somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্ডিসনামা ও তেলমামা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুঁজে দেখলাম- জন্ডিসে বিখ্যাত কেউ মারা যায়নি। এরচেয়ে বরং ম্যালেরিয়ার দিকে তাকালে মাথা নত হয়ে আসে। চেঙিস খান থেকে শুরু করে মাদার তেরেসাকে পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার জীবাণুরা ধরাশায়ী করেছে।

উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে- জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। তবে রোগ হোক বা লক্ষণ, এটি বেশ একটা শিক্ষা সফরের মতো ব্যাপার। অন্যদের বেলায় কি অবস্থা হয়েছিলো জানি না- তবে আমার বেলায় মুখের রুচি বেড়ে গেছে কয়েকগুন। ডাক্তার যেদিন বললেন তেলজাতীয় খাবার একেবারেই অফ, সেদিনই জীবনে প্রথমবারের মতো বুঝলাম যে শুধু টকজাতীয় খাবারের কথা ভাবলেই জিভে জল আসে- কথাটা ভুল। তেলে কিছু ভাজা হচ্ছে, সেটা মুরগী বা আলুভাজি যাই হোক না কেন, ছসসস করে একটা শব্দ হচ্ছে- চোখ বন্ধ করে করা এই কল্পনাটা যে কতটা সুন্দর, কতোটা মোহনীয়, কতোটা পবিত্র তা জন্ডিস মামার হাতে না পড়লে ঠিকঠাক বোঝা সম্ভব না। একমাত্র এই সময়ে বোঝা যায় যে সভ্যতার সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপারটাই হচ্ছে তেলেমাখা খাবার।

বেশি কিছু না, রাস্তার ধারের মুড়ির ভর্তা, আহা, ১০টি টাকা নেয়, তেল ছাড়া সেটাও অচল। সসের স্পর্শে একটু গরম গরম কলিজার শিঙাড়া খেতে মন চাচ্ছে? মাথা খারাপ! পাশের হোটেলের নরমাল শিঙাড়াই পেঁয়াজ দিয়ে কচ করে খাওয়া যাবে না, আবার সমুচা। গ্রিলড কিংবা ফ্রাই, মুরগীর কথাতো ভাবাই পাপ। আর যদি চোখের সামনে আলুসমেত একপ্লেট ধোঁয়াওঠা গরম নরম কাচ্চি বসে বসে হাসতে থাকে, ভুলেও চোখ বন্ধ করবেন না। চোখ বন্ধ করলেই নান্নার মোরগ পোলাও বা হাজির বিরিয়ানী সামনে চলে আসবে। তাই যেভাবে আছেন চুপচাপ সেভাবেই পড়ে থাকুন, সামান্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরে তাকাতে গেলেই সর্বনাশ- আপনার পুরো ঘরটা বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরের চিপায় পরিণত হবে। ভাগ্য খারাপ হলে একটা ছোকরামতো ওয়েটারও চলে আসতে পারে কল্পনায়। একহাতে একটা মুরগীর চাপ, অন্যহাতে ৩টা পরোটা আর তেঁতুলের টকে ভেজানো পেঁয়াজের কুঁচি।

তখন আপনার মনে পড়ে যাবে যে চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস কিংবা সাতকড়া দিয়ে গরুর মাংসের মিশনটাও এখনো সময় আর সুযোগের অভাবে কমপ্লিট হয়ে ওঠেনি। ভাগ্য খারাপ হলে পিজ্জা কিংবা বার্গার শেষ কবে খেয়েছিলেন, তার স্বাদ কেমন সেটাও আপনার মাঝে মাঝেই আবছা আবছা মনে পড়তে চাইবে। এবং একটা কথাই মনে হবে- ইশ।

সবচেয়ে অসহায়ত্বের ব্যাপার- এই কথাগুলো কাউকে বলার সুযোগ বা উপায় কিছুই পাবেন না। দিনের বেলার এসব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে হবে, জানালার পাশে বসে পাশের হোটেলে সিঙ্গারা, বেগুনী, আলুর চপ ভাজতে দেখবেন, শুধু দেখেই যাবেন। যদি ভাবেন রাতের বেলা এইসব যন্ত্রণা থাকবে না, তাহলে ভুল করলেন। রাতটা আপনার কাটবে সুস্থ হলে কোথায় কোথায় খেতে যাবেন, সেই লিস্ট করতে করতে। জিভের জল সামলাতে সামলাতে এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়বেন টেরও পাবেন না। টের পাবেন মাঝরাতে, ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখে যখন ঘুম ভাঙবে।

সেদিন এমনই এক রাতে দেখলাম স্বপ্নে দেখলাম সমুদ্রের ধারে চোখ বুজে শুয়ে আছি, সমুদ্রের হালকা বিড়ালমার্কা গর্জন শোনা যাচ্ছে, ভালোই লাগছে। হঠাত সমুদ্র অফ হয়ে গেলো। কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম। অনেক মানুষ কথা বলছে। চোখ খুলে দেখি কোথায় সমুদ্র! এইটাতো কলকাতা কাচ্চিঘর! একজন ওয়েটার হাতে কাচ্চির প্লেট নিয়ে হিংস্র ভঙিতে এগিয়ে আসছে। প্লেট থেকে মেঘের মতো ধোঁয়া উড়ছে আর এতদূর থেকেও একটা চমৎকার গন্ধের খিল খিল হাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বুঝলাম আজকে খবর আছে। তিনলাফে বেরিয়ে পড়লাম। পেছনে ফিরে দেখি ওয়েটার তাড়া করছে। 'খেয়ে যা হারামজাদা।'

চলার গতি বাড়িয়ে দিলাম। এখন রীতিমতো দৌড়াচ্ছি। পথও দৌড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাই। কোত্থেকে একটা বিরাট চিকেন বার্গার তার বড় বড় পা ফেলে ছুটছে পেছনে পেছনে। চিকেনের বড় টুকরাটা বনের গায়ে আধশোয়া অবস্থায় বসে বসে আনন্দে হাততালি দিচ্ছে। একগ্লাস বিউটির লাচ্ছিও দৌড়াচ্ছে তার সাথে। তাদের পেছনে রাস্তার ধারের বিশাল এক চিতই পিঠা তার ৫৩ রকমের ভর্তা নিয়ে এলোমেলো পায়ে তাড়া করছে।

একসময় বুঝতে পারলাম যে আমি আসলে একটা গোলকধাঁধায় আটকে গেছি। যেদিকেই যাচ্ছি, যত জোরেই দৌড়াচ্ছি, আসলে পুরান ঢাকা থেকে বেরুতে পারছি না। একটু পর পর হাজি, নান্না, রয়েল এরা হাসিমুখে হাজির হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত বাঁক নিই। তাতে লাভ হয় না। একটু পর পর তারা আবার সামনে চলে আসে।

শেষে হাজীর ইয়া বড় একটা বিরিয়ানির ডেকচিতে যখন মাথা ঠুকে গেলো, পা পিছলে স্বপ্নটা ভেঙে গেলে উঠে বসলাম। তখনো বুকের ভেতর টিপ টিপ করছে, বুকটা লাফাচ্ছে। জানালা গলে বাইরের তেলহীন ল্যাম্পপোস্টের আলো চলে আসছে ঘরের ভেতর। সেই আলোতে স্পষ্ট দেখলাম টেবিলের ওপর রাখা একটা ডাব, একবাটি বিস্বাদ ফিরনি আর একগ্লাস গ্লুকোজ নিজেদের মধ্যে কি জানি বলাবলি করে নিঃশব্দ হাসিতে ফেটে পড়ছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×