somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান এবং কয়েকজন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান



মনোবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানের একটি শাখা। এটি মূলত মস্তিষ্কের গঠন, এর তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়া এবং এসব প্রক্রিয়া থেকে আচরণের উদ্ভব নিয়ে কাজ করে। এটা যেহেতু জীববিজ্ঞানের একটি শাখায় সেহেতু জীববিজ্ঞানের তত্ত্বগুলোই এখানে কাজ করে। ঠিক তেমনি বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব এবং উপাত্তের সাহায্য যদি মনোবিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করা হয় তবেই তাকে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান (ইংরেজি ভাষায়: Evolutionary psychology) বলা যায়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে মানব মনের গঠন ও কার্যক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব-উপাত্ত প্রয়োগ করা হয়। তার মানে এটা মনোবিজ্ঞানের কোন শাখা নয় বরং একটি অ্যাপ্রোচ। দৃষ্টিশক্তি, সামাজিক আচরণ ইত্যাদি মনোবিজ্ঞানের পৃথক শাখা; কারণ তারা নির্দিষ্ট কোন দিক নিয়ে কাজ করে। কিন্তু বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে গবেষণা না করে বরং, মনোবিজ্ঞানের সবকিছু ব্যাখ্যা করার জন্যই বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের আশ্রয় নেয়। এজন্যই এটা মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি বিশেষ পদ্ধতি।

আরেকটু নৈর্বক্তিক সংজ্ঞা এরকম হতে পারে: বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান এবং জ্ঞানীয় (cognitive) মনোবিজ্ঞান- এই দুটি বিজ্ঞানের সমন্বয়ই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান দুটি মৌলিক ধারণার উপর ভিত্তি করে কাজ করে: (১) মানুষের আচরণ মনের কিছু প্রক্রিয়ার ফসল (২) মন একটি তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র বা পদ্ধতি। একসময় মন বলতে আমরা ব্যাখ্যাতীত কোন কিছুকে বুঝতাম। কিন্তু যখনই মনকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হল এবং মানুষের সব আচরণের নিয়ন্ত্রক হিসেবে এই মনকে মেনে নেয়া হল তখনই জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হল। ১৯৬০-এর দশককেই এই যাত্রার সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কারণ এই সময়ই অধিকাংশ বিজ্ঞানীর কাছে আচরণবাদ (Behaviourism) প্রত্যাখ্যাত হয় এবং বিজ্ঞানীরা আবার মন নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করেন। বর্তমানে মন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের যে ধারণা তাকে পূর্বতন লৌকিক মনোবিজ্ঞানের ধারণার সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, বর্তমানে মনকে কেবলই এক গণনাযন্ত্র হিসেবে মেনে নেয়া হয়েছে। কম্পিউটার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্তরণই মূলত জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞানের পথ সুগম করেছে। আর এতেও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, জ্ঞানী মনোবিজ্ঞান এতোটা বিকশিত না হলে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের উত্তরণ সম্ভব ছিল না।

বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান মুলতঃ বিজ্ঞানের দুটো চিরায়ত শাখাকে একীভুত করেছে; একটি হচ্ছে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান (evolutionary biology) এবং অন্যটি বৌদ্ধিক মনোবিজ্ঞান (Cognitive Psychology) । বৌদ্ধিক মনোবিজ্ঞান থেকে আমরা জানতে পারি যে, আমাদের মানসপট নির্মাণে দীর্ঘদিনের এক জটিল পরিকল্পনার ছাপ আছে। আবার বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান বলে যে, জীবদেহের এই ‘জটিল পরিকল্পনা’ বলে যেটাকে মনে হয় সেটা আসলে ডারউইন বর্ণিত ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’-এর ফলাফল। বিবর্তনীয় পদ্ধতিতে গবেষণা করার সময়ও মানব মস্তিস্ককে একটি তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র হিসেবে ধরে নেয়া হয়, আর মানব মন হচ্ছে তার প্রক্রিয়াজাত অভিব্যক্তি। এই বৈশিষ্ট্যটি জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান থেকে এসেছে। আমাদের শিকারী-সংগ্রাহক পূর্বপুরুষদেরকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো সেগুলো সমাধানের জন্যই মনের বিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করা হয়। তাই উল্লেখিত বিবর্তন ব্যাখ্যার মাধ্যমেই আমাদের মনের উদ্ভব ও তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মস্তিষ্কের সাথে তার সম্পর্ক ইত্যাদি ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ঠিক এ কাজটিই করে।

কয়েকজন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানী



মার্টিন ডেইলি এর হোমিসাইড বইয়ের প্রচ্ছদ

মার্টিন ডেইলি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক, এবং বিবর্তন মনস্তত্ত্ববিদ্যার গবেষক। তিনি ও মার্গো উইলসন ইভোলিউশন অ্যান্ড হিউম্যান বিহেভিয়ার নামক গবেষণা জার্নালের প্রাক্তন সম্পাদক।
তার বইগুলো হচ্ছে - (সবগুলি বই মার্গো উইলসনের সাথে লেখা)

* Sex, Evolution, and Behaviour (১৯৭৮)
* Homicide (১৯৮৮)
* The truth about Cinderella: A Darwinian view of parental love. (১৯৯৮)




ম্যাট রিডলি

ম্যাথু (ম্যাট) রিডলি (জন্ম ফেব্রুয়ারি ৭, ১৯৫৮) একজন ইংরেজ বিজ্ঞান লেখক। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে পরে বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। তিনি দি ইকনমিস্ট এবং দি ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার বিজ্ঞান বিষয়ক সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ বিষয়ে তাঁর লেখা বইগুলি হলো -

* ১৯৯৪ - দি রেড কুইনঃ সেক্স অ্যান্ড দি ইভোলিউশন অফ হিউম্যান নেচার
* ১৯৯৭ - দি অরিজিন্‌স অফ ভারচু
* ১৯৯৯ - জিনোম
* ২০০৩ - নেচার ভায়া নার্চার: জিন্‌স, এক্সপিরিয়েন্স, অ্যান্ড হোয়াট মেইক্‌স আস হিউম্যান
* ২০০৬ - ফ্রান্সিস ক্রিক: ডিস্কাভারার অফ দি জেনেটিক কোড



রিচার্ড ডকিন্স

এবং সবশেষে ক্লিন্টন রিচার্ড ডকিন্স (জন্ম মার্চ ২৬ ১৯৪১) একজন ইংরেজ বিবর্তনবাদ বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, এবং বিজ্ঞান লেখক। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর চার্লস সিম্নোয়ি চেয়ার ইন দি পাবলিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ সায়েন্স-এর অধিষ্ঠিত ছিলেন, সম্প্রতি ২০০৮ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর নিয়েছেন । অধ্যাপক ডকিন্স 'সেলফিশ জিন' গ্রন্থটির জন্য বিদ্বৎ সমাজে পরিচিত। তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে আছে, এক্সটেডেড ফেনোটাইপ, ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার, রিভার আউট অব ইডেন, ক্লাইম্বিং মাউন্ট ইম্প্রবেবল, আনউইভিং দ্য রেইনবো, ডেভিলস চ্যাপ্লিন, অ্যান্সেস্টর টেল, দ্য গড ডিলুশন এবং দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। তিনি আধুনিক বিশ্বে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিবর্তনকে জনপ্রিয়করণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন ।

ব্লগার ছন্নছাড়ার পেন্সিল দ্য সেলফিশ জিন বইটির অনুবাদ করছেন ।
১ম পর্বের লিংক - View this link

২য় পর্বের লিংক - Click This Link

এক কথায় অসাধারণ !

বিবর্তনের ওপর অতীতে লিখেছেন অনেকেই, ভবিষ্যতেও লিখবেন। কিন্তু বিবর্তনকে জনপ্রিয়করণে ডকিন্সের মতো সফল বোধহয় কোনো লেখকই হননি। ডকিন্সের কাজে শিক্ষায়তনের গবেষকরা যেভাবে প্রভাবিত হয়েছেন, তেমনি হয়েছেন বিবর্তন না জানা বহু সাধারণ মানুষও। কখনওবা হয়ে উঠেছেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুও। এক সময় বিজ্ঞানী টিএইচ হাক্সলিকে ডাকা হতো 'ডারউইনের বুলডগ' হিসেবে আর বর্তমানে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স হয়ে উঠেছেন 'ডারউইনের রটউইলার।

বিখ্যাত লেখক টেরি ইগ্গ্নেটন ডকিন্সকে অভিষিক্ত করেছেন_ 'বার্ট্রান্ড রাসেলের পর সবচেয়ে খ্যাতনামা প্রফেশনাল নাস্তিক' অভিধায়। ২০০৬ সালে বিবিসির পাঠকদের ভোটে 'পারসন অব দ্য ইয়ার'ও নির্বাচিত হয়েছেন ড. রিচার্ড ডকিন্স। তিনি সেলফিশ জিন গ্রন্থের জন্য বিখ্যাত। ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী টি এইচ হাক্সলির পরে বর্তমান বিশ্বে বিবর্তনবাদের প্রয়োজনীয়তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছেন রিচার্ড ডকিন্স। পেশায় বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। বিজ্ঞানী মহলে শুধু নয়, এর বাইরে যুক্তিবাদী এবং সমাজসচেতন লেখালেখির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও তার খ্যাতি আজ আক্ষরিক অর্থেই তুঙ্গস্পর্শী।


লক্ষ্য করুন পাঠক মান্যবর -


ইহা একটি কপি পেস্ট টাইপ পোস্ট, কিছূই মৌলিক নহে, মূলত বিজ্ঞানের অপ্রচলিত কিন্তু কৌতূহলী সব বিষয় এর প্রাথমিক কথা উল্লেখ থাকবে।

মাফ করিবেন মহাপুরুষেরা, আমার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ।

এর ট্যাগ থাকবে - অন্য ধারার বিজ্ঞান
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×