somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মহত্যার ইতিকথা; কারণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ যখন আরেকজনের রক্তপাত ঘটাবে ধরে নিতে হবে বিচার ব্যবস্থার অধঃপতন হয়েছে  যখন সে নিজেই নিজের রক্তপাত ঘটাবে বুঝে নিতে হবে পারিবারিক বন্ধনের, সামাজিক মূল্যবোধের, ধর্মীয় শিক্ষার,  নৈতিকতার স্খলন হয়েছে।
 


মিনিটের কাঁটা একবার আবর্তনে একটি প্রাণ ও সকাল, দুপর, সন্ধ্যা, রাতে আরো চারটি প্রাণ নিজ হাতে নিজের অস্তিত্বের বিনাশ ঘটায়।

আত্মহত্যা যে কোনো কারণে করতে পারে, তবে এগুলো ঘুরেফিরে হতাশা, একাকিত্বের মধ্য দিয়েই পরিণতি পায়। হতাশা, একাকিত্ব হলো এক্ষেত্রে মানুষটিকে আত্মহত্যা করতে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা জোগায়, আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।

হতাশা ও একাকিত্ব একে অপরের পরিপূরক। অর্থাৎ হতাশার কারণে একাকী থাকার প্রবণতা বাড়তে পারে, আবার একাকিত্বের কারণে হতাশা ভর করতে পারে। দু'টো পদ্ধতির কোনোটাই মানুষটিকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে ভূমিকা কম পালন করেনা। তদুপরি একাকিত্বের কারণে যেসব মানুষের মধ্যে হতাশা ভর করে তাদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি। 

মানুষ হলো বৈচিত্র্যময় প্রাণী।  অনেকগুলো গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, ফিলোসোফির ধারক ও বাহক। তারপর ও সমস্যার সমাধান খুজতে গেলে কোনো না কোনো বিশেষ পয়েন্টের দিকে গুরুত্ব আরোপ করতেই হয়। মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারার ক্ষমতার উপর মানুষকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ইন্ট্রোভার্ট, এম্বিভার্ট ও এক্সট্রোভার্ট।

ইন্ট্রোভার্ট হলো যারা নিজের মধ্যেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে, লোক চক্ষুর আড়ালে থাকতে পছন্দ করে, ব্যক্তিত্ব বোধের প্রকাশে অনীহা দেখায় আর খুব লাজুক প্রকৃতির হয়।

এক্সট্রোভার্ট হলো ঠিক তার উল্টো।  এম্বিভার্টগুলো এ দু'য়ের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

ইন্ট্রোভার্ট গুলো তুলনামূলক বেশি মেধাবী হয়। তারা সাধারণত নিজেকে বেশি ভালোবাসেন। আশেপাশের মানুষের দিকে তাদের মনোযোগ কম থাকে, তাই তারা খুব প্যাশোনেটলি একটা কাজ করতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ, সভ্যতার উত্থান, নিত্যনতুন ধারণার আবির্ভাব তাদের থেকেই হয়ে থাকে।

এতো কিছুর পর ও তাদের মধ্যে অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়। অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক ক্যাটাগরির একটি হলো সিরিয়াল কিলিং, যার অধিকাংশই ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়।

ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষের ব্যাপারে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন এজন্য যে, আত্মহত্যা কারীদের অধিকাংশ ইন্ট্রোভার্ট টাইপের হয়। তাই তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারা দরকার।

একাকিত্বের কারণে হতাশা ভর করে থাকে সাধারণত ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষের মধ্যে। এক্সট্রোভার্টরা যাবতীয় হতাশা ও একাকিত্ব থেকে সাধারণত মুক্ত হয়ে থাকে। তারা খুব সামাজিক হয়। তারা তাদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে   ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক কথায় বলতে গেলে নিজের ও পারিপার্শ্বিক সবার জন্যই তারা, আর তাদের জন্য ও সবাই।তাই অন্তত আত্মহত্যার প্রসঙ্গে তাদের এড়িয়ে গেলে খুব একটা সমস্যা হবে না।

হতাশা থেকে একাকিত্ব আসলো না একাকিত্ব থেকে হতাশা সেটা মূখ্য নয়। মূখ্য হলো, হতাশা ও একাকিত্ব দু'টোই যদি একসাথে কোনো মানুষকে সঙ্গ দেয়, তবে তার আত্মিক মনোবল ধিরে ধিরে হারিয়ে যায়। নিজের অস্তিত্বের প্রতি অবিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে, জীবনটাকে সবচেয়ে সস্তা বলে তার কাছে প্রতীয়মান হয়, জীবন বহির্ভূত যে কোনো কিছুর জন্য নিজেকে অযোগ্য মনে হয়।

আত্মহত্যার ভাবনা যেহেতু বিষণ্নতা কিংবা হতাশা থেকে আসে, তাই একটা মানুষ কেন বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয় সেগুলো আগে পর্যালোচনা করা উচিৎ।  মূলোৎপাটন করা না গেলে আগাছা যেমন দমন করা কখনোই সম্ভব নয়। সমস্যার সমাধান করার জন্য বিষয়টির মূলে আঘাত করার ও তেমন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে যেভাবে শিক্ষিত বেকার বাড়তেছে, তাতে অতিসত্বর বাংলাদেশকে পুরো বিশ্ব শিক্ষিত বেকার তৈরির দেশ হিসেবেই চিনে থাকবে। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এখন পার্সোনালিজম কিংবা ইনডিভিজ্যুয়ালিজমের যে রেভ্যুলিউশন চলতেছে সেটা আমাদের দেশে (প্রাচ্যে) বিস্তৃত হোক কিংবা না হোক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অর্থের নিরবচ্ছিন্ন যোগান থাকা আবশ্যক ।  যদি অর্থের যোগান না থাকে তাহলে হয় ব্যক্তিটি অপরাধের সাথে যুক্ত হবে আর না হয় জীবনাবসান ঘটাবে। প্রথমটিতে অর্থের অভাব হবেনা, আর দ্বিতীয়টিতে অর্থের প্রয়োজন নেই।

যেহেতু আমাদের দেশে এখনো পরিবার প্রথা আছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই নতুন জেনারেশনের উপর বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখভালের দায়িত্ব অর্পিত হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে বাড়ির কর্তা। বংশপরম্পরায় সেই দায়িত্ব ধিরে ধিরে নতুনদের কাধে চেপে বসে। আবার সহায় সম্বলহীন অনেক পরিবার আছে যাদের জীবন সংগ্রামের চাবিকাঠি একজনের হাতেই ন্যস্ত থাকে। দূর্ভাগ্যবশত কর্তার অকাল প্রয়াণে কিংবা কোনো দূর্ঘটনার দরুন কর্মে অক্ষম হওয়ার কারণে  কর্মক্ষম হওয়ার পূর্বেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় নতুন জেনারশনকে।

যেখানে অভিজ্ঞরা কাজ পাচ্ছেনা, সেখানে অনভিজ্ঞরা কিভাবে মার্কেটে টিকে থাকবে! কিন্তু প্রয়োজন তো টিকে থাকার লড়াইয়ে হার মানে না,  হার মেনে যায় জীবন সংগ্রামে কিনারা খুজে না পাওয়া পথিক। দারিদ্র্য, আর্থিক অনটন মানুষকে এক ঘরে দেয়। কাজ করার উৎসাহ উদ্দীপনা ও দিন দিন হারিয়ে যায়।

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ যখন বিচ্ছিন্নতায় ভুগে,  যখন তাদের সত্যিকারের বন্ধুর অভাব দেখা দেয় তখন তারা একাকিত্ব কাটানোর জন্য মাদক নিতে শুরু করে, ধিরে ধিরে নির্ভরশীল হয়ে যায়। তাছাড়া প্রেম সম্পর্কিত জটিলতা, বৈবাহিক অশান্তি অনেক সময় তাদেরকে সেদিকে ঠেলে দেয়।

সম্পর্কটা যখন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ব্যতিরেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে হয় তখন সেখানে মনের মিলন ঘটেনা। মনের মিলন না ঘটলে একসঙ্গে পথ চলা যায় না। দাম্পত্য কলহের কিংবা পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার সূচনাই হয় মনের বিদ্বেষ থেকে। এর জের ধরে, কখনো বা যৌতুক কিংবা পারিবারিক দ্বন্দ্বের অজুহাতে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়।

ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের যুগে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হলো দেওয়া নেওয়ার। দেওয়া নেওয়া ছাড়া স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ও টিকে না। শুধুমাত্র  একটা সম্পর্কই দেওয়া নেওয়ার উর্ধ্বে, সেটা হলো সন্তানের সাথে পিতামাতার সম্পর্ক।  একটা আধ্যাত্মিক সম্পর্ক, যেখানে নেই কোনো চাওয়া পাওয়ার ভিত্তি।

কিন্তু ক্রমশ সেই  পিতা-মাতার সাথেই যদি সন্তানদের দুরত্ব তৈরি হয়। তখন?

বাংলাদেশে এখনো পার্সোনালিজমের ধারণা মানুষের মনে স্থান করে নিতে না পারলেও ধিরে ধিরে মানুষ সেদিকেই ঝুকছে। এতে মানুষ মানুষে, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্রমশ দুরত্ব বেড়েই চলছে।

জেনারেশন গ্যাপ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দিন দিন দুরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষ স্বভাবতই  অতিরঞ্জকতা পছন্দ করে। একটু বাড়িয়ে বলার স্বভাবটা মানুষের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে। নিজেদের সময়কালের গল্প, পরিশ্রম, ইতিহাস, জীবন সংগ্রামকে বাড়িয়ে বলতে পছন্দ করে। যুগের ক্রান্তিলগ্নে উনাদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে, ক্রান্তিকালের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে। আর পরবর্তী জেনারেশন সুখে, উল্লাসে, হাসি-আনন্দে দিন কাটছে। এই ধ্যানধারণা থেকেই পরবর্তী জেনারেশনের প্রতি একটা সুপ্ত ক্ষোভ কাজ করে থাকে। আদর-সোহাগ,  অর্থ, বিত্ত-বৈভবের অগাধ যোগান দিলেও সেই ক্ষোভটা কাজ করে। তবে সেটা ক্ষোভ আকারে প্রকাশ পায় না, প্রকাশ পায় হতাশা কিংবা কোনো কিছু না পাওয়ার আক্ষেপে!

এখন যাদের বয়স ত্রিশোর্ধ তাদের শৈশব কেটেছে মাঠে খেলে, কিন্তু বর্তমানের বাচ্চাদের শৈশব কাটে ভিডিও গেমস খেলে। তাদের জায়গায় তাদের পয়েন্ট অব ভিউ ঠিক আছে, কারণ এখন খেলার জন্য মাঠ নেই। আপনি যদি তাদেরকে ভিডিও গেমস খেলতে অনুৎসাহিত করেন তাহলে আগে তাদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠের যোগান দিন, যদি সেটা না পারেন তাহলে চুপ যাওয়াটা উচিৎ নয় কি! ওদের এই শৈশবটাকে মেনে নিন। কথায় কথায় নিজের সাথে আপনার সন্তানের শৈশবের তুলনা দিবেন না। এতে তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

সন্তানের প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন থেকেও আমাদের কাছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বড় হয়ে যায়। তাদের সাধ্যের বাহিরের অনেক কিছু তাদের উপর চাপিয়ে দেই। প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে না দিয়ে আমার আপনার ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাই তাকে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে। এতে ছোটকাল থেকেই বাচ্চারা একটা অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে বড় হয়।

এই সকল বিভিন্ন কারণে পরবর্তীতে সন্তানরা বাবা-মাকে বন্ধু হিসেবে নিতে পারে না। তাদের জীবনধারা, কখন কি করছে, ভালো-মন্দের পরামর্শ নেওয়া, বয়ঃসন্ধিকাল কিংবা তার পরের মানসিক অসহায়ত্বের সময় পাশে পায়না, কিংবা পেলেও সেভাবে মেলে ধরতে পারে না। প্রায় সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী সঠিক গাইডলাইন পায় না। ইত্যকার কারণে ধিরে ধিরে নিজেদের মধ্যে দুরত্ব তৈরি হয়ে যায়।  সন্তানদের মানসিক চাপ, আবেগ, অনুভূতির ব্যপারে পিতামাতার পুরোদমে অখেয়াল থাকা এবং পরবর্তী জেনারেশনের সাথে নিজেদেরকে আপডেট করা কিংবা মানিয়ে না নেওয়ার কারণে নিজেদের জীবনধারা দিয়েই সন্তানদের জীবন পরিক্রমা জাস্টিফাই করে থাকে। এতে করে সন্তানদেরকে রোবট বই কিছুই মনে হয় না।

কিন্তু রক্তমাংসের দেহটা যে একজন মানুষের, ধিরে ধিরে একে অপরের প্রতি সেই ধারণা পোষণ করা থেকেই বেড়িয়ে আসে। নিজেদের অজান্তেই!

দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে মানুষ অনেক সময় আত্মহত্যাকে বেছে নেয়, যখন সে বুঝতে পারে যে, এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া আসলেই সম্ভব নয়। তাছাড়াও, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, এংজাইটি, ফ্রাস্ট্রেশন কিংবা ডিপ্রেশনের মতো মানসিক অসুখে আক্রান্ত হলে ধিরে ধিরে সেই মানুষটি আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। শারিরিক অসুস্থতায় আমরা চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হই, কিন্তু মানসিক অসুস্থতায় এটাকে অবজ্ঞা করি। মানসিক অসুস্থতাও যে একটি অসুখ সেটা জানিনা। মানসিক অসুস্থতা মানেই লোকটি পাগল এমন ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।

তাছাড়াও, তার স্বাভাবিক জীবনে অপ্রত্যাশিত কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া, পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য ফলাফল করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সামাজিক চাপে অনেক আত্মহত্যা করে থাকে।

আত্মহত্যা করার পর তার আশেপাশের লোকগুলোকে অনেক হতাশ হতে দেখা যায়, আক্ষেপ করতে দেখা যায়। সে যদি একবার আমাকে তার সমস্যার কথা বলতো! সে আসলে আপনাকে বলেছিলো, তবে মৌখিক ভাষায় নয়। আকার ইঙ্গিতে। একে অপরের প্রতি অমনোযোগী হওয়ার কারণে সেই ইঙ্গিত আমরা বুঝতে পারিনা।

ডিপ্রেশন কাউকে ভর করলে তার থেকে নেতিবাচক দিকগুলো বেশি প্রকাশিত হয়। সবকিছুতেই একটা না সুলভ আচরণ প্রকাশ পায়। ভালো লাগবে না, খাবে না, পড়বে না, ঘুরতে যাবে না, কোনো কাজ করবে না, কারোর সাথে মিশবে না। ঘুম কমিয়ে দেওয়া কিংবা অত্যধিক মাত্রায় বাড়িয়ে দেওয়া।  মনমরা হয়ে থাকা, ধিরে ধিরে উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলা, খিটখিটে মেজাজ দেখানো, স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ, কাছের লোকগুলোকে দূরে ঠেলে দেওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যাবলী যদি স্বাভাবিক সময়ের থেকে বেশি সময় ধরে তার মধ্যে বিরাজ করে তখন বুঝে নিতে হবে সে অত্যধিক মানসিক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

আমরা অনেক সময় ভাবি, মানুষ সাময়িক অসুবিধা থেকে আজীবন পরিত্রাণ পেতে আত্মহত্যা করে থাকে। বিষয়টা আংশিক সত্য হলেও পুরোপুরি নয়। হুট করেই কেউ আত্মহত্যা করে বসে না, দিন দিন  বিভিন্ন কারণে যখন তার কাছে মনে হয় সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে, এর থেকে মুক্তি পাওয়া হয়তো সম্ভব নয়, তখনি লোকটি আত্মহত্যা করে। জীবনাবসান ঘটানোর জন্য সে একে একে তার পক্ষে যুক্তি দাড় করায়, এই পর্যায়টা একটা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে । তখনি তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে, ডিপ্রেশন কিংবা শেষ সময়ের হাতছানি দান স্বরূপ।   

হিটলার, মেরিলিন মনরো কিংবা সময়ের অন্যতম ভোকালিস্ট চেস্টার বেনিংটন যেমনি ভাবে কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে ঠিক তেমনি ভাবে ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আব্রাহাম লিংকন, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইন্সটন চার্চিল কিংবা হ্যারি পটারের রূপকার জে কে রাউলিংয়ের মতো ব্যক্তিত্ব ও তৈরি হয়েছে।

আত্মহত্যা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। যান্ত্রিকতার আড়ালে যাতে অমানবিক হয়ে না যাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। পারিবারিক সম্পর্কের প্রতি আরো জোর দিতে হবে৷ ধর্মীয় অনুশাসন লালন করতে হবে।

আসুন সবাই মিলে একটা সুস্থ মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন  পৃথিবী গঠনে আত্মনিয়োগ করি। "মানুষ মানুষের জন্য," এই শ্লোগান প্রতিধ্বনিত করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×