somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদাতা

১৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
গত এক মাস ধরে ফুফু অসুস্থ । যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিলোনা। অবশেষে আজ গেলাম। ফুফু বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিলেন না। আস্তে আস্তে ফুফুর পাশে গিয়ে আসন নিই। ফুফু একটু করে উঠে বসে।
- আমার ছেলেরে তো এখন দাদার মতো লাগছে। [ আমার হাতের আঙুল ধরতে ধরতে বলে।]
- আরে আমি তো কালা; তোমার দাদা তো ধবধবে সাদা। আমি ক্যমনে উনার মতো হবো।
- কালা না। তুই শ্যামলা। তোর নাক, চোখ, হাতের আঙুল আর তাকানোর ভঙ্গিমা দাদার মতোই।
মনে মনে ক্যমন একটা আনন্দ খেলে যায়। কিসের আনন্দ বোঝে উঠতে পারছিনা। আমি ফুফুকে হাতে ধরে উঠিয়ে দিই।
ফুফু আবার বলা শুরু করে। দাদাকে খুব মনে পড়ে রে। যখন আমার ছেলে মেয়েরা আমার অবাধ্য হয়। কথার মুখে কথা বলে তখন দাদার শাসনটা খুব মিস করি। জানিস, আমরা যখন এই এত্তটুকু ছিলাম তখনের কথা। একবার দাদা চাকুরি থেকে এসে আমাদের সবার জন্য মাথার ফুল কিনে এনেছিলো। শুধু আমরা পাঁচ বোনের জন্য না; পাড়ার সব মেয়েদের জন্য। আমাদের জন্য একটা করে আর পাড়ার বোনদের জন্য দু'টা করে।
- কেন? তোমাদের জন্য একটা করে কেন?
ফুফু আমার মুখ থেকে কথা নিয়ে বলে, যাতে পাড়ার বোনরা বলতে না পারে নিজের ভাই বলে আমাদের জন্য বেশী এনেছে। তো হয়ছে কি আমি তো তখন ছোট ছিলাম। এতসব বুঝতামনা। আমি দিছি কান্না করে। দাদা পুকুর ঘাট থেকে আমার কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসে। কি না কি হয়ছে ভাবে। যখন শুনে আমি ওদের জন্য বেশী করে আনায় কান্না করছি। তিনি তো মাহা ফায়ার। ইয়া লম্বা একটা বাঁশ ঢাল ছিলো গুদাম ঘরের এক কোণে। ওটা নিয়ে সেই ঠেঙানি না ঠেঙায়ছে। এখনো চোখে ভাসছে। ফুফুর চোখ ভরে উঠেছে অশ্রুনীরে। এটা কিসের অশ্রু? আমি উঠে জানালার কাচে হাত রাখি। বাবাকে ছুঁয়ার চেষ্টা করি।
এরকম অভিজ্ঞতা আমাদেরও কম না। একবার আমার পাশের বাসার বন্ধুর সাথে মহা ঝগড়া আমার। মার খেয়েছি। তার উপর অপরাধও আমার না। বাবার কাছে বিচার নিয়ে যাই। কোন কথা নায়; জোরশে মাইর আর মাইর। কোনমতে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি। আমার পায়ের এক পাশে এখনো একটা বেতের আঘাত লেগে আছে। রাতে বাবা খেতে আসলে মা ভাত দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করে।
- তুমি আমার ছেলেরে এভাবে মারলে কেনো?
- তোমার ছেলে? আমার ছেলে নয় বুঝি?
- তোমার ছেলে হলে এভাবে পাষাণের মতো মারলে কেন?
বাবা মাথা আর উঠালোনা। মাটির তৈয়ারি থালাতে চোখ গেথে রেখে বলেছিলেন, আমাদের ছেলে এভাবে চলবে কেন যে কারো সাথে ঝগড়া করতে হবে? কেউ অন্যায় করবে কেন? যে ছেলেরা অন্যায় করে তার যাতে অন্যায় না করে তায় ওদের সাথে ও মিশবে না। এই আমার শেষ কথা।
আমি অন্য ঘরে শুয়ে শুয়ে কথাগুলো শুনতেছিলাম। আর খুব রাগ জমাচ্ছিলাম। এখন বাবার সেসব কথা ভেবে শ্রদ্ধাই মাথা নুয়ে পড়ে। খোদা ছাড়া আর কাউরে সিজদা করার নিয়ম থাকলে আমি আমার পিতাকে করতাম।

দুই
একবার মা আর আমি বসে বসে মুড়ি চিবুচ্ছিলাম। খাওয়ার মতো আর কিছু ছিলোনা বলে। মা কান্না করতেছিলো। কারণ একটু আগে বাবা যাচ্ছেতায় ব্যবহার করে গেছে।
- আচ্ছা মা, বাবা এতো বদরাগি কেন?
মা আমাকে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলে, তোর বাপরে এখনো তোরা কেউ চিনতে পারস নায়। আমি চিনি। কতো আদর আর ভালবাসা তার মাটির দেহের ভেতরে খিলবিল করে। তোর আরেকটা ভাই ছিলো। তখন তুই আল্লাহর কাছে ছিলি। শুধু তোর দিদি ছিলো। একবার তোর বাবা বাজার থেকে ফিরছে। মাছ নিয়ে আসছিলো। আমার কুটতে কষ্ট হবে তাই উনি আমাকে বলে, তুমি আমাকে কেমনে কি করবো দেখিয়ে দাও আমি কুটি। তখন আমাদের শুধু একটা কামরা আর একটা পাকঘর ছিলো। তখন তোর দিদি আর দাদাকে মাদুরা পেতে শুইয়ে রেখে আমরা পাকঘরে যায়। দরোজা খোলা ছিলো। বিদ্যুৎ ছিলোনা বলে। হঠাৎ তোর দাদার কান্নার আওয়াজ শুনে আমরা এসে দেখি তোর দিদি তোর দাদার উপর। আমরা আবার ভালো করে শুইয়ে দিই। মাছ-টাছ কুটে এসে দেখি তোর দাদা গুঙাচ্ছে। আর তোর দিদির পুরা দেহ তার উপর। অনেক্ষন ধরে চেষ্টা করেও তোর দাদার গুঙানি থামানো গেলোনা। তোর বাবা এক দৌড়ে যায় ডাক্তার নিয়ে আসতে। আমরা দু'জনের চোখের সামনে ডাক্তারের হাতে আমাদের ছেলে ছটফট করতে করতে মারা যায়। সে কি কান্না তোর বাবার। কোন পিচ্ছি ছেলে যেভাবে কাঁদে ওভাবে ফুফিঁয়ে ফুফিঁয়ে কান্না করে। এর পর প্রায় একবছর তোর বাবা ঘরের মুখ দেখে নি। সারা রাতদিন তোর দাদার কবরের উপরে শুয়ে থাকতো। মার চোখের জল দেখে আমার চোখে বান ডাকে। এ অশ্রুর কারণ কি?

ভাবতে ভাবতে আবার কেঁদে দিই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে একুশ বছর বয়সে এসেও।
আমার পিতা পৃথিবীর সেরা পিতা।


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×