আমার সাথে রুথ কোয়ান্ডাল বলে এক আমেরিকান ছাত্রী পিএইচডি করত। এই মেয়েটি কোনো স্বামী জোগাড় করতে পারে নি। ভবিষ্যতেও যে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই। মেয়েটি মৈনাকপর্বতের মতো। সে আমাকে দুঃখ করে বলেছিল, আমার যখন সতের-আঠার বছর বয়স ছিল তখন আমি এত মোটা ছিলাম না। চেহারাও ভালোই ছিল। তখন থেকে চেষ্টা করেছি একজন ভালো ছেলে জোগাড় করতে। পারি নি। কতজনের সাথে যে মিশেছি। ওদের ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখার জন্য কত কিছু করতে হয়েছে। আগেকার অবস্থা তো নেই, এখন ছেলেরা ডেটিংয়ের প্রথম রাতেই বিছানায় নিয়ে যেতে চায়। না করি না। না করলে যদি বিরক্ত হয়। আমাকে ছেড়ে অন্য কোনো মেয়ের কাছে চলে যায়। এত কিছু করেও কোনো ছেলে জুটাতে পারলাম না।
কেন পারলে না?
পারলাম না, কারণ আমি অতিরিক্ত স্মার্ট। সারা জীবন ‘অ’ পেয়ে এসেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রীদের একজন। ছেলেরা এরকম স্মার্ট মেয়ে পছন্দ করে না। তারা চায় পুতুপুতু ধরনের ভ্যাদা টাইপের মেয়ে। তুমি বিদেশি, আমাদের জটিল সমস্যা বুঝতে পারবে না।
আমি আসলেই বুঝতে পারি না। আমার মনে হয় এদের কোথায় যেন কী-একটা হয়েছে। সবার মাথায় স্ক্রু-র একটা প্যাঁচ কেটে গেছে। উদাহরণ দেই। এটি আমার নিজের চোখে দেখা।
পুরোদমে ক্লাস হচ্ছে। দেখা গেল ক্লাস থেকে দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে বের হয়ে গেল। সবার চোখের সামনে এরা সমস্ত কাপড় খুলে ফেলল। এইভাবেই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটা চক্কর দিয়ে ফেলল। এর নাম হচ্ছে স্ট্রিকিং। এরকম করল কেন? এরকম করল কারণ এরা পৃথিবী জুড়ে যে আণবিক বোমা তৈরী হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাল।
*
হোটেলের যে ঘরে আমি আছি তা আহামরি কিছু নয়। দুটি বিছানা। একটিতে আমি অন্যটিতে থাকবে আমাদের ইউনিভার্সিটিরই এক ছাত্র, জিম। সে এখনো ফেরে নি। সম্ভবত রাতে আর ফিরবে না।
আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ফিরল। চোখের সামনে পুরো দিগম্বর হয়ে সটান পাশের বিছানায় শুয়ে পড়ল। আমেরিকানদের এই ব্যাপারটা আমাকে পীড়া দেয়। একজন পুরুষের সামনে অন্য একজন পুরুষ কাপড় খুলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।
ডরমিটরি গোসলখানায় একসঙ্গে অনেকে নগ্ন গয়ে স্নানপর্ব সারে। ব্যবস্থাই এরকম। হয়তো এটাকেই এরা অগ্রসর সভ্যতার একটা ধাপ ভাবছে। এই প্রসঙ্গে ওদের সঙ্গে আমি কোনো কথা বলি নি। বলতে ইচ্ছা করে নি।
ভ্রমণসমগ্র
হুমায়ুন আহমেদ
পর্ব ১ Click This Link