somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা! মনে কষ্ট নিস না...

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোন এক বিষণ্ণ বর্ষার বিকেলে,
ছুটেছিলাম ছায়াসুনিবিড় গ্রামে
অর্থের প্রয়োজনে, মায়ের কাছে..

তখন কোন এক ক্লাসে পড়ি। ফরম ফিলআপ, কিছু বইপত্র, টুকিটাকি অনেক কিছুর জন্যেই ঋণে পিঠ বেকে গিয়েছিল। দাতারা সবাই চাপ দিচ্ছে। কোথায় পাব এত টাকা? কোথাও দৃঢ়পদে দাড়াতে পারছিলাম না। নিরুপায় হয়ে ছুটে চললাম মায়ের কাছে। সবার শেষ ঠিকানা।
বাড়িতে যাব ভাড়া কোথায়? রাত ১২ টায় একটি মেইল ট্রেন আছে। টিসি থাকে না বিধায় আমার মত কপর্দকশূণ্যের এটাই শেষ ভরসা। অন্তত টিকিট চেয়ে কেউ লজ্জা ত দিবে না! এখন বাজে দুপুর ২:৩০ মিনিট। টাকা থাকলে হয়ত বাসে চলে যেতাম।
নির্জন নিঃশব্দ রজনি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে। ঝাকড়া মারা অন্ধকারের বুক চিড়ে ট্রেন চলছে আপন গতিতে।

রান্না ঘরে আম্মার পাশে বসে আছি। সকালে এসেই বলেছিলাম ‘আম্মা! বর্ডিং এর খাবার খাইতে পারি না। কিছু একটা করে দেও’ আমার আম্মা কথাটুকু শুনে স্থির থাকতে পারেনি। ছলছল চোখে দৌড়ে গিয়েছিল দাদির কাছে, গাছের কিছু জলপাই চাইতে। সেই জলপাই আচার বানাচ্ছে আম্মা।

`আম্মা! কয়ডা টেহা দরকার`
`কয় টেহা?`
`কেমনে যে কই!`
`আরে পাগলা! ক দেহি`

আমি জানি আম্মার স্বামর্থের কথা। আমার যত টাকার প্রয়োজন, হয়ত আম্মা এত টাকা একসাথে কোনদিন হাতেও নেয়নি।
`আম্মা! দুই হাজার টেহা লাগব`
হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে আমার আম্মা। হয়ত ভাবছে নিজের অপারগতার কথা। এলোমেলো ভাবে আচাড় নাড়ছে। পাতিল নামিয়ে আম্মা ঘরে গেল। আমি চুলার পাড়েই বসে আছি। কিছুক্ষণ পরে কাপরের এক পুটলি নিয়ে আম্মা ফিরে আসল। অনেক গুলা ছিড়া কাপরের মাঝখান থেকে বেধে রাখা কিছু টাকা বের করে বলল-
`গুণ ত! দেহি কয় টেহা আছে`

আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। ইচ্ছা সত্বেও হাত এগুচ্ছে না। পক্ষাঘাতগ্রস্থের মত দৃষ্টি ফেরাচ্ছি। একবার আম্মার দিকে, একবার টাকা গুলোর দিকে। এক টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকা। মাঝে মাঝে দশটাকার নোটও দেখা যাচ্ছে। আমার আম্মা পেয়ারা বেচে টাকা গুলো জমিয়েছে। পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে বারবার চোখের পানি মুছে যাচ্ছি। গুণে গুণে ১৩৪২ টাকা হয়েছে।
আম্মা বলল `বাবা দাড়া! আরো কয়ডা টেহা আছে, আনতাছি`
দুইশ' টাকা নিয়ে আম্মা ফিরে এসেছে রান্না ঘরে। আমার চোখে বাধ ভাঙ্গা পানির ঢেউ।

‘আম্মা! যাই তাহলে?’
‘যা বাবা! মনে কষ্ট নেস নে। মুন দিয়ে লেহা পরা করবি। একটা কতা মনে রাহিস “এই দিন, দিন নয় আরও দিন আছে - এই দিন নিয়ে যাব সেই দিনের কাছে”।
কাপরের আচল দিয়ে আম্মা চোখ মুছতে মুছতে আরও একটি কথা বলেছিল তখন `শুন! না খাইয়া যদি মইরাও যাস কারও কাছে হাত পাতপি না, নিজের দুঃকের কতা কাউরে কবি না, হাত যদি পাতোসি আল্লার কাছে পাতপি, তার কাছেই ভিক্কে চাবি`
সেদিন আম্মাকে আর কিছু বলতে পারিনি।

আজকেও ভাবি জলপাইয়ের আচাড় বানিয়েছে। কত পদের মসলা, কত নিয়ম কানূন। একবার তেলে ভাজতে হয় আবার সাতদিন রোদে দিতে হয়। পরে আবার কি কি যেন করতে হয়। সত্যি বলছি ‘গরম মসলা ছাড়া শুধু মাত্র এক মুঠো চিনি দিয়ে আম্মা যে আচাড় বানিয়েছিল, তার স্বাদ আজও আমার জিহ্বায় অম্লান’ সেই আচাড়ের সামনে কোন কিছু টিকতে পারবে না।
মাঝে মাঝে মনে চায় আম্মাকে বলতে ‘আম্মা! সেদিনের মত আচাড় বানাও না!’ হয়ত কষ্ট পাবে কিংবা লজ্জা পাবে, তাই বলি না।
একদিন প্রিয়তমাকে বলব- তুমি আমাকে ওমন করে আচাড় বানিয়ে দাও না!

ইসস আমি যদি কোন সাহিত্যিক হতাম... মনের কথাটুকু শব্দে ফুটিয়ে তুলতে পারতাম। পাঠকরা আমার লেখা পড়ে আবেগাপ্লুত হত। গল্পটা হয়ত আরও দীর্ঘ করে লিখতে পারতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:০৫
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×