somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Ovid এর Art of love (ভালবাসার ছলাকলা)

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুবলিয়াস ওভিডাস নাসো(ওভিড)
জন্মস্থানঃসুমিলো,রোম
সময়কালঃখ্রীষ্টপূর্ব ৪৩-১৭/১৮ খৃষ্টাব্দ
লেখাঃমেটামরফেসিস,আমোরেস আরও অন্যান্য


(৪) দ্বিতীয় অধ্যায়

দেবতাদের পুজা করতে ভুলবে না কখনও,তাদের আনুকুল্যেই খুঁজে পেলে তুমি তোমার মনের মানুষ,এ জন্যে পুজা,উপঢৌকন কিছু তো তাদের প্রাপ্য।সুগন্ধি ফুলের মালা গলায় দিয়ে-কবি হেসোয়োড,হোমারকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাও,এখন বুঝতেই পারছো,
‘অভিড,একমাত্র আমি অভিড’,তোমার সার্থক পরামর্শদাতা।

প্যারিস হেলেনকে স্পার্টা থেকে হরণ করে নিয়ে যায় ট্রয়ে,রথের দৌড়ে জুসের পৌত্র পেলোস তার রথে লুকানো রাজকুমারী হিপ্পোডামিয়াকে নিয়ে পালায়।পিসা থেকে ইসথিমাসের রথ দৌড়ে,ওয়েনিমাস আর পেলোসের মধ্যে বিজয়ীর ঘরনী হওয়ার কথা ছিল-হিপ্পোডামিয়া্র,কিন্ত পেলোস মানসীর জন্য আইনকানুন ভাঙ্গতে দ্বিধা করেনি,দ্বিধা হয়নি প্যারিসের পরস্ত্রী হেলেনকে নিয়ে পালাতে।

তাই তুমিও অর্ধেক কাজ করে হৈচৈ এ মত্ত হয়ে যেও না,বিশাল সমুদ্র তোমার সামনে,আর নোঙ্গর করার ঘাটটা এখনও অনেক দূরে।আমার কথায়,উপদেশে একজন প্রেমিকা খুঁজে পেলেও,সেখানেই তো তোমার অভিযানের সমাপ্তি না।জানি আমার শিক্ষায় খুব কম উপকার হয়নি তোমার,শিখলে কি ভাবে মানসীর মন জয় করা যায়,এখন তোমার শেখা দরকার কি ভাবে এগোবে বাকী পথটা।জয় নিঃসন্দেহে বিরাট একটা সার্থকতা,তবে ওখানে থেমে থাকলে চলবে না,তোমাকে পৌছাতে সার্থকতার চরম শিখরে।হয়তো ভাগ্য এক সময় ছিল তোমার সহায়,এখন চেষ্টা কর তোমার দক্ষতা ব্যাবহার করতে।

ও সাইথিরিয়া,ভেনাসের জন্মভূমি!আমাকে বনবাসে যেন যেতে না হয়,একটু সাহায্য কর,কবি,গায়ক,শিল্পী মিউস রক্ষা কর আমাকে,এটা তো বিরাট একটা দায়িত্ব আমার।আমি চেষ্টা করবো,দূরন্ত ছেলে কিউপিডের ডানাটাকে আয়ত্বে আনতে,আঁটকে থাকবে সে এখানে,দিকদিগন্তে ছুটে যাওয়ার কোন উপায় থাকবে না তার।

মিনোসের ইচ্ছা ছিল ডায়েডালুসকে কোন ভাবেই তার আয়ত্বের বাইরে যেতে দেবে না,চালাক ডায়েডালুস যে মিনোতারকে(অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ষাঁড়)গোলকধাঁধাঁয় বন্দী করে রাখে,সেই মিনোতারের মা যৌন কামনায় এতই উন্মাদ ছিল যে,মাপেল কাঠের ষাঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে মিনোসের সাথে যৌনসঙ্গম করতে যেত।ডায়েডালুস রাজা মিনোসের কাছে অনেক কাকুতিমিনতি,কান্নাকাঁটি করলেও বাড়ী ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেই নি,রাজা মিনোস।কিই বা করবে ডায়েডালুস,মিনোস দেশের রাজা,সমস্ত ক্ষমতা তার হাতে।তবু সে ভাবলো, ‘একটা উপায় তাকে বের করতেই হবে আমাকে,নিজেকে রক্ষা করার জন্যে।ছেলে ইকারুসের সাহায্য নিয়ে বাতাসকে কোনভাবে বন্দী করে এই পাহাড় থেকে পালানোর উপায় বের করতে হবে,আশা করি স্বর্গের রাজা জোভ যেন আমাকে ক্ষমা করে এই অপকর্মর জন্যে।আর যদি সেটা না পারি,দরকার হলে আমি মরলোকের নদী স্টিক্সকেও বন্দী করতে রাজী আছি’।

প্রয়োজন আনে আয়োজন,চমৎকার একটা বুদ্ধি করলো ডায়েডালুস।বেশ কটা পাখীর পাখা যোগাড় করে,মোম দিয়ে বিরাট দুটো ডানা তৈরী করলো।ছেলে আইকারুস বাবার প্রস্তাবে পাখীর মত উড়তে পারবে ভেবে অনেকটা নেচে উঠলো আনন্দে।ডায়েডালুস ছেলেকে বললো, ‘এই ডানার সাহায্যেই আমরা ফিরে যাবো দেশে।

ডায়েডালুস বারে বারে সর্তক করে দিচ্ছিল ছেলেকে, ‘শুনে রাখ আইকারুস,কোনভাবে টেগিয়ার আশে পাশে যাবে না,যাবে না অরিয়নের ধারে কাছেও।আমার পেছনে পেছনে থাকবে,নিজে অন্য কোনদিকে ছুটে যাবে না,মনে রাখবে সূর্যের বেশী কাছাকাছি গেলে মোম গলে,ভেঙ্গে যাবে ডানাগুলো।সমুদ্রের খুব কাছাকাছিও যেও না,না হলে ভেজা লবনাক্ত বাতাস টেনে নিয়ে তোমাকে যাবে সমুদ্রের জলে।মাঝামাঝি পথটাই আমাদের জন্যে,
বাতাসের উপর ছেড়ে দিও সবকিছু,যুদ্ধ করবে না কখনও’।কথাগুলো বলে,ছেলে আইকারুসের দুকাঁধে দুটো ডানা বেঁধে দিল ডাইডালুস,মা পাখী শিশু পাখীকে সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছে।ছেলেটা ডানা দিয়ে ওড়াটা আয়ত্বে আনার পর,ডাইডালুস নিজের কাঁধেও লাগালো দুটো ডানা,চুমু দিল ছেলের গালে,আশার আনন্দে কান্না ছিল তার চোখ ভঁরা।একটা ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় আরম্ভ হলো তাদের প্রথম পদক্ষেপ,বুড়ো ডাইডালুসের মুক্তির আনন্দে ভঁরে গেছে তখন।

পায়ের নীচের বাড়ীঘর মনে হচ্ছিল ছোট ছোট খেলনার মত আর হেঁটে যাওয়া মানুষজন অনেকটা রুপকথার গল্পের বামনদের মত।সামোস ছেড়ে নেক্সাস,পারোস পার হয়ে দেবতা এপোলোর পবিত্র জায়গা ডেলোসের কাছে পৌঁছে গেছে,ডাইডালুস আর আইকারুস।লেমিনথোস আর কালাইনা ছাড়ার পর আইকারুসের খুব ইচ্ছা হলো তার দক্ষতা দেখানোর জন্যে অস্থির হয়ে গেল,বাবাকে ছেড়ে অনেক উঁচুতে উঠে ওঠার চেষ্টা করছিল সে,এ ভাবে চলে গেল সূর্যের বেশ কাছাকাছি।সুর্যের তাপে মোম গলে ডানা ভেঙ্গে গেছে তখন, নিজেকে সামলাতে পারলো না আইকারুস কোন ভাবে,চীৎকার করে ডুবে গেল সমুদ্র জলের অন্ধকারে।কিছ করার ছিল না ডাইডালুসের,শুধু কান্না আর চীৎকার, ‘আইকারুস,আইকারুস’,আর দেখছিল ভেসে যাওয়া টুকরো টুকরো ভাঙ্গা ডানা।সমুদ্র জলে আইকারুসের নামের ইতিহাস অক্ষয় হয়ে থাকবে চিরদিন।

রাজা মিনোস ক্ষমতার প্রতাপেও থামাতে পারেনি একজন সাধারণ মানুষের উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন,আমিও চেষ্টা করছি প্রেমদবতা ডানাধারী কিউপিডকে বশ করতে,আর আমাকে সফল হতেই হবে।যাদুটোনা আর ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করে খুব একটা লাভ হবে না,না হলে মেডিয়া-আয়েসনের ছেলে জেসনকে বশ করতে পারতো সহজেই,তাকে হত্যাও করতেও হতো না জেসনের বৌ আর ছেলেদের।সার্স যাদু বিদ্যার ছলনায় উলিসেসের সঙ্গীদের পশুতে রূপান্তরিত করেও,তার ভালবাসা জয় করতে পারেনি।যাদুর জড়িবুটি তেল ওষুধে হয়তো একজনকে অসুস্থ করতে পারে,তা ছাড়া তেমন আর কোন কাজে আসে বলে মনে হয় না,বরং ও গুলো মানুষকে অযথাই পাগলামির দিকে ঠেলে দেয়।তাই আমার উপদেশ ও গুলোর ধারে কাছে যাবে না,ভালবাসা যদি চাও নিজেকে ভালবাসার যোগ্য কর,ওর চেয়ে ভাল পথ আর কিছু নাই।

শুধু চেহারা,চাহনি দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না,এটা তো জানাই,পারেনি নায়েরুসও যার সৌন্দর্যের প্রশংসায় স্বয়ং হোমার পঞ্চমুখ,সেও পারেনি সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় হেলেনের মন জয় করতে,সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরী নাইয়াদরা(জলপরীরা) অপহরণ করে নিয়ে যায় হাইলাসকে,তবে শুধু সৌন্দর্যের চমৎকারিত্ব বেশীদিন মুগ্ধ করতে পারেনি তাদের,ধরে রাখতে পারবে না প্রেমিকাকে,যদি মন জয় না করতে পার তার।সৌন্দর্য হারায় প্রতি মুহুর্তে,দিনে দিনে হারায় অনেক কিছুই,গোলাপ যখন মাটিতে পড়ে যায় পাপড়িগুলো হয় ছিন্নভিন্ন,হারায় সুবাস,পড়ে থাকে শুধু ডাল আর কাঁটা।এটা তো জানাই সময়ে তোমার চামড়া কুঁচকে যাবে,চুলগুলো হবে সাদা,সময় থাকতে এমন কিছু যা কর,যা ধরে রাখবে তোমাকে সময়ের খাতায়,তোমার শেষদিনটাতেও।

অভিজ্ঞতা অর্জন কর লাতিন আর গ্রীক সাহিত্য ভান্ডারে,জানার চেষ্টা কর তোমার অজানাগুলো।উলিসিস দেখতে আহামরি তেমন কিছু ছিল না,তবে তার ব্যাক্তিত্ব,কথা বলার দক্ষতায়,দেবীরাও মুগ্ধ হয়ে যেত।আটলাসের মেয়ে পরী কালিপ্সো উলিসিসকে ছলনা করে ধরে রাখার চেষ্টা করলেও,কাজ হয়নি তাতে,শুধু ছলাকলা যাদু বিদ্যায় ধরে রাখতে পারেনি তাকে।উলিসিস ফেরার জন্যে যখন তৈরী হচ্ছিল,তাকে অযথাই ভঁয় দেখাচ্ছিল কালিপ্সো,খারাপ আবহাওয়া, সমুদ্রের ঢেউ এর অবস্থা কথা বলে যা নাকি ছিল যাত্রার সম্পুর্ন প্রতিকুলে।

অন্ততঃ হাজার বার কালিপ্সো উলিসিসের কাছে ট্রয় যুদ্ধের গল্পটা শুনতে চায়,আর প্রতিবারই উলিসিস গল্পটা বলতো নতুনভাবে।একদিন সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে কালিপ্সো আবার জানতে চাইলো ট্রয় যুদ্ধের গল্প,উলিসিস একটা কাঠের টুকরো ভেঙ্গে বালুর উপরে একটা ম্যাপ এঁকে বলা আরম্ভ করলো, ‘এটা হলো ট্রয় আর এই যে এখানে আমাদের তাঁবু।এ জায়গাটা ডোলনের রক্তে লাল হয়ে ছিল,ও যখন নেকড়ে বাঘের চামড়া গায়ে সবাইকে ঠকিয়ে আকিলিসের ঘোড়া চুরি করার চেষ্টা করছিল।এখানে ছিল থ্রেসের রাজা রিসিয়াসের তাবু,এখান থেকে আমি চুরি করা ঘোড়া ফেরত দিচ্ছিলাম’।

কালিপ্সো আর উলিসিসের আলাপের মাঝে জোয়ারের জলে ভেসে গেল,ট্রয়,রিসিয়াস,তাবু,ঘোড়ার সব চিহ্ন।পরী কালিপ্সো বোঝানোর চেষ্টা করলো, ‘দেখলে স্রোতের এতই প্রতাপ যে ভাসিয়ে দিল ট্রয়,রিসিয়াস আর সব নামকরা যোদ্ধাদের,আর তুমি যেতে চাচ্ছ ঐ স্রোতে’।তবে কাজ হয়নি কথায়,উলিসিসের মন ছিল অন্য কোথাও।

যাকগে আমাদের কথায় ফিরে যাই,সুন্দরীদের মিষ্টি কথায় নিজেকে হারিয়ে ফেলো না।মনে রাখবে,শরীরের সৌন্দর্যের সাথে সাথে এমন কিছু দরকার যা মনে দাগ কাটে চিরদিনের জন্যে।এমন কোন মেয়ে আছে যে মিষ্টি কথার,ব্যাক্তিত্ব ভঁরা মানুষকে পচ্ছন্দ করে না,আর অপচ্ছন্দ করে না অকথ্য,নোংরা ব্যাবহার।কে আছে এমন যে বাজপাখী আর নেকড়ে বাঘকে বা আদর করে পোষ মানায়।কে না পচ্ছন্দ করে ঘুঘুপাখী,কবুতর তাদের নম্রতার।বলার ধরণ,নম্রতা-ভালবাসার খুবই পছন্দের খাবার,ঝগড়াঝাটি-প্রেমিক,স্বামী স্ত্রীকে একে অন্যের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিতে বেশী সময় নেয় না,ঝগড়া অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় বিয়ের যৌতুক।

চেষ্টা করবে তোমার প্রেমিকা শোনে যেন শুধু মিষ্টি শালীন কথাবার্তা।বিছানায় শরীরের নিয়ম সাজানো আছে প্রকৃতির সুরে,তোমার জন্যে একমাত্র নিয়ম হলো ভালবাসা,যা মুগ্ধ করবে প্রেমিকাকে।বিছানায় তাকে আদর করবে মন ভঁরা আকাঙ্খায়,আনন্দে যেন তার মনটা ভঁরে উঠে তোমার ছোঁয়ায়।তবে এটা বলে রাখি যে আমার কথাগুলো অলস ধনী লোকদের জন্যে না,এমন না যে আমি ভালবাসার একটা ন্যায়নিষ্ঠ চরিত্র।তাদের জন্যে যারা খুব সহজেই প্রেমিককে দামী দামী উপহার দিয়ে মুগ্ধ করতে চায়,তাদের জন্যে প্রযোজ্য না আমার ভালবাসার উপদেশ।ধনী মানুষ সহজেই বলতে পারে, ‘তোমার কোনটা ভাল লাগে,এটা চাও তুমি।শুধু বলো কি ভাল লাগে তোমার,তুমি যা চাও এনে দেব’।

আমি গরীবের কবি,আমি নিজেই গরীব,আর আমি প্রেমে পড়েছি অনেক কবার।আমার ক্ষমতা নেই দামী দামী উপহার দেয়ার,তবে আমার আছে মন ভঁরে দেয়া ছন্দ।এটা অনেকটা গরীবের দায়িত্বই বলা যায়,তাদের সর্তক থাকতে হয়,ভুলেও তার ব্যাবহারে কোন রুঢ়তা,অশোভনীয়তা যেন দেখা না দেয়।হয়তো একই রকম ব্যাবহারে কোন ধনীর কোন অসুবিধা হবে না,তার তো সূযোগ আছে যে কোন কিছু কিনে দেয়ার।একবার রাগে আমি প্রেমিকার চুল টানছিলাম,প্রচন্ড রাগে তার চুল ধরে টান দিচ্ছিলাম।একসকয় মেয়েটা অভিযোগ করলো তার পোষাকটা টানাটানিতে ছিঁড়ে গেছে,সেটা ছিল আমার জন্যে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ,বলার অপেক্ষা রাখে না একটা নতুন পোষাক কিনে দিতে হলো।আমার শিষ্যরা,বন্ধুরা,তোমার আমার চেয়েও বেশী সর্তক থাকার চেষ্টা করো,তা হলে হয়তো আমার মত অযথা ধাক্কা খেতে হবে না যদি দেখ,তোমার পচ্ছন্দের মেয়েটা অন্য কাউকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে,ধৈর্য হারাবে না,দেখবে হয়তো সময়ে তোমার আর্কষন ফিরে আসবে তোমারই কাছে।ধনুকটাকে ধীরে ধীরে বাঁকা করো,না হয় ওটা হয়তো ভেঙ্গেই যাবে।

স্রোতের বিপক্ষে না গিয়ে,যোগ দিলে হয়তো একসময় ওপারে পৌছাবে,অযথা যদি যুদ্ধ কর,একসময় হয়তো ডুবেই যাবে।ধৈর্যে হিংস্র নুমিদিয়ান সিংহকেও ঠান্ডা করা যায়,ধৈর্যেই বাঘকে বশ করা যায়।আটালান্টা মানুষ হয় ভাল্লুকদের হাতে,যখন তার বাবা লাসিয়ন তাকে জঙ্গলে ফেলে যায়,তার হিংস্রতা,শিকারের মনোবৃত্তি হার মানে ভালবাসার মানুষটার কাছে।মিলেয়াগা ছিল আটালান্টার শিকারী বন্ধু,কালিডোনিয়ান দূর্ধষ বন্য শূওর শিকার করার পর,মিলেয়াগা বন্য শূওরের মাথাটা প্রথামত নিজের দলের জন্যে না রেখে তুলে দিল
আটালান্টার হাতে,মিলয়েগা তখন আটালান্টার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর এ ভাবে দলের অন্যান্যদের ঈর্ষায় এক শিকারে নিহত হয় মিলেয়াগা।সব মিলিয়ে আটালান্টার প্রচন্ড একটা ঘৃনা ছিল পুরুষ জাতির প্রতি।বাবার অনুরোধে আটালান্টা বিয়ে করতে রাজী হলেও,শর্ত ছিল যে দৌড়ে যদি কেউ তাকে হারাতে পারে সেই হবে তার স্বামী,হেরে গেলে যাবে জল্লাদের হাতে।

এক শিকারের সময় সুন্দরী আটালান্টাকে দেখে প্রেমে পড়ে যোদ্ধা মেলানিয়ন,তবে আটালান্টার শর্ত সেটাতো অবধারিত মৃত্যু।মেলানিয়ন প্রায়ই মাটিতে পড়ে কান্নাকাটি করতো তার প্রেমিকার জন্যে।সাহসী,শক্তিশালী মেলানিয়ন বল্লম ছোঁড়া যার কাছে ছিল ছেলেখেলার মত,হার মানলো প্রেমের ছোট্ কটা তীরের কাছে।দ্বিধা করেনি মেলানিয়ন যে কোন উপায়ে প্রেমিকাকে জয় করতে,আটালান্টার সাথে দৌড়ে জেতা সম্ভব না ভেবে সে আশ্রয় নিল আফ্রোদাইতির।তিনটা সোনার আপেল যা উপেক্ষা করতে পারেনি আটালান্টা,ও ভাবেই জিতলো মেলানিয়ন দৌড়ে।নোনাক্রিসের আটালান্টার মত বন্য,দূর্ধষ শিকারী মেয়েও হার মানলো প্রেমের কাছে।

মেলানিয়নের মত পাহাড়ের উঁচুতে উঠে দেবতার কাছে সাহায্য চাওয়ার দরকার নেই তোমার,দরকার নেই খোলা বুকে ছুঁড়ে আসা তীর উপেক্ষা করার।আমার উপদেশটা খুবই সহজ,আর কোন সন্দেহ নাই সেটা নিয়ে যাবে তোমাকে সার্থকতার দেশে।প্রেমিকার কথা শুনবে,সুখে দুঃখে তার সঙ্গ দিবে,তার হাসিতে হাসবে,কাঁদবে তার কান্নায়,আরেক কথায় তুমি হবে একটা আয়না তার।খেলাধুলা করলে,ইচ্ছা করেই জিততে দিও তাকে।আর যাই হোক তোমার প্রেমিকা যেন মনে করে,যে কোন ব্যাপারে তোমার চেয়ে তার দক্ষতা বেশী।

রৌদ্রের তাপে হাঁটার সময় থেকে আড়াল করে রাখবে তাকে রৌদ্রের প্রচন্ডতা থেকে,ভিড়ের মধ্যে জায়গা করে দিবে তার আয়েশের জন্যে।দরকার হলে ছুটে গিয়ে বসার চেয়ারটা আনবে,নিজে ঠান্ডায় জর্জরিত হলেও চেষ্টা করবে বুকে জড়িয়ে ধরে তার হাতটা গরম রাখতে।এটা অপমানজনক এমন কিছু না,যদি আয়নাটা তুলে ধর তোমার প্রেমিকার জন্যে।হারকিউলিস,যার শক্তি,সাহস স্বয়ং দেবতাদের ও ঈর্ষার কারণ,প্রেমিকার মনতুষ্টির জন্যে চরকায় সূতা কাটতেও দ্বিধা করেনি।তার মত মানুষ অলিম্পয়ার পাহাড়ে দেবতাদের সাথে যার অবস্থান,প্রেমের স্বার্থে কোন কাজকে অপমানজনক মনে করেনি,তুমিও দ্বিধা করো না কোন।তোমার মানসীর সাথে যদি দেখা করার কথা থাকে কোথাও বিশেষ কোন সময়ে,চেষ্টা করবে সময়ের আগেই যেন পৌছাও সেখানে,আর অপেক্ষা করো অধৈর্য হবে না অযথা।ধর,কোন কারণে তোমার মানসী যদি জায়গা বদলায় দেখা করার,বাদানুবাদ না করে সময়মত চলে যাবে নতুন দেখা করার জায়গায়।কোন অনুষ্ঠানে হঠাৎ দেখা হলে,তাকে বাড়ী পৌঁছে দেয়ার কেউ না থাকলে,নিজে তাকে পৌঁছে দিতে কোন দ্বিধা করবে না।শহরের বাইরে তুমি,যদি জানতে পার,প্রেমিকা খুঁজছে তোমাকে,তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে তার সাথে দেখা করতে।গাড়ী না থাকলে কি যায় আসে,হেঁটেই গেলে না হয়,ঝড়,বৃষ্টি,বাদল,তুষারপাত কোন কিছুতেই থমকে যাবে না ভালবাসার মন।ভালবাসা একটা সংগ্রাম,একটা যুদ্ধ,দূর্বল মানুষদের বরং বাড়ীতেই সময় কাটানো ভাল।ভালবাসার যাত্রীদের প্রস্তত থাকা উচিত লম্বা অভিযানের জন্যে,অনেক ওঠানামার পথ,যন্ত্রনা,ক্ষিধা,ক্লান্তি সবই পাবে ঐ পথে তোমার,তবে কোন কিছুতেই থমকাবে না তোমার অভিযান।ডেলফাইনকে হত্যা করার শাস্তি হিসাবে সাত বছরের জন্যে মরলোকে মেষপালক হিসাবে কাজ করতে হয় এপোলোকে,পচ্ছব্দসই মনিব হিসাবে এপোলো বেছে নেয় রাজা এডমেটিয়াসকে,যার দয়ার সহানুভুতির খ্যাতি ছড়ানো ছিল চারপাশে,হয়তো হতে পার তোমার কপালেও জুটতে পারে সে ধরণের সূযোগ।কথা হলো ভুলে যাও তোমার অহংকার,গর্বের চেহারাটা।

যদি তোমার মানসীর কাছে যাওয়ার সামনের জানালা দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়,ছাদ হোক,চিমনী হোক,অন্য আরেকটা পথ খুঁজে নিবে তুমি।তোমার পচ্ছন্দের মেয়েটা যদি পাথরের মূর্তি না হয়,তার বুঝতে কষ্ট হবে না কোন পাহাড় পর্বতও আটকাতে পারবে না তোমার ভালবাসার মনটাকে।আবাইডোসের লিয়ান্দা আফ্রোদাইতির পুজারিনী হিরোর প্রেমে পাগল,যে থাকতো দূরের এক দ্বীপের দূর্গে,প্রতি রাতে হেলিসপন্টে সমুদ্রে সাঁতার কেটে সে ছুটে যেত হিরোর সাথে দেখা করতে,কোন কিছুই আঁটকে রাখতে পারেনি তাকে।প্রেমের ঐ জোয়ারে ভেসে যায় হিরো নিজেও,সারাটা গ্রীষ্ম চলে তাদের শরীর খেলা।ঠিক করলো শীত শেষ হলে বসন্তে আবার দেখা হবে তাদের,তবে এক শীতের রাতে হিরো দূর্গের আলো দেখে ছুটে যাওয়ার সময় ডুবে মারা গেল লিয়ান্দার,ভালবাসার জন্যে কোন কিছুই আটকাতে পারেনি তাকে।এটা যদিও একটা দুঃখজনক পরিনতি তবে প্রেমিকের মন মানবে না কোন বাঁধন এটাই তো স্বাভাবিক।

০০০০০০০০০

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×