somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মিনিটের গল্প

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার ফিরে দেখা

অনিমেষের পাশে বসা শেষ কাপোলটি ও উঠে চলে গেছে প্রায় ২৫ মিনিট হয়ে গেল। অনিমেষ বসে আছে রাস্তাটির ঠিক পাশ ঘেঁষে। কিন্তু কতক্ষণ বসে আছে তার মনে নেই। মোবাইলের দিকে নজর দিলে হয়তো জানা যাবে। কিন্তু মোবাইল দেখতেই ইচ্ছে হচ্ছে না অনিমেষের।

ব্যস্ত এই শহরের অনেকটা ভিতরের দিকের এই রাস্তাটি। কিন্তু খুব অবাক করে দিয়ে এর একটু পরেই রাস্তাটি শেষ হয়ে গেছে। বেশ নির্জন রাস্তাটি। ২/১ টা মানুষ আর ২/১ টা রিক্সার আনাগোনা ছাড়া রাস্তায় তেমন কিছুই নজরে পড়ছে না। অনিমেষের মাথার ঠিক উপরেই একটা সোডিয়াম আলো জ্বলছে। সোডিয়াম আলোর নিচে প্রায় প্রত্যেকটা মানুষকে দেখতেই ভাল লাগে, স্বপ্নময় মনে হয়। অনিমেষ ও সেটাই চাচ্ছে, যেন তার পাশ দিয়ে যাওয়া প্রত্যেকটা মানুষ তার দিকে তাকিয়ে অবাক হোক, তাকে সবাই স্বপ্নলোকের মানুষ ভাবুক। কিন্তু শহরের মানুষগুলো অনেক ব্যস্ত। অনিমেষের দিকে তাকানোর মত কারো সময় নেই।

রাত তখন কয়টা বাজতেছে অনিমেষের জানা নেই। একটু আগেও যে ২/১ টা মানুষের আনাগোনা ছিল। এখন তাও নেই। নীড়ের মানুষগুলো সব নীড়ে ফিরার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।
হঠাৎ অনিমেষ খেয়াল করল, রাস্তাটি যে প্রান্তে শেষ হয়ে গেছে ওখান থেকে একটা লোক বেশ অদ্ভুতভাবে হেলে দুলে আসছে। অনিমেষের কেন জানি মনে হল, এই লোকটির নিদিষ্ট কোন গন্তব্য নেই, নীড়ে ফেরার কোন ব্যস্ততা নেই।

অনিমেষের খুব কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে লোকটা থমকে দাঁড়ালো। দাড়িয়েই জিজ্ঞাসা করল, “আপনাকে আমি ৬ টার দিকে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বসে থাকতে দেখেছি। আপনি এখনো বসে আছেন?”।

অনিমেষ কিছু বলল না লোকটাকে। শুধু জিজ্ঞাসা করল, “এখন কয়টা বাজে?”
লোকটা বলল, “আমার কাছে ঘড়ি-মোবাইল কিছুই নাই। তবে এখন রাত ১০ টার কম হবে না”।
অনিমেষ এবার নিজের মোবাইলটা বের করে সময় দেখল। দেখল, ১০ টা বেজে ১৪ মিনিট।

লোকটা আবার অনিমেষকে বলল, “আপনার পাশে বসতে পারি?”
অনিমেষ কিছু বলল না। লোকটা টুপ করে তার পাশে বসে পড়ল।
লোকটা অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকল অনিমেষের পাশে। কিছু বলল না। অনিমেষ অনেকটা অস্বস্তি বোধ করছিল।
কোন কথা না পেয়ে অনিমেষ শুধু জিজ্ঞাসা করল, “ওখানে তো রাস্তাটা শেষ হয়ে গেছে। আপনি ঐ দিকে কোথায় গেলেন, আবার কোথায় থেকে আসলেন?”
লোকটা এবার বলল, “রাস্তা কখনো শেষ হয় না, মানুষের পথ শেষ হয়ে যায়। একটা ব্যাপার জানেন, মানুষগুলো না কেমন!! একদম বেহায়া টাইপের। যখনই তাদের একটা পথ শেষ হয়ে যায়, তখনই তারা লাজ-লজ্জা ফেলে অন্য একটা বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করে। জানেন, আমি জীবনে কখনো বেহায়া হইনি, লাজ লজ্জাকে ছুড়ে-ছিড়ে ফেলে দেয়নি। যে পথটা শেষ হয়ে গেছে সে পথে শত প্রলোভন থাকা সত্ত্বেও আর কখনো যায়নি, কোন দিনও যাইনি। তাই হয়তো জীবনে সব হারিয়ে ফেলেছি। দেখুন না, একটা পোশাক ছাড়া নিজের আর কোন সম্পত্তি নাই। কিন্তু জানেন, এতে আমার এতোটুকু দুঃখও নাই।”।

অনিমেষ এবার লোকটার দিকে বেশ ভালমতো তাকাল। দেখল, লোকটা বেশ খুশি খুশি। দুঃখবোধের সামান্যতম আবেশও নেই তার মুখে।

লোকটা আবার বলল, “কিছু মনে করবেন না। আপনার নামটা বলুন?”
-অনিমেষ।
-“মিঃ অনিমেষ, শুনুন। সন্ধ্যার দিকে এখানে যে মানুষটাকে আমি আপনার পাশে বসে থাকতে দেখেছি। তাকে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যেতেও দেখেছি। আমি জানি, আপনি তাকে একবারও ফেরাতে চেষ্টা করেননি। আপনি এক দৃষ্টে তার চলে যাওয়া দেখেছেন। আপনি তাকে বলেছেন, “কিছু সিদ্ধান্ত নিজে নিতে হয়। অন্যের পরামর্শের উপর নির্ভর করতে হয় না। এতে নেয়া সিদ্ধান্তের খারাপ-ভাল দিকগুলো পুরোপুরি নিজের মত করে অনুধাবন করা যায়”।
হা হা, আমি এটা দেখে খুশি হয়ে গেলাম। কারণ আপনি একদম আমার দলে চলে এসেছেন। জানেন, আমাদের দলটা গুঁটি কয়েক মানুষ নিয়ে গড়া। কিন্তু এই মানুষগুলোর সংখ্যা দিন দিন আরও করে আসছে। আমরা না, একদম কোণঠাসা হয়ে পড়ছি।
যাক, আপনার অপেক্ষার সময় শেষ হয়ে গেছে। ৪ ঘণ্টার উপরে আপনি এখানে বসে আছেন। আপনি তার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে, তার ফিরে আশা, না-ফিরে আসার ব্যাপারটা আপনি তার উপরই চাপিয়ে দিয়েছেন। তো, তখন থেকেই আপনি বাস্তবিক দায়মুক্ত হয়ে গেছেন। তার জন্য আজ থেকে আপনি অপেক্ষা করতেও পারেন, আবার নাও করতে পারেন।
এখন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যান। আপনার বাসার দারোয়ান ১১ টায় গেট বন্ধ করে দিয়েছে। আরেকটু দেরী হলে সে ঘুমিয়ে যেতে পারে। তাহলে আপনার বাসায় ঢুকতে বেশ সমস্যায় পড়বেন”।

এই বলে লোকটা অনিমেষের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল এবং সে যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে হাঁটতে শুরু করল।
অনিমেষ অনেকটা হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। অনিমেষ দেখল, লোকটা আস্তে আস্তে করে হেলে দুলে হাঁটতে হাঁটতে যে জায়গাটায় রাস্তা শেষ হয়ে গেছে সে বিন্দুতে চলে গেছে। হঠাৎ অনিমেষের চোখটা ঝাপসা হয়ে গেল। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখল, রাস্তার শেষের দিকটার ওখানে কেউ নেই। লোকটাও নেই।
অনিমেষ অনেকটা অবাক হয়ে বসা থেকে উঠে রাস্তা যেখানে শেষ হয়ে গেছে সে জায়গাটায় আসলো।
ভাবল, সেখানে আশেপাশে হয়তো চিপা কোন গলি থাকতে পারে, ঐ গলি দিয়ে লোকটা চলে গেছে বা কোন বাসায় লোকটা উঠে যেতে পারে। কিন্তু অনিমেষ ওখানে গিয়ে দেখল, ওখানে কোন অলিগলি বা আর কোন রাস্তা নেই। রাস্তা সেখানেই একদম শেষ। আর আশেপাশে বিল্ডিংগুলোও একদম নিস্তব্ধ, মানুষগুলো সব ঘুমিয়ে পড়েছে। লাইটগুলো সব বন্ধ। সবগুলো বাড়ির গেটগুলো সব লাগানো।

অনিমেষের শরীরটা কেমন যেন শিহরে উঠল। চিন্তা করল, এক্ষণই তাকে বাসায় ফিরতে হবে। তারপর তার অনেকগুলো কাজ।

(শেষ)
প্রকাশঃ ১৪-১১-১৫
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×