somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইহতিশাম আহমদ
একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ক্যামেরাপারসন হিসাবে চাকুরীরত। ত্রিকোন চলচ্চিত্র শিক্ষালয় নামে একটি ফিল্ম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক। গল্প, কবিতা লেখা ও অভিনয়ের অভ্যাস রয়েছে।

চলচ্চিত্রিক মানসিকতা ৩ - সিনেমা, দর্শক ও পরিচালক (পর্ব-১)

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(রচনাটি দুই পর্বে বিভক্ত)

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে যারা ভাবেন তাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, আমাদের দেশে নাকি ভাল বা শিল্প সম্মত সিনেমার র্দশক নেই। এবং যারা সিনেমা দেখেন তারাও মোটামোটি এই সব চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কথায় সায় দিয়ে নিজেরাও ছোট খাটো একজন চলচ্চিত্র বোদ্ধা হয়ে যেতে চান। তাদের এই বক্তব্যের পক্ষে যে যুক্তিটি সাধারনতঃ তুলে ধরা হয় তা অতি দৃশ্যমান। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শহরেরই একটা দুটো করে সিনেমা হল ভেংগে ফেলা হচ্ছে। যে সিনেমা হলের নামে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ‘গুলিস্থান’-এর নাম, সেই গুলিস্থান সিনেমা হল তো কবেই মার্কেটে পরিনত হয়েছে। একের পর এক সিনেমা হলগুলোর মার্কেট কমপ্লেক্সে পরিনত হওয়া দেখে মনে হয় যেন মার্কেট নামক কোন এক ভয়াবহ ভাইরাস এই দেশের সব সিনেমা হলগুলোকে একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে। এ যেন এক মহামারী।

হলগুলো সব মার্কেট হয়ে যাচ্ছে- তার অর্থ হল ‘হল’ ব্যবসা ভাল চলছে না। এটা অনস্বীকার্য যে চলচ্চিত্র প্রর্দশনী একটি ব্যবসা। আর ব্যবসায় লাভ হবে এটাই সকলের আকাংখা। লস দিয়ে কোন ব্যবসাই বেশী দিন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। প্রশ্ন হল, কি কারণে হল ব্যবসা বর্তমানে আর লাভজনক নয়?

এই ব্যবসার দুটি অংশ। একটি হচ্ছে সিনেমা, অন্যটি দর্শক এবং বর্তমানে দর্শকরাই বিচারের কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে। যদিও ৮০-র দশক থেকে শুরু করে বেশ লম্বা একটি সময় পর্যন্ত চলচ্চিত্রের গুনগত মান তথা অশ্লীলতাই প্রধান আসামী হিসাবে বিবেচিত হত। বেশ কিছু পরিচালক তাদের চলচ্চিত্র দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে অশ্লীলতা ছাড়াও বাংলাদেশে চলচ্চিত্র র্নিমাণ ও প্রর্দশনী সম্ভব। তারপর থেকেই বলতে গেলে হল ব্যবসায় ধসের সমস্ত দায়ভার একা র্দশকদেরই বহন করতে হচ্ছে।

সমস্যা হল, দর্শক যে সিনেমা দেখে না তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সিনেমা হলগুলোর মার্কেট কমপ্লেক্সে পরিনত হওয়া। অপর দিকে যার কাছেই জানতে চাই সেই বলে ‘আজ এভেঞ্জার্স এজ অফ এলট্রন দেখলাম। কাল ইমতিয়াজ আলীর তামাশা দেখছি। কয়েকটা ফাটাফাটি কোরিয়ান সিনেমা ডাউনলোড করে রাখছি। কালকে থেকে সেগুলো দেখা শুরু করব। ইরানী পরিচালকরা তো এক একটা বস।’ শুধু তা-ই না, আগ বাড়িয়ে বরং অনেকে বলে ‘এই সিমেনাটা দেখছেন? ওই সিনেমাটা দেখেন নাই, মিস করছেন। পেন ড্রাইভ আছে? দেন, আপনাকে দিয়ে দেই।’ এমন কি কার হার্ড ড্রাইভে কত গিগা মুভি আছে, সেই নিয়ে প্রতিযোগিতাও চলে ছেলে পেলেদের মাঝে।

অর্থাৎ, বর্তমান প্রজন্ম প্রতিদিন দুই তিনটা করে হলিউডি, বলিউডি নয়ত কোরিয়ান বা ইরানী সিনেমা দেখতে পারে অথচ মাসে একটা করে বাংলাদেশের সিনেমাও দেখতে পারে না। শুধু বাড়িতে বসে ল্যাপটপে দেখলেও হত, তারা রীতিমত সিনেপ্লেক্সে গিয়েও বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে পপকর্ন খেতে খেতে টারমিনেটর জেনেসিস অথবা কুংফু পান্ডা দেখে। কিন্তু বাংলাদেশী সিনেমা নয়। তাহলে? তবে কি ধরে নিতে হবে যে, এই দেশের তরুণ সমাজের অধিকাংশই আমেরিকার সি আই এ, ভারতের র, নয়ত কোরিয়ান অথবা ইরানী সিক্রেট সার্ভিস- যাদের নাম আমার জানা নাই- তাদের এজেন্ট হয়ে গেছে? এবং তাদের মিশন হল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অংগনকে ধ্বংস করে সেখানে হলিউড, বলিউড, কোরিয়ান এবং ইরানী সিনেমার বাজার তৈরী করা?

মীর জাফর, মীর কাশেম বা জগৎ শেঠের মত বেঈমান, দেশদ্রোহীরা যে যুগে যুগে আমাদের দেশে বসবাস করছে, দুঃখজনক হলেও সে কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় পর থেকেই তো আমাদের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ বলে দুটি স্রোত বিদ্যমান। একটি স্রোতে রুশ ভারত এবং আরেকটি স্রোতে আমেরিকা পাকিস্থানের অধিপত্যও অনস্বীকার্য। কিন্তু কোরিয়া বা ইরানের তাঁবেদারী শুরু করার মাজেজাটা কি? আরো অবাক কান্ড, যে পাকিস্থানের আই এস আই-এর এজেন্ট আমাদের দেশের রন্ধে রন্ধে বাসা বেঁধে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে, সেই পাকিস্থানী সিনেমাকে কিন্তু আমাদের এই তরুণ মীরজাফররা মোটেও প্রমোট করছে না! তাহলে কি সমস্যাটা ভিন্ন জায়গায়?

বিষয়টাকে তবে একটু তলিয়ে দেখা যাক। যেহেতু বিষয়টা র্দশক সংক্রান্ত তাই প্রথমেই আমাদের বুঝে দেখা দরকার “দর্শক” জিনিসটা আসলে কি? ব্যকারণগত ভাবে যে র্দশন করে সে-ই র্দশক। বলে রাখা ভাল, এটা এরিস্টটল বা সক্রেটিস জাতীয় দর্শন নয়। এটা ‘দেখা’ শব্দটির সাধু রূপ। তো, প্রশ্ন হচ্ছে, দশর্ক আসলে কি দেখে এবং কেন দেখে?

যা বুকের মাঝে আবেগ সৃস্টি করে, উত্তেজনা জাগায় অথবা মনের মাঝে একটা প্রশান্তির আবেশ ছড়িয়ে যায়, কোন বোধের উদয় ঘটায়, আবার কখনও কখনওবা অসম্ভবকে সম্ভব করার অনুপ্রেরণা জাগায়, দর্শক তা-ই দেখে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় লেটারস টু জুলিয়েট, নাটিং হিল, ওয়েডিং প্লানার এই জাতীয় সিনেমাগুলো আমাদের মনে প্রেমময় আবেগ তৈরী করে। দক্ষিণ ভারতের এ্যাকশন সিনেমা আমাদের উত্তেজিত করে, নিজেদের সুপারম্যান ভাবতে শেখায়। দি আল্টিমেট গিফট, রং দে বাসন্তি বা থ্রি ইডিয়েট আমদের মাঝে জীবনকে নুতন দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে বাধ্য করে। চাক দে ইন্ডিয়া, লগন বা জীবন থেকে নেয়া আমাদের মাঝে অসম্ভবকে সম্ভব করার অনুপ্রেরণা জাগায়।

এবার আশা যাক কেন দেখে? উত্তরটা অতি মাত্রায় সোজা। বিনোদিত হওয়ার জন্যে। বিনোদন অবশ্য সবার কাছে এক রকম নয়। কেউ ডিজে পার্টির হৈ হুল্লোড়ে বিনোদন খুঁজে পায়। কেউবা আবার ধীমে তালের উচ্চাঙ্গ সংগিতে। কেউ সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায়, তো কেউ গাঁজার ধোঁয়ায়। মোট কথা, আমাদের বিনোদিত হওয়ার সকল চেষ্টা সব সময় সফল হয় কিনা এই নিয়ে লম্বা আলোচনার সুযোগ থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে জীবিকার বাইরে আমরা যা কিছুই করি, তা কোন না কোন ভাবে বিনোদিত হওয়ার জন্যেই করে থাকি। সুতরাং সিনেমাও যে আমরা বিনোদিত হওয়ার জন্যেই দেখে থাকি এতে কোন সন্দেহ নেই।

তো, একথা বোধ হয় বলা যেতেই পারে যে, আমরা বর্তমানে যে সব হলিউডি, বলিউডি, কোরিয়ান বা ইরানী সিনেমা দেখি সেগুলোতে পূর্ণ মাত্রায় বিনোদিত হই বলেই দেখি। সেই বিচারে সম্ভবতঃ একথা বললেও ভুল হবে না যে এই বিনোদোন বা তৃপ্তিটুকু আমাদের দেশীয় সিনেমায় অনুপস্থিত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে এই দেশের বর্তমান দর্শকেরা তাহলে আমাদের দেশের পরিচালদের কাছ থেকে ঠিক কি ধরনের চলচ্চিত্র আশা করেন।

চলবে....

২য় পর্ব- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×