শোধ হয়ে যাবে।

সেই HTC এর সেট, গরীবের একমাত্র ঘোড়া – খুব গর্বের সাথেই আমি ব্যবহার করতে লাগলাম। কিন্তু ছয় মাস পার হবার আগেই, কিস্তির টাকা শোধ হবার আগেই- সেটটার স্ক্রীনটা ফাটিয়ে ফেললাম। জানা গেল সেটটা ঠিক করতে বার হাজার টাকা লাগবে। আমি বুঝলাম আমার ঘোড়ার চারপা-ই ভেঙ্গে গেছে।

দুই তিন মাস পরের কথা। আমার হাতে কিছু টাকা জমেছিল -ঈদের বোনাস আর বেতন থেকে জমানো টাকা। আতিককে একদিন হাজার বিশেক টাকা দিয়ে বললাম, আমাকে HTC কিনে দিয়েছিলি। তোকে দিলাম এই টাকা। এইবার তুই কিন।
দুইভাই মিলে কয়েকটা সেট দেখে আসছি।পছন্দ হলো না। আমি ঢাকার বাইরে চাকরি করি। প্রতি সপ্তাহে অবশ্য আসা যাওয়া করি। তাই বলে গেলাম, তুই কিছু একটা কিনে নিস। পরের সপ্তাহে এসে দেখব কি কিনলি।
পরের সপ্তাহে এসে দেখি আতিক নিজের জন্য না কিনে , আমার জন্য আরেকটা মোবাইল কিনে নিয়ে আসছে। তার চোখে পড়েছে, আমার HTC নষ্ট হবার পর- অন্য মোবাইল ব্যবহার করতে সমস্যা হচ্ছে।

অথচ সে তার নিজের মোবাইলের সুইচ খুলে যাওয়ায় সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া দিয়ে ব্যবহার করে।


পিঠাপিঠি ভাই বোন থাকায় ছোটবেলা থেকেই আমাকে আলাদা খাটে থাকতে হয়। যতদূর মনে পড়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ার আগে থেকেই আমি একলা খাটে থাকি। আমার মা আমার সাহসের কিছু গল্প করেন। আমি নাকি কিছুতেই একলা থাকতে ভয় পেতাম না। পরবর্তীতে আমার ভাই এসে আমার সাথে যোগ দেয়। আমরা দুইজন আলাদা খাটে থাকতাম। বাবা মায়ের সাথে আমার ছোটবোনটা থাকত।

আতিক মাঝে মাঝে রাতে ভয় পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ত। সে নাকি কিছু দুঃস্বপ্ন দেখত। সেইসব স্বপ্নের খুব পরিস্কার ব্যাখ্যা দিতে পারত না। খালি একটা ফিতা আর সেটা প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে সে আটকা পড়ে যাচ্ছে- এমন কিছু দেখত। আমিও ছোটরা সচরাচর দেখে এমন কিছু দুঃস্বপ্ন দেখতাম। ঘুম থেকে উঠে আমারো খুব ভয় লাগত। কাদতে ইচ্ছে করত। কিন্তু একটু অদ্ভুদ ব্যাপার ছিল কাউকে স্পর্শ করে থাকলেই আমার ভয় কেটে যেত। ছোটভাইটা কাছে থাকায়, আমি রাতের দুঃস্বপ্নের শেষে তার হাতটা শুধু স্পর্শ করে রাখতাম। এতেই আমার ভয় কেটে যেত। খাটের নিচের অশরীরীরির ভয় কেটে যেত শুধু রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষের স্পর্শেই। এইকারনে আমি খুব সাহস দেখাতে পারতাম। মায়ের ধারনা ছিল তার বড় ছেলেটা ছোটটার মত এত ভীতু নয়।

আমি এখনো রাতের বেলা দুঃস্বপ্ন দেখি। বুয়েটের হলে থাকার সময়ও দেখতাম। তখনো দুই ভাই এক রূমে থাকি। প্রচন্ড ভয় পেয়ে জেগে উঠতাম। আমার বেড থেকে উঠে তার পাশে গিয়ে বসে থাকতাম কয়েকমিনিট। আমার সমস্ত ভয় চলে যেত।
ইদানীং ভয় পেয়ে জেগে উঠলেও আতিককে আশে পাশে কোথাও পাই না। কঠিন দুনিয়ায় টিকে থাকার চেষ্টায় দুইজন দুইদিকে ছুটে যাচ্ছি। এখনো ভয় পেয়ে রাতে ঘুম ভাঙ্গে। এখনো আমি মনে মনে ভাবি, আমার ছোট ভাইটা আমার পাশেই আছে। তার হাতটা ধরতে বড় ইচ্ছে হয়।

=======================
আজ আতিকের জন্মদিন। রাতে ভয় পেয়ে তাকে স্পর্শ করে থাকার কথাটা এতদিন বলিনি, আজকে বললাম।
৪১টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×