somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামান্য একটি ব্লগরব্লগর : : মানিব্যাগ , আমার মানিব্যাগ

১৫ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি মানিব্যাগের স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই । বাবা-চাচাকে মানিব্যাগ পকেটে করে সগর্বে হাটতে দেখে আমারও একটি মানিব্যাগের গর্বিত মালিক হওয়ার ইচ্ছে জাগে । চাচাকে দেখতাম মানিব্যাগের মধ্যে দুনিয়ার যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে ঘুরতেন । জানতে চাইলে বলতেন বড় হ বুঝবি। হ্যাঁ ,বড় হওয়ার আগে যে মানিব্যাগ কেনার টাকা পাওয়া যাবে না তা আমি জানতাম । তাই প্রথমদিকে মানিব্যাগ দেখেই দর্শনতৃপ্তি লাভ করতে হত , কিন্তু আত্নতৃপ্তি পেতাম না।বাসায় আত্বীয়স্বজন বেড়াতে আসলে আমি প্রাথমিক আলোচনার পরেই তাদের মানিব্যাগ দেখতে চাইতাম । তাদের অধিকাংশই বিরক্ত হত , মুখে বলত না কিছু কিন্তু বাসায় ঝাড়িটা খেতাম ঠিকই।

ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় প্রবলভাবে মানিব্যাগপ্রাপ্তির আশা চেপে বসল আমার মনে। পণ করলাম যে করেই হোক এ জিনিস আমাকে একটা অধিকার করতেই হবে । কিন্তু চাইলেই তো সব হয়না তার জন্য দরকার উপযুক্ত কার্যকরন। চেষ্টার কমতি ছিল না আমার । একটি মানিব্যাগের জন্য আমি নানানভাবে টাকাপয়সা নয়-ছয় করতে শুরু লাগলাম।আম্মা অফিস থেকে ফিরলেই অপেক্ষা করতাম কখন রান্নাঘরে যাবেন আর আমি আলগোছে আলমারীতে রাখা ওনার অফিসব্যাগ থেকে এক-দুইটা একটাকার কয়েন সরিয়ে ফেলব । টাকাপয়সা আরো থাকত কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে হাত বাড়াতাম না । আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম দুপুরে,কখন দুপুরের ভাত খেয়ে আব্বা ঘুমাবেন আর আমি হ্যাংগারে রাখা শার্ট থেকে দু-একটা টাকা সরাব। এভাবে নানান কাটখড় পুড়িয়ে চল্লিশ টাকার বিনিময়ে এক হাটের দিনে মফস্বলের বাজার থেকে একটি মানিব্যাগ কিনলাম,গর্বিত মালিক হলাম একটি মানিব্যাগের । ছোট চাচার মত অজস্র কাগজ ভরিয়ে পেট মোটা করে ফেললাম মানিব্যাগের । স্কুলে গিয়ে পকেটে মানিব্যাগ নিয়ে বুক ফুলিয়ে হাটি,কারনে-অকারনে অন্যদের সামনে বের করে উল্টেপাল্টে দেখি । বন্ধুদের বলি দেখ,মানিব্যাগ দেখ,আমার,তোর আছে এরকম । বন্ধুরা ঈর্ষায় জ্বলে,ওরাও মানিব্যাগের স্বপ্ন দেখা শুরু করে। কিন্তু সুখের দিন আমার বেশিদিন স্থায়ী হয়না।এক ছুটির দিনে দুপুরে কাপড় কাচতে গিয়ে আম্মা দেখে ফেলেন আমার গোপন সম্পত্তি। কখন,কোথায়,কিভাবে পেয়েছি তা নিয়ে জেরা চলতে থাকে । বলাতো যায় না যে চুরি করা টাকা দিয়ে মানিব্যাগ কিনেছি তাই নানান সময়ে নানান কথা বলতে হয় । ধোপে টেকেনা আমার যুক্তি।সীজ হয়ে যায় আমার সাধের মানিব্যাগ । কিন্তু তবুও আমার একটি মানিব্যাগের স্বপ্ন শেষ হয়না।


বৈধভাবে আমার প্রথম মানিব্যাগ কেনা হয় এস,এস,সি পাশ করে মফস্বল থেকে জেলা শহরে কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় । এবার আর কাউকে বলতে হয়না,বাসা থেকেই টাকা দিয়ে দেয় মানিব্যাগ কেনার জন্য।পয়ষট্রি টাকা দিয়ে কালো রঙের মানিব্যাগ কিনি একটি । ছোটখাট একটা ভল্ট হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করি একে। বাসা থেকে পাঠানো আম্মার চিঠি,সময়ে অসময়ে লেখা ছড়া-কবিতা,নানান ধরনের দলিল-দস্তাবেজ ভরে ফেলি এতে।ধীরে ধীরে আমার ব্যক্তিগত এনসাইক্লোপেডিয়া হয়ে ওঠে মানিব্যাগটি । আমার অস্তিস্তের সাথে মিশে যেতে থাকে মানিব্যাগটি। আমাকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয় এর অস্তিস্ত রক্ষায়। মানিব্যাগ রাখার জন্য নতুন বানানো প্যান্টগুলোতে দর্জির কাছে গিয়ে পিছনের পকেটের উপরে বোতামসহ ঢাকনা বানিয়ে আনি ,মেসে ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে রাখি,বাসে বা ভীড়ের মধ্যে চলাচলের সময় মাঝে মাঝে হাত রাখি পকেটে,বুঝতে চেষ্টা করি ঠিক আছে তো সব। এভাবে মানিব্যাগটির সাথে আত্বীয়তা করে সময় গড়িয়ে যায় আমার। কিন্তু শেষরক্ষা শেষ পর্যন্ত হয়না। এইচ,এস,সি পাশের পর ঢাকায় এসে মানিব্যাগটি বেহাত হয়ে যায়। মফস্বল থেকে সদ্য পাশ করা বোকা এই আমি জানতাম না এই শহরে দিনদুপুরে লোকজন অন্যের জিনিসপত্রে চোঁখ দেয়,ছিনিয়ে নেয় জোর করে । একান্ত বন্ধুর মত সবসময় সাথে থাকা মানিব্যাগটি হারিয়ে আমি যেন র্নিবান্ধব হয়ে পড়ি, মানিব্যাগটিতে থাকা জিনিসপত্রগুলোর জন্য হয়ে পড়ি কাতর।সর্বোপরি মানিব্যাগটির শোকে কাতর আমাকে আরো কয়েকমাস মানিব্যাগবিহীন থাকতে হয়।

বু্য়েটে ভর্তি হই।স্বাভাবিকভাবে জীবন চলতে থাকে,একটু ভালোভাবে থাকার জন্য টিউশনি ধরি।মাসশেষে অনেকগুলো টাকা ওঠে হাতে।বন্ধু-বান্ধব অনেকে বলে পুরানো মোবাইল ব্যবহার করিস একটা নতুন মডেলের মোবাইল নে। আমি মোবাইল কেনার জন্য মার্কেটে যাই কিন্তু ফিরে আসি মেন্জ ক্লাব থেকে পনেরস টাকা দিয়ে মানিব্যাগ কিনে। বন্ধুরা যারা আমার মানিব্যাগের ঘটনাবলী জানে তারা হাসে,বলে আবার মানিব্যাগ। অনেকে বলে শুধু টাকা রাখার জন্য এত টাকার মানিব্যাগ,অপচয়,পুরোটাই অপচয়।ওরাতো জানে না মানিব্যাগ শুধু আমার কাছে একটি অর্থথলি নয়,এটা আমার ভল্ট,আমার বন্ধু।আবার আমার মানিব্যাগ মোটা হতে শুরু করে। স্থান পেতে থাকে বন্ধুর পত্র থেকে শুরু করে সদ্য কেনা ঘড়ির দোকানের ম্যামো পর্যন্ত । কিন্তু এবারও শেষরক্ষা হয়না।এক ফাল্গুনের দুপুরে ল্যাব থেকে ফিরে এসে যখন প্রবলভাবে ঘুমাই তখন হলে আমার রুম থেকে তিনশ টাকাসমেত চুরি হয়ে যায় মানিব্যাগটি। আমাকে অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড হারানোতে থানায় জিডি করতে হয়,ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড হারানোতে পাঁচশত টাকা দিয়ে নতুন করে তুলতে হয় ক্রেডিট কার্ড ।আমার আফসোস বাড়ে । ইস! আরএকটু যত্ন করে যদি রাখতাম মানিব্যাগটি,ইস! ঐ সময়ে যদি অমন কুম্ভকর্নের মত না ঘুমাতাম।আফসোস করতে করতে আমি আবারো একটি নতুন মানিব্যাগ কেনার স্বপ্ন দেখি।

কেউ একজন অপেক্ষা করছে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×