somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন সংকলন ও সংরক্ষণ

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক দিন আগে এক ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কুরআন’ শব্দের অর্থ কি। আমি আবিষ্কার করলাম, আমি শব্দটার অর্থ জানি না; কুরআন শব্দের অর্থের কথা কখনো চিন্তাই করি নি। এমনি করে অনেক কিছুর কথাই আমরা কখনো চিন্তা করি না। আবার অনেক বেহুদা ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করে সময় পার করে দেই।
স্প্রিংফিল্ড, ভার্জিনিয়ার মসজিদ নূরে মুফতি শাযাদ এর একটি তাফসীর ক্লাস চলছে, সেই লেকচার থেকে কুরআনের ইতিহাসের একটি সারাংশ তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।
কুরআন শব্দের অর্থ হচ্ছে পড়া (To Read)। আরেকটা অর্থ আছে, সেটা এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না। কুরআনের আরো কিছু নাম আছে, যেমন, ফুরকান। দেড় হাজার বছর ধরে সম্পূর্ণ অবিকৃত ও অপরিবর্তিত আল্লাহর বাণী। আল্লাহ নিজে এর সুরক্ষা করবেন বলে দিয়েছেন, কাজেই ইয়াওমাল কিয়ামাহ পর্যন্ত এর কোন পরিবর্তন হবে না।
আজকে আমরা যে কুরআন পড়ি, তার স্ট্রাকচার বা ওয়ে অফ অর্গানাইজেশন ঠিক এই রকম ছিল না। কুরআন নাজিল আমাদের এখনকার জানা কুরআনের ক্রমানুসারে হয় নি। বিভিন্ন সময় এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন আয়াত এবং অংশ নাজিল হয়েছিল। হুজুরে পাক (সাঃ) সাহাবীদের জানিয়ে দিতেন সেই আয়াত বা অংশ কোন সুরার কোন আয়াত। সাহাবীরা সেই অনু্যায়ী কুরআন হৃদয়স্থ করে নিতেন। যারা লেখা জানতেন, তারা নিজেদের জন্য চামড়া বা পাথরের উপর কুরআনের বিভিন্ন অংশ লিখে রাখতেন।
আল্লাহ কুরানকে লাওহীম মাহফুযে সংরক্ষণ করছিলেন। তারপর ফেরেশতারা কুরআনকে ‘বাইতুল ইজ্জাহ’তে নিয়ে আসেন, সেখান থেকে ধাপে ধাপে রাসূলে পাক (সাঃ) এর শানে কুরআন নাজিল হয়। কুরআন নাজিল কয়েকটি পদ্ধতিতে হয়েছিল। যেমনঃ ১) জিব্রাঈল (আঃ) ওহী নিয়ে রাসূলে পাক (সাঃ) এর কাছে সরাসরি আসতেন, হযরত জিব্রাঈল যখন ওহী নিয়ে আসতেন, তখন বেশির ভাগ সময় তিনি একজন সাহাবীর রূপে আসতেন। সেই সাহাবীর নাম হযরত দেহিয়া কালভী (রাঃ)। তিনি অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন বলে কথিত আছে। ২)জিব্রাঈল (আঃ) তার নিজস্ব রূপে আসতেন। প্রথমবার যখন ওহী নিয়ে জিব্রাঈল (আঃ) হেরা গুহায় এসেছিলেন, তখন তিনি তার স্বরূপে এসেছিলেন। ৩) আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে ওহী সরাসরি রাসূলে পাক (সাঃ) এর কলব বা হৃদয়ে চলে আসত।
কুরআন তেলাওয়াতের সাতটি পদ্ধতি রয়েছে। এই সাতটি পদ্ধতির মধ্যে আরো বিভিন্ন ধরনের ক্বেরাত আছে। (এই ব্যাপারটা আমার কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার না, শুধু এইটা বুঝতে পারছি তেলাওয়াতের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। নিউ ইয়র্ক এ আফ্রিকান মসজিদে নামাজ পড়ার সময় একজন হুজুর তেলাওয়াত করতেন একটু এ-কার যুক্ত করে। যেমন, “ওয়াদ্দুহা ওয়াল-লাইলি ইজা সাজ্যা...”। মুফতি সাহেব সাতটি পদ্ধতির কথা বলে উদাহরণ ঠিক এই তেলাওয়াতেরই দিয়েছেন।) এই ব্যাপারে একটা হাদিস আছে যে একদিন জিব্রাঈল (আঃ) এসে বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনার উম্মতের সবাই একই ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। রাসূল (সাঃ) বললেন, এটা আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে। আপনি আল্লাহকে বলুন যাতে তিনি একাধিক পদ্ধতিতে কুরআন তেলাওয়াত কবুল করেন।। এভাবে কয়েকবার জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং শেষ পর্যন্ত সাতটি পদ্ধতিতে তেলাওয়াতের অনুমতি আল্লাহ পাক দান করেন।
কুরআন এর সুরা গুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। মক্কী সুরা ও মাদানী সুরা। আমাদের অনেকেরই ধারণা মক্কায় অবতীর্ণ সুরা গুলো মক্কী সুরা এবং মদীনায় অবতীর্ণ সুরা গুলো মাদানী। ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক নয়।মক্কী এবং মাদানী সুরার বিভাজনের মূল বিষয় হচ্ছে হিজরত। হিজরতের আগের নাজিল হওয়া সব সূরাই মক্কী সূরা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, আর হিজরতের পরের সুরা গুলো মাদানী। হিজরত ইসলামের মহান ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সূচনা হিজরত থেকে।
যখন রাসূলে পাক (সাঃ) এর কাছে ওহী আসত, তিনি দ্রুত তা তেলাওয়াত করতেন যাতে তা মুখস্ত হয়ে যায়। তখন আল্লাহ বলেন, কুরআন তার এবং তিনিই তা একত্রিত করবেন এবং এর হেফাযত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পবিত্র স্মৃতিতে আল্লাহ কুরআনকে স্থায়ী করে দেন। সে সময় অনেক সাহাবী সব সময় কুরআন তেলাওয়াতে এবং তা হৃদয়স্ত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নারী সাহাবীরা (রাঃ) সে সময় বিয়ের মহর হিসাবে ধন সম্পদ এর বদলে কুরআন শিক্ষা নিতে চাইতেন(এটা আলাদা বিষয় যে মহর হিসাবে কুরআন শিক্ষা দেওয়া যথাযথ কি না)। রাসূল (সাঃ) একজন সাহাবীকে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ)। যায়িদ (রাঃ) পাথর, চামড়া ইত্যাদিতে ওহী নাজিল হওয়ার সাথে সাথে তা লিখে ফেলতেন এবং রাসূলে পাক (সাঃ) কে তা আবার পড়ে শোনাতেন যাতে কোন ভুল হলে তা শুধরে নেওয়া যায়। এটিই ছিল কুরআন লিপিবদ্ধ করার প্রথম ধাপ। অনেক সাহাবী নিজস্ব উদ্যোগে নিজের ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য কুরআনএর বিভিন্ন আয়াত সমূহ লিপিবদ্ধ করতেন। এভাবে কুরআনের আয়াত সমূহ বিক্ষিপ্তভাবে লিপিবদ্ধ ছিল। তবে সাহাবীদের একটি বিরাট অংশেরই কুরআন মুখস্থ ছিল।
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতের সময় ইয়ামামার যুদ্ধে বেশ কিছু হাফিজ শহীদ হয়ে যান। তখন হযরত ওমর (রাঃ) খালিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কাছে আসেন এবং কুরআন কে একত্রিত করে লিপিবদ্ধ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন তা না করলে ভবিষ্যতে কু্রআন সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাতে সম্মত হন নি। তিনি বলেন যে কাজ রাসুলে পাক (সাঃ) করেননি, আমি সেটা করতে পারব না। কিন্তু হযরত ওমর বার বার খালিফার কাছে লিখিত আকারে কুরআন সংরক্ষণের অনুরোধ করেন। অবশেষে খালিফা হযরত আবু বকর তাতে সম্মত হন। তিনি যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ), যাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে কুরআনের আয়াত সমূহ লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাকে দায়িত্ব দেন কুরআনকে একত্র করার। আবু বকর (রাঃ) বলেন, হে যায়িদ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনাকে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, কুরআন সম্পর্কে আপনার অনেক জ্ঞান এবং আপনি একজন হাফিজও। আপনাকে কুরআন একত্রিত করে লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব নিতে হবে। যায়িদ (রাঃ)ও প্রথমে এই কঠিন দায়িত্ব নিতে রাজি হন নি। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ)যদি আমাকে পর্বতকে তুলে জায়গা থেকে সরানোর দায়িত্ব দিতেন, আমি রাজি হতাম, কিন্তু কুরআন একত্রিত করে লিপিবদ্ধ করার কাজ তার চেয়েও কঠিন। কিন্তু ধীরে ধীরে আল্লাহ তাকে হিকমত ও সাহস দান করেন; তার মত পরিবর্তন হয়। তিনি এই গুরুদায়িত্ব নিতে রাজি হন। সাহাবীদের প্রজ্ঞা, সততা ও ইসলামের প্রতি নিষ্ঠার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেন এই কুরআন সংগ্রহ ও একত্রিত করার কাজ করতে গিয়ে। তিনি রাসূলে পাক (সাঃ) এর সময়ে কুরআনের আয়াত সমূহ লিপিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, যে কাজের দায়িত্ব তাকে স্বয়ং রাসূলে পাক (সাঃ) দিয়েছিলেন, তিনি একজন হাফিজ ছিলেন এবং কুরআন সম্পর্কে তার জ্ঞান অনেকের চেয়েই বেশি ছিল। তিনি চাইলেই পুরো কুরআন লিখে নিতে বা কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিতে পারতেন। অথবা তিনি লিখে আরেকজনকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি সমন জারি করেন, যার কাছে যেখানে যত আয়াত লেখা আছে সব নিয়ে আসতে। এবং শুধু আনলেই হবে না, কেউ একটি আয়াতও যদি নিয়ে আসে, তাহলে তাকে দুইজন সাক্ষী নিয়ে আসতে হবে, যারা এই সাক্ষ্য দেবে যে এই আয়াত বা সূরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপস্তিতি লেখা হয়েছিল। এভাবে কঠিন যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে তিনি সব লিখিত আয়াত সমূহ সংগ্রহ করেন এবং একত্রিত করে একটি বই আকারে বাধাই করেন। এটিই সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ কুরআন। একে বলা হত ‘ঊম’ (মা)। ঊম যদিও সম্পূর্ণ কুরআন ছিল, কিন্তু এর ভেতরে সুরাগুলো ক্রমানুসারে সাজানো ছিল না, তবে সুরার আয়াত গুলোর ক্রম সঠিক ছিল এবং তেলাওয়াতের সাতটি পদ্ধতিই এতে লিপিবদ্ধ ছিল। এই প্রামাণ্য কুরআন হযরত আবু বকরের পরে হযরত ওমর (রাঃ) এর সময় তার দায়িত্বে ছিল। তখন পর্যন্ত আর কোন কুরআন লেখা হয় নি। হযরত ওমর (রাঃ) এর ওফাতের সময় তিনি তার কন্যা হযরত হাফসা (রাঃ) এর কাছে ‘ঊম’ এর দায়িত্ব দিয়ে যান। খিলাফতের দায়িত্ব তখন হযরত উসমান ইবন আফফান (রাঃ) এর উপর। এই সময় ইসলামি সাম্রাজ্যের সীমানা অনেক দূর বিস্তৃত হয়ে পড়েছে এবং হযরত উসমানের (রাঃ) সময় তা আরো দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে লাগল। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য, পারস্যের দূরপ্রান্ত সহ আরো নতুন নতুন জায়গায় ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়তে লাগল। অসংখ্য নও-মুসলিম কুরআন শিক্ষা নিতে শুরু করল। ইসলাম এভাবে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ার ফলে একটা সমস্যা দেখা দিল। মুসলমানরা কুরআনের ভিন্ন ভিন্ন তেলাওয়াত পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ দেখা দিল। একেক অঞ্চলের মানুষ যে পদ্ধতিতে তেলাওয়াত শিখছে, সেটা ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে তেলাওয়াতকে ভুল হিসাবে চিহ্নিত করছিল। হুজায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ) নামক একজন সাহাবী আরমেনিয়া ও আজারবাইযান ভ্রমণ করে মদীনায় ফিরে এসে আমীরুল মুমীনিন হযরত উসামানকে(রাঃ) জানালেন যে তিনি মুসলমানদের মধ্যে অনেক ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) লক্ষ্য করেছেন। যেমন সিরিয়ার লোক ঊবাই বিন ক্বাব (রাঃ) এর তেলাওয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করে, তারা আর কোন পদ্ধতিকে সঠিক হিসাবে গ্রহণ করে না। ইরানের লোক আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদের তেলাওয়াত পদ্ধতি ছাড়া আর কোন তেলাওয়াতকে সঠিক হিসাবে গ্রহণ করে না। এবং তারা একে অন্যকে বলে যে আমাদের পদ্ধতিই সঠিক এবং তোমাদের তেলাওয়াত সঠিক নয়। এটি এতই সংকটময় অবস্থায় পৌছেছিল যে এক পদ্ধতির লোক অন্য পদ্ধতির তেলাওয়াত শুনলে বলত, এটা কুরআন নয় (নাউজুবিল্লাহ)। কুরআনকে অস্বীকার করা কুফর। আল্লাহ যেহেতু সাতটি পদ্ধতিকে অনুমোদন করেছেন তার মানে সেই সাতটি পদ্ধতির যেকোনটিই গ্রহণযোগ্য কুরআন। এর কোনটিকেই অস্বীকার করা যাবে না। তো লোকেরা সে সময় এভাবে একটা ফিতনার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। হুজায়ফাতুল ইয়ামান (রাঃ) খালিফাকে বললেন, ইয়া আমীরুল মু’মিনীন, আমার ভয় হচ্ছে যে আহলে কিতাবরা যেমন তাদের কিতাব নিয়ে মতভেদ করে কিতাবের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরী করেছিল, কোন ব্যবস্থা না নিলে মুসলমানরাও কুরআনের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরী করে ফেলবে। উসমান (রাঃ) এই খবরকে খুবই গুরত্বের সাথে গ্রহণ করলেন। এরই মধ্যে মদীনায়ও এই ব্যাপারে অভিযোগ শোনা গেছে। তিনি মজলিশে শুরার বৈঠক ডাকলেন (মজলিশে শুরা কি, তা আমরা কম বেশি সবাই জানি, কয়েক জন বিশিষ্ট সাহাবীর একটি প্যানেল, যারা খলিফার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন। যেকোন ব্যাপারে শুরার এই বেশিরভাগ সদস্য যেদিকে রায় দিতেন, খলিফা সাধারণত সেই মতই গ্রহণ করতেন। গণতন্ত্রের এটি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।) এবং এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বললেন যেহেতু ‘ঊম’ হচ্ছে প্রামাণ্য কুরআন এবং সাতটি তেলাওয়াত পদ্ধতিই এতে লিপিবদ্ধ আছে, আমরা ঊম এর তেলাওয়াত পদ্ধতি গুলো গ্রহণ করব এবং এছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করব। হযরত হাফসা (রাঃ) এর কাছ থেকে প্রথম কুরআন, অর্থাৎ ‘ঊম’ কে নিয়ে আসলেন এবং চার জন বিশিষ্ট সাহাবীকে এর সাতটি কপি তৈরী করার নির্দেশ দিলেন। সেই চারজন সাহাবীর প্রথমেই ছিলেন হযরত যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ), যার উপর সর্বপ্রথম কুরআন লিপিবদ্ধ করার এবং কুরআন একত্রিত করার দায়িত্ব ছিল। আর ছিলেন সায়িদ ইবনুল আ’স, আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের এবং আব্দুর রাহমান ইবন হিশাম ইবনুল হারজ। হযরত উসমান (রাঃ) তাদেরকে কুরআনের কপি তৈরী করার নির্দেশ দিলেন এবং সেই সাথে সুরাগুলোকে ক্রমানুসারে সাজাতেও নির্দেশ দিলেন, যেহেতু ‘ঊম’ এর মধ্যে সুরাগুলো ক্রমানুসারে সাজানো ছিল না। সেই সাতটি কপির একটি মদীনায় রাখলেন, একটি পাঠালেন মক্কায়, তারপর সিরিয়া, ইয়ামান, বসরা, কুফা ও বসরায় পাঠালেন এবং কুরআনের কপির সাথে সাথে ক্বারীদেরকেও পাঠালেন যাতে তারা সঠিক উচ্চারণ পদ্ধতিতে তেলাওয়াত শিক্ষা দিতে পারেন এবং সেই সাথে এই নির্দেশ দিলেন যে এই কপিগুলোই কুরআনের প্রামাণ্য কপি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এই সাতটি কপি ছাড়া বাকি সব লিখিত কুরআন বাতিল হিসাবে ঘোষনা করলেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে ভবিষ্যৎ মতপার্থক্য ও ফিতনা থেকে বাঁচাতে ঊম সহ (যেহেতু ঊম-এ সুরার ক্রম গুলো সঠিক ছিল না) এখানে সেখানে কুরআনের আর যত কপি ছিলে সেগুলো পুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আজকাল অনেকেই এই আপত্তি তোলেন যে আমরা যে কুরআন পড়ি সেটি আসল কুরআন নয়, এটি উসমান (রাঃ) এর সংস্করণ (নাউযুবিল্লাহ)। এটি সম্পুর্ণ ভুল। উসমান (রাঃ) এর বিরুদ্ধে কিছু বলা অত্যন্ত অপরাধের কাজ। তিনি আমাদেরকে একটি বিরাট ফিতনার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, হযরত উসমান (রাঃ) এর বিরুদ্ধে কুরআন সম্পর্কে একটি কথাও কেউ বলো না, শুধুমাত্র তার পক্ষেই বলো। কারণ তিনি যখন কুরআন সংরক্ষণের জন্য যে নির্দেশাবলী জারি করেছেন তা আমাদের উপস্থিতিতে এবং আমাদের পরামর্শেই করেছন। আলী (রাঃ), আব্দুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) এর মত গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীরা কুরআন সংরক্ষণের সময় নিজেরা উপস্থিত ছিলেন এবং সবার সম্মতিতেই মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যই এই কাজ করা হয়েছে। (টীকাঃ মুসলমান হিসেবে আমার বিশ্বাস, আল্লাহ যেহেতু পবিত্র কুরআনে নিজে তার কিতাবকে কেয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করার আশ্বাস দিয়েছেন, তাহলে হযরত উসমান (রাঃ) এবং মজলিসে শুরার কুরআন সংরক্ষণের কাজ নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকেই ছিল। নাহলে আল্লাহ নিজে কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার পরেও কেউ কুরআনের মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনও করার সামর্থ্য নেই। আর হযরত উসমান (রাঃ) কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন করেন নি, বরং সুরাগুলোকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে তাদেরকে আরো সঠিক করেছেন। তার মাধ্যমে আল্লাহ কুরআনকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। হযরত উসমানকে (রাঃ) এজন্যই ‘যামীউল কুরআন’ বলা হয়।)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×