এখন অক্টোবর মাস। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি পড়েছে। আজ স্কুল বন্ধ। আর আম্মুর মেজাজ ও খুব ভালো। সিফাত তার আম্মুকে খুব ভয় পায়। কারন অল্প ভুলেই অনেক বকা তাকে শুনতে হয়। আম্মুর মেজাজ সব সময় এত গরম থাকে কেন সে জানে না। এই তো এই ইদের দিনে মেহমানদের সামনে তাকে ইচ্ছে মত ধমক দিয়েছে তার মা।
সিফাত ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছাত্র হিসেবে খুব দুর্বল। যে স্থানে সাধারন ছাত্রের কোন কিছু মখস্ত করতে ৫ মিনিট সময় লাগে সে স্থানে সিফাতের ১৫ মিনিট ব্যায় করতে হয়। আবার কোন পড়া সে বেশী ক্ষন মনে রাখতে পারে না। স্কুলে গিয়েও তার শান্তি নাই। কারন তার ক্লাস মেট তার সাথে মিশতে চায় না। কারন সে নাকি খুব আনস্মার্ট।
কিন্তু সে চুপচাপ থাকে। কারো সাথে সে মিশতেও চায় না। সে সর্বদা আতঙ্কিত ও শঙ্খিত অবস্থায় থাকে। শেষের ক্লাসটি তার কাছে খুব ভালো লাগে। কারন তখন সে খুব রিলাক্স অনুভব করে। মনে হয় যেন কোন অশান্তি এই মাত্র নেমে গেলো। ক্লাশ শেষে ছুটি হলে সে একটু দেরী করে বাসায় যায়। কারন তার কাছে বাসা হচ্ছে এক আতঙ্কের নাম। বাসায় গেলেই ছোট খাটো বেপারে তার আম্মু চিল্লাবে।
সিফাতের আব্বু এলজিইডির মস্ত বড় অফিসার। থাকে কোয়ার্টারে। সিফাতের আব্বু আর আম্মুর মাজে সম্পর্ক ভালো। মাজে মাজে একটু ঝগড়া হয় সিফাত কে নিয়ে।
আজ সিফাতের স্কুল ছটি। তার মধ্যে বাহিরে বৃষ্টি। সিফাত বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে। এবং নিজের কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেছে। সে চিন্তা করছে এমন এক রাজ্যের সেখানে সবাই তার বন্ধু। কেউ তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করবে না, কেউ তাকে ধমক দিবে না। যেখানে ক্ষমাই পরম ধর্ম।
হঠাৎ সিফাতের মা এর ডাক।
সিফাত। এই সিফাৎ।
সিফাত চমকে উঠলো। “আবার কি হলো?” সিফাত ভাবলো। আবার কি ভুল করেছে সে? বাহিরে যোহরে আযান দিচ্ছে। সিফাতের মা সিফাতের খাবারের জন্য ডাকছে। খিচুরি, মাছ ভাজা আর খাসির গোস্ত। খাবারে ঘ্রাণ শুনেই আসিফের ক্ষুধা আরো বেড়ে গেলো। কিন্তু সিফাতের প্লেটে ক্ষিচুরী। আর ভাজি মাছ। গোস্ত নাই। গোস্ত শুধু তার জন্য রান্না হয় নি। আর সবার জন্য রান্না হয়েছে।
পরের দিন।
সিফাতের আম্মুকে দুঃচিন্তাগ্রস্থ দেখাচ্ছে। আব্বুও ছুটি নিয়েছে। তারা নানুর বাসায় যাচ্ছে। নানুর আজ বুক ব্যাথা করছে। আর শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সিফাত কে রেখেই তারা চলে গেলেন। কারন সিফাতের স্কুল খোলা ছিলো।
সিফাত ওদের বিদায় দিয়ে স্কুলে গেলো। স্কুল ছুটির শেষে বাসায় গেলো। আহা কি সুখ! আজ আম্মু নাই। তাকে আজ কেউ বকা দিবে না। সিফাত নয়টা পর্যন্ত টিভি দেখলো। কোয়াটার্রের কেয়ারটেকার তাকে রান্না করে খাওয়ালো। পরের দিন শুক্রবার। তাই সে আরো রাত জাগবে।
শুয়ে শুয়ে সে আকাশ কুসুম চিন্তা করছে। কেন সবাই তাকে এত ঘৃণা করে। জীবন টা এমন না হয়ে যদি তেমন হতো তাহলে কতই না ভালো হতো।
পরের দিন তাকে নিতে মামা এসেছে। মামা তাকে জানায় নানার শরীলটা নাকি আরো খারাপ হয়েছে। এটা শুনে সিফাতের বুকের ভেতরে কেমন যেন করে ওঠলো। মনের ভেতরে কু ডাক দিলো। আজকে কাকগুলো বেশী ঢাকছে। নানার বাসায় যেতে যেতে রাত হয়ে গেলো।
শনিবারে সিফাতের নানা মারা গেলো। এতে করে সিফাত খুব ভয় পেয়ে গেলো। এখন তার কি হবে। তার মা তাকে খুব পিটাবে। ইতিমধ্যে সিফাতের নানী এবং সিফতের মা সিফাত কে অপায়া, কুফা, অলক্ষী বলে গালাগাল দিতে লাগলো। সবার সামনে সিফাতের নানী এবং সিফাতের মা চিল্লাচিল্লি করছে। এতে করে সিফাত খুব অনুশোচনাবোধ হতে লাগলো। আসলেই কি আমার জন্য নানা মারা গেছে? নানা বেচে থাকতো, আমিই না হয় মারা যেতাম। আবল তাবল ভাবেতে লাগলো সিফাত।
ছবিগুলো: সংগ্রহীত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৫