তারিখটা ছিল ৮/জুলাই/১৮ ইং
রবিবার দিন সকাল। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু। পুরাতন মাদ্রাসা ছেড়ে নতুন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছি। নতুন পরিবেশ। নতুন মুখ। রাস্তা-ঘাট, বাজার-বন্দর, দালান-কোঠা সব অপরিচিত ও নতুন। বাড়ি এবং পুরাতন মাদ্রাসার জন্য খুব খারাপ লাগছিল। একপর্যায়ে ত সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম - ময়মনসিংহ ছেড়ে চলে যাব। ভাল লাগে না! কঙ্ক্রিটের শহর।
.
কোন কারণঃবশত মাদ্রাসায় ক্লাস অফছিল সেদিন। মাদ্রাসায় মন টিকছিল না তাই বেড়িয়ে পরলাম। দিকভ্রান্ত মুসাফিরের মত অজানা কোন গন্তব্যে। হাটতে হাটতে কিভাবে আর কোন রাস্তা দিয়ে যেন চড়পারা হাসপাতালের গেইটে এসে পরলাম! আল্লাহ মা'লুম। বাহির থেকে উকি দিয়ে হাসপাতালের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলাম। দেখি সবুজের মিলন মেলা। সারি বাধানো হরেক রকমের গাছ। ঝকঝকে রাস্তা। রাস্তার পাশ দিয়ে বড় বড় নারিকেল গাছ। বাহ্ কি চমৎকার! খুব মনে ধরল। হাসপাতালের ভেতরে গেলাম সবুজ অরণ্যের মোহনায় মোহিত হয়ে তাই আশে পাশের বুদ্ধিমান জীবের প্রতি তেমন লক্ষ্য করিনি।
কিন্তু ফেরার পথেই ছবির লোকটিকে দেখতে পেলাম।
.
লোকটি অবশ্যই একজন প্রতিবন্ধি। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ। পাঠক লক্ষ্য করুন! তার মাথার পাশে একটা রুমাল পাতা আছে। মনে হচ্ছে সুইচব্যাংক খুলে বসছে আর ব্যাংকের পাসওয়ার্ড হল 'আল্লাহ আল্লাহ জিকির' । গ্রিষ্মের দুপুরে, রোদ নয় যেন গনগনে ফুলকি। আমি ছায়াতেই দাড়াতে পারছিলাম না! আর বেটা এই কাঠফাটা রোদে খালি গায়ে শুয়ে আছে আর আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছে। লক্ষ্য করলাম বেটার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হচ্ছে। লবনাক্ত পানির নহর।
.
ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তির অবস্থান কোথায়?
আচ্ছা মানুষ তার কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে সম্পূর্ন স্বাধীন (ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়)। সে ভিক্ষা করবে নাকি অন্য কিছু করবে এটা তার ইচ্ছা। নিশ্চয় ভিক্ষা একটা নিকৃষ্ট-নিম্নশ্রেণীর কর্ম। তাও করুক কোন আপত্তি নেই কিন্তু আপত্তিটা তখনই করতে মন চায় যখন ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যান্য নিম্নশ্রেণির কাজে ইসলামকে ব্যবহার করা হয়।
এধরণের কাজে একটা টুপি, একটা পাঞ্জাবি, একগুচ্ছ দাড়ি, একটা দড়বেশি পাগড়ি চাই চাই।
চাওয়ার ধরণে সুফিয়ানাভাব, মুখে লা-ইলাহা ইল্লাহ এর জিকির, উঠা বসায় আল্লাহর নাম, কিছু পেয়ে হাত তুলে দোয়া, আল্লাহ ও রাসূলের দোহায় দেওয়া, উফফফফ... লজ্জায় সাত হাত জমীনের নিচে যেতে মনে চায়।
এর ফলাফল দাড়াল কি? মাথায় পাগড়ি-টুপি, মুখে দাড়ি, গায়ে পাঞ্জাবি এধরণের গুণধারি লোকেরা দরিদ্র, এরা করুণার পাত্র, এরা আমাদের সমাজের উপযুক্ত নয়, এরা লাঞ্চিত-বঞ্চিত আরো কত কি!!!
আজ আমরা যাদের সম্ভ্রান্ত ভাবি তারা টুপি - পাঞ্জাবি পড়তে লজ্জা পায় কারণ এটা ত নিম্নশ্রেণির লোকদের পোশাক। তারা কালিমা পড়তে লজ্জা পায় কারণ এটা ভিক্ষাবৃত্তির বাক্য। মসজিদে যেতে লজ্জা পায় কারণ এটা ওই সমস্ত লোকদের আস্তানা। ইসলামের পুরা 'হুলিয়াটাই' পালটে গেছে এধরণের কর্মকান্ডে।
.
আসলে পাঠক! ইসলাম কখনো ভিক্ষাবৃত্তিকে সমর্থন করে না। বরং ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে কঠোরহস্তে দমন করেছে।
বরং হাদিসে ত রাসুলুল্লাহ সাঃ রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করা, রশি দিয়ে আটি বেধে বিক্রি করাকে ভিক্ষাবৃত্তির চেয়ে উত্তম বলেছেন।
(বিস্তারিত দেখুন - সহীহ বুখারী, হাদিস - ২০৭৫,২৩৭৩)
বিনাপ্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য ত রহমাতুল্লিল আলামিনের পাক জবান দিয়ে কঠিন হুশিয়ার বানিও উচ্চারিত হয়েছে। যেমনঃ
> আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা করে, সে ক্বিয়ামাতের দিন তার মুখমন্ডলে অসংখ্য যখম, নখের আঁচড় ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উপস্থিত হবে। কেউ জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদশালী কে? তিনি বললেনঃ পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের স্বর্ণ (যার আছে)।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৬২৬)
এখন আপনিই বলুন এইপরিমাণ সম্পদ কার কাছে নেই?
.
এধরণের হাদিস প্রচুর রয়েছে যেখানে সুস্পষ্ট ভাবে বিনাপ্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তির শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
একটা ঘটনা দিয়ে আমার পোষ্ট পরিসমাপ্তি ঘটাচ্ছি-
ফিরাসী (রাঃ) (ইনি একজন সাহাবী। দারিদ্রজনত কারণে) একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমি কি ভিক্ষা চাইব? তিনি বললেন, না। অগত্যা যদি চাইতেই হয় তবে নেক্কার লোকদের কাছে চাইবে।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৫৮৭)
.
এই হাদিসগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেল ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে সমর্থন করে না। কাজেই দয়া করে ইসলামের শিক্ষা-সাংস্কৃতী, পোশাক ও পরিচ্ছেদ নিয়ে কেউ হিনমন্যতায় ভুগবেন না এবং অপরকে ভুগাবেন না।
.
এখন আপনি বলতে পারেন- তাহলে এই ব্যাচারাদের উপায় কি?
আমি বলব-
এক. এরা ইচ্ছা করলেই আপন আপন অবস্থান অনুযায়ী কোন কাজ করতে পারে।
দুই. বর্তমানে অধিকাংশ ফকিরই ভিক্ষা করার উপযুক্ততা রাখে না। এই শ্রেণীর লোক তবুও যদি ভিক্ষা করতে চায়... আমি এদের জন্য একটু কঠিন ভাষায় বলব, ভিক্ষাবৃত্তি কিন্তু হিজড়ারাও করে, কাজেই আপনারা তাদের স্টাইল অবলম্বন করুন।
তিন. যারা একান্ত অপরাগ তাদের জন্য পরিমিত পরিমাণ ইসলাম সুযোগ দিয়েছে।
আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুক। আমীন।।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৯