somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে (কপি পেস্ট)

০১ লা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে

বিশ্ব প্রবীণ দিবসে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের প্রার্থনা

০০ আবুল খায়ের

আজ শুক্রবার বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এই দিবসেও আপনজন দ্বারা বঞ্চিত বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের কামনা, আমাদের অন্তিম সময় যা হোক না কেন, আমাদের সন্তানরা যেন থাকে দুধেভাতে। গাজীপুর মনিপুর বিশিয়া এলাকায় দেশের সর্ব বৃহৎ বৃদ্ধাশ্রমে ২ শতাধিক বাসিন্দা চোখের জলে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সেখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মধ্যে বেশিরভাগ সন্তান দ্বারা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবনের অন্তিম সময়ে এসে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে স্ত্রী, স্বামী, ভাই বোনসহ আপনজন দ্বারা লাঞ্ছিত হয়ে নানাভাবে পরিবার ছেড়ে জীবনের শেষ ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রম। অন্যান্য দেশের মত এদেশেও বিশ্ব প্রবীণ দিবসে প্রবীণ হিতৈষী সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন নানান কর্মসূচি পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে। বছরের পর বছর বিশ্ব প্রবীণ দিবস পালন করা হয়ে আসছে। কিন্তু এতে প্রবীণদের প্রতি নবীনদের তেমন কোন দায়িত্ববোধ বাড়েনি। এই দিবস থেকে নবীনরা তেমন কোন শিক্ষা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রবীণ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে প্রবীণ সম্পর্কে তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। এ বছর দিবসটি পালনে ব্যাপক উদ্যোগ ও প্রচার চালানো হলে নবীনসহ সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়বে বলে অনেকে মনে করেন। এক কবি লিখেছিলেন,

হে নবীন, আমিও ছিলাম একদিন তোমার মতো
‘আমারও কম ছিলো না শক্তি-সামর্থ্য,
আমার ডায়েরিতে পরাজয় শব্দটি লেখা হয়নি কখনও।
কিন্তু আজ! আমি প্রবীণ, নেই আগের মতো পথ চলার সাহস;
আমি পারি না এগিয়ে যেতে তোমাদের মতো সমানে সমান।
তাই বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সুরে তিরস্কার করো না আমায়,
ধাক্কা মেরো না আমার জীর্ণ-শীর্ণ শরীরে’।

কবি প্রবীণদের প্রতি নবীনদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার মনের ভাব প্রকাশ করেছিলেন। শ্রদ্ধা আর ভালবাসা, বিনয় আর সহমর্মী মনোভাব নিয়ে প্রবীণদের সম্মান করার কথা তিনি তার কবিতার ভাষায় বলেছেন। প্রবীণদের প্রতি এই শিক্ষা সকলের গ্রহণ করা উচিত। তাহলে বিশ্ব প্রবীণ দিবস সফল হবে। গাজীপুরে মনিপুর বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আপনজন দ্বারা নিষ্ঠুর ও নির্দয়ভাবে নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধদের কাহিনী শুনলে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। হƒদয় ভেঙ্গে যাওয়ার মত ঘটনার তথ্য বৃদ্ধ বাসিন্দারা ইত্তেফাকের এই বিশেষ প্রতিনিধির কাছে প্রকাশ করতে গিয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ফেলেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বলেন, সম্প্রতি এই বৃদ্ধাশ্রমে মুন্সিগঞ্জের এক শিল্পপতির পিতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ঠাঁই নিয়েছিলেন। এই সেনা কর্মকর্তা তার জীবনে ঘটে যাওয়া হƒদয়বিদারক ঘটনা বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের নিকট বলে যান। বৃদ্ধাশ্রমের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ এই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত। শিল্পপতি পুত্রের বয়স যখন ৫ মাস তখন তার মা মারা যান। পিতা সেনা কর্মকর্তা কলিজার টুকরা একমাত্র পুত্র সন্তানের দিকে তাকিয়ে দাম্পত্য জীবনের সকল সুখ বিসর্জন দিলেন। দ্বিতীয় বিয়ে আর করেননি। চাকরির পাশাপাশি শিশু পুত্রকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এটা শিল্পপতির মায়ের ইচ্ছা ছিলো। পিতা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব কর্তব্য পালন শেষে পুত্রকে ঠিকই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। পুত্র লেখাপড়া শেষে ব্যবসা শুরু করেন। কোরিয়ানদের সঙ্গে গড়ে তোলেন গার্মেন্টস কারখানা। বছর ঘুরতে না ঘুরতে হয়ে যান সফল শিল্পপতি এবং প্রচুর টাকা ও ধন সম্পদের মালিক। পিতা একমাত্র পুত্রকে বিয়ে করার জন্য সুন্দরী পাত্রী খুঁজতে শুরু করেন। সুন্দরী পাত্রী পেয়ে পুত্রকে ধুমধাম করে বিয়ে করান। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তার একমাত্র পুত্রের দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করে গেলে তার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। এ কথা একদিন পুত্র ও পুত্রবধূকে বলেছিলেন। কিন্তু পিতার সেই শেষ ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। সুন্দরী পুত্রবধূ কর্তৃক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা চরম মানসিক নির্যাতন, নিপীড়ন ও লাঞ্ছনার শিকার হন। অন্তিম সময়ে তিনি জীবন যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে পুত্র ও পুত্রবধূর কাছে মাথানত করে থাকবেন না। একদিন বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠানে গাজীপুরের উক্ত বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধ- বৃদ্ধাদের জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এই বিষয়ে শুনতে পান। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার জীবনের শেষ ঠিকানা হবে এই বৃদ্ধাশ্রম। পুত্র ও পুত্রবধূকে না বলে বের হয়ে যান বাসা থেকে। ঠাঁই নেন এই বৃদ্ধাশ্রমে। একমাত্র পুত্র বাসায় ফিরে পিতাকে না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পুত্রবধূর এই নির্যাতন একমাত্র ছেলে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পিতার সন্ধান পেলেন। শিল্পপতি পুত্র দামি গাড়ি নিয়ে হাজির হন গাজীপুর মনিপুর বিশিয়া বৃদ্ধাশ্রমে। অতিথি কক্ষে শিল্পপতি পুত্র সকাল ১০টায় গিয়ে বসেন। পিতাও একমাত্র পুত্রকে নিজ কক্ষ থেকে দেখতে পেয়ে বের হয়ে বারান্দায় হাঁটাহাটি করেন। পুত্র দেখে খুশিতে দিশেহারা। তবু পিতা পুত্রের কাছে স্বেচ্ছায় গিয়ে হাজির হননি। পুত্র পিতার কাছে এসে আব্বু তুমি কেমন আছো বলেননি কিংবা কুশল জিজ্ঞাসা করেননি। একজন অপরজনের দিকে তাকান। পিতা সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্ষের বারান্দায় পায়চারি করেছেন। তবু পুত্রের কাছে যাননি এবং পুত্র পিতার কাছে আসেননি। সন্ধ্যার পর দেখা সাক্ষাৎ করার আর কোন সময় দেয়ার নিয়ম নেই বৃদ্ধাশ্রমে। এ কারণে সন্ধ্যায় পুত্রকে পিতার সঙ্গে কোন ধরনের কথা না বলে ফিরে আসতে হলো। একমাত্র পুত্র যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর পিতা হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বৃদ্ধাশ্রমের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শিল্পপতি পুত্র জানেন তার পিতা মিষ্টি পছন্দ করেন। সপ্তাহখানেক পর ১০ কেজি নানা ধরনের মিষ্টি নিয়ে পুনরায় বৃদ্ধাশ্রমে আসেন শিল্পপতি পুত্র। কিন্তু এসে তিনি জানতে পারেন, তার পিতা আর বেঁচে নেই। চির বিদায় নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের কবরস্থানে ঠাঁই নিয়েছেন। এই কথা শুনে শিল্পপতি পুত্র বৃদ্ধাশ্রমের মাঠে পড়ে আব্বু আব্বু বলে বুকফাঁটা কান্না করতে থাকেন। বিকাল পর্যন্ত এই মাঠে গড়াগড়ি করেন। বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা খতীব আব্দুল জাহিদ মুকুলের কাছে শিল্পপতি আবেদন করেন যে, তার পিতার কবরস্থানটি পাকা করবেন। কিন্তু কারো কবর এখানে পাকা করা হয়নি এবং অন্যের কোন সাহায্য ও অনুদান ছাড়া তিনি নিজ খরচে বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা করেন। এ কারণে শিল্পপতির আবেদন তিনি রক্ষা করতে পারেননি। শুধু পিতার চেহলাম করার সুযোগ পেয়েছেন। আর শুধু অন্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অনুরোধে শিল্পপতি ৪০ গজ কাফনের কাপড় সরবরাহ করতে পেরেছেন বলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে জানান।


(আজকের দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্ট)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×