১. ছায়াদেবী! আমাদের পাড়ার এক কিশোরী বধু!
চোখে মুখে উচ্ছাস, ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, শরীর জুড়ে চঞ্চলতা! ছায়াদেবীই আমার মনে প্রেম জাগিয়েছিল, নারীর শরীর যে মানুষকে কী কঠিনভাবে আকৃষ্ট করে তা ছায়াদেবীর সামনে দাঁড়ালেই অনুভব করতে পারতাম। কালীতলার পুকুরে রোজ জল নিতে আসে ছায়াদেবী! ছায়াদেবী আমার ভাবনার একটা অংশ হয়ে গেছে ! প্রতিনিয়ত ভাবছি তার চোখ, মুখ, ঠোঁট, আর চঞ্চলতাকে! হরিপদ বাবুর উপর ভীষণ হিংসা হয়, এই শেষ বয়ষে ও তার এত সুন্দরী, রসবতী একটা বউ আছে! কিন্তু ছায়াদেবীর জন্য আমার ভীষণ আপসোস হয়, বৃদ্ধ স্বামীর শরীর টেপা, সেবা যত্ন করা, গৃহস্থালির কাজ কর্ম ই শুধু সে করে যাবে? তাকে তো বঞ্চিত করা হচ্ছে সুখ থেকে, ভালোবাসা থেকে, প্রতিনিয়ত সে বঞ্চিত হচ্ছে যৌবনসুখ থেকে, হরিপদ যে ঠিকমত সোজা হয়ে হাটতেও পারেনা, এই রসবতীর যৌবন জ্বলা সে মেটাবে কী করে!
অথচ আমার এ ভাবনাগুলো অনর্থক ভাবনা ই! ছায়াদেবী তো জানেই না যে তার ভাবনা আমাকে কতটা ভাবাচ্ছে কতটা অস্থির করে তুলছে, কতটা প্রেমিক করে তুলছে! আমি যে রোজ রাতেই ছায়াদেবীর কল্পনায় হারিয়ে যাচ্ছি, আর হরিপদের সম্পদ লুট করার স্বপ্ন দেখছি, সব ধর্ম যে অধর্ম করছি!
ভাবতে ভাবতে বিভোর হ'য়ে গেলাম! একটা ঘোরের মধ্যে আঁটকে গেলাম!
-কী ঠাকুরপো, কী ভাবছো?
ছায়াদেবীর মিষ্টি স্বরের কথাই ঘোর কাটলো, চারদিক টা একবার তাকিয়ে দেখলাম, নির্জন দুপুর, কালীতলার পুকুর পাড়ে আমরা দুই প্রাণী ছাড়া আর কেউই নেই!
বললাম,
হরিপদ বাবুর কথা ভাবছি!
মুখটা একটুখানি বিকৃত করে ছায়াদেবী আবার বলল,
-বুড়ার নাম আমার সামনে আর নিবা না, এতই যদি বুড়ার গুণকীর্তন করতে মন চায় অন্য কারো কাছে গিয়ে কর, আমার কাছে না।
একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, বুড়ার গুণকীর্তন করতে যাবো কেন? তার প্রতি তো আমার শুধু হিংসে হয় হিংসে! আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ছায়াদেবী আবার বলা শুরু করলো,
কেন হিংসা হয় ঠাকুরপো আমি কী শুনতে পারি?
দুষ্টমির ছলে বলে দিলাম, হরিপদ বাবুর সম্পতি "ছায়াদেবীকে" লুট করতে চাই, ভালোবাসতে চাই, হারিয়ে যেতে চাই ছায়াদেবীর ভিতর!!
আমার কথা শুনে ছায়াদেবী একেবারে থ হইয়া গেলো, অস্ফুটস্বরে বলতে লাগলো,
-এ হয়না ঠাকুরপো, এ হয়না। এসব কথা মুখে আনাও যে পাপ!!
তবুও আমি ছায়াদেবীকে ভালোবাসি!! ছায়াদেবী ও বুঝে গেছে আমি যে তাকে ভালোবাসি, তার জন্যই যে রোজ কালিতলার পুকুর পাড়ে অপেক্ষায় থাকি। মুখটা নিচু করে আমার চোখের সামনে দিয়ে বাড়ির পথে হাটতে শুরু করলো সে, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম একদৃষ্টে! বাড়ির একদম কাছাকাছি যেয়ে আর একবার পিছনে তাকালো সে, আমি তাকিয়ে আছি তার শেষ পদচিহ্ন টা পড়া পর্যন্ত!!
(পরবর্তী পর্ব আগামীকাল)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫১