ছবির উৎস: কালের কন্ঠ।
রাষ্ট্র এর উৎপত্তি সম্পর্কে নানান জন নানা মতবাদ দিয়েছেন। তার মধ্যে সামাজিক চুক্তি মতবাদ। আরো মতবাদ আছে। ঐশ্বরিক মতবাদ, বল প্রয়োগ মতবাদ ইত্যাদি।
আজ আলাপ করিবো সামাজিক চুক্তি মতবাদ। নূহ (আঃ) এর আমলে কি সামাজিক চুক্তি মতবাদ যায় কি না??
সামাজিক চুক্তি মতবাদঃ এ মতবাদের মূলকথা হলো, মানব ইতিহাসে এমন একটি সময় ছিলো যখন মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ছিলো না। তখন রাষ্ট্র ও সরকারের কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। তখন মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করতো ও নিজ খেয়ালখুশি মতো পরিচালিত হতো। দুর্বলের ওপর সবল অত্যাচার করলে, দুর্বলকে রক্ষা করার জন্যে কোনো আইনসম্মত ব্যবস্থা ছিল না। এভাবে প্রকৃতির রাজ্যে অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে মানুষ রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। আর এটাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে সামাজিক চুক্তি মতবাদ নামে পরিচিত।অর্থাৎ এ মতবাদের আসল কথা হচ্ছে চুক্তির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। সহজ বাংলার বলা যায় একদল লোক একজন কে সকল দায়িত্ব দিয়ে বললো “আজ থেকে আমাদের দায়িত্ব তুমার। তুমি আমাদের নিরাপত্তা দিবা ও বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা দেখবা।” তখন রাষ্ট্র গঠন হয় নি। কারন রাষ্ট্র গঠনের জন্য চারটি জিনিস দরকার। নিদিষ্ট ভূমি, জনগণ, সরকার, সার্বভৌমত্ব। তখন মানুষ যাযাবরের মত ঘুরতো। তাই নিদিষ্ট ভূমিতে শাসন করবে সেটা কিন্তু ছিলো না। তাছাড়া সরকার এর উপস্থিতি ছিলো না। আর যেখানে ভূমি নাই সেখানে সার্বভৌমত্ব এর কোন প্রশ্নই আসে না।
এই সামজিক চুক্তি মতবাদ দিয়েছেন টমাস হাবস, জন লক এবং রুসো।
নূহ( আঃ) এর জীবনী: এই নূহ (আঃ) এর প্লাবণের ঘটনা সকল ধর্মের ধর্মগ্রন্থে পাবেন। হিন্দু পুরাণ, খ্রিষ্টানদের বাইবেল, ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থেও নূহ (আঃ) এর ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখতে পাই। এমন কি মহাপ্লাবণের কথা প্রাচীণ মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক এ এই মহাপ্লাবণের কথা দেখা যায়। হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত নূহ (আ.) পর্যন্ত দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল। তবে তিনি কত বছর পূর্বে জন্ম গ্রহন করেছিলেন সে ব্যাপারে তথ্য পাই নাই। “কুরআনে বর্ণিত পঁচিশজন নবী-রাসূলের জীবনী” বইটি পড়ি। লেখক মাওলানা মুহাম্মদ হাসান রহমতী। তার বইতে নূহ(আঃ) এর যে জাতি এর কথা বলা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে সেই জাতি কোন রাষ্ট্র গঠন করে নি। তারা শুধু ঐ রাজনৈতিক ধারা “সামাজিক চুক্তি মতবাদ” দ্বারা গঠিত হচ্ছিলো। নূহ (আঃ) কে যে ভূ-খন্ডে ধর্ম প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছিলো সেখানে বিভিন্ন গোত্রে ভিভক্ত ছিলো। সে সব গোত্রে একজন দলপতি ছিলো। ঐ দলপতিই ছিলো ঐ দলের কর্তা।
তাদের কাছে কর্তৃত্ব ছিলো। ভূ-খন্ড ছিলো। জনগণও ছিলো। কিন্তু ছিলো না সার্বভৌমত্ব। তাই নূহ (আঃ) এর জাতি কোন রাষ্ট্র তৈরি করতে পারে নি। সুতরাং আমরা দেখতে পারি হাবস, জন লক এবং রুসো এর সামাজিক চুক্তি মতবাদ এর সাথে নূহ (আঃ) এর সময়ের রাজনৈতিক ব্যাবস্থার সাথে মিল দেখতে পাই।
মো: নাহল ইমরোজ
অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মাষ্টার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
আমার লেখাতে কোন ভুল, তথ্যগত বিভ্রাট থাকলে আমাকে বলবেন। আমি তাহা সংশোধন করিবো। আর সাধু আর চলিত ভাষা সংমিশ্রণ করার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৭