সহস্র নৈঃশব্দ্যের আকুতিকে শব্দ-মায়া বন্দী করবেন বলে,
এক আকাশ দুঃখ পান করতে চেয়েছিলেন এক খেয়ালী কবি,
অবশ্য তিনি সিদ্ধার্থের মত নির্বাণের হদিস জানতে চাননি কখনো,
অন্ধকারের ঝাপিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে কিছু নকশাদার কাল সাপ,
নিয়তির আজ্ঞাপ্রাপ্ত দূত, নির্বিকার হানাদার ওরা লোহার বেহুলা বাসরে,
নদীর মত এঁকে বেকে চিনে নিতে পারে গৃহস্থের শীতলপাটি আঙ্গিনা,
তাই কবির ঝোলাতে কোনো চাঁদ সওদাগরী জাহাজ ভাসবে না,
শব্দের মাধুকরী পূর্ণিমার এক উদাসীন চড়ুই হবেন তিনি,
দু- দানা যাতনা বিষেই চলে যাবে যার পথের খোরাকী।
কবি তার বুকের পাঁজর খুলে জাগিয়েছিলেন এক বাঁশী, তার দেবদারু দীঘল মায়া,
পাহাড়ের হিমেল দীর্ঘশ্বাস যেমন উপত্যকা বেয়ে কাঁপন জাগায় বুকের ভেতর,
স্মৃতির সমুদ্র থেকে বয়ে আসা বিষণ্ন মেঘদল যেমন কাঁদায় গাংচিল মন,
রাতজাগা ঝিঁঝিঁর দল যেমন বাজিয়ে চলে পঞ্চম পিরামিড সিম্ফনী,
ভুল করেও যাকে আর ভুলে যাওয়া গেলো না কোনোদিন সাঁঝে ,-
তার ফেলে যাওয়া জলনূপুর যেমন শোনায় সোমেশ্বরীর গান,
ঠিক সেইরকম আকুলিয়া সুরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাঁশী!
সেই পাহাড়ী নদী জল কবে মিলিয়ে গেছে গঞ্জের কালিমায়,
সুরামগ্ন সম্মোহনে জেগে উঠবার ছলে কেটে যায় মৃণ্ময় প্রহর,
গুপ্তচর সন্দেহগুলো সুবিধাবাদী সংশয়ের সাথে গোপন আঁতাতে,
একে একে ঝরে যেতে থাকে সোনালী মেঘেদের নোনতা পালক জল।
গৃহী মানুষের ঘরের কোনে জাল বোনে কিছু অতৃপ্ত শব্দ,নির্ঘুম প্রজাপতি,
যেমন ভবঘুরের পথের ধারে বেনী দুলিয়ে হাতছানি দেয় অন্ধ ডানাহীন ডাহুক।
স্বপ্নদেরও আছে কিছু ব্যক্তিগত স্বপ্ন, ইচ্ছেগুলোরও হয় খুব ঘরপালানো ইচ্ছে,
কিছু রহস্য থাকবে অবোধ্য অজানা, কিছু দুঃখ অমোঘ ও মৃত্যুর মত নির্ভূল,
পৃথিবীর সব ভোর, সব শিউলি, সকল অরাত্রিক অভিযান, অমল ভ্রান্তি,
রাতজাগা কবিতা, সৌম অভিলাষ, বেঁচে থাকবার অবিশ্বাস্য দুঃখ,
কবিতার প্রেমে সংসার ত্যাগী কিছু পলিমাটি পিয়াসী শব্দ,
যাযাবর গৃহ, সন্ন্যাসী চোখ, ছায়াশিকারী বাসনা মূল,
বালুর মরুতে ডুবসাঁতার, হিমুদের রূপালী চাঁদ,
রক্তকরবী রাত, গুণটানা আগুনে দুপুর নদী,
পবিত্র পাপ, ব্যর্থ বিষণ্ণ আনন্দনীল,
অহিংস তলোয়ার, দয়ালু দেবতা,
চোখ ধাঁধানো অন্ধকার দ্যুতি,
কবির আর হয়না লেখা,
প্রতারক শব্দ সবই,
তবুও কবিতায়,
চিরকাল,
সবুজ,
কবি!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৯