গতকাল আবারও ওমান গিয়েছিলাম দুবাই থেকে, সাথে আমার বস ছিল। আমি গাড়ী চালাচ্ছিলাম, হঠাথ ড্যাশবোর্ডে নজর পড়ল। দেখি তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রির কাছাকাছি। আমার বস এর বয়স প্রায় ৮০ চাড়িয়ে গেছে, কৌতূহল বশত আমার বসকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা (আমার বসকে আমি বাবা ডাকি) আজ থেকে ৪০ / ৫০ বছর আগে যখন আরব দেশে কোনও বিদ্যুৎ ছিল না এসি ছিল না তখন মানুষ কি ভাবে বসবাস করতো ? তিনি বললেন তখনকার আমলে ওটা কোনও ব্যাপার ছিল না। কারন মানুষের কাছে বিকল্প কোন পথ ছিল না, আমরা রাতে বাহিরে ঘুমাতাম, কারন প্রচুর গরম ছিল পানির ও অভাব ছিল। পরে আমি বললাম বাবা তাহলে তো এখন মানুষ মহাসুখে আছে, বিশেষ করে আরব আমিরাতে আমি তো কোন কিছুর অভাব দেখছিনা। লোকটা বলল দেখ বাবা আগে আমাদের অভাব ছিল ঠিকই, কিন্তু আমরা অনেক সুখে ছিলাম। তখন আমরা আমাদের প্রতিবেশী এবং আমাদের পরিবার সবাইকে সমান রূপে দেখতাম। আমাদের মধ্যে ভালোবাসা এবং অপরের প্রতি সম্মান সহানুভূতির কোনও অভাব ছিল না। আমরা আশ পাশের চার পাঁচ বাড়ির লোক সকালে এক সাথে নাস্তা করতাম, পরে সবাই কাজে যেতাম। কারও খেজুরের বাগান ছিল, কেউ কেউ উট , চাগল , দুম্বা নিয়ে মরুভূমিতে চলে যেত। দুপুরে আবার আমরা সবাই এক হতাম, একসাথে খাবার খেতাম। তখন আমাদের প্রতিবেশী বলতে আমরা আশ পাশের প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতাম, সবার খোঁজ খবর নিতাম, ভালমন্দ জিজ্ঞেস করতাম, একে অপরকে দেখা হলে সালাম করতাম। মানবতার কোনও অভাব ছিল না তখন। কিন্তু আজ এখানে সবার অর্থ সম্পদ আছে , উন্নত জীবন যাপনের সব ব্যাবস্থা আছে , কিন্তু মানবতা নেই। এখন আর কেউ কারও খোঁজ খবর নেয় না। এমন কি আমার পাশের বাড়িতে কে থাকে আমি জানি না, পাশের বাসায় কে আসে যায় আমি দেখি না। কোনও নতুন যায়গায় গিয়ে কারও নাম জিজ্ঞেস করে তার বাসা খোঁজ করলে কেউ বলতে পারে না, এমন কি তার প্রতিবেশী যে তার পাশের ঘরে থাকে সে ও জানে না। তাইলে অর্থ সম্পদ আর উন্নত আরাম আয়েশের জীবন দিয়ে কি হবে ? যেখানে কোনও মানবতা নেই, নেই একে অপরের প্রতি সম্মান, নেই সহানুভুতি। এর চেয়ে তো আমাদের সেই বালির পাহাড়ের উপর কুড়েঘর আর খেজুর বাগান , উট, ছাগল, দুম্বার পাল অনেক ভালো ছিল। কষ্ট ছিল কিন্তু সুখ ছিল, ছিল আনন্দ !
অতীত ভুলে যাওয়া যায় না! কারন অতিতে অনেক ভালো স্মৃতিথাকে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(
আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
লুঙ্গিসুট
ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা
স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা
একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=
©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা
এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।
স্বৈরশাসকের বন্দী
এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন