somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জল্লাদের হাসি

১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম আমার ফাঁসি হবে। আমি বাসাতেই আছি। কারণ ঐটাই সেখানকার নিয়ম। নির্ধারিত দিনে জল্লাদরা বাসায় গিয়ে ফাঁসি দিয়ে আসে। অনেকটা হোম ডেলিভারি সিস্টেম।

তো যেদিন আমার ফাঁসি, দুপুর দুপুর জল্লাদ বাসায় এসে হাজির। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ছোটবেলায় বাসায় টিউশনির স্যার আসার মতো মন খারাপ হয়। আরেকটু পর এলে কি ক্ষতি হতো।

জল্লাদের চেহারা মোটেও গোঁফওলা জল্লাদদের মতো না। অল্পবয়স্ক একটা ছেলে। মামুন-টামুন ধরণের চেহারা। তার সাথে ফাঁসি দেয়ার যন্ত্রতন্ত্র। কাপড়ে জড়ানো একটা বেশ লম্বা লাঠি। আরো কি কি- দড়িফড়ি হবে বোধহয়।

স্বপ্নের মধ্যে রাগ করবো কীনা বুঝতেছিলাম না। কারণ মা তাকে আমার ঘরে এনেই বসালো। চা-নাস্তা দিলো। আমি তাকে না দেখার ভান করলাম। এর মধ্যে আমার নানী এসে তার সাথে আলাপ জুড়ে দিলেন। কথা শুনে মনে হচ্ছে জল্লাদের সাথে তার পূর্ব চেনাজানা আছে।

‘তুমি ছেলেটা একটু পাগল ধরণের। নইলে বিয়েটা তো দিয়েই দিতাম।’
তিনি জল্লাদের সাথে আমাদের কাজের মেয়ের বিয়ে নিয়ে কথা বলছিলেন।

জল্লাদ মুচকি হাসছে। মুরুব্বিদের সামনে বিয়ের আলাপজনিত লাজুক হাসি। আবার মাঝে মাঝে চোখের কোনা দিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমার গা চিরচির করে উঠছে এই ব্যাক্কলকে দেখে। আমি উঠে অন্য রুমে চলে যাই। আবার এই রুমে আসি। বারবার ঘর বদল করছি। বোধহয় মৃত্যুজনিত অস্থিরতা।

যদিও জল্লাদ কিছু বলছে না। কিন্তু নিজের কাছেই একটা অস্বস্তি লাগে। সে বাসায় এসেছে অনেকক্ষণ হয়েছে। তার যন্ত্রপাতি অন্য রুমে রাখা। বোধহয় সেখানেই ফাঁসি দিবে।

এদিকে আমার মায়ের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সে এমন একটা ভাব করছে যেন সবকিছুই খুব স্বাভাবিক। একটু পরে আমার ফাঁসি, অথচ সে জল্লাদের কি লাগবে না লাগবে তা-ই নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কয়েকবার ডেকেও তার কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না।

সবমিলিয়ে বিরক্তি আর রাগ যেন আমার গলার উপর চেপে বসেছে। ইচ্ছে করছে জল্লাদকে ডেকে বলি- ফাঁসি দিয়ে দিক। একটা অপরাধবোধও কাজ করছে- তার জন্য। আর কতক্ষণ তাকে অপেক্ষায় রাখবো। আজকে ছুটির দিন। তারও নিশ্চয়ই আরো কাজ-টাজ আছে।

আমাকে ফাঁসি দিয়ে হয়ত সে হাসপাতালে খালাকে দেখতে যাবে কিংবা প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে শহরের আরেকদিকে। আমার জন্য হয়ত এটা একটা জীবন। তার জন্য তো এটা একটা বেলা শুধু।

নাহ, এরকম আর কতক্ষণ- ভেবে আমার ঘরে এসে দেখি সেখানে মানুষ আর মানুষ। গিজগিজ করছে। কেউই আমার দিকে খেয়াল করার মতো অবস্থায় নেই।

আর ঘরের একেবারে মাঝখানে জলচৌকির উপর বসে আছে জল্লাদটা। গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে আমার মা। আর আমার নানী কি একটা বাইচলামি ধরণের কথা বলতে বলতে তার কপালে ঘষে দিচ্ছে হলুদ- আর জল্লাদ হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু জল্লাদের হাসির দিকে ভালো করে খেয়াল করতেই দেখি সে আসলে জল্লাদ না, ঐটা আমিই। আর না দেখেও বুঝতে পারলাম যে এই আমিই হচ্ছি জল্লাদ। যে কীনা ফাঁসি দিতে এসেছে। ঘরভর্তি উৎসব তখন।

আমি সেখান থেকে আস্তে করে অন্য রুমে যেখানে আমার যন্ত্রমন্ত্র দাঁড় করিয়ে রাখা ছিলো সেখানে চলে এলাম ও কাউকে কিছু না বলে সদর দরজা পেরিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়লাম, আমার অপেক্ষমাণ প্রেমিকার প্রতি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×