somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

চলচ্চিত্রিক মানসিকতা ৩ - সিনেমা, দর্শক ও পরিচালক (পর্ব-২)

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(রচনাটি দুই পর্বে বিভক্ত)

১ম পর্ব - Click This Link

কিছুদিন আগের সুপারহিট একটি সিনেমা যা গানে গানে মানুষকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু স্বয়ং সিনেমাটা সেভাবে দর্শকদের মন ভরাতে পারেনি বলে অভিযোগ আছে, সেই সিনেমাটি নিয়ে একজন এক আড্ডায় বলেছিল, ‘আমি আসলে এই সিনেমাটায় টম হ্যাংঙ্কসের ‘কাস্ট এ্যাওয়ে’ সিনেমাটার মত কিছু দেখতে পার বলে ভাবছিলাম। ঐ সিনেমাটা দ্বীপে নায়ক একা থাকে, এই সিনেমাটাতেও নায়ক চরে একা থাকে। কিন্তু চর জীবনের কিছুই তো সিনেমাটাতে দেখাল না।’

আরেকটি সিনেমা যা একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে র্নিমিত, অনেকেই আছেন যারা সিনেমাটি দেখে রীতিমত স্বর্গীয় সুখ লাভ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলছি, যুদ্ধের সিনেমা বলতে আমি বুঝি গ্লাডিয়েটর, ব্রেভ হার্ট, বিহাইন্ড দি এনিমি লাইন, অল কোয়ায়েট অন দি ইস্টার্ন ফ্রন্ট ইত্যাদি। এই সিনেমাগুলোর যুদ্ধের দৃশ্যায়ন আমাকে দারুণ ভাবে আলোড়িত করে, শিহরিত করে। আমাদের দেশের যুদ্ধের সিনেমাগুলোতে কেন এভাবে দেখানো হয় না?

হয়ত বলবেন, সব যুদ্ধের সিনেমাতে যুদ্ধ দেখানো হয় না। হ্যাঁ, সত্যি কথা। যুদ্ধ ছাড়া যুদ্ধের অসাধারণ সিনেমার উদাহরণ তো আমাদের দেশেই রয়েছে। জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ আর খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমা দুটি যারা দেখেছে তাদের মাঝে দেশের জন্যে যে আবেগ জন্মেছে তা তো বর্তমানের এই সিনেমাটা জাগাতে পারছে না। তাহলে? ডক্টর জিভাগো, দি ইমিটেশন গেইম বা ওয়াটার ডিফাইনার এর মত হলিউডি যুদ্ধ বিহীন যুদ্ধের সিনেমার কথা না হয় বাদই দিলাম।

আর যদি চলচ্চিত্র আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে জানার মাধ্যম হয়ে থাকে তবে আমি জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ দেখব। তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’ দেখব। যে সিনেমা অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট বা গ্লাডিয়েটর হতে পারছে না, জীবন থেকে নেয়া বা আবার তোরা মানুষ হ হতে পারছে না, স্টপ জেনোসাইড বা মুক্তির গানও হতে পারছে না, শুধু মাত্র ৭১কে নিয়ে র্নিমিত বলেই কি আমাকে সেই সিনেমা দেখে আহলাদে আট খানা হতেই হবে? কেন ভাই? সিনেমা ব্যবসা করার বিষয়। কিন্তু ৭১ তো ব্যবসা করার বিষয় নয়।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের অভিযোগ, শিল্প সম্মত সিনেমা কখন ব্যবসা সফল হয় না। ডাহা মিথ্যা কথা। কেন, মুন্না ভাই এম বি বি এস বা লাগে রহো মুন্না ভাই কি ব্যবসা সফল হয়নি? মাহত্মা গান্ধী আর মুন্না ভাইকে নিয়ে যে ভাবে কাহিনি সাজানো হয়েছে, সেটা তো ক্লাসিক একটা বিষয়। জানি অনেকেই মুখ বাঁকিয়ে বলবেন, কমেডি সিনেমায় আবার শিল্প? ঠিক আছে, চার্লি চ্যাপলিনের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে মেনে নিলাম কমেডি সিনেমাতে শিল্প হয় না। নিশ্চয় স্বীকার করবেন, লগন, রং দে বাসন্তি, থ্রি ইডিয়েট এগুলো কোন কমেডি সিনেমা নয় এবং এই সব সিনেমার শিল্পমান নিয়ে কোন পাগলও প্রশ্ন তুলবে না। প্রায় ৫০০ কোটি রূপির মত ব্যবসা এক একটি সিমেনার। তাহলে? আমাদের দেশের সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’-ও তো সে সময় রেকোর্ড পরিমান ব্যবসা করেছিল। নিশ্চয় বলবেন না যে সুতরাং শিল্পহীন একটা সিনেমা।

আসলে আপনারা কি আদৌ স্পষ্ট করে জানেন, কেন, কি উদ্দেশ্যে আপনারা বার বার বলে থাকেন যে শিল্প আর ব্যবসা কখনও এক সাথে হাতে হাত ধরে চলতে পারে না? সব দেশেই তো চলছে। স্বীকার করছি, এ্যভাঞ্জার্স, এক্সম্যান বা দাবাং, চেন্নাই এক্সপ্রেসের মত সিনেমাগুলো হয়ত শিল্প র্নিভর সিনেমাগুলোর চেয়ে বেশী ব্যবসা করছে। কিন্তু হলিউড, বলিউডসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিল্প র্নিভর সব সিনেমাগুলো তো লসের খাতায় নেই।

সত্যি কথাটা হল, আমাদের চোখ যে মানের সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সেই মানের সিনেমা ছাড়া আমাদের আর অন্য কোন ধরনের সিনেমাতে মন ভরবে না। তা সেই সিনেমায় আপনার যতই ধ্রুপদি শিল্প অথবা ৭১ বা ২১এর ইমোশন থাক না কেন, কোন লাভ নাই। ইমোশনের জায়গায় ইমোশন আছে এবং থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশের সিনেমা বোধ হয় আর সিনেমার জায়গায় নেই। আফসোস, এই মাটিতে আর কোন জহির রায়হান, সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমান বা আলমগীর কবির জন্ম নিচ্ছেন না। তারা নিজেদের দেশাত্ববোধ বজায় রেখেই তাদের সমসাময়িক আর্ন্তজাতিক সিনেমার গুনগত মানকে ছুঁতে পেরেছিলেন অজস্র প্রতিকূলতা থাকা স্বত্ত্বেও। বর্তমানের পরিচালকরা কোন ভাবেই সেই মানকে ছুঁতে পারছে না। আর নিজেদের দোষ ঢাকতে র্নিদ্বিধায় সমস্ত দোষ চাপাচ্ছে দর্শকদের উপরে।

এখানে আরেকটা বিষয় না বললেই নয়। আমেরিকা, ভারত, কোরিয়া বা ইরানের পরিচালকরা তাদের দেশের বিষয়কে নিয়ে তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী সিনেমা বানায়। সুতরাং আমাদের দেশের পরিচালকরাও যে আমাদের দেশের বিষয় ও ঐতিহ্য নিয়ে সিনেমা বানাবে এটাই র্দশকদের প্রত্যাশা। অন্য দেশের ভালো কোন সিনেমাকে নকল করে বাজার মাত করার কোন সুযোগ কিন্তু এখানে নেই। আরো বলে রাখা ভাল নিজের দেশের ঐতিহ্যের নামে আপনি যদি শুধু অভাব দারিদ্র আর ধর্মীয় কুসংস্কার দেখান, তবে বিদেশ থেকে হাতি ঘোড়া বিভিন্ন পুরস্কার পেলেও দেশের দর্শকদের মন কিন্তু ভরাতে পারবেন না।

মানুষ নিজের দেশকে যথাসম্ভব ভাল চেহারায় দেখতে চায়। হলিউডি বা বলিউডি সিনেমায় শত সমস্যা দেখানোর পরও নিজ দেশ বা জাতির উন্নত দিকগুলোকে দেখাতে কখনও ভুলে যায় না। এই দেশের কিছু পরিচালক আছেন যারা হয়ত এই দেশের মাঝে উন্নত কিছু খুঁজেই পান না। আমরা ব্যক্তি জীবনে যে যন্ত্রনা ভোগ করছি সিনেমার পর্দায়ও সেই যন্ত্রনা দেখাটা আসলেই বিরক্তিকর। তাও যদি সেই সিনেমাগুলোতে শেষ পর্যন্ত কোন সমাধান বা আশার বানী শোনা যেতো। আমি আমাদের দেশের বা জাতির দোষগুলোকে অস্বীকার করার কথা বলছি না। করলে সেটা হবে মিথ্যাচার। আমি দোষের পাশাপাশি গুণগুলোকেও দেখানোর কথা বলছি।

সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘আমরা যদি ভাল সিনেমা বানাই তবেই দর্শকদের মাঝে ভাল সিনেমা দেখার অভ্যাস তৈরী হবে।’ অথ্যাৎ বিষয়টা এমন নয় যে দর্শকদের অভ্যাস বা রুচির উন্নয়ন ঘটার পরেই পরিচালকরা ভাল সিনেমা বানানো শুরু করবে। আমাদের দেশে অবশ্য বিষয়টা একটু উল্টো হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের কল্যানে বাইরের দেশের উন্নত মানের সিনেমা দেখে দেখে আমাদের র্দশকদের রুচি আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। যদি আমাদের পরিচালকরা নিজেদের দেশত্ববোধকে বজায় রেখে সেই রুচিকে ধরতে পারে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী গুণগত মান দিতে পারে, তবেই আমাদের দেশের হলগুলো অতীতের মত র্দশকে পরিপূর্ণ হবে, তার আগে নয়। তা সে আপনি যতই তথাকথিত শিল্প সম্মত সিনেমা বা আর্ট ফিল্ম বানান না কেন, র্দশকের তাতে কিছুই যায় আসে না।

(চলচ্চিত্রের গুণগত মান নিয়ে ভবিষ্যতে আরেকটি লেখা লিখবার ইচ্ছা রইল)

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×